Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাসি চাপা পড়ে বক্তব্যের গভীরতায়

নিরীক্ষামূলক সেই সিরিয়াস নাট্যাভিনয়েরই উদাহরণ দেখা গেল দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের প্রযোজনায়।

হিপোক্রিটস-এর সাম্প্রতিক প্রযোজনা

হিপোক্রিটস-এর সাম্প্রতিক প্রযোজনা

মলয় রক্ষিত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:১০
Share: Save:

একবুক সাহস আর স্পর্ধায় ভর করে কলকাতায় যে সব তরুণ-তরুণী নাটকে অভিনয় করেন, হিপোক্রিটস-এর অভিনেতা গোষ্ঠী সেই দলভুক্ত। তাঁরা পরীক্ষানিরীক্ষায় বিশ্বাসী। দর্শক ভোলানো কমেডিপনায় নয়, সিরিয়াস নাট্যচর্চায় আগ্রহী।

নিরীক্ষামূলক সেই সিরিয়াস নাট্যাভিনয়েরই উদাহরণ দেখা গেল দুটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের প্রযোজনায়। প্রথমটি স্পেনীয় নাট্যকার ফার্নান্ডো অরর‌্যাবলের নাটক ‘পিকনিক অন দ্য ব্যাটলফিল্ড’ এবং অন্যটি মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ‘১৬ পাতা’। তরুণ নির্দেশক সৈকত ঘোষ নাটক দুটি নির্বাচন করেছেন বিষয়গত বক্তব্যের গুরুত্ব থেকেই। প্রথম নাটক যুদ্ধক্ষেত্রে পিকনিকের আমেজে শুরু হওয়া একমুখী কাহিনি। কিন্তু তা হঠাৎই নাটকীয় বাঁক নেয় শত্রুপক্ষের এক সৈনিক পথ হারিয়ে শত্রুশিবিরে চলে আসায়। তীক্ষ্ণ কাঁটাতারের সীমানাকে মাঝে বজায় রেখে রাষ্ট্র কী ভাবে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলে, কী ভাবে সৈনিক তৈরি করা হয়, যুবকদের বিপথে চালনা করে কী ভাবে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বিষয়ে শত্রুতার বীজ বুনে দেওয়া হয় কিংবা একই সিলেবাসে দেশপ্রেমের পাঠ শেখায়, ‘পিকনিক অন দ্য ব্যাটলফিল্ড’ সেই বক্তব্যকেই নাট্যরূপে ধরতে চেয়েছে। দুই সৈনিক এবং বাবার চরিত্রে রূপদানকারী অভিনেতারা প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন। স্বল্পতম উপাদানে গড়া মঞ্চ ও সেই মঞ্চের প্রতিটি স্পেসকে তাঁরা চমৎকার ব্যবহার করেছেন। তবু এই নাটক ততটা সিরিয়াস হতে পারল না, তার কারণ ওই যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার সমস্ত বক্তব্যই প্রায় দর্শকদের জানা। সংলাপে এমন কোনও চাবুক নেই কিংবা এমন কোনও কূটাভাস নেই, যা তাঁদের টেনে রাখতে পারে। বরং সে তুলনায় ‘১৬ পাতা’ অনেক বেশি শক্তিশালী প্রযোজনা।

সৃষ্টির উন্মাদ নেশা, জ্বলন্ত সূর্যের মতোই অন্তরের প্রকাশ-ব্যাকুলতা কী ভাবে স্রষ্টাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, তাকে উন্মাদ করে তোলে, তারই চমৎকার শরীরী রূপ ফুটে উঠেছে সুস্নাত ভট্টাচার্য ও সহ-অভিনেতা অনিন্দ্য সাঁইয়ের অসামান্য অভিনয়ে। মঞ্চের প্রতিটি স্পেসের ব্যবহার, উচ্চারণ, শরীরী এক্সপ্রেশন, শেপ লেভেল কিংবা আর্কিটেকচারের ক্রিয়েটিভিটি এবং সেই সঙ্গেই অর্থবহ নৈঃশব্দ্য এবং আলো ও আবহ প্রায় এক অবিচ্ছেদ্য এককের মতোই সমস্ত দর্শককে স্তব্ধ করে রেখেছিল। মুদ্রিত ব্রোশিয়োরে হিপোক্রিটস ‘১৬ পাতা’-কে ‘স্যাটায়ার’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর বক্তব্যের অন্তর্লীন গভীরতা চিন্তার এক ভাষাহীন জগতে পৌঁছে দিয়েছিল!

অনুষ্ঠান

• সম্প্রতি শৌনক মিউজ়িক্যাল ট্রুপের দ্বিতীয় ত্রিংশতিতম নিবেদন ছিল ‘বিদায় ২০১৮— পৌষালী সন্ধ্যা’। ট্র্যাঙ্গুলার পার্কে শরৎ স্মৃতি সদনে অনুষ্ঠিত হয় এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অংশগ্রহণ করেন দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, রূপরেখা চট্টোপাধ্যায়, রাজ্যশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়, সন্ধ্যাশ্রী দত্ত, আশিস দাশগুপ্ত, মিতালি সরকার, তরুণ মণ্ডল, মালবিকা ভট্টাচার্য, প্রশান্ত ধাড়া, মানসী ভট্টাচার্য, সোমা বসু, ইন্দ্রাণী বিশ্বাস মণ্ডল, প্রতিমা গঙ্গোপাধ্যায়, মৌমিতা কুণ্ডু, রাধারানি ঘোষ এবং রমা
রায়চৌধুরী। কথায় ছিলেন বাচিকশিল্পী মহুয়া দাস ও অমর ঘোষ। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মলয় রায়, পারমিতা সরকার এবং শম্ভু আশ। যন্ত্রসঙ্গীতে ছিলেন ভাস্কর পাত্র, অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, অংশুমালী পাল এবং সোমনাথ খাঁ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা ও পরিকল্পনা করেন গোপাল দত্ত।

• রবীন্দ্র সদনে সঞ্চিতা ডান্স অ্যাকাডেমি এবং আর্তেমিস ফাউন্টেন ফাউন্ডেশন আয়োজন করেছিল ‘অধরা মাধুরী’ নামে একটি অনুষ্ঠান। পরিকল্পনা ও কোরিয়োগ্রাফি করেন সঞ্চিতা ভট্টাচার্য এবং দীপাঞ্জন বক্সী। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন
অনির্বাণ ঘোষ, তমোনাশ মণ্ডল, সৌম্যজিৎ অধিকারী, মধুমিতা বসু, অমৃতা অধিকারী, অন্বেষা ঘোষ, সৌমেন দত্ত, তাপস চৌধুরী, পত্রলিকা দাস, মঞ্জির এবং সঞ্চিতা ডান্স ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Theatre Play
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE