Advertisement
০৫ ডিসেম্বর ২০২৫
Artificial human DNA

খোদার উপর খোদকারি! মানবদেহের রহস্য করায়ত্ত করতে গবেষণাগারে তৈরি হবে ডিএনএ, নির্মূল হবে রোগ-জরা?

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়েলকাম ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগে শুরু হচ্ছে কৃত্রিম ডিএনএ প্রকল্প। ১১৬ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে তারা। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিজ্ঞানী এই গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছেন। এই গবেষণাগারে প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি হবে মানবজীবনের একক কৃত্রিম ডিএনএ।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২৫ ১৩:৫৮
Share: Save:
০১ ১৯
Artificial human DNA

গবেষণা সফল হলে দুরারোগ্য ব্যাধি নিরাময় থেকে শুরু করে মেরামত করা সম্ভব হবে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গও। কল্পবিজ্ঞানের গল্প ও চলচ্চিত্রে যা দেখানো হয় তা নাকি হাতেকলমে করে দেখানো সম্ভব। কারণ ‘সিন্থেটিক হিউম্যান জিনোম’ নামের একটি প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছর ধরে গবেষণাগারে কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করার দিশা দেখাবেন বিজ্ঞানীরা।

০২ ১৯
Artificial human DNA

বিশ্বের অন্যতম চিকিৎসা বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ওয়েলকাম ট্রাস্ট’-এর উদ্যোগে শুরু হচ্ছে কৃত্রিম ডিএনএ প্রকল্প। ১১৬ কোটি টাকার অনুদান দিয়েছে তারা। অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ এবং ইম্পেরিয়াল কলেজ-সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক বিজ্ঞানী এই গবেষণার কাজে যুক্ত হয়েছেন। এই গবেষণাগারে প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি হবে মানবজীবনের একক কৃত্রিম ডিএনএ!

০৩ ১৯
Artificial human DNA

প্রতিটি প্রাণীর জিয়নকাঠি ধরা রয়েছে কোষের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের হাতে, যার নাম ডিঅক্সি-রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা ডিএনএ। ওই একটি উপাদানের হাতেই লুকিয়ে রয়েছে প্রাণ সৃষ্টির যাবতীয় ম্যাজিক। কী ভাবে কোন ধরনের প্রাণ সৃষ্টি হবে পৃথিবীতে সেই সংক্রান্ত তথ্য আগে থেকে ধরে রাখে এই ডিএনএ-ই।

০৪ ১৯
Artificial human DNA

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে ডিএনএ নামক একটি উপাদান থাকে, যা প্রয়োজনীয় জিনগত তথ্য বহন করে। জিনের রহস্যের চাবিকাঠি সম্পূর্ণ রূপে জানা গেলেই যাবতীয় অসুখবিসুখের উৎস-রহস্যও জানা যাবে। মানবদেহের প্রতিটি কোষে উপস্থিত ডিএনএ-র মধ্যে রয়েছে চারটি নিউক্লিওটাইড— অ্যাডেনিন (এ), থায়ামিন (টি), গুয়ানিন (জি), সাইটোসিন (সি)।

০৫ ১৯
Artificial human DNA

২০ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড, হাজার হাজার প্রোটিন বা অন্য রকমের অণু অথবা নানা রকমের কোটি কোটি কোষ বানানোর জন্য আর একটি অণুকে খুব জরুরি কিছু তথ্য বা ইনফরমেশন দিতে হয় ডিএনএ-কে। সেই উপাদানের নাম ‘রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড’ বা ‘আরএনএ’। এই পদ্ধতির নাম ‘ট্রান্সস্ক্রিপশন’। তাই ওই আরএনএগুলিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘মেসেঞ্জার আরএনএ’।

০৬ ১৯
Artificial human DNA

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এদের বলা হয়, ‘নিউক্লিওটাইড্‌স’ বা ‘নিউক্লিওবেসেস’। তারাই এমআরএনএ বা মেসেঞ্জার আরএনএ-কে গোপনে বলে আসে প্রাণ কী ভাবে তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যেই কিছু কিছু আরএনএ হয়ে ওঠে ‘বার্তাবাহক’।

০৭ ১৯
Artificial human DNA

‘হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট’-এর প্রথম ধাপে বারকোডের মতো সমস্ত মানব-জিন পড়তে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘সিন্থেটিক হিউম্যান জিনোম প্রজেক্ট’ নামে যে নতুন কাজটি শুরু হয়েছে তাতে বিজ্ঞানীরা শুধু ডিএনএ-র রহস্য উদ্‌ঘাটনই করবে না, ডিএনএ-র কিছু কিছু অংশ তৈরিও করতে পারবেন বলে ধারণা।

০৮ ১৯
Artificial human DNA

মানবদেহ অজস্র কোষের সমষ্টি। বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেই কোষের গভীরেই রয়েছে বিভিন্ন ব্যাধির রহস্য। আর সেই রহস্যের কারণ বুঝতে জিনের গভীরে যাওয়াই হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের উদ্দেশ্য ছিল। বিজ্ঞানীদের প্রথম লক্ষ্য, মানুষের ডিএনএ আরও বৃহত্তর ভাবে তৈরির উপায় খোঁজা, যত ক্ষণ না তাঁরা কৃত্রিম ভাবে একটি মানব ক্রোমোজ়োম তৈরি করতে পারেন। এর মধ্যে এমন জিন রয়েছে যা মানবদেহের মেরামতিতে এবং বার্ধক্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।

০৯ ১৯
Artificial human DNA

কেমব্রিজের ‘এমআরসি ল্যাবরেটরি অফ মলিকিউলার বায়োলজি’র গবেষক জুলিয়ান সেল সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁরা এমন একটি জিন থেরাপির সন্ধানে ব্রতী হয়েছেন যা বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনকে আরও উন্নত করবে। একই সঙ্গে কমাতে পারবে রোগের প্রকোপ।

১০ ১৯
Artificial human DNA

কৃত্রিম জিন আবিষ্কার করা সম্ভব হলে সেগুলি দিয়ে রোগপ্রতিরোধী কোষ তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গগুলি সারাই তোলার কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে। সেই সম্ভাবনার মধ্যে রয়েছে জীবন্ত কোষ। এর সাহায্যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার বিরুদ্ধে আক্রমণ বা অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত রোগীদের সুস্থ করে তোলাও সম্ভবপর হবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এমনকি, সেই কোষ ব্যবহার করে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।

১১ ১৯
Artificial human DNA

মানব জিন সংশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্য প্রায় যে কোনও রোগের চিকিৎসায় সরাসরি কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করেছেন প্রকল্পের গবেষণাদলের প্রধান অধ্যাপক জেসন চিন। জিন এবং ডিএনএ কী ভাবে আমাদের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে সে সম্পর্কে আরও বিশদে জানার জন্য এই গবেষণার অবকাশ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

১২ ১৯
Artificial human DNA

‘হিউম্যান জিনোম’, যা মানবদেহের জিনের বিন্যাসের সম্পূর্ণ মানচিত্র, সেটি ২৪ বছর আগেই প্রকাশ্যে আসে। সেই খসড়া হাতে পাওয়ার পর জেনেটিক্স বিপ্লবের সূচনা। কিন্তু জিনোম বিশ্লেষণ প্রযুক্তি দ্রুত এগিয়ে গেলেও সেই জিনোম কী ভাবে কোষের কার্যকারিতা এবং জীবনকে পরিচালিত করে সে সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা জিনপ্রযুক্তি গবেষকদের।

১৩ ১৯
Artificial human DNA

২০০১ সালে প্রথম বার মানুষের জিনোমের খসড়াটি প্রকাশ্যে আসে। মানুষের জিনোমে ৩০০ কোটি বেস-পেয়ার রয়েছে। প্রতিটি ডিএনএ সিকোয়েন্স পরস্পরের থেকে আলাদা। কিন্তু যদি কোষগুলোকে দেখা হয়, তা হলে প্রায় একই রকম লাগে। মানুষের জিনোমে রয়েছে প্রায় ২০-২৫ হাজার জিন।

১৪ ১৯
Artificial human DNA

কোন কোষে কোন জিনগুলি সক্রিয় রয়েছে, সেই অনুযায়ী তার চরিত্র তৈরি হয়। কোনও পেশির কোষে যে জিন সক্রিয় রয়েছে, তা স্নায়ুর কোষ কিংবা হৃৎপিণ্ডের কোষের থেকে ভিন্ন। কোষের ধরন বুঝতে হলে তার কোন জিনগুলি সক্রিয়, তা বোঝা দরকার।

১৫ ১৯
Artificial human DNA

ওয়েলকাম স্যাঙ্গার ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ম্যাথিউ হার্লসের মতে, যখন জিনের মধ্যে পরিব্যক্তি (মিউটেশন) ঘটে তখন সেগুলিতে ত্রুটি দেখা দেয়। আর তখনই শরীরে বাসা বাঁধে রোগ। কৃত্রিম উপায়ে তৈরি জিনোমের মাধ্যমে সেই ত্রুটিটুকু সারিয়ে দূর করে ফেলা সম্ভব হবে মারণব্যাধিকেও। পুনর্গঠন করা সম্ভব হবে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।

১৬ ১৯
Artificial human DNA

যত ক্ষণ না তাঁরা একটি সম্পূর্ণ কৃত্রিম মানব ক্রোমোজ়োম তৈরি করতে পারছেন তত ক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের প্রাথমিক লক্ষ্য মানুষের ডিএনএ-র বড় একটি অংশ তৈরির উপায় উদ্ভাবন করা। প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত গবেষকদের অধিকাংশই মনে করছেন গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে ডিএনএ তৈরি করলে তাঁরা বুঝতে পারবেন ডিএনএ আসলে কী ভাবে কাজ করে। ফলে তাঁদের সামনে খুলে যাবে জিনোম সংক্রান্ত নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরজা।

১৭ ১৯
Artificial human DNA

তবে খোদার ওপর খোদকারি নিয়ে বেশ শঙ্কিত বিজ্ঞানীমহলের একাংশ। জিনের উপরে কারসাজি, তাতে কাটাছেঁড়া করে বদল ঘটানোর ভবিষ্যৎ পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশের দাবি, কৃত্রিম উপায়ে বদলানো জিনটি যখন পরবর্তী প্রজন্মে বাহিত হবে, তখন সেটা ঝুঁকির হতে পারে।

১৮ ১৯
Artificial human DNA

জিনে অদলবদল ঘটিয়ে ‘ডিজ়াইনার’ শিশু তৈরি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এক অজানা বিপদের সামনে ফেলে দিতে পারে, এই ভয়ে এত দিন এ নিয়ে বহু বিধিনিষেধ ছিল। এই গবেষণার বিপক্ষে যাঁরা, তাঁরা মনে করছেন, কৃত্রিম ডিএনএ তৈরি করে হয়তো চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব আনা সম্ভব ঠিকই, আবার ফল উল্টোও হতে পারে। কিছু অসাধু বিজ্ঞানীর হাতে পড়লে এর উদ্দেশ্যই পণ্ড হয়ে যেতে পারে। বিজ্ঞানী প্যাট টমাস বলেন, ‘‘আমরা বিশ্বাস করি, সব বিজ্ঞানীই সমাজের ভাল করতে চান। কিন্তু বিজ্ঞানকে ক্ষতির উদ্দেশে, যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।’’

১৯ ১৯
Artificial human DNA

অন্য দিকে, এই প্রকল্পের অন্যতম সদস্য ও গবেষক জুলিয়েনের দাবি, গবেষণায় ক্ষতির থেকে উপকার পাওয়ার আশাই বেশি। এই গবেষণা প্রবীণদের জীবনের মান উন্নত করবে। সুস্থতার সঙ্গে বয়স বাড়বে। বার্ধক্যের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের শরীরে বাসা বাধে রোগ। এই পদ্ধতির সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গগুলিতে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন কোষ তৈরি করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy