যে ধরনের প্রশ্ন বিড়ম্বনায় ফেলে অভিভাবকদের
পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট বা কাউন্সেলারদের কাছে তিন-চারটি প্রধান সমস্যা নিয়ে আসেন অভিভাবকেরা। স্যানিটারি ন্যাপকিন, জেনিটাল পার্টস ও যৌনতা, জন্মরহস্য এবং মৃত্যু। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সন্তানের প্রশ্ন শুনে বাবা-মায়ের মাথায় হাত দেওয়ার মতো অবস্থা হয়। তবে ভুলেও মিথ্যে বলবেন না। সত্যিটা ওদের মতো করেই পরিবেশন করুন। ছোটদের কাছে বাবা-মায়ের কথা ধ্রুবসত্য। কারণ নিজস্ব গণ্ডিতে মা-বাবাকেই ওরা সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করে। মিথ্যে বললে ওদের মনে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে।
স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে প্রশ্ন করা স্বাভাবিক। কখনও বাড়িতেও দেখে থাকতে পারে। পায়েল ঘোষের পরামর্শ, ‘‘ওদের বলুন ছোটদের যেমন ডায়পার হয়, তেমনই এটা বড়দের জন্য। প্রাইভেট পার্টসকে অন্য নামে ডাকার বদলে বিজ্ঞানসম্মত নামটাই ওদের বলবেন। প্রাইভেট পার্টস নিয়ে ছোটদের সামনে হাসাহাসি করাটাও ঠিক নয়।’’
বাবা-মায়ের আচরণও শিশুদের মনে কৌতূহল তৈরি করে। মা-বাবা একে অপরকে জড়িয়ে ধরলে অনেক সময়ে ছোটরা আপত্তি করে। ওদের বোঝান ওকে যেমন ভালবাসেন, তেমনই আপনারা একে অপরকে ভালবাসেন। সিনেমায় ঠোঁটে চুমু খাওয়ার দৃশ্য দেখলে ওদের মনে প্রশ্ন জাগে। সেটাকে ‘বড়দের আদর’, ‘ছোটদের আদর’ বলে ব্যাখ্যা করতে পারেন। প্রশ্ন করার জন্য সন্তানকে বকুনি দেবেন না। দুম করে টিভিও বন্ধ করে দেবেন না। এতে ওদের মধ্যে এক ধরনের গোপনীয়তা তৈরি হবে।
পায়েল বলছিলেন, ‘‘অনেক শিশু বাবা-মাকে সঙ্গমরত অবস্থায় দেখে ফেলে। এই বিষয়ে বাবা-মাকে সাবধান হতে হবে। আর শিশু কোনও ভাবে দেখে ফেললে, বিষয়টা সহজ ভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। ছোটদের যেমন আদর হয়, বড়দের তেমন আদর হয়। যদি দেখেন যে, বিষয়টি সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না, কাউন্সেলারের কাছে যেতে হবে।’’
জন্মরহস্য শিশুদের কৌতূহলের আর একটি জিনিস। ‘আমি কোথা থেকে এলাম?’ এই সরল প্রশ্নের জবাবে অহেতুক মিথ্যে বলার দরকার নেই। বলতে পারেন, মায়ের পেটের মধ্যে ছোট্ট সোনা কেমন করে ঘুমিয়ে ছিল। তার পর যখন বড় হতে লাগল, তখন ডাক্তারবাবু পেট থেকে বার করে মায়ের কোলে দিয়ে দিল। গল্পের ছলেই সত্যি বলা যায়। প্রি-টিনএজারকে কিন্তু এই ব্যাখ্যা সন্তুষ্ট করবে না। তাদের ক্ষেত্রে আরও বিশদে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেদের সংস্কার ভেঙে সন্তানকে বোঝানো। আর একটা বিষয়ও মাথায় রাখতে হবে, ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ শেখানোর মধ্য দিয়েই কিন্তু সন্তানকে শরীর সম্পর্কে সচেতন হওয়ার প্রথম পাঠ দেওয়া যায়।
মৃত্যু নিয়েও ধন্দে ভোগে শিশুরা। হঠাৎ কাছের কেউ মারা গেলে ওদের মনে চাপ তৈরি হয় অথচ সত্যিটা বুঝে উঠতে পারে না। কখনওই ছোটদের এই আশ্বাস দেবেন না যে, মৃত ব্যক্তি ফিরে আসবে। অনেকে আকাশের তারা হয়ে যাওয়ার গল্প বলেন ছোটদের। সেটাও ভুল। কাউন্সেলারদের কাছে এমন অনেক কেস আসে, যেখানে শিশুটি অপেক্ষা করে মৃত ব্যক্তি ফিরে আসার। তাই নরম করে সত্যিটাই বলে দিন ওদের। মৃত্যুর পরে কারও ফিরে আসা সম্ভব নয়, কিন্তু তারা আমাদের মনে সব সময়ে থাকবে।
শিশুরা একতাল মাটির মতো। যে ভাবে গড়বেন, তেমনই হবে। জটিল জিনিস সহজ করে বুঝিয়ে দেওয়ার মূল কারণ দু’টি। ওদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে না আর মিথ্যে বলা শিখবে না। কোনও প্রশ্নের উপযুক্ত জবাব দিতে অসুবিধে হলে কাউন্সেলারের পরামর্শ নিন।