Advertisement
E-Paper

স্বাধীনতা তুমি...

করবী নামের নতুন নার্সটি অফ-ডিউটি ছিলেন। কোনও কারণে ছাদে উঠেছিলেন। তিনিই দেখে ফেলেন মিনতিদেবীকে। চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করেন, না হলে...’

সঞ্জয় দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ০০:০০
ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

ছবি: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

সেই ভয়ার্ত ক্রন্দন দীপায়ন নিজেও শুনেছেন অনেক বার। প্রথম কয়েক বছর ক্যাম্পাসেই থাকতেন তিনি। তখনও তিনি অকৃতদার। মনস্তত্ত্বই ধ্যানজ্ঞান। ওয়ার্ডে রাতে টহল দিতে গিয়ে সেই অভিজ্ঞতা তিনি ভুলতে পারেননি। কেউ চিৎকার করছে, ‘মা আমি হারিয়ে গেছি, আমায় বাড়ি নিয়ে যাও মা। আমি হারিয়ে গেছি।’ কারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বা ফুলে ফুলে কান্না, কেন কেউ জানে না। কোনও পেশেন্ট হঠাৎ মারমুখী।

‘স্যর, আমায় ডেকেছিলেন?’

হেড নার্স মালতী দে। চিন্তায় ছেদ পড়ল দীপায়নের।

‘মিসেস দে, আপনি কী জানেন কাল রাতে আপনার উইং-এর মিনতি ধর আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলেন? অল্পের জন্য অবস্থা সামাল দেওয়া গেছে। করবী নামের নতুন নার্সটি অফ-ডিউটি ছিলেন। কোনও কারণে ছাদে উঠেছিলেন। তিনিই দেখে ফেলেন মিনতিদেবীকে। চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করেন, না হলে...’

‘জানি স্যর, শুনেছি।’

‘অন-ডিউটি নার্স কারা ছিল? খোঁজ নিয়েছেন?’

‘স্যর, তিন জন নার্স ছিল। সুলতা, অপর্ণা আর লায়লা। আমি তিন জনের সঙ্গেই কথা বলেছি।’

‘কী ভাবে হল এটা?’

‘আসলে স্যর...’

‘বলুন। হেড নার্স হিসেবে দায় কিন্তু আপনারই।’

দীপায়ন দেখলেন, অবিনাশবাবুর দিকে একটু সন্ত্রস্ত চোখে তাকাচ্ছেন মালতী দে।

‘কী ব্যাপার মিসেস দে? আমার মনে হচ্ছে আপনি এমন কিছু জানেন যেটা আমি জানি না। আবারও বলছি, এই ঘটনার দায় কিন্তু আপনার। সদুত্তর না পেলে আমি স্টেপ নিতে বাধ্য হব।’

দীপায়নকে অনেক দিন ধরে দেখছেন এঁরা। সকলেই জানেন, ওঁর এই কথাটা নিছক হুমকি না।

‘গত তিন দিন মিনতির ওষুধ পড়েনি স্যর।’

এটা আশা করেননি দীপঙ্কর। স্তম্ভিত হয়ে গেলেন তিনি! ‘ওষুধ পড়েনি! কেন? কী কী ওষুধ পড়েনি?’

‘কোনও ওষুধই তেমন পড়েনি।’

‘কেন!’

‘ওষুধ নেই স্যর! সাপ্লাই আসেনি এখনও।’

‘কী বলছেন আপনি? ক্রিটিক্যাল মানসিক রুগি এঁরা। এঁদের ওষুধ নেই?’ রাগে, বিস্ময়ে থরথর কাঁপছেন দীপায়ন।

‘আসলে... এ বার রিকুইজিশন দিতে একটু দেরি হয়ে গেছে স্যর।’

অবিনাশ রাহার কথা শুনে দীপায়নের মনে হল ওর টুঁটি টিপে ধরেন। নিজেকে সংবরণ করলেন তিনি।

‘আমাদের যে ভাবে মেডিসিন অর্ডার দেওয়া হয়, তাতে তিন-চার সপ্তাহ সাপ্লাই না এলেও আমাদের অসুবিধা হওয়ার কথা না! ক্যাবিনেটে সব সময় স্টক থাকার কথা। জানেন না আপনারা?’

কথাটা থেমে থেমে, চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন দীপায়ন। তাঁর মনে হচ্ছে, সমুদ্রে ডুবে থাকা একটা হিমশৈলের মাথাটুকু হঠাৎ বেরিয়ে পড়েছে। অবিলম্বে ওষুধপত্রের একটা হিসেব করতে হবে তাঁকে। নিশ্চয়ই ওষুধ সরানো হচ্ছে আলমারি থেকে! কত দিন থেকে চলছে এই খেলা?

‘অর্ডার দিতে দেরি কেন হয়েছে?’

‘আসলে...’ ইতস্তত করছেন অবিনাশবাবু।

‘আসলে কী?’

‘আসলে এ বার তো স্বাধীনতার ষাট বছর হতে চলেছে, তাই আমরা স্টাফরা স্বাধীনতা দিবসের দিন একটা গানবাজনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। বড়সাহেব একটু বাজেটও দিয়েছিলেন আমাদের। বাকিটা আমরা স্পনসরশিপ জোগাড় করেছি। সেই নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলাম স্যর।’

অবিনাশ রাহার কথা শুনে রাগে ফেটে পড়ার বদলে সবাইকে চমকে দিয়ে হাহা হেসে উঠলেন প্রতিষ্ঠিত মনস্তত্ত্ববিদ দীপায়ন সেনগুপ্ত।

স্বাধীনতার ষাট বছর পর সমাজের ব্রাত্য একাংশের অবস্থা কী করুণ হতে পারে, এই পেশায় গত পনেরো বছর ধরে প্রতি দিন তিনি দেখছেন। মানসিক ভারসাম্যহীন এই সব নারী-পুরুষেরা সমাজের মূল-ধারার নিষ্করুণ ঔদাসীন্যের স্বীকার। এখানে যে সব কর্মীরা কাজ করে, তারাও তো গত দশ বছর ধরে দেখছে এই অসহায় মানুষগুলোকে। তার পরও এদের ইচ্ছে হয়েছে স্বাধীনতার ষাট বছর উপলক্ষে গানবাজনার অনুষ্ঠান করার! আর ওষুধ চুরি করে স্বাধীনতার অজুহাত দেখাচ্ছেন ভদ্রলোক! এই অবস্থাতেও মনে মনে অবিনাশ রাহার উপস্থিত বুদ্ধির তারিফ করলেন দীপায়ন। আজকের দিনটা তাঁর মনে থাকবে!

তবে সে দিন আরও বিস্ময় তোলা ছিল দীপায়নের জন্য। অবিনাশ রাহাকে তিনি সবে বলতে যাবেন যে তাঁর বিরুদ্ধে একটা অনুসন্ধান কমিটি বসবে, এবং কমিটি যত দিন না রিপোর্ট পেশ করে, তত দিন সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী তাঁর চাকরির উপর সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি হবে, ঠিক তখন গ্রিন হাউসের দিক থেকে একটা প্রচণ্ড হইচই ভেসে এল।

জানলা দিয়ে দীপায়ন দেখলেন, দূর থেকে চিৎকার করতে করতে ছুটে আসছে শঙ্কর। তার পিছনে ছোটখাটো একটা ভিড়। শঙ্করের দু’হাত আকাশের দিকে তোলা। টিভিতে দেখানো জেহাদিদের মতো, তার ঊর্ধ্ববাহুর দুই দৃঢ় মুঠির মধ্যে রোদ পড়ে ঝকঝক করছে একটা বন্দুক!

১৫

ঝকঝকে লজ্জা

দিনটা ঝকঝকে হলে জুতোর আওয়াজটা বেশি স্পষ্ট হয় কেন, সেটা কোনও দিনই ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি হরিমতি। ভিজে দিনে, মেঘলা দিনে জুতোর আওয়াজটা কেমন নেতিয়ে যায়। আর সকাল থেকে রোদ উঠলে জুতোর শব্দ শুনে ঠিক বোঝা যায় লোকটার তাড়া আছে কি না, মানুষটা মোটা কি না, স্টেশনে ঢোকার মুখে এক বার থামবে কি না! মরদ না মেয়েছেলে, সেটা তো বোঝা যায়ই! ছেলেদের জুতোর চেহারা যেমন আলাদা, শব্দও আলাদা। আর মেয়েদের আলাদা।

রাস্তার উপর ঝুঁকে বসে দিনের বেশির ভাগ সময়টা কাটে হরিমতির, তাই পথচলতি মানুষের পায়ের দিকেই তার চোখ পড়ে আগে। বেশির ভাগ সময় তো হাঁটুর উপরের মানুষটার দিকে তাকানোর সুযোগই হয় না। জুতোজোড়া নিজস্ব আওয়াজ তুলে বেরিয়ে যায় সে মুখ তুলে তাকানোর আগেই।

আজ যেহেতু সকাল থেকেই বেশ চড়া রোদ, তাই জুতোর শব্দ বুঝতে কোনও অসুবিধেই হয়নি তার। ঠিক যখন দশটা বাজে, ইস্টিশনের বড় বাড়ির ছায়াটা রাস্তার মাঝামাঝি চলে এসেছে, তখনই পিছন থেকে সেই শব্দটা শুনেছে সে। আর শোনামাত্রই বুকটা ধড়াস করে উঠেছে! পিচঢালা রাস্তার উপর হঠাৎ একসঙ্গে অনেকগুলো ভারী বুট এসে পড়ল ধপাধপ করে। তার সঙ্গে গাড়ির দরজা ঝপঝপ করে খোলা-বন্ধ করার আওয়াজ। রাস্তার পিচে গাড়ির টায়ারের ঘষটানি। পুলিশ!

একসঙ্গে এতগুলো বন্দুক আগে কখনও দেখেনি হরিমতি! রোদ পড়ে ঝকঝক করছে বেয়নেটগুলো। তাই কিছু বুঝে ওঠার আগেই সজোরে পিঠের উপর একটা ধাক্কা যখন এসে পড়ল, তখন আগুপিছু চিন্তা না করেই পড়িমরি দৌড় লাগাল হরিমতি। কিন্তু একটা ঠ্যাংই তো ভাল আছে। এক পায়ে লেংচে লেংচে কত দূর দৌড়বে হরিমতি? আর অত জন পুলিশ! দু’পাও যেতে পারল না সে। এক জন জোয়ান মতো পুলিশ তাকে হিড়হিড় করে টানতে টানতে ভ্যানে তুলে দিল।

হরিমতির তখন একটাই চিন্তা! কেঁদো বাচ্চাটা যখন তখন খিদেয় কেঁদে উঠত বলে নাম রেখেছিল কেঁদো। সেই কেঁদোর এখন চার বছর বয়স। সকাল থেকেই এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায় ছেলেটা। রোদ পড়লে আবার ঠিক ফিরে আসে হরিমতির কাছে। মাঝে মাঝে রাস্তার উলটো দিকের ঝুপড়ি হোটেলের সনৎদা কেঁদোকে দিয়ে ছোটখাটো কাজ করিয়ে নেয়। সনৎদা লোক ভাল। কেঁদোকে দিয়ে কোনও কাজ করালে বাচ্চাটাকে পঞ্চাশটা পয়সা দেয় সে। কখনও-সখনও এক দু’টাকাও দেয়। কোনও কোনও দিন রাতে দরকার হলে সনৎদার বাসন মেজে দেয় হরিমতি। তাকে অবশ্য পয়সা দেয় না সনৎদা, কিন্তু ডাল বা তরকারি কিছু পড়ে থাকলে তাকে আর কেঁদোকে খেতে দেয়। সেটাই তো অনেক! কখনও-সখনও আধখানা ডিমও জুটে যায়! আর সনৎদা রাত সাড়ে এগারোটা-বারোটায় দোকান বন্ধ করে চলে গেলে ওই ঝুপড়ির পিছন দিকে একটা কোনাতেই কেঁদোকে নিয়ে শুয়ে থাকে সে।

চিত্তরঞ্জন স্টেশনের সামনের এই জায়গাটায় সে অনেক দিন ধরে ভিক্ষে করছে। তার স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজ করত। সে যখন ছিল, তখন তার সঙ্গেই কাজে বেরত হরিমতি। স্বামী যে সব জায়গায় কাজ পেত, সেখানেই জোগাড়ের কাজ করত সে। ইট, পাথর, সুরকি মাথায় করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ। অনেক সময়েই দুধের শিশুকে পিঠে বেঁধে মজুর খেটেছে সে। প্রচণ্ড খাটুনি, কিন্তু দিন গেলে পয়সা পাওয়া যেত। তার পর সেই যে দিন পা পিছলে তিনতলা সমান উঁচু ভারা থেকে পড়ে গেল, আর এমন ভাবে পড়ল যে ডান পা’টা একেবারে থেঁতলে গেল, সে দিন থেকেই তো জীবনটা বদলে গেল তার!

কয়েক দিনের মধ্যেই দুধের শিশুটাকে তার ঘাড়ে ফেলে রেখে মিনসেটা কেটে পড়ল। তার পর আর যাওয়ার কোনও জায়গা ছিল না হরিমতির। তারা থাকত খালের ধারের বস্তিটায় একটা ঘরে। তা ভাড়া না পেলে সে ঘরে থাকতে দেবে না কি বাড়িওয়ালা? সে অবশ্য চেষ্টা করেছিল, বাড়িওয়ালা রমেশবাবু যদি শরীরের বদলে তাকে কুঁড়েঘরটা আঁকড়ে থাকতে দেয়। কিন্তু সে ভাল ভাল কথা বলে শরীরটা ভোগ করল হরিমতির, তার পর মাস দুয়েক পরে তার গুন্ডারা এসে হরিমতিকে বার করে দিল। বলেছিল, মানে মানে কেটে না পড়লে বাচ্চাটাকে ফালাফালা করে দেবে! ভয়ে বুক শুকিয়ে গিয়েছিল হরিমতির।

ছেলেটা ছাড়া আর তো কেউ নেই তার। আর যত বড় হচ্ছে ততই দুরন্ত হচ্ছে কেঁদো। একটু আগেই কোথায় যেন ছুটে চলে গেল! ফিরে এসে দেখবে হরিমতি নেই! তখন কী করবে ছেলেটা?

পুলিশবাবুদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিল হরিমতি, অনেক কাকুতি-মিনতি করেছিল, ‘ও বাবা গো, তোমার পায়ে পড়ি, আমার ছেলেটারে খুঁজি আনতি দাও। এখেনিই কোতাও আছে গো, আমি পালাবনি... পায়ে পড়ি গো বাবু...’

কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি। তার কথা তখন শোনার সময়ই নেই কারও! কী দৌড়োদৌড়ি, চেঁচামেচি। হঠাৎ কী যে হল! সবাই কি পাগল হয়ে গেল না কি?

ভ্যানে উঠে দেখে, সেখানে তার মতো আরও অনেকে। সুযোগ পেলেই প্ল্যাটফর্মে ঘুরে ঘুরে ভিক্ষে করে হারুদা। বুড়ো মানুষ। একটা চোখে দেখে না। ট্রেনে উঠে গান গায় রতনলাল। ভারী ভাল গলা ছেলেটার। সিনেমার গান, ধর্মের গান, সব এক দু’বার শুনেই কেমন গলায় তুলে ফেলে। কিন্তু খুব মেজাজ। মাঝে মাঝেই এর-ওর-তার সঙ্গে হাতাহাতি করে বসে। তাকেও ছাড়েনি পুলিশ। আর শুধু চিত্তরঞ্জনেই নয়। আশেপাশের জায়গা থেকেও অনেককে ধরেছে নিশ্চয়ই! ভ্যানের মধ্যে অনেক লোক। সবাইকে চেনে না হরিমতি।

ওই ডামাডোলের মধ্যেই কেঁদোর খবর পাওয়া গেল হারুদার কাছ থেকে। হরিমতির পাশেই বসে ছিল হারুদা। তাকেও টানতে টানতে নিয়ে এসেছে পুলিশ। ধাক্কা মেরে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভ্যানে। হরিমতিকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে হারুদা বলল, ‘কাঁদছিস কেন তুই? এই তো একটু আগেই তোর ছেলেটাকে দেখলাম দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে দৌড়ে খেলে বেড়াচ্ছে।’

‘ফিরে এসে তো আমায় দেখবে না, হারুদা! তখন কী হবে? মা ছাড়া তো কিছু জানে না ছেলেটা!’

‘জানে না, জানবে। তুই যেখানে বসিস ওইখানেই ঠিক ঘুরঘুর করবে, দেখিস। তুই ফিরে এসে ঠিক দেখতে পাবি।’

‘আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, তুমি জানো?’

‘কোথায় আবার! থানায়।’

‘কেন? আমরা কী করিছি?’

‘আমরা আবার কী করব! স্বাধীনতা না কে একটা যেন আসতেছে। স্টেশন সাফ করার হুকুম হয়েছে। তাই আমাদের দু’দিন লক-আপে রাখবে। তার পর স্বাধীনতা চলি গেলি ছেড়ে দেবে।’

‘স্বাধীনতা কে?’

‘তা আমি কী জানি! হবে কোনও কেউকেটা!’

‘তোমায় কে বলল?’

‘আমারে না। ওই যে মোটা মতো হাবিলদার, উনি ইস্টিশানে চেকারবাবুকে বলছিল, আমারে ধরে আনার সময়।’

ক্রমশ

Mystery Novel রহস্য উপন্যাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy