Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

সরষের তেলের হাজারো গুণ

শুধু রান্না নয়। রূপের যত্ন নিতে কিংবা শরীর সুস্থ রাখতেও সরষের তেল ভীষণ উপকারী। শুধু রান্না নয়। রূপের যত্ন নিতে কিংবা শরীর সুস্থ রাখতেও সরষের তেল ভীষণ উপকারী।

রূম্পা দাস
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২২
Share: Save:

ইলিশ ভাপা তৈরির সময় প্রাণ ভরে সরষের তেল ঢাললে স্বাদও যেমন খোলতাই হয়, তেমনই মনও ভাল হয়ে যায়। আবার বাঙালির সান্ধ্যকালীন মুড়িমাখায় কয়েক ফোঁটা সরষের তেলের ঝাঁঝ না হলে চলে কি? কিংবা কাঁচা লঙ্কা দিয়ে পোস্ত বাটায় খাঁটি সরষের তেল তো স্বর্গীয় দোসর। কিন্তু এ তো সবই খাওয়া-দাওয়ায় সরষের তেলের কথা। অথচ এই তেল সৌন্দর্য বাড়ানো থেকে শুরু করে রোগ নিরাময়েও সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড, ত্বক, পেশি, গাঁট— হাজারো সমস্যার মোকাবিলায় সরষের তেলের বিকল্প নেই। দেখে নেওয়া যাক এই তেলের অন্য গুণগুলো।

ত্বকের সমস্যায়

• রোজ রোদে বেরোনোর দরুন ত্বকে ট্যান পড়া স্বাভাবিক। ডার্ক স্পট, ট্যান বা পিগমেন্টেশন কাটিয়ে ওঠার জন্য বেসন, দই, লেবুর রসের সঙ্গে সরষের তেল মিশিয়ে মুখে-ঘাড়ে ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ঠান্ডা জলে ধুয়ে ফেলতে হবে। সপ্তাহে তিন দিন তেল দিয়ে তৈরি এই মাস্ক ব্যবহার করলে এক মাসের মধ্যেই ফল পাওয়া যাবে।

• অনেক সময়ই স্কিন টোন হাল্কা করার জন্য আমরা অনেক চেষ্টা করি। টোনিং হাল্কা করতে সম পরিমাণে সরষের তেল ও নারকেল তেল মিশিয়ে প্রতি রাতে মিনিট পনেরো মুখে মাসাজ করতে হবে। তার পর মাইল্ড ফেস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।

• এই তেলে রয়েছে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স এবং ই। ফলে ত্বকের উপর সরষের তেলের নিয়মিত ব্যবহারে রিংকল কমে। ত্বককে করে তোলে সুস্থ ও সতেজ।

• হয়তো রোজকার ব্যস্ততায় সানস্ক্রিন কিনতে ভুলেই গিয়েছেন। তা বলে কি রোদে এমনিই বেরিয়ে পড়বেন? বরং বেরোনোর আগে অত্যন্ত অল্প পরিমাণে সরষের তেল মুখে লাগিয়ে নিন। এটা ক্ষতিকারক আলট্রাভায়োলেট রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে। কাজ করবে প্রাকৃতিক সানস্ক্রিনের মতোই। তবে বেশি পরিমাণ তেল লাগালে ত্বকে ধুলোবালি আটকে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে।

• অনেকেরই সারা বছর ফাটা ঠোঁটের সমস্যা থাকে। প্রতি রাতে শোওয়ার আগে নাভিতে দু’-তিন ফোঁটা সরষের তেল বুলিয়ে ঘুমোন। পাবেন এই সমস্যা থেকে রেহাই।

• সরষের তেলে অ্যান্টি ব্যাকটিরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকার দরুন নানা অ্যালার্জি ও র‌্যাশ কমাতে সাহায্য করে। এমনকী ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানিও প্রতিরোধ করে।

চুলের জন্য

• চুল পড়ার সমস্যা নতুন কিছু নয়। একই সঙ্গে রয়েছে চুল ঠিকমতো না বেড়ে ওঠার সমস্যাও। এর জন্য সামান্য সরষের তেল স্কাল্পে মাসাজ করে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। প্রায় তিন ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এতে চুল পড়া ও চুল না বাড়ার সমস্যা খানিকটা মিটবে।

• আবার সরষের তেলের সঙ্গে মেথি ও জবা ফুলের পাপড়ি একসঙ্গে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। পরে সেই তেল দিয়ে চুল মাসাজ করলে চুলের রুক্ষ ভাব কেটে গিয়ে যেমন নরম হবে, তেমনই চুল হবে উজ্জ্বল।

• এখন অল্প বয়সেই চুলে রুপোলি রেখা দেখা যায় অনেকের। কম বয়সে চুল পাকার সমস্যায় প্রতি রাতে চুলে সরষের তেল লাগিয়ে আধঘণ্টা রেখে দিন। এর পর চুল ধুয়ে ঘুমোতে যান।

• একই ভাবে খুসকি ও স্কাল্পের চুলকানি কমাতে সরষের তেল উপকারী। সরষের তেল ও নারকেল তেল সম পরিমাণে মিশিয়ে চুলে মাসাজ করতে হবে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুড়ে অন্তত দু’ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। শেষে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ভাবে সপ্তাহে কয়েক বার সরষের তেল ব্যবহার করলেই খুসকি কমে যাবে।

নানা রোগের সমস্যায়

• কিছু পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, সরষের তেলের ভিতর থাকে ক্যানসার প্রতিরোধের গুণ। এই তেলে থাকা লিনোলেনিক অ্যাসিড ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডে পরিণত হলে তা স্টম্যাক ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

• সরষের তেলে ভাল পরিমাণে মোনোস্যাচিউরেটেড ও পলিআনস্যাচিউরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড, ওমেগা থ্রি ও সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। ফলে ইসকেমিক হার্ট ডিসিজ হওয়ার প্রবণতা কমে যায় প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ। সরষের তেল শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল লেভেল কমিয়ে ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে কার্ডিয়ো ভাস্কুলার ডিসিজের প্রবণতাও কমে।

• প্রাকৃতিক উদ্দীপক হওয়ার জন্য সরষের তেল খিদে বাড়ানো ও দ্রুত হজমে সাহায্য করে।

• কখনও হঠাৎ পাওয়া চোটে পেশি অবশ হয়ে গিয়েছে? সরষের তেল দিয়ে মাসাজ করুন। দ্রুত ফিরে পাবেন সংবেদনশীলতা।

• সরষের তেল আমাদের ঠান্ডার সমস্যাতেও কাজে লাগে। সামান্য রসুন বাটা দিয়ে সরষের তেল মিশিয়ে বুকে ও পিঠে মালিশ করলে আরাম লাগবে। এ ছাড়া স্টিমিং পদ্ধতিতে গরম জলের সঙ্গে সরষের তেলের ঝাঁঝ নিলেও সর্দি-কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।

• রোজ সরষের তেল দিয়ে মাসাজ করলে গাঁটের ব্যথা ও আর্থ্রাইটিসের সমস্যা কমে। পেশি সচল হয়।

• আবার শ্বাসজনিত নানা সমস্যা, হাঁপানিতে সরষের তেল বুকে মাসাজ করলে আরাম পাওয়া যায়।

• দাঁতের যন্ত্রণা, হলদে ভাব কাটিয়ে সাদা রং ফিরিয়ে আনতে আধ চামচ সরষের তেল, এক চামচ হলুদ ও আধ চামচ নুন মিশিয়ে দাঁতে ঘষুন। রেহাই পাবেন দাঁতের সমস্যা থেকে।

• সরষের তেল মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। ডিপ্রেশন কাটাতে, স্মৃতিশক্তি ও মনঃসংযোগ বাড়াতে সরষের তেলের ভূমিকা অদ্বিতীয়।

তাই সরষের তেলের হাজারো গুণ মাথায় রেখেই কাজে লাগান শরীর সুস্থ রাখতে এবং রূপচর্চায়ও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Tips Mustard Oil
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE