Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

তিরিশ পেরোতেই মাঝরাতে হাঁসফাঁস

‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এর লক্ষণ। সাবধান করলেন ডা. শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়।কমবয়সিদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নজর কাড়ে। বেশির ভাগ সময়ই ব্যাপারটা এমন হয়, যে মানুষটা হয়তো দিব্যি খেলেটেলে বা চাকরি করে। হার্টের ব্যাপার তো দূর অস্ত, এমনিতে কোথাও কোনও সমস্যা নেই। হঠাত্‌ অজ্ঞান হয়ে গিয়ে কিছু করার আগেই সব শেষ। অপ্রত্যাশিত বলে ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া বয়সটাও কম।

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

প্র: মাঝরাতে দমবন্ধ অবস্থা। প্রাণ বুঝি গেল। অথচ বয়স মোটে তিরিশ।

উ: শুধু তিরিশ কেন, যে কোনও বয়সেই এমনটা এখন আকছার হচ্ছে।

প্র: কিন্তু এ সমস্যা তো কমবয়সিদেরই বেশি শোনা যাচ্ছে?

উ: কমবয়সিদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা নজর কাড়ে। বেশির ভাগ সময়ই ব্যাপারটা এমন হয়, যে মানুষটা হয়তো দিব্যি খেলেটেলে বা চাকরি করে। হার্টের ব্যাপার তো দূর অস্ত, এমনিতে কোথাও কোনও সমস্যা নেই। হঠাত্‌ অজ্ঞান হয়ে গিয়ে কিছু করার আগেই সব শেষ। অপ্রত্যাশিত বলে ব্যাপারটা মেনে নেওয়া যায় না। তা ছাড়া বয়সটাও কম।

প্র: এটাই জিজ্ঞেস করছিলাম। আগে কোনও অসুবিধে নেই। তার কী করে হঠাত্‌ হার্ট অ্যাটাক হয়?

উ: এটা সব সময় হার্ট অ্যাটাক নয়। সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। মানে হঠাত্‌ করে হার্টটা বন্ধ হয়ে গেল। দেখবেন, হার্ট অ্যাটাকে যেমন ঘাম, শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হতে থাকে, এ ক্ষেত্রে তেমন কিছুই হয় না।

প্র: তবে?

উ: বলা নেই কওয়া নেই হঠাত্‌ অজ্ঞান হয়ে যান রোগী।

প্র: সে তো নানা কারণে অজ্ঞান হতে পারে। স্ট্রোকের জন্যও হয়, সুগার পড়ে গিয়েও হয়। কিন্তু এমন প্রাণঘাতী অবস্থা, বুঝব কী করে?

উ: এ ক্ষেত্রে দেখবেন রোগীর পালস চলছে না। নাকের কাছে হাত দিলে দেখা যাবে শ্বাসপ্রশ্বাসও বন্ধ। অন্য কোনও কারণে অজ্ঞান হলে শ্বাসপ্রশ্বাস চলবে।

প্র: তবে তো হয়েই গেল...

উ: হাসপাতালে এমনটা হলে তক্ষুনি শক দিলে রোগী ভাল হয়ে যান।

প্র: কিন্তু বাড়িতে?

উ: বাড়িতে সেই মুহূর্তে মাথা ঠান্ডা রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করার ওপর কিন্তু রোগীর ভাল হয়ে ওঠা নির্ভর করছে।

প্র: সেটা কী?

উ: খুব তাড়াতাড়ি রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। তার আগে বাড়িতে সিপিআর দিতে হবে। মানে প্রথমে বুকের মাঝে সজোরে একটা ধাক্কা দিতে হবে। তার পর মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং আর বুকে মাসাজ করতে হবে।

প্র: বুকে সজোরে মারলে লাগবে যে?

উ: লাগাটাই তো দরকার। তাতে হার্ট আবার চলতে শুরু করবে। এই জোর ধাক্কা থেকেই রোগীর জ্ঞান ফিরে আসতে পারে। তখন আর কিছু করার দরকার নেই। না ফিরলে মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং আর কার্ডিয়াক মাসাজ করে যেতে হবে। এই ভাবে সিপিআর দিতে দিতেই রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে হবে।

প্র: কী রকম মাসাজ?

উ: একটা হাতের ওপর আর একটা হাত রেখে হার্টের ওপর চাপ দিতে হবে। হাত সোজা থাকবে। মাসাজ আর মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং-এর অনুপাতটা হবে ২ঃ১৫। মানে মুখ দিয়ে রোগীর মুখে দু বার ফু দিতে হবে, তার পর পনেরো বার মাসাজ।

প্র: কিন্তু এত সব সেই মুহূর্তে মাথায় আসবে? যা বললেন, ঠিক মতো হচ্ছে কি না, বুঝবই বা কী করে?

উ: আগে ভাগে সিপিআর প্রতিটা মানুষের শিখে রাখা দরকার। যে কোনও মুহূর্তে দরকার পড়তে পারে। অনেক অ্যাম্বুল্যান্সে শক দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে। সে রকম অ্যাম্বুল্যান্স পেলেও সুবিধে হয়।

প্র: কিন্তু সিপিআর শিখব কোথায়?

উ: আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে শিখতে পারেন। অনেক সংস্থা সিপিআর শেখায়। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

প্র: ঠিক মতো সিপিআর দিলে রোগী ভাল হয়ে যাবেন?

উ: সেই অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তা ছাড়া এ সব ক্ষেত্রে বেশ কিছু রোগী এমনি এমনি-ই ভাল হয়ে যান।

প্র: এর চিকিত্‌সা কি শুধু শক?

উ: শক দিয়ে সেই মুহূর্তে রোগীকে ভাল করা হয়। তার পর দরকার হলে আইসিডি নামের একটা যন্ত্র বসিয়ে দেওয়া হয়। এটা অনেকটা পেসমেকারের মতো। তাতে ভবিষ্যতে এ রকম আবার কখনও হলে এই যন্ত্রই শকের কাজটা করে দেবে।

প্র: এই সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট ব্যাপারটা আগে ভাগে কিছু টের পাওয়া যায় না?

উ: অনেক সময়ই না। বা বোঝা গেলেও অনেকে ব্যাপারটা গুরুত্ব দেন না।

প্র: কী রকম সমস্যা হলে ব্যাপারটা পরে এতখানি মারাত্মক হতে পারে?

উ: মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করা বা হঠাত্‌ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। বা ধরুন মাথা হঠাত্‌ ঘুরে গেল। এ রকম কখনও-সখনও হলে ডাক্তারকে জানানো দরকার। পরিবারে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট কারও হয়ে থাকলে বিশেষত কমবয়সি কারও তবে সতর্ক হতে হবে।

প্র: যা বুঝছি, এর কোনও বয়সের ছাড় নেই। মানে প্রত্যেককেই এটা মাথায় রাখতে হবে?

উ: হ্যাঁ। যাদের এক বার হয়েছে, তাদের আবার হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। তা ছাড়া হার্টের আর্টারিতে ব্লক থাকলে, বা আগে হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকলে সতর্ক হতে হবে। হার্টের মাসলের কোনও সমস্যা বা জন্মগত হার্টের সমস্যা থাকলেও আগেভাগে সতর্কতা জরুরি।

প্র: মানে নানা রকম টেস্ট আর ডাক্তার?

উ: নিয়মিত চেকআপ জরুরি। ইসিজি অনেক ক্লু দেয়। কিছু ক্ষেত্রে ইলেকট্রোফিজিয়োলজি স্টাডি নামের একটি পরীক্ষা করা হয়। ইসকিমিয়া থাকলে করোনারি অ্যাঞ্জিয়োগ্রাফি সমস্যা মেটায়।

প্র: শুনেছি, যে মুহূর্তে সমস্যা, তক্ষুনি না করালে ইসিজি-তে কিছু ধরা পড়ে না?

উ: সেটা হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে। সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে ইসিজি সাহায্য করে।

প্র: জীবনযাত্রা বা খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে কোনও কিছু পরিবর্তন আনলে ব্যাপারটা এড়ানো সম্ভব?

উ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে। যেমন ধরুন সিগারেট, অ্যালকোহল বা খাওয়া দাওয়ায় রাশ টানলে হার্টের আর্টারিতে ব্লক এড়ানো সম্ভব। সব মিলিয়ে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে। ফলে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সম্ভাবনাও কমে।

যোগাযোগ- ৯৭৪৮৮১৬৪০৭

সাক্ষাত্‌কার: রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

বুক ধড়ফড়? সাবধান

• পরিবারে কমবয়সি কারও সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে

• মাঝে মাঝে বুক ধড়ফড় করলে

• হঠাত্‌ মাথাটা ঘুরে গেলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে

• হার্টের আর্টারিতে ব্লক থাকলে

• হার্টের মাসলের কোনও সমস্যা বা হার্টে জন্মগত কোনও সমস্যা থাকলে

• এক বার হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE