Advertisement
E-Paper

বাজাও তুমি কবি

ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন-এর ‘জীবনস্মৃতি’ অনুষ্ঠানে। শুনলেন বারীন মজুমদার কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন প্রযোজিত রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ পাঠ, নৃত্য ও গীত সহযোগে পরিবেশিত হল নজরুল মঞ্চে। ১৯১২ সালে লিখিত ‘জীবনস্মৃতি’ বইয়ে চুয়াল্লিশটি অধ্যায় আছে।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

কুড়ি বছর পূর্তি উপলক্ষে ভবানীপুর বৈকালী অ্যাসোসিয়েশন প্রযোজিত রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ পাঠ, নৃত্য ও গীত সহযোগে পরিবেশিত হল নজরুল মঞ্চে। ১৯১২ সালে লিখিত ‘জীবনস্মৃতি’ বইয়ে চুয়াল্লিশটি অধ্যায় আছে। তার মধ্য থেকে মাত্র কয়েকটিকে সংগৃহীত করে সংগঠনের কর্ণধার প্রমিতা মল্লিক একই শিরোনামে যে পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তাকে সর্বজনীন করে তুলতে চেয়েছিলেন তার পিছনে ছিল গভীর নিষ্ঠা আর পরিশ্রম।

প্রমিতা যে কয়েকটি অধ্যায়কে বেছে নিয়েছিলেন তার মধ্যে ছিল বাল্মীকি প্রতিভা ও কালমৃগয়া গীতিনাট্যের সামান্য অংশ। বিশেষত যে সব জায়গায় গান নাচ অর্ন্তভুক্ত হতে পারে সেই অধ্যায়গুলিরও অংশ। স্বীকার করতেই হবে তা অবশ্যই প্রশংসনীয়। প্রমিতার একক কণ্ঠের কয়েকটি গান, বাল্মীকি প্রতিভার গান ও কালমৃগয়ার গান বাদ দিয়ে বাকি সব গানগুলি ছিল সম্মেলক ও আন্তরিক ভাবে নিখুঁত। পাঠে ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অশোক বিশ্বনাথন, অনসূয়া মজুমদার ও প্রমিতা স্বয়ং।

ভূমিকার গান হিসেবে যেটি বেছে নেওয়া হয়েছিল তা হল গীতবিতানের বিচিত্র পর্যায়ের ‘যে আমি ওই ভেসে চলে’। এর পরেই সৌমিত্র তাঁর সুললিত কণ্ঠে পাঠ শুরু করলেন বইটির সূচনা অংশ থেকে। তার পরেই এল অনসূয়ার ইংরেজিতে পঠিত বিদ্যালয় প্রসঙ্গ এবং সেই পাঠ শেষে এল ‘ঘর ও বাহির’ অংশের ‘খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে’ গানটি নৃত্য সহযোগে।

প্রমিতা একক কণ্ঠে যে তিনটি গান করেছেন তার মধ্যে সর্বোত্তম ছিল ত্রিতালে নিবদ্ধ বেহাগ রাগাশ্রিত দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা ব্রহ্মসঙ্গীত ‘তুমি বিনা কে প্রভু সঙ্কট নিবারে’। আর তৃতীয় গান ‘ভরা বাদর মাহ ভাদর’ যেন ছবি হয়ে ওঠে শর্মিলা বিশ্বাসের অপূর্ব নৃত্যাভিনয়ে। বাল্মীকি প্রতিভা ও কালমৃগয়া তপন মল্লিকের পরিচালনায় অ্যামেচার সুলভ। যদিও অন্ধমুনিরূপে শৌনক চট্টোপাধ্যায় ও প্রথম দস্যু রূপে অলোকেশ বাগচী গেয়েছেন চমৎকার। শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ সুন্দর অ্যারেঞ্জমেন্ট করেছেন।

মমতা শংকর ও প্রীতি প্যাটেল গান ও কবিতার সঙ্গে শুধু অঙ্গ সঞ্চালন করেছেন। ‘নীরব রজনী’তে মমতা শংকরকে মেনে নেওয়া গেলেও প্রীতি প্যাটেল রীতিমতন হতাশ করেছেন।

পাঠ্যাংশে সবাই যার যার অংশে অসাধারণ— তবুও অশোক বিশ্বনাথনের কণ্ঠ ও উচ্চারণ যেন শ্রোতাদের মন কেড়ে নেয়। শেষ হয় ‘বাজাও তুমি কবি’ গানটি সহ। সমগ্র নৃত্যানুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়েছিল মণিপুরী, ভরতনাট্যম, ওড়িশি ও কত্থক।

আমার মুক্তি

সম্প্রতি শিশির মঞ্চে মুক্তধারা শিল্পী গোষ্ঠীর অনুষ্ঠানে সংস্থার সদস্যরা প্রথমেই শোনালেন দশটি নজরুল গীতি। শেষ পর্বে ছিল নৃত্য-গীতি আলেখ্য ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। সুন্দর উপস্থাপনা। রবীন্দ্র নৃত্য-নাট্য চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, গল্পাভিনয় ‘ঘাতক’ এবং শ্রুতিনাটক রূপে ‘স্ত্রীর পত্র’ এই পর্বে মঞ্চস্থ হয়। নৃত্য পরিবেশন করেন ঊর্মিলা নৃত্য গোষ্ঠীর সদস্যরা। সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন নমিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিচালনায় ছিলেন ঊর্মিলা ভৌমিক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইন্দ্রানী সেন, মমতা শঙ্কর, মানস ভট্টাচার্য।

নবনীতার নতুন জীবন

‘অদৃশ্যম’ নাটকে

সংসারের জাতাকলে, ছেলে-মেয়ে, স্বামী সংসারের দেখভাল করতে গিয়ে অনেক নারীই তার নিজের সত্তাকে হারিয়ে ফেলে। সে কারণে একটা সময় এসে ভিড় করে শুধুই শূন্যতা, একাকিত্ব। জীবনের মধ্য গগনে এসে পৌঁছনো এমন এক নারীর নিজেকে পুনরাবিষ্কারের গল্প নিয়েই, দুর্গাদাস স্মৃতি সংঘের প্রযোজনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘অদৃশ্যম’ নাটকটি। এই কমেডি নাটকটির নির্দেশনায় প্রকাশ ভট্টাচার্য। নাটক লিখেছেন উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়।

মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যবয়স্কা গৃহবধূ নবনীতা একরাশ মন খারাপের মধ্যে ডুবে থাকে। কারণ আইনজীবী স্বামী মাধব নিজের কাজের জগতে ব্যস্ত। কৃপণ স্বভাবের এই মানুষটির মধ্যে বিন্দুমাত্র রোমান্টিকতা নেই! মেয়ে টুকলু (সুব্রতা সাহা) বিশ্ববিদ্যালেয়র ছাত্রী। গৃহকর্মেই কেটে যাচ্ছিল নবনীতার জীবন।

এরই মধ্যে ঘটনাচক্রে একটি স্মার্ট ফোন হাতে আসায় নবনীতা’র জীবনের একঘেয়েমিগুলো মুছে যেতে থাকে। সে নিজস্বী তুলতে থাকে। অদৃশ্য স্মৃতি, হারিয়ে যাওয়া অতীতকে খুঁজতে থাকে নবনীতা। আর ঘটতে থাকে অদ্ভূত সব ঘটনা। এই অংশ থেকেই জমে ওঠে নাটক, মজা হাসি বাস্তবতা ও রূপকের আশ্রয়ে।

নাটকে দৃশ্যমান জগতের বাইরে মানুষের মনোজগতের কথাও উঠে আসে সুন্দর কিছু রূপক দৃশ্যের উপস্থাপনায়। মজাদার আইনজীবীর চরিত্রে মঞ্চে হাসির ঝড় তোলেন কমল চট্টোপাধ্যায়। নবনীতা চরিত্রে নন্দিনী ভৌমিক প্রাণবন্ত। তবে আবেগ এবং উচ্ছ্বাসের মাত্রা একটু নিয়ন্ত্রিত হলেই ভাল হত। কথার মাঝে তাঁর গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের ব্যবহার ভাল লাগে।

অভিনয়ে উল্লেখযোগ্য সঞ্জয় দাস, অয়ন চট্টোপাধ্যায়, শিবশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, সুমন কর, গৌতম রুদ্র, সৌরভ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।

পিয়ালী দাস

মুগ্ধ রাধা

সম্প্রতি জ্ঞানমঞ্চে নৃত্যাঙ্গন কলাশ্রমের নৃত্যানুষ্ঠানে কত্থক নৃত্যে শিখা ভট্টাচার্য পরিবেশন করলেন শিববন্দনা ও ত্রিতালে নিবদ্ধ তোড়া, টুকরা প্রভৃতি নৃত্যপদগুলি। তবে কলাবতী রাগে তারানাটি প্রশংসার দাবি রাখে। শুরুতেই সংস্থার ছাত্রছাত্রীরা সমবেত নৃত্যে পরিবেশন করলেন ভরতনাট্যম নৃত্যাঙ্গিকে শব্দম, গণেশবন্দনা ও দুর্গাবন্দনা। অনুষ্ঠানে খুদে শিল্পীরা নজরুল গীতির সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে দর্শকদের মন ভরিয়ে দেয়। শেষ পর্বে ‘রাসলীলা’ ছিল একটি অন্যতম উপস্থাপনা।

যেখানে রাধার ভূমিকায় শিখার লাস্যময়তা ও কৃষ্ণের ভূমিকায় বাপ্পা চট্টোপাধ্যায়ের অভিব্যক্তি মুগ্ধ করার মতো।

চৈতি ঘোষ

পঁচিশ পেরিয়ে

‘বলতে বলতে পঁচিশ’। সুতপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক আবৃত্তি। নানা চেতনা, ভালবাসা, সৌন্দর্য ও প্রাণের রং — এ রকম নানা রংকে কবিতার মাধ্যমে নির্বাচিত করে সুতপা দেখাতে চেয়েছেন জীবন ও কবিতা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সংকলন তাঁর হলেও প্রেম, প্রেমের কবিতা, বিষাদ, প্রহসন সব একটি রেখায় বেঁধেছেন সঞ্চালক অভিনেতা বিপ্লব দাশগুপ্ত। এই সন্ধ্যায় ‘মন কেমনের কুয়াশা’ পাঠে শ্রীজাত অংশ নিলেন সুতপার সঙ্গে। বিষয়বস্তু বিচ্ছেদের মধ্যেই প্রেম। অন্যান্য কবিতাগুলির ক্ষেত্রে সুতপা কিছু অধিক আবেগ প্রয়োগ করলেও তাঁর কণ্ঠ অবশ্যই শ্রুতিশোভন, ভনিতাহীন। কিছু কবিতার সঙ্গে প্রবাল মল্লিকের চলচ্চিত্রায়ন রয়েছে। নাটকীয়তাকে নির্মাণ করা হয়েছে দৃশ্য পরম্পরার সাহায্যে। কবিতার সঙ্গে ছিল নাচ – তা যে দারুণভাবে সফল হয়েছে বলা গেল না। অমিতাভ দাশগুপ্তর ‘আমার নাম ভারতবর্ষ’-র সঙ্গে যে নাচ তা এক নিরক্ত শৈল্পিক উপস্থাপনা। আবার সুবোধ সরকারের ‘শাড়ি’তে সুতপা কণ্ঠ দিয়েই বিষাদের যে ছবিটি ফুটিয়ে তুলতে পেরেছিলেন সেটাই মর্মগ্রাহী হত। সেখানে নানারঙের কাপড়ের ব্যবহারের শেষে দেবলীনা দত্ত মুখোপাধ্যায়ের সাদা রঙের কাপড় ধরে রাখা মোটা দাগ বলেই মনে হয়।

বা ম

আমারে করো জীবনদান

‘রবি ভৈরবী’র অনুষ্ঠান।

‘রবি ভৈরবী’ আয়োজিত ‘রয়েছ নয়নে নয়নে’ শীর্ষক একক রবীন্দ্রসঙ্গীতের শিল্পী ছিলেন মনীষা বসু। যিনি দীর্ঘদিন সুচিত্রা মিত্রের কাছে গান শিখেছেন। সেই চেতনা থেকেই হয়তো সুচিত্রা মিত্রের জন্মদিনে একক গানের অনুষ্ঠান করে থাকেন। এ বারের গ্রন্থনার অংশ রবীন্দ্র লেখনী থেকে সংকলিত গুরুকে নিয়ে তাঁর কিছু নিজস্বতা বোধও যুক্ত হয়েছে এই লেখনীতে। পাঠ্যাংশটি শুনতে ভাল লাগে। পড়েছেন দেবাশিস বসু।

এ দিনকার পরিবেশিত গানগুলিতে তাঁর দক্ষতার পরিচয় যতটা বেশি ততটা দরদের নয়। আত্মবোধ ফুটে না উঠলে স্বরলিপি পাঠের সঙ্গে গানের যে ভিন্নতা ধরা পড়ে না – এ কথা প্রকাশ পেয়েছে অধিকাংশ গানেই। যেমন ‘আমারে ডাক দিল কে ভিতর পানে’ গানটিতে স্বতঃফূর্ততার বড়ই অভাব। আবার ধ্রুপদাঙ্গ ‘আমারে করো জীবনদান’ গানে মেজাজটি সম্পূর্ণ অক্ষত থাকলেও শুরুতেই সুর কম লাগে। পাঠ ও গান এইভাবে অনুষ্ঠান এগিয়েছে। ফলত প্রতিটি গানের আগে মনীষা সময় পেয়েছেন অনেকটা। একেবারে শেষের দিকে পাঁচটি গান তিনি পরপর শুনিয়েছেন। ‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে’ – গানটি নিষ্প্রভ পরিবেশনা। কারণ গানের কথায় যে আকুতি একবারের জন্যও তা ধরা পড়ল না। তা ছাড়া এই গানটি তিনি তালে গাইবেন, না মুক্ত ছন্দে এই দ্বিধায় থাকায় শেষ পর্যন্ত গানটি কোনওভাবেই হৃদয় স্পর্শ করল না। এভাবেই তিনি কয়েকটি গান শোনালেন যেগুলি হল ‘তোমার নাম’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ (বিনাতালে), ‘ডাকো মোরে আজি এ নিশীথে’ প্রভৃতি। তবে উল্লিখিত গানগুলিতে স্বরস্থানের অস্থিরতা থাকলেও শেষের কয়েকটি গানে তিনি তা কাটিয়ে ওঠেন এবং প্রাণ খুলে যে গানগুলি করেন সেগুলি হল ‘তোমরা যা বলো তাই বলো’, ‘না হয় তোমার যা হয়েছে তাই হল’ ও ‘পথিক পরান চল সে পথে তুই’। সহশিল্পীরা ছিলেন বিপ্লব মণ্ডল (তালবাদ্য), সীতাংশু মজুমদার (কি বোর্ড), অম্লান হালদার (বেহালা) ও সঞ্জীবন আচার্য (মন্দিরা)।

বা ম

সম্পর্কের আলোয়

সম্প্রতি আইসিসিআর-এ পায়েল চক্রবর্তী ডান্স অ্যাকাডেমি-র ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’ নৃত্যানুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মমতা শঙ্কর এবং অন্যান্যরা। অনুষ্ঠানে নজর কাড়লেন রুদ্রপ্রসাদ রায়ের শিব অঘোরী নৃত্য ‘ভাস্কর্য’, ‘সম্পর্কের আলো আঁধার’ প্রভৃতি নৃত্যগুলি। সংস্থার সব শিল্পীই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। ত্রুটিহীন সুন্দর পরিবেশনা।

Soumitra Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy