E-Paper

কেয়ার গন্ধ

সুধাময়ী আবার চলে গেলে জনমেজয় সিগারেট ধরালেন, পুরনো স্মৃতির উত্তেজনায় হাত কাঁপছে। বার বার হাওয়ায় আগুন নিভে গিয়ে শেষমেশ ধরল।

অভিজিৎ চৌধুরী

অভিজিৎ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৫৩
ছবি সৌমেন দাস।

ছবি সৌমেন দাস।

পূর্বানুবৃত্তি: জনমেজয়বাবুর সঙ্গে সুব্রত আর সমীরের কথাবার্তায় উঠে আসে যাত্রাজগতেরনানা স্মৃতিচারণ। তাঁরা মনে করেন কী ভাবে স্ত্রী-ভূমিকায় পুরুষ অভিনেতার অভিনয় করার যুগ পেরিয়ে ক্রমশ মঞ্চে উঠে এলেন গুণী অভিনেত্রীরা। জনমেজয়বাবুর মনেও নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভিড় করে আসে দীপঙ্করবাবুর নারীচরিত্রে অভিনয় করা নিয়ে। আনারকলি সংক্রান্ত যাত্রায় বিলকিস বাঁদির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দীপঙ্করবাবুকে ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু তানিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। অন্য দিকে দীপঙ্করবাবু টের পাচ্ছেন, তাঁর শরীরে নিঃশব্দে একে একে ফুটে উঠছে নানা স্ত্রী-লক্ষণ। তাঁর স্ত্রী পল্লবী এসেছে বাগবাজারে। সাইকিয়াট্রিস্ট রণেন সেনের চেম্বারে। খুলে বলেছে তাঁর স্বামীর মনোজগতের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের কথা, স্ত্রী-চরিত্রে অভিনয় করতে চাওয়ার কথা। ডাক্তার সেন, পল্লবীকে বলেন, বাধা দেওয়ার পরিবর্তে পল্লবী যেন দীপঙ্করবাবুকে এই কাজে উৎসাহ দেন।

জনমেজয়ের সামনের চুলগুলি অনেকটা উঠে গেছে, তবুও যে ছেলেটি চুল কাটে, সুন্দর করে পুরো ব্যাপারটা ম্যানেজ করে।

সুধাময়ী বলল, “পুজোয় যাত্রা হবে!”

“আশা করছি। হরিমন্দিরের দালানটায় কিছু যদি নামানো যায়।”

“খোকা আসবে ইসরো থেকে। মনে আছে?”

“ও আমার সঙ্গে রিহার্সাল দেখতে যেত। বলত, বাবা, তোমার গান কখন হবে। তখন আমার গানের গলা ছিল। যাত্রাপালাকে কেউ কেউ গান বলত।”

“খোকা তো এখন নিশ্চয়ই অনেক আধুনিক হয়ে আসছে, তোমার যাত্রা কি আর ভাল লাগবে?”

সামান্য দীর্ঘশ্বাস পড়ল জনমেজয়ের। উত্তর না দিয়ে বলতে শুরু করলেন, “সাবিত্রী-সত্যবান পালা হচ্ছে। যমরাজ এসেছেন। সাবিত্রী মৃতদেহ আগলে বসে রয়েছেন। আহা! কী সব ডায়লগ!”

সুধাময়ী বলল, “আমি চললাম, ঘুম পেয়েছে।”

নিশুতি রাত, চার পাশ ঝিমিয়ে আছে। সারা দিন তাতের পর একটু হাওয়া বইছে। বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন জনমেজয়। গৃহস্থালির মশারিগুলি দেখা যাচ্ছে। সকাল হলেই সবাই আবার জেগে উঠবে। যাত্রা করলে এখনও মানুষ যাবে। কালো মাথায় ভর্তি হয়ে যাবে সামনের, পিছনের আসনগুলি। ওরাই তো ইনস্পিরেশন। সিনেমায় ও-সব কোথায়! নাটক তো একটা সঙ্কীর্ণ প্রেক্ষাগৃহে। ক’টা লোক ধরে! সাতশো, আটশো! আর যাত্রায় অগুনতি। দু’হাজার, তিন হাজার বা তারও বেশি।

মনে পড়ে গেল ডায়লগটা, “সাবিত্রী করজোড়ে যমকে বললেন, ‘ত্রিভুবন ত্রাস তুমি ভয়াবহ যম, পার না রক্ষিতে নারীর সম্মান?’”

সুধাময়ী উঠে এল। বলল, “চলো শুয়ে পড়বে। কাল তো অফিস আছে।”

“শিল্পীদের সবচেয়ে বড় বাধা চাকরি, ক্রীতদাসের জীবন।”

“চাকরিটা না করলে খোকা আজ ইসরোয়যেতে পারত?”

“তুমি এক বার খোকাকে নিয়ে আমাদের অপেশাদার দলটার সঙ্গে গেছিলে!”

“চাকদায়। ছেঁড়া চটের চার দিকে প্যান্ডেল করোগেট দিয়ে ঘেরা। টিকিটঘরের সামনে লাইন। গ্রামে যেন মেলা বসে গেছে। চা, তেলেভাজা, পাঁপড়, চানাচুর, মুড়ি, হালুইকর।”

জনমেজয় বললেন, “আহা! সে সব ছিলস্বপ্নের জগৎ।”

সুধাময়ী আবার চলে গেলে জনমেজয় সিগারেট ধরালেন, পুরনো স্মৃতির উত্তেজনায় হাত কাঁপছে। বার বার হাওয়ায় আগুন নিভে গিয়ে শেষমেশ ধরল। টান দিলেন, হাওয়ায় ধোঁয়া নীল রিং হয়ে উড়তে লাগল।

তখন কলকাতায় নামী অপেরায় কাজেরজন্য গেছেন। গিয়ে দেখেন, অফিসঘর পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। যে ছেলেটি বাঁশি বাজাত, সে আত্মহত্যা করেছে।

কে যেন জনমেজয়কে বললেন, “ব্রাদার, পেটের জ্বালায়। এখানে পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।”

বিডন স্ট্রিটে দাদার বাড়িতে থেকে আবার গেলেন দুপুরে। মনে মনে ভেবে নিয়েছিলেন, হয়তো দেখবেন শ্মশানের স্তব্ধতা। কোথায় কী!

ম্যানেজার দিব্যি তামাক টানছেন। হাওয়ায় অম্বুরি তামাকের সুগন্ধ। সানাই বাজছে। নারকেল ফাটানো হল। শুভ মহরত।

প্রবীণ অভিনেতা দাশুদা বললেন, “ঘাবড়ে যেয়ো না। এই হল পালাগান। নটনটীর মৃত্যুতেও থেমে থাকবে না, যাত্রা চলতেই থাকবে মানুষের জীবনের মতো। বাঁশি গেছে তো সানাই এল।”

অবাক হয়েছিলেন জনমেজয়। চিৎপুরের চরিত্রই আলাদা।

পুরুলিয়া কিন্তু আলাদা। রামরতন মল্লিক যাত্রার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। কোনও যাত্রার প্রথম শো মিস করতেন না। তাঁর মৃত্যুতে ক’দিন বন্ধ ছিল পালা।

কলকাতায় থাকতে এক বার স্টার অভিনেত্রী বনশ্রীর মৃত্যু দেখলেন। রূপে, লাস্যে স্টেজ মাতিয়ে রাখতেন। জনমেজয়কে খুব আদর করতেন। এটা-ওটা দিতেন। সিরোসিস অব লিভারে মারা গেলেন।

দেখা হলেই বলতেন, “এই পাপভূমিতে তুমি ভক্ত প্রহ্লাদ।”

জনমেজয় হেসে বলেছিলেন, “তবে কংস কে?”

নায়কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, “ও-ই কংস। প্রতি রাতে আমাকে নিংড়ে নেয় আর বাড়িতে বৌয়ের কাছে পোষা কুকুরের মতো ল্যাজ নাড়ে।”

উঠোনে রাতের জবা ফুটেছে। বনশ্রীদেবী যেন মৃত্যুর পর রাতের জবা হয়ে ফিরে এসেছেন।

এ বার চোখ জ্বালা করছে। আগামী কাল অফিসে যেতে হবে।

ত্রেতাযুগে আমি রাম, তুমি ছিলে জনকনন্দিনী,

দ্বাপরে শ্রীমতীরূপে তুমি ছিলে কৃষ্ণের দয়িতা

কেহ কারে পাই নাই, তটিনীর দুই তীরে দুজনে

কাঁদিয়াছি দু’জনার লাগি...

“আরে জনাদা! ইলেকশনের কী খবর?”

“কী আর খবর, কাজ চলছে। দুটো রাত অফিসে কাটাতে হবে।”

“শাসকদল তো সব পেয়ে গেছে, আবার ইলেকশন কেন!”

“জেলা পরিষদে নমিনেশন হয়েছে, ওটুকুতো হবে।”

“টাকার শ্রাদ্ধ, পাবলিক মানি। এ দিকে ডিএ দেওয়ার নাম নেই।”

“কী আর করবে, যেমন কুকুর তেমন মুগুর।”

“তাই তো,আমরা কুকুর ছাড়া আর কী!”

বর্ষীয়ান কমলদা বলে উঠলেন, “তাও আমরা দিশি কুকুর। আমাদের বসেরা বিদেশি সারমেয়। আমরা ফ্যা-ফ্যা রাস্তায় ঘুরি, আর আমাদের সাহেবদের গলায় বকলস বাঁধা। তবে ভালমন্দ খেতে পান।”

জনমেজয় বললেন, “কমলদা, আপনি তো মুক্ত হয়ে যাচ্ছেন, আর দেড় মাস।”

“মুক্ত কি আর কেউ হয়! তোমাদের সঙ্গে দেখা হত। সকাল হলে অফিস যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়তুম, তার পর ফিরতে ফিরতে রাত। এখন তো সময় থাকবে অঢেল, কী করব ভাবছি!”

জনমেজয় বললেন, “যাত্রা করবেন কমলদা? এক সময় তো করতেন!”

“মন্দ বলোনি, কিন্তু গলা তো হারিয়েছি।”

“এতেই হয়ে যাবে।”

“চেহারা তো নেই আর!”

“বয়স্ক আকবর বাদশা মানাবে ভাল।”

“তুমি জনমেজয়, সব হরিপদ কেরানিকে রাজা হওয়ার স্বপ্ন দেখাও, তাই না?”

জনমেজয় বললেন, “জীবনটাই তো চলন্ত রঙ্গমঞ্চ, কমলদা।”

হঠাৎ শোনা গেল, “তোর বৌ বেধবা হবে রে! গাড়ি চাপা পড়বি! বেজম্মার দল!”

“কে, এ সব বলছে!” কমলদা বললেন।

“রফিকের পেছনে লেগেছে। বলছে, তোর সব ইলেকশনের পাওনা টাকা টি-আর-সেভেনে জমা করেছে নাজিরবাবু।”

“ও বিশ্বাস করছে!”

“সব বিশ্বাস করে আর গালিগালাজ করে। অফিসে নাটক হলে রফিক রিহার্সালে মৃতের অভিনয় করত। নিষ্ঠার সঙ্গে নিথর শুয়ে থাকত।”

কমলদা বললেন, “তার পর?”

“দেবা বলে ছেলেটা আছে না!”

“হ্যাঁ, জানি।”

“সে রফিককে বলেছে নাটক করে সবাই চার হাজার করে পেয়েছে, আর নাজির তোমার টাকাটা টি-আর-সেভেনে জমা দিয়েছে। বলছে, তুমি তো মৃতের অভিনয় করেছ তাই আর বেঁচে নেই।”

কমলদা জানতে চাইলেন, “নাটকের জন্য টাকা দেওয়া হয়েছিল?”

“দূর পাগল! ওকে সবাই খেপায়।”

ফের ভেসে আসে রফিকের গলা, “মরবি, সব মরবি! এই চক্কোত্তি, তুই না বামুনের ছেলে, পৈতে ছিঁড়ে দেব বাঞ্চোত!”

হাসির লহরা চলতে থাকে রফিককে ঘিরে।

পদটা আবার ফিরে আসে জনমেজয়ের স্মৃতিতে—আজও কহি প্রিয়ে, শ্রীচৈতন্য দেশে দেশে করিবে ভ্রমণ, / নিমাই রহিবে সদা হেথায় কল্যাণী।

ট্রেন বিষ্ণুপুর ঢুকল আজ রাইট টাইমে। স্টেশনে নামতেই দীপঙ্কর ঘোষ সাহেবের সঙ্গে দেখা।

জনমেজয় বললেন, “স্যর, আপনি!”

“আমাদের ট্রেনটা একটু আগে ঢুকেছে। আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চা খাবেন?”

জনমেজয় হেসে বললেন, “খাব, কিন্তু হাজিরা খাতার কাজটা আগে সারি। ওখানে তো বিশু সর্দার রয়েছে, কোনও নন্দিনী নেই।”

“ঠিক বলেছেন।”

সইপর্ব শেষ করে ওঁরা ক্যান্টিনে এলেন। এখনও তেমন লোকজন নেই। জমে উঠবে দুপুরের দিকে।

দীপঙ্কর চায়ে চুমুক দিয়ে বললেন, “আপনাকে নিজের গোপন কথাগুলি বলব, বলা হয়নি কখনও।”

জনমেজয় হাসলেন, “গোপনই থাকুক না।”

দীপঙ্কর বললেন, “আপনি কাউকে বলবেন না, এই বিশ্বাস আছে আমার।”

“বলুন তা হলে।”

“আমার মা ছিলেন বিবাহ-বিচ্ছিন্না। বাবা যাত্রা করতেন। সে বার বাঁকুড়ার বারকোণা গ্রামে যাত্রা করতে গেছিলেন।”

জনমেজয় বললেন, “বারকোণা গ্রাম যাত্রার জন্য প্রসিদ্ধ। আজও সেখানে নরনারী রাতভর যাত্রা করে সকালে তরতাজা হয়ে কর্মস্থলে যান।”

“বাবা সে বার বারকোণা গ্রাম থেকে ফিরেছেন, সঙ্গে সহ-অভিনেত্রী। আমার তখন ক্লাস নাইন। বললেন, তিনি আর থাকবেন না। নতুন বিয়ে করবেন। মা নিশ্চুপ, নিশ্চল হয়ে রইলেন।”

জনমেজয় বললেন, “তার পর?”

বাবা চলে গেলেন, “মা-ও আমাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে গেলেন কিছু দিন পর। আমি তখন একা। অনেক কষ্টে কিছু টাকাপয়সা জোগাড় করে কলকাতার শ্যামবাজারে পিসির বাড়ি এলাম। সব বললাম। পিসি অপুত্রক ছিলেন। সন্তানস্নেহ না হলেও অনাদর করলেন না। পড়াশোনায় বরাবর ভাল ছিলাম। আশুতোষ কলেজে অঙ্ক অনার্সে সেই বছর কলেজে আমি প্রথম হই।”

“বাবার সঙ্গে আর দেখা হয়নি?”

“খবর পেয়ে গেছি। দু’জনের মুখাগ্নি করেছি বড় ছেলে হিসেবে। শ্রাদ্ধশান্তি করিনি। হবিষ্যান্ন খাইনি। কাছাও পরিনি। মন থেকে করতে পারিনি।”

তবুও দীপঙ্করের স্মৃতিতে আরও কিছু রয়ে গেল, যা এখনই বলতে পারলেন না। সৎমায়ের সেদিনের স্মৃতি বাবার মুখাগ্নির সময় তাড়া করছে তাঁকে, তবে এ সব কথা এখনই বলার নয়।

জনমেজয় বললেন, “আজ তো আপনি বিজয়ী, জয় হবে আপনার।”

“আমার কাহিনির এখানে শেষ নয়।”

জনমেজয় শান্ত গলায় বললেন, “বলুন স্যর।”

“বিয়ের রাতেই আমার বৌ আমাকে ছেড়েচলে যায়।”

“এখন তো রয়েছেন।”

“আমি দ্বিতীয় বার বিয়ে করি।”

“বৌদি জানেন সবটা?”

“হ্যাঁ। তাই যাত্রায় অভিনয় করব, এটা মেনে নিতে পারে না।”

“কিন্তু আপনি ফিমেল রোলে পার্ট করছেন বলেই তো যত আপত্তি।”

“বাবাও ফিমেলও হতেন। চৈতন্য আর বিষ্ণুপ্রিয়া, দুটো রোলেই বাবা দক্ষ ছিলেন।কণ্ঠস্বর ছিল অপূর্ব। আজও কিছু সংলাপ মনে আছে— আমি চৈতন্য দয়াল, ঘরনি আমার তুমি, নাম বিষ্ণুপ্রিয়া/ শঙ্খ নয়, চক্র নয়, গদা-পদ্ম নয়...”

এ বার জনমেজয়বাবু বললেন, “প্রেম হবে অস্ত্র আমাদের/ কাঁদিয়া কাঁদাতে হবে, জগজন মানিয়া লবে/ প্রেম বিনে গতি নাহি আর।”

জনমেজয় বললেন, “যাত্রাও আপনি পারবেন। সংসারও ঠিক থাকবে। অফিসের সবাই দেখতে আসবেন। আপনার রক্তে যাত্রা, আপনি মানুষ হিসেবেও ভালমানুষ।”

“আমার বাবা অবশ্য নিয়ম করে টাকা পাঠাতেন পিসির কাছে।”

“আর মা?”

“পরে আর কাউকে বিয়ে করেছিলেন। শুনেছি বেশ সুখেই ছিলেন।”

জনমেজয় বললেন, “চলুন স্যর।”

দীপঙ্কর বললেন, “চলুন।”

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Novel Novel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy