Nithari Serial Killings: All you need to know about the notorious incident dgtl
Noida
Nithari Serial Killings: ধর্ষণ, খুন, খুনের পর ধর্ষণ, নরমাংস ভক্ষণ! নৃশংসতার বিরলতম উদাহরণ নয়ডার এই হত্যাকাণ্ড
২০০৫ এবং ২০০৬ সালে নিঠারি গ্রাম থেকে নিখোঁজ হতে শুরু করে বহু বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। এই সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই ঘটনা সকলের নজর কাড়ে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২২ ০৮:৫৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
নিঠারি হত্যাকাণ্ড। ভারতের বুকে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডগুলির মধ্যে অন্যতম। এই কাণ্ডে শারীরিক নির্যাতন, খুন, নরমাংস ভক্ষণ এবং শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টার মতো একাধিক জঘন্য অপরাধ জড়িত ছিল। অপরাধের নৃশংসতা এবং বিরল প্রকৃতির কারণে মামলাটি বহু দিন ছিল সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
০২২৩
২০০৫ এবং ২০০৬ সালে নিঠারি গ্রাম থেকে নিখোঁজ হতে শুরু করে বহু বাচ্চা ছেলে-মেয়ে। এই সংখ্যা বাড়তে থাকায় এই ঘটনা সকলের নজর কাড়ে। তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্তকারী আধিকারিকেরা পৌঁছে যান মনিন্দর সিংহ পান্ধেরের বাংলোয়। এর পর থেকেই একে একে জট খুলতে থাকে নিঠারি হত্যাকাণ্ডের।
০৩২৩
নয়ডার ৩১ নম্বর সেক্টরের গ্রাম নিঠারি। এই গ্রামে ২০০৫-এর গোড়ার দিক থেকেই অস্বাভাবিক ভাবে অনেক মহিলা এবং শিশু নিখোঁজ হওয়ার খবর সামনে আসতে থাকে। এই গ্রাম থেকে শিশুদের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করা হলেও অনেক দিন পর্যন্ত পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার জন্য এই রহস্যের কোনও কিনারা হয়নি।
০৪২৩
পেশায় ব্যবসায়ী মনিন্দর সেক্টর ৩১-এর ডি-৫ বাংলোর মালিক ছিলেন। সুরিন্দর কোলি নামে এক যুবক ২০০৩ সালে মনিন্দরের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেওয়ার পরই নিঠারি গ্রাম থেকে একের পর এক শিশু এবং মহিলা নিখোঁজ হতে থাকে।
০৫২৩
রিম্পা হালদার নামে এক ১৪ বছর বয়সি কিশোরী ২০০৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি নিঠারি গ্রাম থেকে হঠাৎই নিখোঁজ হয়ে যায়। তার বাবা-মা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালেও বিশেষ কোনও সুবিধা হয়নি।
০৬২৩
ওই বছরেরই মার্চ মাসে মনিন্দরের বাংলোর পিছনের ড্রেনে প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়া একটি কাটা হাত দেখতে পায় কয়েকটি বাচ্চা ছেলে। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে জানানো হলে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষে পুলিশ দাবি করে, কোনও জন্তু মুখে করে এনে এই হাতটি ওখানে ফেলে গিয়েছে। সে রকম উদ্বেগের কিছু হয়নি বলেই গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করে পুলিশ।
০৭২৩
২০০৬ সালের ৭ মে নিঠারি গ্রামের পায়েল নামের এক যুবতী তার বাবা নন্দলালকে বলে যে, সে মনিন্দরের বাংলোয় যাচ্ছে। কিন্তু তার পর থেকেই সে নিখোঁজ হয়। পায়েলের বাবা তাঁকে খুঁজতে মনিন্দরের বাংলোতে পৌঁছলে মনিন্দরের গৃহকর্মী সুরিন্দর তাঁকে জানায় যে, পায়েল সেখানে কখনও আসেনি এবং সে এই বিষয়ে কিছু জানে না। তবে এই সময় মনিন্দর ঘরে ছিলেন না।
০৮২৩
নন্দলাল তাঁর মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ দায়ের করতে থানায় গেলেও পুলিশ তাঁর অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে। এক মাস ধরে পুলিশ এবং মনিন্দরের সঙ্গে কথা বলার পরও কোনও সুরাহা না হওয়ায় তিনি ২০০৬-এর জুন মাসে নয়ডার তৎকালীন এসএসপি-র কাছে গিয়ে পুরো বিষয়টি জানান।
০৯২৩
এসএসপির নির্দেশে পুলিশ নন্দলালের মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ নথিভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে যে, পায়েলের মোবাইল ফোনটি তখনও চালু ছিল এবং কেউ এই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিল। তদন্ত চলাকালীন পুলিশ এ-ও জানতে পারে যে, নিখোঁজ হওয়ার এক দিন আগে পায়েল এবং সুরিন্দরের মধ্যে ফোনে কথা হয়।
১০২৩
এর পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সুরিন্দরকে গ্রেফতার করলেও মনিন্দর তাঁকে শীঘ্রই ছাড়িয়ে নিয়ে আসেন। পুলিশও সুরিন্দরের বিরুদ্ধে ফোনে কথা বলা ছাড়া আর কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি। মামলার বিষয়ে পুলিশের তদন্তে বিরক্ত হয়ে নন্দলাল আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত পুলিশকে মামলাটির বিশদ তদন্ত করার নির্দেশ দেয়।
১১২৩
কিছু দিন তদন্ত চালিয়ে পুলিশ মনিন্দরের বাংলোর পিছনের ড্রেন থেকে নরকঙ্কাল ভর্তি অনেকগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় মনিন্দর এবং গৃহকর্মী সুরিন্দরকে। তাঁদের গ্রেফতারের ঠিক এক দিন পর বাংলোর পাশের একটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে অনেকগুলি নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
১২২৩
মনিন্দরের বাড়ির পাশে নরকঙ্কাল উদ্ধার হলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আর বিশেষ কোনও প্রমাণ পুলিশের হাতে আসেনি। তবে এই ঘটনায় দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয় এবং মানুষ অপরাধীদের বিচারের দাবি করতে থাকে।
১৩২৩
পায়েল নিখোঁজ মামলায় তদন্তের জট খোলে নিঠারির নিখোঁজ হওয়া বাকি শিশু এবং মহিলাদের ঘটনারও। জনরোষের চাপে উত্তরপ্রদেশ সরকার এই মামলা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেয়।
১৪২৩
৬০ দিনের পুলিশ হেফাজতের পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি সিবিআই। কিন্তু এর পরই হঠাৎ সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয় যে, সুরিন্দর দোষ স্বীকার করে বয়ান দিতে রাজি। সিবিআই আধিকারিকদের উপস্থিতিতে জেলাশাসকের সামনে সুরিন্দরের বয়ান রেকর্ড করা হয়। সুরিন্দর বয়ানে যা জানায়, সেই নৃশংসতার কথা শুনলে যে কারও গা শিউরে উঠবে।
১৫২৩
সুরিন্দর তার স্বীকারোক্তিতে জানায়, সে বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের প্রলোভন দেখিয়ে বাড়িতে ডেকে এনে তাদের খুন করত। সুরিন্দর এ-ও স্বীকার করে যে, খুনের পর সে মৃতদেহগুলির সঙ্গে সঙ্গম করত এবং সঙ্গম শেষে সে মৃতদেহগুলিকে কেটে রান্না করে খেত। এর পর কঙ্কালগুলি সে বাংলোর পিছনের ড্রেনে ফেলে দিত।
১৬২৩
এর পর উদ্ধার করা হয় আরও কিছু মানবকঙ্কাল। সিবিআই সন্দেহ করে, এর মধ্যে শিশু পর্নোগ্রাফি চক্রের যোগ আছে। মনিন্দরের বাড়ি থেকে ক্যামেরা লাগানো ল্যাপটপ এবং কিছু কামোত্তেজক বই উদ্ধার করা হয়। মনিন্দরের সঙ্গে কিছু নিরাবরণ শিশুদের ছবিও ওই বাংলো থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে পরে জানা যায় যে, এই ছবিগুলি মনিন্দর এবং তার নাতি-নাতনিদের।
১৭২৩
তবে মনিন্দরেরও শিশুদের যৌন নির্যাতন করার প্রবণতা ছিল বলেও মনে করেন আধিকারিকরা। তদন্তে এ-ও উঠে আসে যে, মনিন্দর মাঝেমধ্যেই বাড়িতে যৌনকর্মীদের ডেকে পাঠাতেন।
১৮২৩
এই ঘটনায় অঙ্গ পাচারের কোনও চক্র কাজ করছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকরা। পুলিশ অভিযুক্তের বাড়ির কাছে বসবাসকারী এক চিকিৎসকের বাড়িতে অভিযান চালায়। ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এর আগেও ১৯৯৮ সালে অঙ্গ পাচার করার অভিযোগ উঠেছিল।
১৯২৩
অভিযুক্ত মনিন্দর এবং সুরিন্দর, দু’জনেরই ব্রেন ম্যাপিং এবং পলিগ্রাফ পরীক্ষা করা হয়। এর পর সুরিন্দর অপরাধের কথা স্বীকার করলেও মনিন্দরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যেই মাটির নীচ থেকে উঠে আসতে থাকে একাধিক মানবকঙ্কাল।
২০২৩
পুলিশ জানায়, মোট ১৭টি নরকঙ্কাল উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যেই বেশিরভাগই কিশোরীদের কঙ্কাল। উদ্ধার হওয়া ১৭টি নরকঙ্কালের মধ্যে ১১টি ছিল কিশোরীদের। সিবিআই জানায়, মোট ১৫টি খুলি উদ্ধার করা হয়েছে। সুরিন্দর, তার মনিব মনিন্দরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিল বলেও সিবিআই আধিকারিকরা দাবি করেন। তবে সব তদন্ত শেষে সিবিআই জানায় যে, মনিন্দর এই খুনগুলির বিষয়ে কিছু জানতেন না এবং খুনগুলি তাঁর অনুপস্থিতিতে হয়েছে। যদিও পরে তাঁর বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল।
২১২৩
২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত মনিন্দর এবং সুরিন্দরকে ১৪ বছর বয়সি রিম্পাকে খুন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর ঠিক এক দিন পর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ‘বিরলতম’ বলে উল্লেখ করে তাঁদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় গাজিয়াবাদের বিশেষ দায়রা আদালত।।
২২২৩
অভিযোগ করা সত্ত্বেও গুরুত্ব না দেওয়ায় এবং কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ এনে স্থানীয় পুলিশকর্মীদের সাসপেন্ড করা হয়।
২৩২৩
২০১৭ সালে পিঙ্কি সরকার নামে ২০ বছর বয়সি এক মহিলাকে খুন-ধর্ষণ করার জন্যও দোষী সাব্যস্ত হন সুরিন্দর এবং মনিন্দর। এর মধ্যেই মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে বাঁচতে অনেক বার আদালতের কাছে আর্জিও জানিয়েছে মনিন্দর। তবে তা খারিজ করা হয়েছে।