পূর্বানুবৃত্তি: হরিমন্দিরের দালানে পুজোয় যাত্রা করতে চলেছেন জনমেজয়। পুজোর সময় ইসরো থেকে ফেরার কথা তাঁর ছেলের। ছোটবেলায় তার ভাল লাগত বাবার যাত্রাপালা। শুরুর সময়ে পুরুলিয়া আর চিৎপুরের যাত্রাজগতের তফাত, পুরনো শিল্পীদের স্নেহসান্নিধ্যের কথা মনে করতে করতেই রাত ভোর হয়ে আসে জনমেজয়ের। অন্য দিকে তাঁর অফিসে শুরু হয়েছে আসন্ন ভোটের ব্যস্ততা। বিষ্ণুপুর স্টেশনে দীপঙ্করের সঙ্গে দেখা হল জনমেজয়ের। সেখানে ব্যক্তিগত কিছু গোপন স্মৃতি জনমেজয়ের সঙ্গে ভাগ করে নিলেন দীপঙ্কর। কৈশোরে এক সহ-অভিনেত্রীর মোহে স্ত্রী-পুত্র-সংসার ছাড়েন দীপঙ্করের বাবা। কিছু দিন পরে বাড়ি ছাড়েন মা-ও। পিসির বাড়িতে মানুষ দীপঙ্কর। প্রথম স্ত্রী বিয়ের রাতেই তাঁকে ছেড়ে চলে যান। দীপঙ্করের বাবা নারীচরিত্রেও অভিনয় করতেন। অনেকটা সে কারণেই তাঁর পরিবারের আপত্তি দীপঙ্করের ফিমেল রোলে পার্ট করায়। জনমেজয় সব শুনে সান্ত্বনা দেন দীপঙ্করকে।
অফিসে গিয়ে আর এ সব কথা হল না। রিফিউজি রিহ্যাবিলিটেশন দফতরের কিছু পাট্টা তৈরি করার ছিল, করে তাঁরা দুজনে মিলে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে দিলেন। তিনি আবার মাঝে মাঝে টপ্পা গান, আজ গাইছিলেন নিধুবাবুর প্রসিদ্ধ গান, ‘অনুগতজনে কেন করো এত প্রবঞ্চনা...’
জনমেজয় বললেন, “স্যর, আপনার গলায় কিন্তু সুর আছে।”
“মাঝে মাঝে আমাদের গুপ্তিপাড়ায় শখের যাত্রায় বিবেকের গান গেয়েছি।”
“বাহ! তবে আপনিও তো যাত্রা করেছেন।”
“আরে ভাই, গ্রামবাংলায় মানুষ যাত্রায় কোনও না কোনও ভাবে জড়িত। খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।”
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের আর এক মাস চাকরি। পুনর্বাসন দফতরের পাট্টাগুলি চটপট অনুমোদন করে দিলেন।
“স্যর, দেখলেন না তো কিছু!”
“আরে ভাই, বিচারকের তো থার্ড আই বলে একটা কিছু থাকে, দু’জনেই আপনারা শিল্পী মানুষ। মা সরস্বতীর বীণায় যাঁরা মজেছেন, তাঁদের অত মা লক্ষ্মীর প্রতি আসক্তি থাকে না।”
জনমেজয় বললেন, “স্যর, আবার যাত্রাকরতে চাইছি।”
ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, “চরৈবেতি। আমি শুনেছি। ঘোষসাহেব, আপনারা এক বার ‘ম্যাকবেথ’ করার কথা ভাবতে পারেন।”
“যাত্রায় ‘ম্যাকবেথ’!”
“হ্যাঁ, যাত্রায়। ‘ম্যাকবেথ’ এক সময় গিরিশবাবু বাংলা থিয়েটারে এনেছিলেন। লেডি ম্যাকবেথ কে করেছিলেন, জানেন?”
জনমেজয় বললেন, “কে?”
“তিনকড়ি দাসী। সেকালের বুদ্ধিদীপ্ত অভিনেত্রী। দেখতে মোটামুটি ছিলেন, কিন্তু অভিনয় অসাধারণ। ইংরেজি কাগজগুলোও লেডি ম্যাকবেথে তিনকড়ি দাসীর অভিনয়ের প্রচুর প্রশংসা করেছিলেন।”
ঘোষসাহেব বললেন, “অল দ্য পারফিউমস অব অ্যারাবিয়া ক্যান নট সুইটেন দিস লিটল হ্যান্ড!”
ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব বললেন, “ঘোষসাহেব, চেষ্টা করে দেখুন, আপনি পারবেন। এই সব চাকরিতে কী আছে! দিনগত পাপক্ষয়। আপনারা যদি করেন, যেখানেই করবেন, আমি যাব দেখতে।”
জনমেজয়ের চোখে জল এসে গেল।
ম্যাজিস্ট্রেট আবার বললেন, “এই যে নির্বাচন হচ্ছে, অহেতুক অর্থব্যয়। যে যায় লঙ্কায়, সে-ই হয় রাবণ। এ সব আমার ভাল লাগে না। এই শেষ কয়েকটা দিনেও নিংড়ে নিচ্ছে। সামান্য লেখালিখি করতাম, ভাবছি এ বার নিবিড়তা বাড়াব।”
জনমেজয় বললেন, “স্যর, চেষ্টা করব। আপনিও লেখার দিকে মনোযোগী হন।”
ম্যাজিস্ট্রেট বললেন, “আমাদের গুপ্তিপাড়ায় নব কার্তিক বলে এক জন ছিলেন। চমৎকার টপ্পা গাইতেন। কলকাতায় গেলে, মোহন বসুর টপ্পা দেখতে পেলে আমায় বলবেন।”
“ইউটিউবে দেখব স্যর?”
“পাবেন না। নিধুবাবু খুব ভালবাসতেন। কেউ কেউ ওঁকে মোহনকুমার নামে ডাকত। সে সব বহু যুগ আগের কথা।”
জনমেজয় বললেন, “আপনি নিয়মিতটপ্পা গান?”
“না, লিখি মাঝে মাঝে। আমার বৌ আমার লেখা টপ্পা গেয়েছেন। ইউটিউবে পাবেন।”
জনমেজয় বললেন, “স্যর, আমাদের কয়েকটা টপ্পা দেবেন?”
“নিশ্চয়ই দেব। গান কি নিজের কাছে রেখে দেওয়ার জিনিস!”
দীপঙ্কর হঠাৎ বললেন, “স্যর, আপনি টোডরমলের নাম শুনেছেন?”
ম্যাজিস্ট্রেট হেসে বললেন, “আকবর বাদশার টোডরমল নিশ্চয়ই নয়!”
“না, ইনি কোচবিহারের টোডরমল। পেশায় কানুনগো সাহেব।”
“শুনেছি, কোনও দিন দেখা হয়নি।”
“ওঁর কিছু বইও আছে।”
“আমি ভূমি-বিভাগে থাকতে অল্প কিছু মানুষকে পেয়েছিলাম, যাঁরা ভূমির আদ্যন্ত প্রেমিক। আমি অবিশ্যি তা হতে পারিনি।”
এর পর ওঁরা বাইরে এলেন। প্রচণ্ড গরম আজ। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বোঝা যায় না। অবশ্য জনমেজয় ও দীপঙ্কর যেখানে বসেন সেখানে এসি নেই। ট্রেজারি বিল্ডিং। খুব পুরনো। অন্নদাশঙ্কর রায় যখন মহকুমাশাসক ছিলেন, এই বিল্ডিংয়ে বসতেন। এই মহকুমাশাসক ওঁর একটি প্রস্তরমূর্তি বসিয়েছেন। ১৯৩৫-এ অন্নদাশঙ্কর রায় বিষ্ণুপুরের এসডিও ছিলেন। পুরনো আমলের সিঁড়ি, ধাপগুলি বেশ উঁচু। দীপঙ্কর বাঁকুড়া চলে গেলে নিজের অফিসকক্ষে একা বসে অনেক কথা ভাবতে লাগলেন জনমেজয়।
যাত্রা নামাতে গেলে কম করে হাজার চল্লিশ টাকা লাগে। বাজনদার, অভিনেতা, অভিনেত্রী সবাইকে নিয়ে সম্প্রদায়। কল শোয়ে ওই খরচাটুকু পেলে যাওয়া যায়। গ্রামের শিবমন্দিরে প্রণাম সেরে যুদ্ধে যাওয়ার মতো রওনা হওয়া। পুঁজি শুধু মানুষের ভালবাসা। মুনাফাও তা-ই। তাই কেউ আর যাত্রায় আসে না, বিশেষত তাঁদের মতো অপেশাদার দলে।
সার্ভেয়ারের জীবনও অদ্ভুত, কোথায় থাকবেন ঠিক থাকে না। কত দিন-রাত মাঠে তাঁবু খাটিয়ে থাকতে হয়েছে। খাওয়াদাওয়া সব সেখানে।
তখন উত্তরবঙ্গে পোস্টিং। করতোয়া নদীর তীরে ছিল সন্ন্যাসীকাটা মৌজা। বোধহয় জায়গাটা সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সঙ্গে যুক্ত ছিল। বিরাট মৌজা। ছত্রিশটা সিট। বাইশটা ভারতে আর চোদ্দোটা বাংলাদেশে। আড়াইশো বছর আগে এ সব এলাকা জঙ্গলাকীর্ণ ছিল। এখন পুব বাংলা থেকে মানুষ এসে দখল করেছেন। পুনর্বাসন দফতরের পাট্টা দেওয়ার আগে জরিপ প্রয়োজন। ইতিহাস বলে, এখানে সন্ন্যাসীরা ইংরেজদের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই যুদ্ধে অনেক সন্ন্যাসীর মৃত্যু হয়েছিল, তাই নাম সন্ন্যাসীকাটা। উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের একটা জায়গার নাম ছিল মোগলকাটা। সেখানে ভুটানিদের সঙ্গে যুদ্ধে মোগলরা কচুকাটা হয়েছিল। দীপঙ্কর সাহেবের মা ভুটানি ছিলেন। বাংলা যাত্রার সঙ্গে তিনি বোধহয় সম্পৃক্ত হতে পারেননি। এখানকার কোনও চা-বাগানে দীপঙ্কর সাহেবের বাবা চাকরি করতেন। তখনই ভুটানি মেয়েটির সঙ্গে পরিচয় হয়।
শোনা যায়, সন্ন্যাসীরা গৃহীও ছিলেন। আবার রাজাদের ভাড়াটে সৈনিক হিসেবে কাজও করতেন। ইংরেজ রাজত্বের সময় এঁরা ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের ভবানী পাঠক এ রকমই এক জন সন্ন্যাসী ছিলেন। তিনি বোধহয় পূর্ণিয়া জেলার লোক ছিলেন। সন্ন্যাসীদের সঙ্গে তিব্বতিদের একটা সম্পর্ক ছিল। ওঁরা ওখানে সুদের কারবারও চালাত। কোচবিহারের রাজপরিবার বরাবরই ইংরেজদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখত। সন্ন্যাসীদের এক নেতা গণেশ গিরি ভুটানের সঙ্গে কোচবিহারের যুদ্ধের সময় রাজপ্রাসাদে চড়াও হন। পরে ইংরেজরা রাজপ্রাসাদকে সন্ন্যাসীদের হাত থেকে মুক্ত করে।
এ সব মানুষজনের কাছ থেকে শোনা। জনমেজয় এখানে এক সময় খুঁজে বেড়িয়েছেন বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরাণীকেও। মন্থনা গ্রামের তালুকদার ছিলেন জয়দুর্গা। বৈকুণ্ঠপুরের রাজা ছিলেন দর্পদেব, রাজবংশী ভাষায় ধুরুপ দেও। রাজা দর্পদেবকে বন্দি করেছিল ইংরেজরা। তাঁকে নাকি সতেরো বছর ব্রিটিশদের জেলে থাকতে হয়। এই জয়দুর্গাই দেবী চৌধুরাণী। তিনিই ভবানী ঠাকুরের সহযোগিতায় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যদিও ‘আনন্দমঠ’-এ বঙ্কিম যবন বলতে মুসলমানদের বুঝিয়েছিলেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের চাকরি বজায় রাখতে তাঁকে এটুকু করতে হয়েছিল, কিন্তু জন্ম নেয় ‘বন্দে মাতরম্’। সেই বন্দে মাতরম্ গীত গাইতে গাইতে কত বিপ্লবী ফাঁসির মঞ্চে হাসিমুখে প্রাণ দিয়েছিলেন। অনেক বারই জনমেজয় ভেবেছেন ‘আনন্দমঠ’ যাত্রায় মঞ্চস্থ করবেন, হয়ে ওঠেনি। আসলে পদচিহ্ন গ্রাম, ১১৭৬-এর মন্বন্তর, মহেন্দ্র, কল্যাণী, সত্যানন্দের সন্ন্যাসীদল, ভবানী পাঠক, সব যেন বঙ্কিমের আর একটি উপন্যাস ‘দেবী চৌধুরাণী’-র সঙ্গে মিলেমিশে রয়েছে। আর দেবী চৌধুরাণী কোনও পুরুষ অভিনেতাকে মহিলা সাজিয়ে করতে গেলে অসম্ভব দক্ষতার প্রয়োজন। কলকাতায় এক বার ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মা’ দেখেছিলেন, যেখানে মায়ের অভিনয় করতেন এক পুরুষ অভিনেতা। অবিশ্বাস্য সেই অভিনয়!
১০
পারলে একটা বটগাছ হোস নরেন।
কথামৃত মাথায় নিয়ে হাওড়া স্টেশনে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন দীপঙ্কর। আজও তিনি ট্রেন মিস করেছেন। চন্দননগর যাওয়ার শেষ লোকাল ট্রেন চলে গেছিল। ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ব্যাগটাকে মাথার কাছে বালিশ করে রেখে। হাওড়ার বড় ঘড়িতে ঢং ঢং ঘণ্টা বাজল। কিছু নারীকণ্ঠের কলহাস্য শোনা গেল। এরা সব রূপোপজীবিনী।
একটা গানের সুর ভেসে আসছে। ওগো আমার আগমনী আলো...। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলপুরনো বেদনায়।
মুখাগ্নি করে চলে যাবেন। সাদা শাড়ি পরিহিতা এক কালের যাত্রা সম্রাজ্ঞী, তাঁর নতুন মা।
ডাকলেন, “দীপঙ্কর!”
বিরক্তি নিয়ে ফিরে তাকালেন দীপঙ্কর।
“তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।”
দীপঙ্কর বললেন, “কী?”
“তোমার বাবা কিছু বইপত্র আর ওঁর লেখা তোমায় দিতে বলেছিলেন।”
“আমায় কেন! এই উত্তরাধিকার আপনার সন্তানদের দিন। ওঁর কোনও স্মৃতি আমারপ্রয়োজন নেই।”
“আমাদের কোন সন্তান ছিল না।”
“আপনি তো আর ওঁর রক্ষিতা ছিলেন না।”
“না, তিনি আমায় বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু সে কথা কেউ জানত না।”
দীপঙ্কর অনিচ্ছাসত্ত্বেও জিজ্ঞেস করেফেললেন, “কেন?”
“আমরা আলো-ছায়া জগতের মানব-মানবী। আমাদের বিয়ে হলে দর্শক রোমান্টিকতা পাবে না।”
“আপনাদের কাছে রক্তমাংসের অস্তিত্বের চেয়ে বড় রঙ্গমঞ্চের অস্তিত্ব? আপনাদের পেশা, খ্যাতি, এ-ই সব?”
চুপ করে রইলেন বাবার সেই দ্বিতীয় বৌ।
দীপঙ্কর বলেছিলেন, “একটা মেকি জগতের মোহে এক বালককে ত্যাগ করেছিলেন তার বাবা। সেদিন ছিল দুর্গাপুজোর একটি রাত। বালক অপেক্ষায় ছিল, তার বাবা পুজোর নতুন জামাকাপড় নিয়ে আসবেন। রেডিয়োতে বাজছে আগমনী গান। বন্ধুরা সব সেজেগুজে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছে। বাবা এলেন, নতুন জামাকাপড় এনেছিলেন, কিন্তু তিনি রইলেন না। এক বালক ও তার মাকে ফেলে রেখে তিনি চলে গেলেন।”
“তোমার মা-ও তো চলে গেছিলেন, আর খোঁজও নেননি তোমার, বিয়েও করেছিলেন।”
“ওঁর কথা ভাবলে আমার ঘৃণা হয়। কখনও উচ্চকিত ঝগড়াঝাঁটি হয়নি। মা-ও যেন অপেক্ষা করছিলেন স্বামীর চলে যাওয়ার। পড়ে রইল অবাঞ্ছিত ছেলেটি।”
“তোমার বাবা নিয়মিত টাকা পাঠাতেন। তোমার পিসিকেও বিশেষ করে অনুরোধ করেছিলেন, তোমায় নিয়ে যেতে। আড়ালে থেকে শেষ দিন অবধি তোমার খবর রেখেছেন।”
“সেটাই সব?”
“না, তা নয়। বিয়েটা তোমার বাবার ভুল ছিল।”
“তা হলে সন্তানও ভুল।”
“তুমি তো উঠে দাঁড়িয়েছ। ভাল রেজ়াল্ট করেছ। হয়তো আরও ভাল করতে। সম্ভব হলে আমায়ও তোমার দুঃখ-যন্ত্রণার একটু ভাগ দিয়ো।”
সেই বয়সেও অসাধারণ সুন্দরী মহিলাকে প্রতিমার মতোই দেখাচ্ছিল। ইচ্ছে হল প্রণাম করতে। অশৌচ মানেন না দীপঙ্কর।
প্রণাম না করে বলেছিলেন, “কী আছে এসব কাগজে?”
“তোমার বাবা ভাল গীতিকার ছিলেন। নিজেও চমৎকার টপ্পা, খেউড় গাইতেন।”
“আমাকে ছাপাতে হবে?”
“না, না। সে সব কিছু নয়। অবসর সময়েপড়ে দেখো।”
“আমি তো গীতিকারও নই, অভিনেতাও নই। কী হবে এ সব দিয়ে আমার!”
“একটু দেখো।”
“আমি এক জন সরকারি কানুনগো।”
“বাহ! তুমি কানুনগো সাহেব হয়েছ!”
“আরশোলাকে কেউ পাখি বলে না।”
“মানে বুঝলাম না।”
“কানুনগোদের কোনও সম্মান নেই। তাঁদের কেউ আধিকারিক বলে না।”
“এটা ঠিক নয়, গ্রামে গ্রামে কানুনগোরদাপট দেখেছি।”
“খারাপ কথাও তো শুনেছেন। ঘুষখোর।”
“তুমি তা কখনও হবে না। তোমার রক্তেবইছে শিল্পীসত্তা।”
“নেই! নেই! আমার রক্তে কোনও শিল্পীসত্তা নেই। আমি ঘৃণা করি শিল্পীদের!”
হাসলেন তিনি। বললেন, “এক দিন জাগবে। ওই আশায় তোমার বাবা কাগজগুলি দিয়েছেন। হয়তো অভিনেতা নয়, তুমি তো লেখকওহতে পারো।”
“ওই একই হল। সব মিথ্যেবাদী। শিল্পী জাতটাকেই আমি ঘৃণা করি।”
“আমি জানি। তোমার পক্ষে তা-ই স্বাভাবিক। কখনও মনে পড়লে এসো। আমি তো তোমার মা-ও। গর্ভদায়িনী না হলেও, সম্পর্কে তো মা।”
দীপঙ্কর আর দাঁড়িয়ে থাকলেন না।
ক্রমশ
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)