E-Paper

কেয়ার গন্ধ

জনমেজয় বললেন, “ওরা অনেকেই বরিশালের মানুষ। নট্ট ওদের পদবি। তবে এঁরা সব যাত্রার মিউজ়িক কনসার্টের শিল্পী ছিলেন।”

অভিজিৎ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৭:৫৯
ছবি: সৌমেন দাস

ছবি: সৌমেন দাস

পূর্বানুবৃত্তি: জনমেজয় চট্টোপাধ্যায় এবং দীপঙ্কর ঘোষ— এঁরা দু’জনেই চাকরি করেন একটি ক্ষয়িষ্ণু দফতরে। নাম রিফিউজি রিহ্যাবিলিটেশন। জনমেজয় এক সকালে ফোন করে জানতে পারেন, দীপঙ্করবাবু আগের রাতে চন্দননগর ফেরার শেষ ট্রেনটি মিস করেছেন। রাত কাটিয়েছেন হাওড়া প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চিতেই। রাতে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছেন এবং স্বপ্নের মধ্যে পেয়েছেন কেয়াফুলের গন্ধ। জনমেজয় দীপঙ্করকে প্রস্তাব দিয়েছেন যাত্রায় সম্রাট আকবরের ভূমিকায় অভিনয় করার। জনমেজয় ছিলেন এককালের নটসম্রাট, সুদর্শন যাত্রানায়ক জয় চ্যাটার্জি। তাঁর স্মৃতিপট জুড়ে যাত্রাজীবনের সোনালি সময়ের আনাগোনা, নামীদামি অভিনেতাদের অভিনয় দেখার বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা। পুরুলিয়ার যৌথ একান্নবর্তী পরিবার, ভূতমুড়ি চালের ধোঁয়াওঠা ভাত, আলুসেদ্ধ আর গরম চচ্চড়ি খাওয়ার মধুর কৈশোর বারবার হানা দেয় তাঁর মনে। এমন সময় ফের ফোন করেন দীপঙ্করবাবু। তিনি ভেদ করতে পেরেছেন স্বপ্নে কেয়াফুলের গন্ধ পাওয়ার রহস্য।

একটু চুপ করে থেকে ঘোষসাহেব বললেন, “আপনাকে আর একটা কথা বলব আজ।”

“বলুন না।”

“আমার পরিবারে যাত্রার চল ছিল। আমার বাবা যাত্রাশিল্পী ছিলেন।”

জনমেজয় উৎসাহী হয়ে উঠলেন। বললেন, “তাই নাকি!”

“আমার পিসেমশাইয়ের নাম বললেইচিনতে পারবেন!”

“তাই নাকি! কী নাম!”

“অলোককুমার!”

“আরেব্বাস! তা হলে তো যাত্রা আপনার রক্তে রয়েছে। হয়ে যাবে সম্রাট আকবর।”

হাসলেন দীপঙ্কর।

বললেন, “কোথায় আছি জানেন!”

জনমেজয় বললেন, “আন্দাজ করতে পারছি, ইন্দ্রসভায়। কারও মতে বিচিত্তিপুর। বিখ্যাত অনেক মানুষই বলেছেন,আনন্দ-জগৎ।”

দীপঙ্করবাবু বললেন, “ট্রামলাইন ধরে চলেছি, ট্রামও তো আর চলে না। আর এই তো রথ এসে গেল, তেমন কিছু চোখে পড়ছে না। একদম যে নেই তা নয়, কিছু কিছু বুকিং হচ্ছে।”

“আপনি ঠিক কোন জায়গায় আছেন?”

“নট্টদের দোকানের সামনে। পাখোয়াজ হাতে নিয়ে দেখছি।”

জনমেজয় বললেন, “ওরা অনেকেই বরিশালের মানুষ। নট্ট ওদের পদবি। তবে এঁরা সব যাত্রার মিউজ়িক কনসার্টের শিল্পী ছিলেন।”

দীপঙ্কর বললেন, “ভয়টা কাটছে, চিৎপুর রোডে দাঁড়িয়ে ঝলমলে পোশাকগুলি দেখে নিজেকে আকবর বাদশা মনে হচ্ছে।”

জনমেজয় বললেন, “আরও, আরও বেশিকরে মনে হবে স্যর। আপনি রঙ্গমঞ্চের আকবর বাদশা। তবে...”

“কী তবে!”

“বাইরে থেকে মনে হবে মায়াময়জগৎ, আসলে...”

অনেক দিন পর হাসলেন দীপঙ্কর। বললেন, “আসলে কী?”

“মায়া, মানবতার নামগন্ধ নেই। জাগতিক স্বার্থের চক্রে সবাই ঘুরছে। আজ যে রাজা, কালসে ফকির।”

দীপঙ্কর বললেন, “ফণী মতিলাল বলতেন, বিচিত্তিরপুর। মালিক থেকে দালাল সবাই লোভের লালসা মনে পুষে দিব্যি হেসে-খেলে কথা বলে। আসলে এরা সবাই কেয়া ফুলের গন্ধ মেখে আকর্ষণ করে, আর ভিতরে জেগে থাকে শ্বাপদ।”

জনমেজয় বললেন, “সাহেব, আপনার হবে। ছোট ফণীবাবু বা ফণী মতিলাল চাননি, মৃত্যুর পর তাঁর মৃতদেহ যেন চিৎপুরে আসে।”

চিৎপুর থেকে কলেজ স্ট্রিট বেশি দূরে নয়, কিন্তু ভারী শরীরটা নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হয়। হাঁটু দুটো কিছুতেই বশে থাকে না। একটু ধীরপায়ে কলেজ স্ট্রিট গেলেন। তেমন চেনা এখন আর কেউ নেই।

প্যারামাউন্টে গিয়ে ডাবের শরবত খেলেন। তার পর একেবারে উল্টো কাজ করলেন একটা। দিলখুশাতে কবিরাজি কাটলেট খেলেন। পুরনো বইয়ের দোকানে খানিক এলোমেলো ঘুরে এক জায়গায় এসে জিজ্ঞেস করলেন, “ঐতিহাসিক যাত্রাপালার বই হবে কিছু?”

বয়স্ক এক জন মানুষ বললেন, “কী চাই আপনার? আলমগির?”

দীপঙ্করবাবু কাঁচুমাচু হয়ে বললেন, “না, আকবর বাদশাকে নিয়ে কিছু হবে?”

“আনারকলি নেবেন?”

দীপঙ্কর মাথা নাড়লেন, বললেন, “না।”

“মুঘল-ই-আজ়ম?”

“না, সবটাই আকবর বাদশার নিষ্ঠুরতার দিক নিয়ে লেখা।”

এ বার বয়স্ক মানুষটি বললেন, “আপনিই কি আকবর বাদশা করবেন!”

দীপঙ্করবাবু লাজুক মুখে বললেন, “হ্যাঁ।”

“কোন অপেরা?”

“এখনও ঠিক হয়নি।”

“অ্যামেচার কোনও গ্রুপ?”

দীপঙ্করের কেমন যেন মানে লাগল, বললেন, “না, পেশাদার।”

বয়স্ক লোকটি এ বার দীপঙ্করবাবুর পা থেকে মাথা অবধি নিরীক্ষণ করলেন, ভাবলেন, পাগল-টাগল নয় তো!

তাও বললেন, “কখনও যাত্রা করেছেন?”

“আমার বাবা, পিসেমশাই যাত্রা করেছেন।”

“কী নাম?”

“অলোককুমার।”

“নামটা শুনেছি মনে হয়।”

এর পর দীপঙ্কর বললেন, “চা খাবেন?আমি খাওয়াব।”

খুশি হলেন দোকানদার।

বললেন, “ঠিক আছে, নিয়ে আসছি। আর এই ‘মুঘল-ই-আজ়ম’ দিলাম। পড়তে থাকুন। ভাল লাগলে নিয়ে যাবেন।”

লোকটা চা নিয়ে এল দু’কাপ। আর বিস্কুট।

মাইক্রোফোনের ছেলেটি সারা ক্ষণ বাইরে ঘুমোয়। সকাল এগারোটায় জনমেজয়বাবু ঘোষণা করেন, “আজ মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শুরু হল। বেলা তিনটেয় শেষ হবে।”

বেলা তিনটে বেজে গেলে মাইক্রোফোনের ছেলেটি বলে, “এ বার নিয়ে নিই তা হলে!কালও আছে?”

জনমেজয়বাবু বলেন, “আছে। আগামীকালও আছে।

এ বার মানুষটা চায়ে চুমুক দেওয়া শেষ করে বললেন, “মুঘল-ই-আজ়ম’ পড়লেন!”

দীপঙ্কর বললেন, “কিছুটা।”

“নিজেকে আকবর বাদশা মনে হচ্ছে!”

“না, এখনও না।”

লোকটা বললেন, “মনে হবে। যখন গ্রিনরুমে আপনি নিজেকে সাজিয়ে নেবেন। ক্ল্যারিয়োনেট বাজবে। দর্শক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবে।”

বিকেল গাঢ় হলে অফিসটাইম শুরু হয়ে যাবে, তার আগেই ট্রেন ধরতে হবে। কলেজ স্ট্রিট মোড় থেকে ২১৯ নম্বর বাস ধরলেন দীপঙ্কর।

হাওড়া এসে ব্যান্ডেল লোকাল ফাঁকা পেতেই উঠে পড়লেন দীপঙ্কর। চন্দননগর শহরের উল্টো দিকে ওঁর বাড়ি। খলিসানি বাজার থেকে একটু গেলে ব্যায়ামাগার, তা পেরিয়ে একটু হেঁটে গেলেই। মাঝখানে একটা খাল ছিল। স্টেশন থেকে একটা সেতুর মতো কিছু থাকলে এত ঘুরে আসতে হত না। কিন্তু দীপঙ্করবাবু খুব ভিতু, তার ওপর কোনও ইনফ্লুয়েন্সও নেই। ফলে সে সেতু বা ব্যবহারযোগ্য রাস্তা, কিছুই হয়নি। বর্ষায় বেশ কষ্ট হয়। জুনের মাঝামাঝি হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে রাস্তা এখনও শুকনো খটখটে।

ডোরবেল টিপলেন দীপঙ্কর।

পল্লবী একটু সময় নিল নিজেকে গুছিয়ে নিতে। আয়নায় দেখে নিল, নিজেকে বিস্রস্ত লাগছে না তো! আয়নার দিকে তাকিয়ে হালকা করে চুলে চিরুনি বুলিয়ে নিল। চিরুনির প্রান্তে একটুখানি সিদুঁর লাগিয়ে দরজা খুলতে গেল।

“কী গো, এত তাড়াতাড়ি চলে এলে!”

“অফিস যাইনি তো!”

“তবে কোথায় গেছিলে?”

“কলেজ স্ট্রিটে।”

“আজ অফিসে কাজ ছিল না! জীবনভরই তো কাজ থাকে।”

পল্লবী বলল, “আমি তো তাই বলি, মাঝে মাঝে ছুটি নাও। তুমি তো ভিতু, কোথাও বেড়াতে গেলে না। অফিসের এলটিসি তো পচে গেল।”

“এই এক দিনের ছুটিতেই কত কথা শোনাবে।”

“কিছু শোনাবে না। তোমার মুখ নেই! উত্তর দিতে পারবে না!”

“পারব।”

পল্লবী হেসে বলল, “পারবে না। তোমার গলায় যত জোর ঘরে, বাইরে তুমি কেঁচো। এখন কীখাবে বলো!”

ব্যাগ থেকে দুটো কবিরাজি কাটলেট বার করলেন দীপঙ্কর। বললেন, “গরম করে নিলেই হবে। তোমার আর দীপের।”

ছেলের নামটা দীপ রেখেছে ওর মা-ই। দীপঙ্কর ও দীপ। দীপঙ্করবাবুর একমাত্র ছেলে। চন্দননগর কানাইলাল বিদ্যামন্দিরে পড়ে।

“তুমি খাবে না!”

“খেয়েছি।”

“আজকে তো দেখছি একেবারে বাদশাহি খানা। কী ব্যাপার!”

“কিছু না,” তার পর দীপঙ্কর বললেন, “আমি অভিনয় করব!”

পল্লবী খুব খুশির গলায় বলল, “কোথায় অভিনয় করবে, সিনেমায়?”

“না, যাত্রায়। আকবর বাদশা।”

পল্লবী একটু দমে গেল। বলল, “আরে, যাত্রা তো গাঁয়ের লোকেরা দেখে। ও সব তুমি কেন করবে!”

দীপঙ্কর কিছু বললেন না, স্নান করতে গেলেন।

পরের দিন অফিসে গেলেন দীপঙ্কর।

ডাক পড়ল অতিরিক্ত জেলাশাসকের কক্ষে। সোজাসুজি বললেন, “কী যে করেন আপনি, গতকাল এলেন না কেন!”

“শরীরটা ভাল ছিল না।”

“শরীর ভাল রাখতে গেলে কম খেতে হয়। ভাত এক বাটির বেশি খেলে চলবে না।”

দীপঙ্কর বলতে পারতেন ভাত তিনি কমই খান, কিন্তু পারলেন না। যেমন তিনি নিজের বৌকেও বলতে পারেননি, স্বপনকুমারের জন্য সুন্দরবনের একটি গ্রামে হেলিপ্যাড করা হয়েছিল। কোনও একটি গ্রামে খরার সময় মানুষ যাত্রাদলের জন্য অপেক্ষা করত, কারণ যাত্রা না হলে খরা কাটত না। বৃষ্টি নামত না।

অতিরিক্ত জেলাশাসক বললেন, “দাঁড়িয়ে থাকবেন না। সোনামুখী যেতে হবে। এগারোটা আর-আর পাট্টা হবে।”

আর-আর বলতে রিফিউজি রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগ। পুনর্বাসন বিভাগের পাট্টা।

অতিরিক্ত জেলাশাসক আর এক বার বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী আসবেন, আপনি আবার ডুব দেবেন না।”

তবুও এই অতিরিক্ত জেলাশাসক তুলনামূলক ভাবে ভদ্র।

এক বার মনে হল, তিনি বলেন, ‘আমি আকবর বাদশার অভিনয় করতে যাচ্ছি।’

তার পর আবার অতটা প্রগল্ভ হওয়াটাও ঠিক নয় বলে কিছু বললেন না। দ্রুত বেরিয়ে গেলেন জীবনের রঙ্গমঞ্চ থেকে।

জনমেজয় কিছুটা আগে বেরিয়েও যখন পুরুলিয়া স্টেশনে এলেন, রাত বারোটা পেরিয়ে গেছে। ট্রেনে বিষ্ণুপুর থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে ঘণ্টা আড়াই লাগে। রামসাগর, ওন্দা পার করতেই একটু ভিড় কমে। চৈত্র, বৈশাখে আলুচাষিদের জন্য ভিড় হয়— এরা ঠিক চাষি নয়, কৃষিশ্রমিক। এখানে এসে মূলত চন্দ্রকোণা রোডে বা এদিকে ওন্দায় খেত থেকে আলু সংগ্রহ করে আর আড়তে জমা করে। বিনিময়ে পেয়ে থাকে কুড়ি, পঁচিশ কেজি আলু আর এক বেলা জলখাওকি, মুড়ি। বাড়তি হিসেবে কখনও কখনও পেঁয়াজ-লঙ্কা। ওন্দার পর ভেদুয়াশোল, তার পর কালিসেন। তার পরই বাঁকুড়া। ধীরে ধীরে ট্রেন মালভূমি থেকে সমতলভূমির দিকে অগ্রসর হয়। সমতলভূমিতে মনে হয়, মাঠ যেন সোজা উঠে গিয়ে দিগন্তে মিশেছে আর মালভূমিতে উচ্চাবচ জমি, টিলাভূমি তার পর আস্তে আস্তে প্রতীয়মান হয় ডুংরিটিলার নানা ভূমি।

ট্রেনে যেতে যেতে আজ খানিকটা ঘুমিয়ে পড়লেন। সঙ্গে ধেয়ে এল এক জায়গায় যাত্রায় যাওয়ার স্বপ্ন। বেশি দূরের নয়, বরাকর। শিল্পাঞ্চল। তখনও চাকরি-বাকরি হয়নি। যাত্রাই রোজগারের একমাত্র পথ। চিৎপুর থেকে বাস ছাড়ল। কলকাতা থেকে অনেকটাই দূর, কিন্তু জনমেজয় বাড়ি যেতে পারবেন। বরাকর থেকে দামোদর হয়ে বাড়িফেরা যাবে।

বাস বিষ্ণুপুর এসে আটকে গেল। হঠাৎ গুঞ্জন উঠল অধিকারীকে ধরতে হবে, পুজো আসছে, সকলের এখনও মাইনে বাকি। তিলবাড়িতে অধিকারীর বাড়ি। কোঠাবাড়ি মাটির, দ্বিতল। মাইনে হয়ে গেল সকলের কম-বেশি।

জয়কৃষ্ণপুরে এসে কেউ মুড়ি-জল, কেউ বা কুসুমবীজ হলুদ হলুদ করে মুড়িতে মেখে খেতে লাগল। জনমেজয়ও তাই খেলেন। আবার নায়ক-নায়িকারা পাইস হোটেলে ভাত, মাছের ঝোল ইত্যাদি খেলেন। সবার খাওয়াদাওয়া হলে বাস আবার চলতে শুরু করল।

বরাকর পৌঁছতে সন্ধে ঘনিয়ে এল। সানাই বাজছে। চট আর টিন দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে চার পাশ। কাউন্টারে দীর্ঘ লাইন নরনারীর। অলোককুমার আর জবা নামতেই হইচই শুরু হয়ে গেল। পুলিশ বাহিনীকে লাঠি উঁচিয়ে খানিকটা ভয় দেখিয়ে ভক্তদের সরিয়ে দিতে হল। ওঁদের একটি সম্পন্ন জমিদারবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হল। ভিলেন-সহ বাকিরা উঠল স্কুলবাড়িতে। এত দিন জনমেজয়রা ঐতিহাসিক পালা করে এসেছেন। এ বার প্রথম সামাজিক পালা। গ্রামে একটা মেলার মতো বসে গেছে। ফুচকা, তালপাতার ভেঁপু... সব মিলিয়ে উৎসবের আবহাওয়া।

আগামী কাল সন্ধেয় পালা। মানুষের যাবতীয় আগ্রহ অলোককুমার আর জবাসুন্দরীকে ঘিরে।

তবে পালাটা সামাজিক হলেও রাজনীতির গন্ধ রয়েছে। তখন অবশ্য জমিদারি ব্যবস্থা ভেঙে যাচ্ছে। যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে গেলেও আবার বামপন্থী আন্দোলনের জোয়ার শুরু হয়েছে। বর্গা আন্দোলনও শুরু হয়েছে। খানাপুরি বুজারত, বর্গা রেকর্ডিং-এ মানুষের উচ্ছ্বাস এক নতুন পটভূমি নির্মাণ করেছে। বুজারত খুব প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে বর্গা বা আধিয়ার রেকর্ডিং-এর ক্ষেত্রে।

নাটক মঞ্চস্থ করা নিয়ে নির্দেশক চিন্তায় রয়েছেন। কোনও হামলাও হতে পারে। লোকাল থানার বড়বাবু স্ক্রিপ্ট দেখেছেন। পুলিশের কর্তাব্যক্তি হলেও বামপন্থার প্রতি তাঁর সহানুভূতি রয়েছে। জমিদারবাড়ি অবশ্য বিচিত্র দ্বান্দ্বিক অবস্থানের মধ্যে রয়েছে। তবুও তাঁদের মধ্যে প্রবীণরা এই পরিবর্তন মেনে নিতে পারছেন না। তাঁরা সকলেই ডানপন্থী দলের সঙ্গে রয়েছেন। পঞ্চায়েতি ব্যবস্থা এখনও শুরু হয়নি। তখনও রয়েছে ইউনিয়ন বোর্ড। জমি ভেস্টের ক্ষেত্রেও তখনও অনুসৃত হচ্ছে জমিদারি অধিগ্রহণ আইন। বর্গা রেকর্ডিং শুরু করা হয়নি তেমন ভাবে, শুধু পেনসিল দিয়ে খানাপুরি বুজায়েতের খসড়া পর্চায় লিখে রাখা হচ্ছে।

সেই সন্ধিক্ষণে অভিনীত হবে, ‘রক্তে ধোয়া ধান’। নতুন নাট্যকার ভৈরব গঙ্গোপাধ্যায়। মেমারির কল্যাণপুরের কুড়োরাম বাগের ভূমির লড়াই এই যাত্রাপালায় উঠে এসেছে। কলকাতায়, একটু মফস্সলে অভিনয় করেছেন স্বপনকুমার।

বোমের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল জনমেজয়ের। স্বপ্নের মধ্যেই হয়তো সে রকম কিছু দেখলেন। কিন্তু আস্তে আস্তে বুঝতে পারলেন, আসলে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস পুরুলিয়া স্টেশনে এসে থামল।

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Novel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy