Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Presents
Personal Finance 2023

শেয়ারে মুনাফা করতে চাইলে কোন কোন বিষয়ে নজর দিতে হবে

একটি স্টক কেনার আগে সেই স্টকের অনুপাত সম্পর্কে জেনে নেবেন। মূল্য থেকে আয়ের অনুপাত, ডেট অর্থাৎঋণ থেকে ইক্যুইটির অনুপাত এবং মূল্য থেকে বুক ভ্যালু অর্থাৎ বই মূল্যের অনুপাত।

স্টক কেনার আগে অবশ্যই স্টকের ফান্ডামেন্টাল দেখে নেওয়া উচিত

স্টক কেনার আগে অবশ্যই স্টকের ফান্ডামেন্টাল দেখে নেওয়া উচিত

শৈবাল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৮:০০
Share: Save:

পাঠকের প্রশ্ন: বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সাত বছর, বয়স ৩০। মাসে আয় ৪০ হাজার ও ব্যয় ১৫ হাজার টাকা। আপাতত একার সংসার। পেনশন নেই তবে জীবন বিমা রয়েছে ১০ লক্ষ টাকার। এই মূহুর্তে সঞ্চয় প্রায় ৩০ লাখ টাকার কাছাকাছি। কম দামে ভাল শেয়ার কিনতে চাই। কোন শেয়ার কিনলে মুনাফার সুযোগ বেশি? শেয়ার কেনার সঠিক সময় কোনটি?

উত্তর দিচ্ছেন আর্থিক উপদেষ্টা:

শেয়ার কিনতে গেলে তা যাচাই করার দু'টি রাস্তা আছে। একটা হল শেয়ারের ফান্ডামেন্টাল বা সেই সংস্থার আর্থিক শক্তি। আর অন্যটা হল টেকনিক্যাল। এই দ্বিতীয়টি হল যে শেয়ার আপনি কিনছেন তা বাজারের ওঠাপড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কী ভাবে ওঠা পড়া করে, এখন যে দামে তা বিক্রি হচ্ছে তার থেকে বাড়ার সম্ভাবনা কতটা, স্বল্প মেয়াদে আপনাকে সে কতটা লাভ দিতে পারে, দীর্ঘমেয়াদী লাভের সম্ভাবনাই বা কতটা, ইত্যাদি তা দেখে বিনিয়োগের পথ। এই পথ সম্পূর্ণ ভাবে রাশি বিজ্ঞান ভিত্তিক। আপনি কোনটি অনুসরণ করবেন তা চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিন। তবে যাঁরা শেয়ারে বিনিয়োগ করেন তাঁদের একটি বড় অংশই এই দু'টিই দেখে থাকেন।

১। সময়: এটিও কিন্তু শেয়ার নির্বাচনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ণায়ক। যে সময় শেয়ারটি ধরছেন সেই সময় তার দাম কোন অবস্থায় আছে। অর্থাৎ, দাম কি এমন জায়গায় যে এর পর পড়তে পারে? এবং যে স্টকগুলি বাছাই করেছেন তা ম্যাপিং করুন। অর্থাৎ, দেখুন বাজার কেমন। বাজারের ওঠাপড়ার সঙ্গে শেয়ারটির ওঠাপড়ার তুলনা খুঁজুন। দেখুন শেয়ারটি থেকে আপনার লাভ ঘরে তোলার সম্ভাবনা। যে বাজারে সংস্থাটি ব্যবসা করে তার অবস্থা কেমন? আর্থিক সঞ্চয়ের লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে নির্বাচন করুন, স্বল্প মেয়াদ, মধ্য মেয়াদ নাকি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ। এর উপর নির্ভর করবে কোন শেয়ার আপনি তুলবেন। বাজারে কিছু শেয়ার আছে যা খুব নির্ভরযোগ্য কিন্তু তার দাম বাড়ে খুব আস্তে। আবার কিছু শেয়ার আছে যার দাম খুব চঞ্চল। স্বল্পমেয়াদেই খুব ওঠে নামে। আবার কিছু আছে যাদের ওঠাপড়ার গতি মধ্যম মানের।

২। বিনিয়োগ কৌশল: আপনার বিনিয়োগের ধরন খুব গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ারেন বাফেটের কল্যাণে আজ সবাই ভ্যালু ইনভেস্টিং জেনে গিয়েছেন। এটা হল বাজার থেকে এমন সংস্থার শেয়ার খুঁজে বার করা, যার দাম সংস্থার ব্যবসার সম্ভাবনার থেকে কম। বাজার হয়ত এই সম্ভাবনাটা এখনও ধরতে পারেনি। তাই শেয়ারটির যা দাম হওয়া উচিত তার থেকে কম দামে বাজারে লেনদেন হচ্ছে। এই রকম শেয়ার ধরতে পারলে আপনার আখেরে লাভ বেশি। আপনি আবার এমন সংস্থার শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারেন যার ব্যবসার বৃদ্ধির হার তার শিল্পের গড় বৃদ্ধির থেকে বেশি। তবে এই সব শেয়ারের দাম কিন্তু একটু চড়া হয়। আর আপনি আয়ের জন্যেও বিনিয়োগ করতে পারেন। যা নির্ভর করবে ডিভিডেন্ড, বা নিয়মিত শেয়ার বেচা-কেনাকরে লাভ ঘরে তোলার দক্ষতার উপর।

৩। স্টক কেনার আগে ফান্ডামেন্টাল পরীক্ষা করুন: স্টকের বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে তাদের ন্যায্য মূল্যের তুলনা করে স্টক কেনার আগে বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই স্টকের ফান্ডামেন্টাল দেখে নেওয়া উচিত। একটি স্টক কেনার আগে সেই স্টকের অনুপাত সম্পর্কে জেনে নেবেন। মূল্য থেকে আয়ের অনুপাত, ডেট অর্থাৎঋণ থেকে ইক্যুইটির অনুপাত এবং মূল্য থেকে বুক ভ্যালু অর্থাৎ বই মূল্যের অনুপাত।

৪। সমসাময়িক অন্যান্য স্টকের তুলনায় এই স্টকের অবস্থান: অন্যান্য স্টকের তুলনায় আপনার বাছাই করা স্টকের অবস্থান কী রকম তা যাচাই করুন। দেখে নিন আপনার পছন্দের শেয়ার অন্য একই রকম সংস্থার তুলনায় কী রকম। এ ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে পারেন।

৫। শেয়ারহোল্ডার প্যাটার্ন: মাথায় রাখতে হবে শেয়ার বাজারে কিছু শেয়ার আছে যাদের দাম খুব অস্থির। এরকারণ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে যাকে ফাটকা বলি কিছু শেয়ারে তার চাপ একটু বেশিই। তাই যেসংস্থায় আর্থিক সংস্থা এবং প্রোমোটারের বিনিয়োগ বেশি সে সব সংস্থার দিকে নজর দেওয়ার ভাল। বিদেশি বিনিয়োগ যদি থাকে তার চরিত্র জানাও জরুরি। যাতে বিদেশের বাজারের চরিত্র বদলের সঙ্গে সঙ্গে আপনার বাছা শেয়ারের দামের ওঠা-পড়া অঙ্গাঙ্গিক ভাবে জড়িয়ে থেকে আপনার বিনিয়োগের ঝুঁকি না বাড়িয়ে দেয়।

৬। মিউচুয়াল ফান্ড হোল্ডিং: দেখে নিন যে শেয়ার আপনি কিনছেন তাতে বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড কতটা বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। যদি দেখেন এতে এই সংস্থাগুলির বিনিয়োগ বেশি তা হলে জানবেন আপনার পছন্দ খারাপ নয়। আসলে মিউচুয়াল ফান্ড নানান দিক দেখে বিনিয়োগ করে। ওদের কাছে বিনিয়োগ করার আগে যত তথ্য থাকে এবং যে ভাবে ওরা খতিয়ে দেখতে পারে তা একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে সাধারণ ভাবে থাকে না। তাই এটা আর কিছুই নয় আপনার নিজের পছন্দ যাচাই করার রাস্তা।

৭। সংস্থার আয়তন: মাথায় রাখতে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা কিন্তু ঝুঁকির। তাই যে সংস্থায় বিনিয়োগ করছেন তার ব্যবসার আয়তন সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। কারণ, বড় সংস্থার পক্ষে ঝড় ঝাপ্টা এড়ানো যত সহজ, ছোট সংস্থার পক্ষে তা ততটা সহজ নাও হতে পারে। তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে ছোট সংস্থা মানেই যে বিনিয়োগ এড়াতে হবে তাও নয়। তবে বড় আয়তনের সংস্থায় সব দেখে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি তুলনামূলক ভাবে কম।

৮। লভ্যাংশের ইতিহাস: বিনিয়োগকারীর উদ্দেশ্য যেহেতু বিনিয়োগের মাধ্যমে উপার্জন করা তাই স্টক কেনার আগে লভ্যাংশের ইতিহাসে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

৯। বিক্রি থেকে আয় বৃদ্ধি: কেনার তালিকায় এমন সংস্থা থাকা উচিত যাদের বৃদ্ধির হার প্রায় অবিচ্ছিন্ন। তার পর তাদের বিক্রি থেকে আয় কী ভাবে বাড়ছে তা খতিয়ে দেখা জরুরি। মাথায় রাখবেন সংস্থার আয় অনেক কারণেই বাড়তে পারে। এমনকি বিক্রি না বেড়েও। কারণ সংস্থার বিনিয়োগ থাকতে পারে, কর মকুব হতে পারে এবং আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই বিক্রি থেকে আয় কী ভাবে বাড়ছে তার উপর নজর রাখা জরুরি। আর তার পর দেখতে হবে সংস্থার আয় বৃদ্ধির হার অবিচ্ছিন্ন কিনা। এটা দেখার কারণ হল, বিক্রি থেকে আয় বাড়ল কিন্তু সংস্থার আয়ের ঘরে দেখা গেল শূন্য। তার অনেক কারণই থাকতে পারে। সেগুলি খতিয়ে দেখতে হবে।মাথায় রাখতে হবে, কোনও শেয়ার কেনা মানে সেই সংস্থার ব্যবসার উপর আস্থা। আর সেই আস্থার ভূমিটাও তো খতিয়ে দেখতে হবে।

১০। অস্থিরতা: কম অস্থির স্টকে বিনিয়োগ করলে এবং সাম্প্রতিক আপট্রেন্ড বিপরীত হলে মুনাফা পাওয়া যেতে পারে। সুতরাং, শেয়ারবাজারের অস্থিরতার উপর লাভ ক্ষতি নির্ভর করছে খানিকটা। এই বিষয়গুলি বিস্তারিত খতিয়ে দেখে তার পর স্টক বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অভিজ্ঞতা অর্জন করে এই বিভাগে নিজেকে একজন দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী হিসাবে তুলে ধরুন। তাই কোন শেয়ার কিনবেন তা দেখার আগে কেন কিনবেন এবং কী ভাবে কিনবেন সেই ব্যাপারে আগে নিশ্চিত হন। কোন শেয়ার কিনবেন তা কিন্তু এই দুই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেলে আপনি এমনিতে জেনে যাবেন কোন শেয়ার কিনবেন তার উত্তর।

প্রতিবেদক সঞ্চয় উপদেষ্টা। বক্তব্য নিজস্ব।

বিশেষজ্ঞদের কাছে সমাধান খুঁজতে সঞ্চয় নিয়ে আমাদের প্রশ্ন পাঠান — takatalk2023@abpdigital.inএই ঠিকানায় বা হোয়াটস অ্যাপ করুন এই নম্বরে — ৮৫৮৩৮৫৮৫৫২আপনার আয়, খরচ এবং সঞ্চয় জানাতেভুলবেন না। পরিচয় গোপন রাখতে চাইলে অবশ্যই জানান।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE