প্রতীকী ছবি
আমরা যখন সঞ্চয় করি, তখন ঠিক কী চাই? চাই আমার মূলধন যেন একই থাকে। আর চাই যে, মূলধন থেকে যে টাকাটা আয় করছি, সে সুদেই হোক বা অন্য ভাবে– তা যেন মুদ্রাস্ফীতির হারের থেকে বেশি হয়। কেন?
প্রথমটারউত্তর আমরা জানি। দ্বিতীয়টাও খুব একটা কঠিন নয়। উদাহরণ দিয়ে বলি। ধরা যাক, আমি আমার সঞ্চয়ের উপর আয় করছি ৬ শতাংশ হারে। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতির হার ৮ শতাংশ। অর্থাৎ আগে যা এক টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম, তা কিনতে আজ ১ টাকা ৮ পয়সা লাগবে। এবার ভাবুন আপনি যদি ৬ শতাংশ হারে আয় করেন আরমুদ্রাস্ফীতির হার ৮ শতাংশ হয় তাহলে আসলে আপনার আয়ে ক্রয় ক্ষমতা কমেছে ২ শতাংশ।
এটা যাতে না হয়, তাই তো আপনার মাইনের সঙ্গে ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স যোগ হয়। কিন্তু আপনার সঞ্চয়ের সঙ্গে ডিয়ারনেস অ্যালাউন্স পাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে এমন ভাবে, যাতে সঞ্চয়ের উপরে আয়ের হার মুদ্রাস্ফীতির হারের থেকে বেশি হয়।সঞ্চয়ের উপর আয় দিয়ে বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে যেন না দেখেন যে, আপনার কেনার ক্ষমতা কমে গিয়েছে, আয়ের পরিমাণ একই থাকা সত্ত্বেও।অর্থাৎ প্রকৃত আয় বা রিয়েল ইনকামকে এক রাখাটাই আপনার কাছে সঞ্চয়ের বাজারের চ্যালেঞ্জ।
এ বার আসুন, একটু অঙ্কটা দেখে নিই। ঐতিহাসিক ভাবে গত ১০ বছরে সিপিআই বা খুচরো বাজারের মুদ্রাস্ফীতির গড় হার ছিল প্রায় ৫.৭৫ শতাংশ। সিআরআইএসআইএল কম্পোজিট বন্ড সূচক অনুযায়ী, একটি ঋণ তহবিল থেকে প্রায়৭.৩৫ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যায়। এর ফলে ১.৬০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির উপর সুরক্ষা ও প্রকৃত সুদের হার পাওয়া যায়।গড়ের অঙ্কটা দেখে উৎসাহিত বোধ করতেই পারেন। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এটা ১০ বছরের গড়। আর গত দশ বছরে কিন্তু খুচরো বাজারের মুদ্রাস্ফীতি ১.৪৬ শতাংশ থেকে ১১.৫০ শতাংশের মধ্যে ঘুরে বেরিয়েছে।
এই বার হচ্ছে আসল মজা। বন্ড বা ঋণপত্রের বাজারও শেয়ার বাজারের মতো আগামী দিন নিয়ে আশা বা নিরাশার উপর নির্ভর করে। ঋণপত্রের দাম মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়লে পড়ে, আর কমলে বাড়ে। এই বিপরীতমুখী সম্পর্কের কারণ না হয় পরে ব্যাখ্যা করা যাবে। মোদ্দা কথা হল, ঋণপত্রের বাজারটা একটু জটিল। তবে এটা মাথায় রাখুন, দীর্ঘমেয়াদে ঋণপত্র থেকে সুদ বাবদ আয়ের থেকে ঋণপত্র বিক্রি করে লাভ বেশি হতে পারে। স্বল্প মেয়াদের জন্য ঋণপত্রে বিনিয়োগ তাই না করাই ভাল।এর কারণ হল বাজার চঞ্চল। তার উপর রয়েছে সুদের ওঠা-পড়াকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য মুখিয়ে থাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার অবশ্য বৃহত্তর অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। কিন্তু মোদ্দা কথাটা হল, ঋণপত্রের বাজার একটু জটিল অর্থনৈতিক হিসাবে নড়াচড়া করে। আর তাই এই বাজারে বিনিয়োগ করে লাভের গুড় ঘরে তুলতে গেলে ভাল উপদেষ্টারকাছে যান। না হলে ক্ষতির আশঙ্কা আছে।
প্রতিবেদক ট্রাস্ট মিউচুয়াল ফান্ডের সিইও। বক্তব্য নিজস্ব
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy