Advertisement
০৬ মে ২০২৪

হার্টের সমস্যা মানেই অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করা নয়

ওষুধ দিয়েও তা ভাল রাখা যায়। ডা. সত্যজিৎ বসু-র সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।ওষুধ দিয়েও তা ভাল রাখা যায়। ডা. সত্যজিৎ বসু-র সঙ্গে কথা বললেন রুমি গঙ্গোপাধ্যায়।

শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৪ ০০:১১
Share: Save:

প্র: হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝব কী করে?
উ: বুকের মাঝে চাপ ধরা ব্যথা হবে। মনে হবে বুকের মধ্যে কিছু চেপে বসে আছে। ব্যথাটা চোয়াল, ঘাড় বা পিঠের দিকে যেতে পারে। এই ব্যথা অন্তত মিনিট কুড়ি থাকবে। তার সঙ্গে প্রচণ্ড ঘাম হবে। শ্বাসকষ্ট হতে পারে। মুখটা ফ্যাকাশে বা কালচে হয়ে যেতে পারে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসবে। এই রকম উপসর্গ দেখলে বুঝতে হবে ব্যাপারটা হার্ট অ্যাটাকের দিকে গড়াচ্ছে।

প্র: সেই মুহূর্তে কোনও ওষুধ খেতে হবে?
উ: ৪টে অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট জলে গুলে আর ৪টে ক্লোপিড্রোজেল ট্যাবলেট গিলে খেয়ে নেবেন। এতে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়। এর পর একটা সরবিট্রেট জিভের তলায় দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন।

প্র: এখন তো কথায় কথায় শুনি অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে স্টেন্ট বসাতে হবে। দরকার না থাকলেও স্টেন্ট বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।
উ: না, সব সময় অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির দরকার হয় না। ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করেও দীর্ঘ দিন হার্টকে ভাল রাখা যায়। তবে হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হলে তিন ঘণ্টার মধ্যে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করতে হয়। তাতে হার্ট ভাল থাকে। রোগীও বেঁচে যান।

প্র: কোথায় অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি হবে, সেটা ঠিক করতে করতেই তো অনেকটা সময় চলে যায়।
উ: এখনই ঠিক করে রাখুন- বাড়িতে এ রকম কারও হলে কোন হাসপাতালে যাবেন। তাতে দরকারের সময় হাতড়াতে হবে না।

প্র: অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি মানে তো বিশাল টাকার ধাক্কা...
উ: যে কোনও বেসরকারি হাসপাতালে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা খরচ হয়। টাকা জমিয়ে একটা হেল্থ ইন্সিয়োরেন্স করে রাখুন। দরকারের সময় কাজে দেবে।

প্র: আচ্ছা, হার্ট অ্যাটাক হলে বাইপাস করা হয় না?
উ: হঠাৎ হার্ট অ্যাটাক হলে যদি পরীক্ষা করে দেখা যায় যে আর্টারিতে এমন ব্লক তৈরি হয়েছে, যার থেকে রোগীর প্রাণসংশয় হতে পারে, তবে তখনকার মতো বেলুন দিয়ে ব্লকটা খুলে দিতে হয়। পরে সুবিধে মতো বাইপাস করে নিলেই হয়।

প্র: আর ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা কখন?
উ: ধরুন কারও চলতে ফিরতে সমস্যা হচ্ছে। রোজকার স্বাভাবিক কাজকর্মে অসুবিধে হচ্ছে। এমনকী এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেলেই হয়তো কেউ হাঁপিয়ে উঠছেন, পাশাপাশি সিঁড়ি ভাঙতে কষ্ট হচ্ছে। আবার অনেকের বসে থাকলেও বুকে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। এ রকম হলে প্রথমে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। ওষুধে কাজ না করলে বাইপাস করতে হবে।

প্র: এ ক্ষেত্রে অপারেশন না করলে চলবে না?
উ: হার্টের আর্টারিতে ব্লক তৈরি হলে এ ধরনের উপসর্গ দেখা যায়। সমস্যা একটা আর্টারিতে হলে ওষুধ দিয়ে কাজ হয়। কিন্তু তিনটে আর্টারিতে ব্লক থাকলে আর তার সঙ্গে যদি হার্টের পাম্প করার ক্ষমতাও কমে যায়, সে ক্ষেত্রে বাইপাস করতেই হয়। তবে অপারেশনের আগে দ্বিতীয় কোনও ডাক্তারের মতামতও নিয়ে নেওয়া জরুরি।

প্র: বেলুন দিয়ে ব্লক খুলে দেওয়া যায় না? আবার বাইপাস কেন?
উ: তিনটে আর্টারিতে ব্লক তৈরি হলে বাইপাস করাই ভাল। কারণ স্টেন্টকে ঠিক রাখতে নিয়মিত রক্ত তরল রাখার ওষুধ খেয়ে যেতে হয়। ভবিষ্যতে কোনও অপারেশন করতে হলে এমনকী দাঁত তোলার দরকার হলেও সেই ওষুধটা বন্ধ রাখতে হয়। এ দিকে এক দিনের জন্য ওষুধ বন্ধ রাখলে স্টেন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাইপাস করলে এই অসুবিধে নেই। তা ছাড়া আমাদের দেশের মানুষদের ব্লকগুলোও অন্য রকম হয়। তার জন্য বাইপাস ভাল।

প্র: কী রকম?
উ: প্রচুর কার্বোহাইড্রেট ও তৈলাক্ত খাবার খাওয়ার জন্য একটা জায়গায় ব্লক হয় না। সারা আর্টারি জুড়ে ব্লক হয়। সে জন্য ওষুধ দিয়ে সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সবচেয়ে ভাল। ওষুধ কাজ না করলে বাইপাস। একমাত্র হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাক হলে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করতে হবে।

প্র: কম বয়সে বাইপাস করলে তো বছর পনেরো পরে আবার ব্লক হয়ে যায়?
উ: সেটা যাতে না করতে হয়, তার জন্য কমবয়সিদের ক্ষেত্রে ‘লিমা রিমা ওয়াই’ নামের এক ধরনের বাইপাস করা হয়। এতে মোটামুটি তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর পর্যন্ত আর কিছু করার দরকার হয় না। মানে ধরুন পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে কারও ‘লিমা রিমা’ করা হল। সে ক্ষেত্রে তিনি আশি বছর পর্যন্ত ভাল থাকবেন। মানে এক বার করেই একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে।

প্র: বাইপাসের মতো বড় অপারেশন তো এখন খুব ছোট করেও কেটে হয়। সেটা কি ঠিক?
উ: একটা বা দুটো আর্টারিতে ব্লক হলে অনেক সময় ছোট্ট করে কেটে অপারেশন করা হয়। কিন্তু এ সব ক্ষেত্রে অপারেশন করারই দরকার হয় না। ওষুধেই কাজ হয়। তিনটে আর্টারিতে ব্লক হলে তবে অপারেশন করতে হয়।

প্র: অপারেশনের পর সমস্যা যাতে না ঘুরে আসে, তার জন্য কী করব?
উ: কড়া হাতে জীবনধারা পরিবর্তন করে ফেলতে হবে। সঙ্গে নিয়ম বেঁধে ওষুধ খাবেন। এ রকম মেনে চললে আর্টারিতে ব্লক আর ঘুরে আসবে না।

প্র: কেমন পরিবর্তন?
উ: রোজ জোরে জোরে হাঁটতে হবে অন্তত ৪ কিমি। নিয়ম করে রোজ এক্সারসাইজ করতে হবে।

যাতে হার্টরেট বাড়ে। এ ছাড়া ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেসার থাকলে সেটা নিয়ন্ত্রণে রাখলেই রোগী অনেক দিন সুস্থ ভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।

প্র: খাওয়ার ব্যাপারেও তো অনেক বিধিনিষেধ থাকবে?
উ: হ্যাঁ। প্রথমত তেলবিহীন খাবারে অভ্যস্ত হতে হবে। তেল খেলেও রোজকার খাবারে যেন তার পরিমাণ ৫ থেকে ১০ মিলিলিটারের বেশি না হয়। রেড মিট খাবেন না। মাঝে মাঝে ছোট মুরগি গ্রিল বা বেক করে খেতে পারেন। দুধ বা দুধের তৈরি কোনও জিনিস খাবেন না। পাশাপাশি ভাত, রুটি, আলুর মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দিতে হবে। ধূমপান আর অ্যালকোহল একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে।

যোগাযোগ-৯৮০০৮৮১৬৫৭

জেনে রাখুন

• হার্টের কোনও সমস্যার জন্য স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধে হলে ওষুধ দিয়েই প্রতিকার করা যায়

• দুম করে হার্ট অ্যাটাক হলে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে ব্লক খুলে দেওয়া হয়

• হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ দেখা দিলে ৪টে অ্যাসপিরিন, ৪টে ক্লোপিড্রোজেল ট্যাবলেট খেয়ে চটজলদি হাসপাতালে পৌঁছতে হবে

• ওষুধ কাজ না করলে তবেই বাইপাস

• হার্টের তিনটে আর্টারিতে ব্লক থাকলে বাইপাস করা হয়

• অপারেশনের আগে দ্বিতীয় কোনও চিকিৎসকের মতামত নেওয়া জরুরি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

dr. satyajit basu rumi gangopadhyay heart attack
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE