Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নিজের জন্য মিনিট দশ

গৃহবধূ হন বা চাকরিজীবী, বয়সের পাল্লা যখন ভারী হতে থাকে, নিজের খাতে একটু বেশি যত্ন তুলে রাখতেই হয়। তার নীল নকশাটা পড়ে দেখুন না!গৃহবধূ হন বা চাকরিজীবী, বয়সের পাল্লা যখন ভারী হতে থাকে, নিজের খাতে একটু বেশি যত্ন তুলে রাখতেই হয়। তার নীল নকশাটা পড়ে দেখুন না!

চিরশ্রী মজুমদার
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৩২
Share: Save:

চুরি। একটি নিখাদ চুরির গল্প। চুরি রূপ-লাবণ্য-যৌবন আর রিল্যাক্সেশন। তার জন্য বেজায় ব্যস্ত চব্বিশটি ঘণ্টা থেকে জাস্ট দশটা করে মিনিট সরিয়ে রাখতে হবে নিজের পার্সে। তা খরচ করুন শরীর-মন চর্চায় এবং জীবন-সৌন্দর্যের মানোন্নয়নে।
মূলমন্ত্র: সংসার, অফিসের টুকরো কাজের সঙ্গেই ‘মার্জ’ করে নিন এই নিজের দেখভালটুকু।

গ্ল্যামার লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যকর খাবারে। বর-বাচ্চার টিফিনের সঙ্গে নিজের জন্যও একটা স্যান্ডউইচ, দুটো ফল বেশি রেখে দিন। রোজ দুটো আপেল মাস্ট। ডােয়টে রাখুন টম্যাটো, গাজর, পাকা পেঁপে, বেদানা।

ছোলা, কাঁচা বাদাম ভিজিয়ে ফ্রিজে রেখে দিন। বাড়ি গোছানোর সময় ঘুরতে-ফিরতে মুখ চালাবেন। কর্মরতারা ব্যাগে রাখুন ওটমিল, ডাইজেস্টিভ বিস্কিট। ড্রাই ফ্রুটস খান, কাজুবাদাম বাদে। এ সবই হঠাৎ পাওয়া রোল-বিরিয়ানির দুষ্টু খিদের বিরাট হাঁ-টাকে বন্ধ রাখে। সঙ্গে প্রোটিন-ভিটামিনের ঢল নামিয়ে, চুল-ত্বক ঝলমলে, হাড়-দাঁত শক্ত করে, মোক্ষম ফিটও রাখে।

জিমে যেতেই হবে না। বাড়ান রক্ত-চলাচল। বাচ্চাকে স্কুলবাসে তুলতে, বাড়ি থেকে বাসস্টপ জোরে হেঁটে যান। কর্মরতারা বাড়ির এক স্টপ আগে নেমে তড়বড়িয়ে হেঁটে ফিরুন। চাকাওয়ালা আরাম-চেয়ার মানেই ব্যারাম-চেয়ার। তাই, কাজের ফাঁকে করিডরে হাঁটুন। নিয়ে নিন ফিটনেস ব্রেক। গ্রিন-টি, সিঁড়ির ব্যবহার, করিডরে জগিং বা লেডিস রুমে হাত-পা স্ট্রেচিং। বাড়িতে পোষ্য রাখুন, বাগানের শখ থাকুক। ওঠবোস, ছোটাছুটি হবে। বাচ্চার সঙ্গে খেলুন টেব্‌ল টেনিস। আপনার দুরন্ত এক্সারসাইজ। সঙ্গে ওর গেমিংয়ের অভ্যাসেও পড়বে লাগাম।

সন্ধে-রাতে টিভি-র লম্বা ব্রেকে বিরক্ত? এই সময়টায় হাত-পা’র নখ কেটে, পরিষ্কার রাখুন। নেলপলিশ না থাকলেও চলে। কিন্তু তা যেন আধখেঁচড়া ভাবে নখে না থাকে। বসে বসেই, টেনিস বল পায়ের পাতার নীচে রেখে, আগুপিছু করুন। পেশি ভাল থাকে। অঙ্গ সুঠাম হয়। পা উঁচু করে সাইক্লিং, চেয়ার ধরে স্কোয়াটস করে নিন। কোমর ভারী হবে না। ব্যথা-বেদনাও ত্রিসীমানায় ঘেঁষবে না।

চল্লিশ সবচেয়ে আঘাত করে ত্বকে ও চুলে। দাওয়াইও রয়েছে বাড়িতেই। স্নানের আগে ভিটামিন-ই, অলিভ অয়েলে টইটম্বুর তেল। গায়ে স্নানের জল থাকতেই শরীর-মুখে মেখে নিন ময়শ্চারাইজার, বডি-লোশন। আসছে শীত বা বাড়ছে বয়স, কারওরই সাহস হবে না জেল্লায় হাত বাড়ায়! জানেন তো, ঝামাপাথর প্রাকৃতিক স্ক্রাবার। আবার ওয়্যাক্সিংও করতে জানে। লেজার ও পার্লার বিহীন যুগে আলতো হাতে বৃত্তাকারে এ পাথর ঘষেই দেহ নির্লোম রাখা হত। শুধু পিউমিস স্টোন এক বার গায়ে ঘষে দেখে নেবেন। ভেজাল হলেই র‌্যাশ বেরোবে। আসল হলে মসৃণ ত্বক গ্যারান্টিড।

ঠান্ডা দুধে তোয়ালে ডুবিয়ে হপ্তায় তিন দিন মুখে রেখে, দশ মিনিট পাওয়ার-ন্যাপ। মিটবে ফেশিয়ালের প্রয়োজন। চুলে তেল মাসাজ করে গরম তোয়ালে জড়িয়ে মিনিট দশ রাখলে, স্পা-ও কমপ্লিট।

ঘরের কাজ করুন গ্লাভস পরে। অফিসের এসির রুক্ষতা থেকে বাঁচাবে ফুলস্লিভ জামা, পা-ঢাকা জুতো। ওতে রাস্তার ধুলো-ময়লাও আপনাকে ‘টাচ্’ করতে পারবে না। শোওয়ার আগে গরম জলে শাওয়ার মাস্ট। ওই দশ মিনিটই বয়স থেকে দশ বছর ধুয়ে ড্রেন দিয়ে বের করে দেবে। গালে ক্রিম মাসাজ করুন গোলাকারে, ত্বকের অন্যত্র উপর দিকে টেনে। এতেই চামড়া হবে নিভাঁজ। নাই হোক তা বয়স-বিতাড়ক দামি ক্রিম। ত্বকের সব রকম যত্ন নিতে একাই কুম্ভ মা-দিদিমার আমলের সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম। বুঝে নিন।

দশ মিনিট নিজের কিশোরী বয়সের প্রিয় গান শুনুন। মনে মনে ফিরে যাবেন ছটফটে দিনগুলোয়। ইয়ং, সুখী হরমোনরা দাপিয়ে বেড়াবে শরীর তন্ত্রীতে। সঙ্গে রাখুন নতুন যুগের অস্ত্রশস্ত্র। কালার স্প্রে, ড্রাই শ্যাম্পু, বডি-শেপার। দাম কম, কাজ বেশি। শ্যাম্পুর সময় পাননি? ড্রাই শ্যাম্পু স্প্রে করলেই, রেশমি চুলের রাপুনজেল! ডিনারের প্ল্যান? চুলের ক’টা গোছা তুলে, টেম্পরারি কালার স্প্রে। মিনিটে লুক চেঞ্জ। পোশাকের নীচে গলিয়ে নিন বডি শেপার। তৎক্ষণাৎ নিজেকে তন্বী দেখবেন আয়নায়।

চুল এমন ভাবে কাটান, মেসি বান, আলগোছা বিনুনি... এ সব নিমেষে করতে পারেন। এমন কেয়ারফুলি কেয়ারলেস সাজ অত্যন্ত সম্মোহক। মেকআপ, লিপকালার হবে গ্লসি। সাধারণ চুড়িদারেই অসাধারণত্ব আনবে রংদার স্টোল। আঙুলের বড় আংটি বা কানে শ্যান্ডেলিয়ার। যাই পরুন, শপিং করুন পোশাকের ফিটিংস দেখে। ড্রেপিংয়ের কায়দাটি জানলে, সম্পূর্ণা হয়ে উঠতে শাড়ির জুড়ি নেই।

অনুরোধ একটাই। এই মহামূল্য দশ মিনিট ফোন-ফেসবুককে দেবেন না। বরং, সংসার-সন্তানের চাপ একপাশে রেখে, দশ মিনিট কাটান শুধু দু’জনে। সম্পর্কের বাঁধনও মজবুত হোক।

দশ মিনিটে এমনই একশো রকম ভাবে ভাল থাকা যায়। হারিয়ে দেওয়া যায় জীবনের স্ট্রেস, যন্ত্রণাকে। টেনে ধরা যায় এগিয়ে-চলা বয়সের রাশ। তখন আপনি বলতেই পারবেন, ফর্টি ইজ দ্য নিউ থার্টি!


মডেল: তৃণা

মেকআপ: সন্দীপ নিয়োগী

পোশাক: ওয়েস্টসাইড

ছবি: অমিত দাস

লোকেশন: দ্য কনক্লেভ ক্লাব ভর্দে ভিস্তা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Wife Age Relaxation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE