Advertisement
E-Paper

বিবেকের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে

খেলার শুরু এ বার। খাদ্য ও পানীয়ের রসগ্রহণ চলছে যখন, সে সময়ে সামন্ত ইন্দ্রকে প্রস্তাব দেয় একটা খেলা খেলতে। যে খেলা ওরা নাকি রোজই খেলে। ‘আদালত আদালত’ খেলা।

চৈতালি দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:০১
নাটকের একটি দৃশ্য

নাটকের একটি দৃশ্য

অবিকল কবির সেই লেখাই যেন। ‘কোন খেলা যে খেলব কখন, ভাবি বসে সেই কথাটাই।’ জীবন যেমন এক রঙ্গমঞ্চ, তেমনই এক খেলাও বটে! অন্তত তেমনই নামের এক নাটক দেখে এলাম সম্প্রতি মধুসূদন মঞ্চে। ‘প্লে হাউস খেলবেন?’ রাসবিহারী শৈলুষিক নিবেদিত এই নাটকের মূল আধার ফ্রেডরিক জুরেনম্যাটের একটি বিশ্বখ্যাত কাহিনি— যা থেকে প্রথমে তৈরি হয় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি মরাঠি নাটক ‘শান্ত কোর্ট চালু আহে’। যার বাংলা ভাষান্তর দেখেছি আমরা বহুরূপীর অনবদ্য প্রযোজনায় ‘চোপ আদালত চলছে’। যদিও ওই দুটি নাটক থেকে ‘প্লে হাউস খেলবেন’-এর প্রেক্ষাপট একেবারেই আলাদা। তাই এর কৃতিত্বের ভাগ নাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্তের যতখানি, ততটাই পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের।

কোনও এক শীতের রাতে পাহাড়ি রাস্তায় ব্রেক ফেল করে ইন্দ্রজিৎ দত্তের গাড়ি। ইন্দ্রজিৎ পেশায় কোনও এক নামী কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ। কল্পনায় ধরে নেওয়া যাক কালিম্পংয়ের কাছাকাছি কোনও এক জায়গা। হাড় হিম করা ঠান্ডায় শুরু হয় ঝড়বৃষ্টিও। ভয়ংকর দুর্যোগের রাত। চারিদিকের ঘন জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বুনো হাতির দল। এ অবস্থায় কী করতে পারে ইন্দ্রজিৎ? ফোনে নেটওয়ার্ক নেই, যোগাযোগের সব পথই বন্ধ।

ঠিক সেই সঙ্কটময় মুহূর্তে হঠাৎ সে একচিলতে আলো দেখতে পায়। ভাল করে দেখার পরে টের পায়, একটু দূরেই একটা বাংলো। এগিয়ে গিয়ে দেখে বাংলোর নাম ‘লাস্ট রেফিউজ়’ তথা ‘শেষ আশ্রয়’। বাড়ির মালিক পিনাকী সামন্ত রিটায়ার্ড জজ। রাতটা বাংলোয় থাকার জন্য ইন্দ্রজিৎকে যে সাগ্রহ অনুমতি দেয়। ওর আতিথেয়তায় ইন্দ্রজিৎও অত্যন্ত খুশি।

কিছু পরে পিনাকীবাবুর তিন বন্ধু আসে সেখানে। তাদের এক জন রিটায়ার্ড ডিফেন্স লইয়ার। এক জন রিটায়ার্ড পাবলিক প্রসিকিউটর এবং আর এক জন রিটায়ার্ড জেলার। এরা সকলেই আড্ডাবাজ, তাই ইন্দ্রজিতের সঙ্গে আলাপ জমাতে মোটেই দেরি হয় না।

খেলার শুরু এ বার। খাদ্য ও পানীয়ের রসগ্রহণ চলছে যখন, সে সময়ে সামন্ত ইন্দ্রকে প্রস্তাব দেয় একটা খেলা খেলতে। যে খেলা ওরা নাকি রোজই খেলে। ‘আদালত আদালত’ খেলা। এই খেলায় সবাই আছে, শুধু নেই কোনও অভিযুক্ত। ইন্দ্র যদি সেই ভূমিকা নেয়! ইন্দ্র রাজি হয় না। কারণ সে বলে, সে ইনোসেন্ট। কিন্তু চার বুড়ো তাকে বোঝায়, কোনও মানুষই পুরোপুরি ইনোসেন্ট হতে পারে না। কখনও না কখনও কোনও না কোনও অন্যায় সে অবশ্যই করেছে। কী নিদারুণ সত্য! শেষমেশ ইন্দ্র রাজি হয়ে যায়।

এ বার পরতে পরতে খুলতে থাকে বিবেকের দরজা। হয়তো বা পানীয়ের দ্রব্যগুণেই। কী ভয়ঙ্কর সে সব স্বীকারোক্তি! আবছা অন্ধকারে মঞ্চে তখন এক দমবন্ধ করা পরিবেশ। দর্শকের অনুভবে যেন এক হিমশীতল শিরশিরানি!

ইন্দ্রজিতের ভূমিকায় নাট্যকার স্বয়ং। সুপুরুষ পদ্মনাভর স্টেজ প্রেজেন্স বেশ ভাল। সামন্তর ভূমিকায় অর্জুন দাশগুপ্ত, পাবলিক প্রসিকিউটরের ভূমিকায় শ্রীদীপ চট্টোপাধ্যায়, ডিফেন্স লইয়ারের ভূমিকায় কৌশিক চৌধুরী ও জেলারের ভূমিকায় গৌতম পুরকায়স্থ তাঁদের চরিত্র যথাযথ ফুটিয়ে তুলেছেন। সুদীপ্ত ঘোষের আবহসঙ্গীত নাটককে সঠিক মাত্রায় উন্নীত করতে পেরেছে। হিমশীতল নাট্য মুহূর্তগুলি সুরেলা ব্যঞ্জনায় আরও প্রকট হয়ে ওঠে। মঞ্চসজ্জার দায়িত্বে ছিলেন স্বয়ং পরিচালক, যে কাজে তিনি ত্রুটিহীন।

কেবল একটি ত্রুটির কথা না বললেই নয়। তা আলোর ব্যবহার। এর প্রয়োগ যথাযথ হলে নাটকীয় মুহূর্তগুলি আরও সাবলীল হত বলেই মনে হয়।

***

মনোরম মণিপুরী নৃত্যসন্ধ্যা

শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্যের অদ্বিতীয় প্রবাদপুরুষ গুরু বিপিন সিংহের জন্ম-শতবর্ষের সমাপ্তি অনুষ্ঠান সম্প্রতি রবীন্দ্র সদন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন জহর সরকার। সম্মানীয় অতিথি উপেন্দ্র শর্মা। বিশেষ অতিথিবর্গ গুরু থানেল সিংহ, লীলা ভেঙ্কটরমণ, সুনীল কোঠারি, দর্শনা জাভেরি, কলাবতী দেবী এবং ড. সত্যব্রত চক্রবর্তী।

পদ্মশ্রী দর্শনা জাভেরি মণিপুরী নৃত্যের বিশেষ পাঁচ ভঙ্গির ভিডিয়ো প্রকাশ করেন। কলাবতী দেবী এবং গুরু বিপিন সিংহের কন্যা বিম্ববতী দেবীর পরিচালনায় উপস্থাপিত হয় ‘ঘন বারি বারিষত’। মণিপুরী নৃত্যের মাধ্যমে বর্ষার নানা রূপ এতে পরিবেশিত হয় সুন্দর ভাবে। দলগত নৃত্যে প্রত্যেকের লীলায়িত ভঙ্গি ও পদবিন্যাস দর্শককে মোহিত করে। বিম্ববতী দেবীর অভিনয়, সাবলীল ভঙ্গিমা এবং দৃপ্ত পদক্ষেপ মনোগ্রাহী।

মঞ্চসজ্জায় প্রশংসার দাবি রাখেন নীল কৌশিক। আবহসঙ্গীতে ছিলেন এন টিকেন সিংহ ও সুমন সরকার। আলো উত্তীয় জানার। রচনায় অমিত দাশগুপ্ত। অতিথি শিল্পী ওয়াই বিদ্যানন্দ সিংহ। নৃত্যে মণিপুরী নর্তনালয়ের শিল্পীবৃন্দ। সুন্দর প্রযোজনার জন্য গুরু বিপিন সিংহের কন্যা সাধুবাদের প্রাপক।

অনুষ্ঠান

কলাবতী দেবীর জন্মদিন উপলক্ষে সম্প্রতি আয়োজিত হল ‘উৎসব’। কলাকুঞ্জে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন ইন্দ্রাণী বসু, নীলাঞ্জনা বন্দ্যোপাধ্যায়, পূর্বিতা মুখোপাধ্যায় এবং রিখিয়া বসু। গুরু বিপিন সিংহ রচিত ননীচুরি, রাধারূপ বর্ণন, খণ্ডিতা ও অনঙ্গাক্ষেপের মতো শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্যের পাশাপাশি শিল্পীরা রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গেও মণিপুরী নৃত্য পরিবেশন করেন। তাণ্ডব ও লাস্য শৈলীতে ফুটিয়ে তোলা হয় শৈশবের বালখিল্য, কৈশোরের প্রেম এবং সর্বোপরি নারীসত্তার অপরাজেয়তা। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মমতাশঙ্কর, প্রমিতা মল্লিক ও কলাবতী দেবী।

সম্প্রতি রবীন্দ্র সদনে একটি আনন্দ সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল আস্থায়ী। আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন অভিরূপ বণিক, সিদ্ধিতা সরকার, অরুণিমা দাস, প্রীতম ঘোষ, অহনা ঘোষ, শান্তা গোলদার, কেয়া সর্দার, সহেলী চক্রবর্তী প্রমুখ। এর পরে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ভাড়াটে চাই’ মঞ্চস্থ হয়। অমলেন্দু ভট্টাচার্যের পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন অরিত্র ঘোষ, সৌত্রিক মণ্ডল, স্রোতস্বিনী ঘোষাল, জিতমিত্রা চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা ঘোষ, ঈশান খান, উজান সিংহ প্রমুখ। একক আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন সুদর্শনা ভট্টাচার্য। শ্রুতি নাটকে অংশগ্রহণ করেন অমলেন্দু ভট্টাচার্য, পাপিয়া অধিকারী ও রনিতা দাস মুখোপাধ্যায়। আবহ প্রদান করেছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়। সংযোজনা করেন চন্দ্রমৌলি বন্দ্যোপাধ্যায়।

Theatre Music
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy