E-Paper

কেয়ার গন্ধ

শীলা আপনমনে বলল, “দিনকাল যে কী হয়েছে! ভদ্রঘরের বৌ কিন্নরীর সঙ্গে প্রেম করত! ভাবলেও ঘেন্না হয়, ম্যাগো! ওয়াক্ থু।”

অভিজিৎ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫১
ছবি: সৌমেন দাস।

ছবি: সৌমেন দাস।

পূর্বানুবৃত্তি: সুধাময়ীর ইচ্ছেয় তাঁকে নিয়ে দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে এসেছেন জনমেজয়। সেখান থেকে তাঁরা গেছেন জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, চিৎপুর যাত্রাপাড়া। বেড়াতে বেড়াতে কয়েক জন পূর্বপরিচিত, যেমন নাট্যকর্মী সমীর, রবীন্দ্র নাট্যসংস্থার সুব্রতর সঙ্গে দেখা হয়ে যায় ওঁদের। সকলে ট্যাক্সি ধরে রওনা হন হাওড়ার দিকে। অন্য দিকে দীপঙ্করের অভিনয় করা নিয়ে আগ্রহ এবং অপেক্ষা তৈরি হয়েছে তাঁর স্ত্রী-পুত্রের মধ্যেও। এক দিন সপরিবার বেড়াতে বেরিয়ে পড়লেন দীপঙ্করও। নৌকো করে পৌঁছলেন রাসমণির ঘাট। সেখানে একটা সাধারণ হোটেলে খাওয়াদাওয়া করে ফিরলেন জোড়াঘাটে। বাড়ি ফিরে স্বাভাবিক কথাবার্তা হল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে। পল্লবীর আগ্রহেই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হলেন দীপঙ্করবাবু। কেউ জানতে পারল না, সে রাতেই ওঁদের বাড়ির পাঁচিলের পাশে সাপের কামড়েমারা গেল পল্লবীর গোপন প্রেমিক পলাশ।

পাশের বাড়ির শীলা বৌদি পল্লবীকে বলল, “তুমিকি জানতে?”

পল্লবী বলল, “কী?”

“পলাশ নাকি পুরুষছিল না।”

পল্লবী বলল, “তবে কী ছিল!”

“কিন্নরী।”

পল্লবী পলাশের পুরুষাঙ্গ দেখেছে, পরিতৃপ্তও হয়েছে। পলাশ বলত, ওকে এ সব করতে ওষুধ খেতে হয়। তা হলেও তো যৌনাঙ্গ জাগত। পলাশ তবে কি দুটো সেক্সই উপভোগ করত!

শীলা বৌদি বলল, “চুপ করে আছ যে! পলাশ তো তোমার কাছে আসত!”

পল্লবীর খুব রাগ হলেও সংযত রাখল নিজেকে।

বলল, “হ্যাঁ আসত। আপন বলতে কেউ ছিল না। আমার রেশনটা ধরে দিত কখনও কখনও। খেতে দিতাম ভাল-মন্দ কিছু হলে।”

শীলা এক দিন দুপুরে দেখেছিল, পল্লবী আর পলাশ সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে রয়েছে। সামান্য খোঁচা দিয়ে বলল, “আমি ভেবেছিলাম, তুমি পলাশকে আর একটু বেশি জানো।”

পল্লবী উত্তর না দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

শীলা আপনমনে বলল, “দিনকাল যে কী হয়েছে! ভদ্রঘরের বৌ কিন্নরীর সঙ্গে প্রেম করত! ভাবলেও ঘেন্না হয়, ম্যাগো! ওয়াক্ থু।”

দীপঙ্কর রাতে ফিরলেন।

পল্লবী বলল, “সম্রাট আকবরের কী খবর?”

দীপঙ্কর বললেন, “আমাদের উঠোনে এক জন কে লতার কামড়ে মারা গেছে।”

“হ্যাঁ। পলাশ। তুমি চিনতে?”

“তেমন ভাবে নয়, মুখোমুখি দেখা হলে হাসত।”

“মেয়েলি চেহারা। পুরুষ ছিল না নাকি?”

দীপঙ্কর বললেন, “আজ জনমেজয়বাবু একটা বই পড়তে দিয়েছেন।”

“কী বই?”

“মোগল হারেম।”

“খারাপ খারাপ ছবি আছে?”

“একদমই না। তুমি যা বলছিলে, সে সবই আছে। মোগল যুবরাজদের ভোগের শেষ ছিল না। মেয়েলি পুরুষরাও হারেমে থাকত। তবে ওরা কিন্তু খোজা নয়। সম্রাট ওদের সঙ্গও উপভোগ করতেন।”

জামাটা খুলল দীপঙ্কর। নির্লোম শরীর। নরম, তুলতুলে দেহ। অস্বাভাবিক কমনীয়। ঘামের গন্ধ থাকে না। মনের ভুল হতে পারে, কখনও কখনও ওর দেহ থেকে কেয়া ফুলের গন্ধও পায় পল্লবী।

স্নানে গেলেন দীপঙ্কর। গলাটাও ভাঙা ভাঙা, খনখনে। মেয়েলিও মনে হয় কখনও কখনও। পল্লবীর স্তনের প্রতি কোনও আকর্ষণ নেই দীপঙ্করের। বরং পলাশের বেশ ছিল।

দীপঙ্কর স্নান সেরে খালি গায়ে ফিরলে কেয়া ফুলের গন্ধটা আর তীব্র হল।

দীপঙ্করের স্তন রয়েছে। অনেকটা মেয়েদের মতো। বেশ পুষ্ট।

পল্লবী প্রায় বলত, “এগুলো মনে হয় টিউমার, অপারেশন করালে হয় না?”

দীপঙ্কর হেসে বলতেন, “এগুলো আমার স্বাভাবিক, কোনও যন্ত্রণা নেই।”

পল্লবী চুপ করে থাকত, তবে অস্বস্তি যেত না।

পলাশ বলত, তার প্রেম আসে না। নারী তার কাছে সখী। বরং পুরুষের প্রতি তার আগ্রহ বেশি।

“তুমি কি পুরুষদের কাছেও যাও?”

“ওরা তো ডাকেনি কখনও। আমায় চিনতে পারেনি,” বলেছিল পলাশ।

“মানে!” পল্লবী প্রশ্ন করেছিল।

পলাশ বলেছিল, “সে তুমি বুঝবে না। আমাদের কেউই বোঝে না।”

পলাশ দীর্ঘশ্বাস লুকোতে পারেনি। তবে খুব আদর করত। তখন আবেশে চোখ বুজে যেত। ভিতরে ভিতরে সিক্ত হত পল্লবী।

এক দিন পল্লবী বলেছিল, “তুমি আমাকে যখন আদর করো, মনে হয় যেন আমার মা।”

পলাশ হেসে বলেছিল, “ঈশ্বরও তো উভলিঙ্গ। নারী এবং পুরুষ।”

“তুমি তবে ঈশ্বর?”

“ভাবতে ক্ষতি কী?”

“এই যে পাপ করছ! পরের বৌকে ভোগ করছ।”

“পাপ আমি করছি না। তুমি ডেকেছ বলে এসেছি। আর যৌনতায় কোনও পাপ নেই। আমাদের সামাজিক বিধিগুলো যৌনতাকে পাপ বানিয়েছে।”

“আমার স্বামী দীপঙ্কর কেমন মানুষ!”

“ভাল। নিস্পৃহ। সংসারে থেকেও নেই।”

ডোরবেল বেজে উঠল।

দরজা খুলল পল্লবী। দীপঙ্কর ও ছেলে তখন খেতে বসেছে।

“বৌদি, আমরা পলাশের শ্রাদ্ধশান্তির জন্যচাঁদা তুলছি।”

পল্লবী ওদের হাতে পাঁচশো টাকার নোট দিল। খুশি হয়ে চলে গেল ওরা।

দীপঙ্কর খেয়ে উঠলে, বলল সেই কথা।

দীপঙ্কর বললেন, “ভাল করেছ। আরও একটু বেশি দিলেও পারতে।”

পল্লবী বলল, “না, কখনও নয়।”

একটু অবাক হল দীপঙ্কর। সে জানত, তার বৌ আর পলাশের মধ্যে একটা অবৈধ প্রণয় রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেও তাকে। পল্লবী খুব তাড়াতাড়ি প্রেমিককে ভুলে গেল।

পল্লবী বলল, “তার পর তোমার যাত্রার কী হল, আকবর বাদশা?”

“আমার গলায় আকবর হবে না।”

পল্লবী হেসে বলল, “আমি জানতাম।”

দীপঙ্কর বললেন, “রিহার্সাল রুমটা খুব গরম ছিল। জামা খুলে বসেছিলাম। ওরা নিজেদের মধ্যে কী সব বলছিল।”

পল্লবী কেন যেন কেঁপে উঠল। বলল, “তোমাকে আবার ফিমেল চরিত্র করতে দেবে না তো!”

“দেবে মনে হয়।”

“দিলে করবে তুমি?”

“কোনও অভিনয়ই তো ফেলনা নয়।”

“না, করবে না!” জোর গলায় বলল পল্লবী।

“চপল ভাদুড়ী কত বড় অভিনেতা ছিলেন! স্বয়ং উত্তমকুমার স্বীকৃতি দিয়েছিলেন।”

“এই পাড়ায় আমাদের বাস উঠবে, তুমি যদি যাত্রায় ফিমেল হও।”

পরের দিন অফিসে গেলেন দীপঙ্কর। সারা দিন সাহেবদের ডাক-খোঁজ পড়ল না। সার্ভেয়ার জনমেজয়বাবু বড়জোড়া গেছেন প্যাচ কিস্তেওয়ারের কাজে। এক সময় তাঁরও ডাক এসেছিল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজ়ারের ট্রেনিং-এ। হায়দরাবাদ যেতে হত। পল্লবী যেতে দিল না, সে একা ছেলেকে নিয়ে থাকতে পারবে না। এমনিতে পল্লবী চায় তিনি প্রতিদিন অফিসে যান। ওইটুকু অবসরে সে হয়তো নতুন নতুন প্রেম করবে, কিন্তু রাতে দীপঙ্কর তার পাশে বিছানায় থাকবেন। অদ্ভুত এক আধিপত্যবোধ। পলাশ মারা গেলে পল্লবী কিন্তু একটুও মুষড়ে পড়নি। তরতাজা আছে। বরং কেয়া ফুলের গন্ধে বিমোহিত এক সরীসৃপ পল্লবীর যেন কোনও উপকার করে দিয়েছে।

সে উপকার কী, তা খানিকটা আন্দাজ করতে পারেন দীপঙ্কর। যাত্রায় যে ফিমেল সাজে, সে কোনও নারীকে ভালবাসতে পারে না। সে এক জন পুরুষকে প্রার্থনা করে। ঘেমো গন্ধের, উসকোখুসকো চুলের কোনও পুরুষের কাছে নিস্পেষিত হতে চায়।

তুষারবাবু এমনিতে খুব নিরীহ। কম কথা বলেন। অল্প কয়েক জন আছেন যাঁরা দীপঙ্করকে সমীহ করেন, তাঁদের এক জন তুষারবাবু।

তিনি আজ যেচে বললেন, “স্যর, আপনি নাকি চাকরি করবেন না আর?”

দীপঙ্কর হেসে বললেন, “কেন, কী করবতা হলে?”

“যাত্রায় নামছেন নাকি?”

“সে তো জনমেজয়বাবুও করেন। তিনি তো চাকরি করছেন।”

“আপনি কি স্যর, কোনও ফিমেল চরিত্রে অভিনয় করবেন?”

“এখনও জানি না। তবে আমার চেহারা কণ্ঠস্বর ও রকম রোলে ম্যাচ করলে করব।”

“এটা করবেন না স্যর। আপনার চেহারায় আলমগিরও ভাল লাগবে।”

“কিন্তু গলা! আমার তো সেই ব্যারিটোনভয়েস নেই।”

“আলমগিরের গলা যে গমগমে হবে, এর কোনও মানে আছে?”

“তা অবশ্য নেই।”

“জমিদার তো বেঁটেখাটোও হতে পারেন।... এ সব মনগড়া ধারণা।”

“কিন্তু দর্শক মিনমিনে গলার আলমগির, আকবর বাদশা, এমনকি সেলিমকেও নেবে না।”

তুষারবাবু বললেন, “বাড়ির লোক জানেন!”

“একটু জানেন। আমিও তো কোথাওট্রায়াল দিইনি।”

তুষারবাবু বললেন, “দেবেন না স্যর। আপনার সংসারটা ভেসে যাবে। ওরা পাড়ায় বাস করতে পারবে না।”

“চপল ভাদুড়ীর নাম শুনেছেন!”

“মনে হয় শুনেছি। উনি কী করতেন!”

“ফিমেল সাজতেন। যাত্রায়, নাটকে। শিশির ভাদুড়ীর ভাইপো উনি। কত বিখ্যাত জানেন?”

তুষারবাবু বললেন, “ওটা আপনার পথ নয়। আপনি এক জন সরকারি আধিকারিক।”

“এর জন্য আমার চাকরি যাবে না, যেতে পারে না। গেলে আমি মানবাধিকার কমিশনে যাব।”

একটু পরেই নিজের চেম্বারে ফিরে এলেন দীপঙ্কর। সামান্য কিছু কাজ ছিল মিউজ়িয়মে। সেই সব সেরে ফিরে এলেন।

আজ ক্যান্টিন থেকে ভাত আনালেন। পল্লবীর সঙ্গে মন কষাকষি হওয়াতে সে রান্নাও করেনি, টিফিনও দেয়নি।

ক্যান্টিনের খাবার মন্দ নয়। মোটা চালের ভাত, কম সেদ্ধ ডাল আর দু’পিস মাছভাজা।

ভাল করেই খেলেন দীপঙ্কর।

এই সময় মধু এল, জিজ্ঞেস করল, “স্যর, আপনার খাওয়া হয়েছে?”

দীপঙ্কর বললেন, “হ্যাঁ।”

“বড়সাহেব আপনাকে ডাকছেন।”

আগে হলে দীপঙ্কর ভয় পেতেন খুব। এখন অনেকটা কম ভয় পান। মনে মনে কল্পনা করেন, তিনি স্টেজের সেই গোলাপবালা, তিনকড়ি দাসী, এমনকি বিনোদিনীও।

দীপঙ্কর ঢুকতেই বড়সাহেবের কক্ষের আবহাওয়া বদলে গেল।

গিরিশবাবুরও এ রকম হত। সামনাসামনি সকলে বলত, স্টার। বলত, ‘একটা গেস্ট পাস হলে ভাল হয়, গিরিশবাবু।’ আর আড়ালে বলত, ‘মাতাল, বেশ্যাখোর।’

তবে দীপঙ্করের বিষয়টা একদম আলাদা। এক রকমের ভাঁড়কে দেখা, যার কোনও মান-ইজ্জত থাকতে নেই। বড়সাহেব সভাসদ নিয়ে বসে রয়েছেন। এক জন লেখক রয়েছেন, রয়েছেন তথ্য আধিকারিক, যিনি দীপঙ্করবাবুকে প্রায় বলেন, “আপনি বেশ ভিলেন-ভিলেন দেখতে কিন্তু!”

সেই দীপঙ্করবাবু, যিনি কিনা মহম্মদি বেগ হতে পারতেন, বা অন্য কোনও খলনায়ক, তিনি একেবারে মহিলা। সাধারণ মানুষের তো অবিশ্বাস্য লাগবে। কিন্তু সেই দীপঙ্করের মধ্যে জেগেছে কি সত্যিই মাতৃত্বচেতনা! গর্ভধারিণী না হয়েও এক মরমি গর্ভযন্ত্রণা! এক অনুভব, যা পথচলতি কিন্নরীদের দেখে কখনও ভাবতে চাননি। তাঁর স্ত্রীর অবৈধ প্রেমিক পলাশের মৃত্যু তাঁকে সুযোগ দিয়েছে নিজের আত্মগোপনরত রূপকে চেনার, জানার।

চিরকালই তিনি পশ্চাতের মানুষ। আজ কিন্তু প্রথা ভাঙলেন। তিনিই সেই, এক দিন যাত্রাপালায় চপল ভাদুড়ী যা করতেন। এক দিন যে চপল ভাদুড়ীকে দেখে চমকে উঠেছিলেন উত্তমকুমার। সেই তিনি, যিনি জাহ্নবী দেবী, মাইকেল-জননীর অভিনয় করেছিলেন। সেই তিনি, যিনি জাহানারার অভিনয় করতেন। মঞ্চে এসে ডাকতেন, “কোথায় তুমি ভারতসম্রাট শাজাহান!”

বড়সাহেব বললেন, “আপনাকে অন্য রকম লাগছে। কফি খাবেন?”

আশ্চর্য হয়ে গেলেন দীপঙ্কর। এত নরম গলায় বড়সাহেব কথা বলেন না।

এ সব কি ঝড়ের পূর্বাভাস! যখন প্রকৃতি থম মেরে থাকে, অসহনীয় দহনে তপ্ত হয় পৃথিবী?তার পর এক ঝলক সুবাতাস, মিশে থাকে মিছরির দানার বরফকুচি।

কফি এল। চুমুক দিলেন দীপঙ্করবাবু।

লেখক আড়চোখে দেখছেন ওঁকে। মুখে এক রাশ তাচ্ছিল্য। আছেন সাংবাদিকও। সংবাদ সংগ্রহের জন্য উন্মুখ। বাতাসে উন্মুখ যোনিগন্ধ। এই গন্ধ কেউ টের পাচ্ছেন না। এই অস্তিত্ব অনুভব করছেন দীপঙ্কর। অন্তর্গত রক্তপাত যেন শুরু হয়ে গেছে, রজঃস্বলা অবস্থায় তিনি যেন এসেছেন কৌরবের সভায়। কর্ণ, দুঃশাসন, দুর্যোধন আর সিংহাসনে আসীন ধৃতরাষ্ট্র। যিনি অন্ধ শুধু দৃষ্টিতে নয়, মননেও, বিচারবোধেও।

দীপঙ্কর কি এখন পাঞ্চালী! তিনি কি যাজ্ঞসেনী!

উপরের সিলিঙের দিকে তাকালেন দীপঙ্কর। মনে মনে ডাকলেন, ‘বাসুদেব কৃষ্ণ, প্রকাশিত হও, রক্ষা করো তোমার সখীর সম্মান। কোথায়তোমার সুদর্শন, সখা! ধ্বংস হোক সভা, অবসান হোক কপটতার।’

বড়সাহেব বললেন, “আপনি নাকিঅভিনয় করছেন?”

দীপঙ্কর সানুনাসিক গলায় উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ।”

“যাত্রায় ফিমেল ক্যারেক্টার করবেন!”

“হ্যাঁ।”

“কেন এ রকম ইচ্ছে হল!”

“নাট্যকার চাইছেন।”

“কোন দলের!”

“বীণাপাণি অপেরা।”

“কোথাকার দল?”

“পুরুলিয়ার।”

“ছুটি নিতে হবে না আপনাকে?”

“শনি, রবি গিয়ে রিহার্সাল দেব।”

এ বার বড়সাহেব বললেন, “হলিউড কখনও এ সব করেনি। এ সব গ্রামীণ স্থূল যাত্রায় হয়ে থাকে।”

দীপঙ্কর সাহসী হলেন, বললেন, “স্যর, চপল ভাদুড়ী কত বার মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।”

বড়সাহেব বললেন, “ওই একটি নামই পাবেন। আর সব মোটা দাগের রামলীলা। যাত্রায়ও স্টার অভিনেত্রীরা আসেন, সেখানে আপনি স্ত্রী-চরিত্র করবেন, এটা কি সম্মানের হবে?”

“স্যর, বাংলার যাত্রা নতুন করে চপলভাদুড়ীকে পাবে।”

এ বার বড়সাহেব বললেন, “পথটা খুব দুর্গম। আপনার পরিবার কী ভাবছে!”

দীপঙ্কর বললেন, “বৌ চায় না, আমি এ রকম অভিনয় করি।”

“পাড়ার লোকেরা?”

“জানে না। তবে নিশ্চয়ই জানবে।”

“আপনি তো শহরে বাস করেন, গ্রামে যা স্বাভাবিক, শহরে তা নয়। এ ছাড়াও...”

একটু থামলেন বড়সাহেব।

ঘরের ভিতরের সকলে হাসির দমক কোনও ক্রমে চেপে রেখেছেন।

“আপনাকে এই দুঃস্বপ্নের দিকে কে টেনেনিয়ে গেলেন?”

তথ্য আধিকারিক বললেন, “বোধহয় জনমেজয়বাবু।”

বড়সাহেব বললেন, “আপনার সার্ভেয়ার। পেশাদার যাত্রাশিল্পী।”

দীপঙ্কর বললেন, “স্যর, আমি যাই তা হলে!”

বড়সাহেব বললেন, “কাজের কথাটা বলি। গান লাইসেন্সের ফাইলটা আনুন। ইলেকশন তো আসছে, নমিনেশন শেষ হয়ে গেল। থানা থেকে রিপোর্ট আনাতে হবে।”

দীপঙ্কর বললেন, “আনছি স্যর।”

পুরুলিয়া এক্সপ্রেসে এক সঙ্গে উঠল ওরা।

সমীর বলল, “জনমেজয়দা, যা-ই বলো, যাত্রার সেই দিন লাইকো।”

রবীন্দ্র নাট্যসংস্থার সুব্রতবাবু বললেন, “সেই সব দিন কোথায় হারিয়ে গেল! চৈত্র সংক্রান্তিতে যাত্রা হত। দেখতে দেখতে গাজনতলা ভরে যেত। বসন্তের শেষ হলেও রোদ্দুরের তাত ছিল। দুপুর থেকে শুরু হত জায়গা রাখা।”

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Novel Novel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy