E-Paper

কেয়ার গন্ধ

বিক্রম, জনমেজয়ের ছোট ভাই। এক জন গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা। সে বলল, “দাদা, হারেমের কথা বলো এ বার।”

অভিজিৎ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৭:৪৫
ছবি: সৌমেন দাস।

ছবি: সৌমেন দাস।

পূর্বানুবৃত্তি: জনমেজয় আর দীপঙ্কর অফিসে পৌঁছে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের ঘরে কিছু কাগজপত্র জমা দিতে ঢুকলেন। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট আগে শখের যাত্রা করেছেন। ভাল টপ্পা লেখেন, সুর করেন, গান। জনমেজয়ের যাত্রার প্রতি আগ্রহের কথা শুনে উৎসাহ দিলেন। যাত্রা করতে গেলে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকার মতো লাগে। সে টাকা কোথা থেকে জোগাড় হবে সেই চিন্তায় মগ্ন জনমেজয়। অন্য দিকে ফের বাড়ি ফেরার শেষ ট্রেন মিস করেছেন দীপঙ্কর। রাতে স্টেশনে তাঁর মনে পড়ল বাবার মুখাগ্নির দিনের স্মৃতি। সেদিন তাঁর সৎমা তাঁকে বাবার হাতে লেখা কাগজপত্র তুলে দেন। তাতে বাবার লেখা টপ্পা, খেউড় ধরনের গানগুলি ছিল। নতুন মা আশা করেছিলেন, এক দিন দীপঙ্কর সেই লেখাগুলি পড়বে, তাঁর রক্তেও শিল্পীসত্তা জাগবে। সেসব কথাও মনে পড়ে দীপঙ্করের।
এই নির্জন হাওড়া স্টেশনে পুরনো স্মৃতি ভিড় করে এল।

তাঁর মধ্যেও কি শিল্পীসত্তার জাগরণ হচ্ছে!

ফার্স্ট ট্রেনের ঘোষণা হল। ছেলেটার মুখ দেখার জন্য ভিতরে ভিতরে অস্থির হয়ে উঠলেন দীপঙ্কর।

১১

‘মুঘল-ই-আজ়ম’ করতে কস্টিউমে প্রচুর টাকা লাগবে। এ ছাড়া স্টেজ রয়েছে। পেশাদার অভিনেত্রী ছাড়া ‘মুঘল-ই-আজ়ম’ নামানো যাবে না।

সিংহাসনে বসে সেলিম তথা নুরউদ্দিন মহম্মদ জাহাঙ্গির ঘোষণা করেছিলেন, তাঁর রাজ্যে বৃহস্পতিবার ও রবিবার মাংস বিক্রি হবে না। বৃহস্পতিবার ছিল তাঁর মসনদ আরোহণের দিন। আর পিতার জন্মদিন ছিল রবিবার। তবে নিজেই বার বার সেই আদেশ ভেঙেছেন। তাঁর স্মৃতিকথা ‘ইকবালনামা-ই-জাহাঙ্গিরি’-তে মুতামিদ খান লিখেছেন, কৈশোর থেকে তিনি শরাব পান করতেন। শরাবপানের আসরের তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘মুবারক শম্বা’। মৃত্যুশয্যায় জাহাঙ্গির কিছু খাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। সম্রাজ্ঞী নুরজাহান জানতে চাইলে তিনি বলেন, শরাব। পান করতে পারেননি, গড়িয়ে পড়েছিল গাল বেয়ে।

এর পর আমরা যদি ‘মসির-ই-আলমগিরি’তে আসি, সম্রাট এই গ্রন্থ লেখা হচ্ছে জেনে নিষেধ করেন। তাঁর মৃত্যুর পর আবার লেখা হয়। ঔরঙ্গজেব শরাব পান করতেন না, উপবাস করতেন প্রায়ই।

সম্রাট আকবর মাংস খেতেন না শুক্রবার ও রবিবার। আজ়ার ও আবান মাসের বেশ কিছু দিন উপবাস করতেন। উপবাসের শেষে মাতা মরিয়ম মাকানির প্রাসাদ থেকে পুত্রের জন্য মাংস রান্নাকরে পাঠাতেন।

“এই ভজা, চা দিয়ে যা। সঙ্গে তোর অ্যাসিড নিমকি,” ক্লাবঘরে বসে জনমেজয় শোনাচ্ছেন মোগল বাদশাদের কথা।

বিক্রম, জনমেজয়ের ছোট ভাই। এক জন গুরুত্বপূর্ণ অভিনেতা। সে বলল, “দাদা, হারেমের কথা বলো এ বার।”

“আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরি’তে মোগল হারেম, বিশেষ করে আকবরের সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন। আমাদের সৌভাগ্য, এখন সব কিছুর বাংলা অনুবাদ পেয়ে যাচ্ছি।”

পরানখুড়ো বললেন, “পুজো তো এসে গেল, কী যাত্রা হবে, তা-ই তো ঠিক হল না।”

জনমেজয় বললেন, “কাকা, বাজেট একটা বড় বাধা...” তার পর বললেন, “এক সাহেব কী লিখেছেন মোগল হারেম নিয়ে বলি তোদের...”

বিক্রম বলল, “শুনেছি, আকবরের পাঁচ হাজার রক্ষিতা ছিল।”

জনমেজয় বললেন, “তা হলে হিন্দু রাজ্য বিজয়নগরে, হারেমে বারো হাজার মহিলা ছিল।”

ভজা চা দিতে এসে বলল, “জনাদা, বারো হাজার মহিলা কোথায় পাবে! মেলা লেগে যাবে।”

বিক্রম বলল, “দূর শালা! তুই দুপুরে দেশি মুরগির কষা আর খিচুড়ি করতে পারবি? তবে না হারেমের গপ্পো জমবে!”

“আমাকে হারামি বলে খিস্তি দেবে না, তা হলে আমি কিছু করতে পারব না।”

“আরে হারামি নয়, হারেম!” বিক্রম বলল।

“সেই একই হল গিয়ে। আমি কি অত বোকা!”

“তুমি শালা চার অক্ষর!”

জনমেজয় বললেন, “আহা, তুই ওদের কথা শুনিস না। আমি বলছি জনা পনেরোর মতো মুরগির মাংস আর খিচুড়ি রান্না করিস। এখন যা।”

এই সময় ভজা ছুটে এসে বলল, “পানসদা আসছেন। ঘোড়ার গাড়িটা দেখা যাচ্ছে।”

পানসদা মানে প্রোডাকশন ম্যানেজার। টাকাপয়সা সবটাই ওঁর। ভাল নাম, কামাখ্যাপ্রসাদ সিংহ মহাপাত্র। হিরোর রোলে অভিনয় করতে চান, সে ওঁর যত বয়সই হোক না কেন। অবশ্য প্রতি বার রিহার্সালের পর গলা বসে যায়। ফলে আসল নায়ক পানসদার আড়ালে প্রস্তুত হতে থাকে। পানসদা হিরো হওয়ার জন্য নিজের নামও রেখেছেন পানস চৌধুরী। একটা সামন্তবাদের গন্ধও ওই নামে রয়েছে। আবার কথাটা মনে পড়ল জনমেজয়ের। তা ছাড়া কামাখ্যাপ্রসাদ ভয়ঙ্কর কঠিন নাম।

দীপঙ্কর খুব ভোরে বাড়ি এলেন। প্রচুর পাখি ডাকছে। কলাবাগানে কলার ডাক চলছে। পাইকারি। বৃষ্টি হয়েছে রাতে। হাওড়া স্টেশনে ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ শুনেছেন। স্বপ্নের তোড়ে সেই শব্দ আড়াল হয়ে গিয়ে এক কুহক রচনা করেছিল রাতে।

ডোরবেল টিপলেন। খুব তাড়াতাড়ি দরজা খুলে দিল পল্লবী। মুখে চিন্তার ছাপ। কেমন যেন আনন্দ হল এই প্রথম পল্লবীর মুখমণ্ডলে দীপঙ্করের জন্য ভাবনার কিছু বিন্দু দেখে।

দরজা খুলে পল্লবী বলল, “কোথায় ছিলে? যাত্রার রিহার্সালে?”

“ধুস! লাস্ট লোকালটা মিস করেছি আবার।”

“একটা ফোন করতে পারো তো!”

দীপঙ্কর উল্টে বললেন না, ‘তুমিও তো ফোন করতে পারতে!’

পল্লবীই বলল, “আমি অনেক বার ফোন করেছি। কল ঢোকেনি।”

দীপঙ্কর বললেন, “ও! আমি তোমায় বিরক্ত করতে চাইনি।”

পল্লবী বলল, “এ রকম আলগা ভাবেই সারাটা জীবন রয়ে গেলে।”

এ বার ছেলে ছুটে এল, “বাবা, ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’-এর কথা জানো?”

পল্লবী বলল, “বাবা এখন টায়ার্ড। পরে তোর কথার উত্তর দেবে।”

দীপঙ্কর বললেন, “একটা কথা বলি তোকে। মানুষের শরীরে প্রতিটি কোষে ছ’ফুট লম্বা ডিএনএ রয়েছে। আর এতে রয়েছে তিরিশ হাজার জিন। যদি আমাদের কোষের সব ডিএনএ-কে এক করা যায় তা হবে প্রায় দুটো সৌরমণ্ডলের সমান।”

অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল দীপ।

এ রকম অবাক দীপঙ্করও হতেন তাঁর স্নেহশীল বাবার কথায়। কত গল্প বাবা শোনাতেন। শেক্সপিয়রের নাটকের গল্পগুলো বাবার কাছ থেকেই শোনা। একটা উৎসবের রাত, দুর্গাপুজোর রাত সব এলোমেলো করে দিল। চিরকালের নায়ক বাবা খলনায়ক হয়ে গেলেন। কেন বাবা, তুমি এ রকম করলে! যাত্রা তো তোমাকে কিছুই দেয়নি।

এক বার মনে হয় বাবা আশা করেছিলেন, মা কিছু বলবে।

তাঁর ভুটানি মা বাংলা বলতে শিখেছিলেন। কিন্তু বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে কোনও ধারণা ছিল না। বাবা-মায়ের বিয়েটা ছিল দুর্ঘটনা, সেই দুর্ঘটনার শব বয়ে বেড়ালেন দীপঙ্কর।

“তুমি স্নানটা সেরে এসো। আবার অফিস যাওয়া নেই তো!”

“না, নেই। অবশ্য যদি না ডাকে।”

“তোমাকে ইলেকশনে নিল না?” বলে হেসে গড়িয়ে পড়ল পল্লবী।

দীপ বলল, “এ মা! বাবা তোমায় ইলেকশনে নিল না!”

“আসলে এটা পঞ্চায়েত ভোট তো!”

“ভাল হয়েছে। বিশ্রাম করো, টিভি দেখো।”

পল্লবী তার পর আবার বলল, “তোমার সঙ্গে একটা কথা আছে। স্নান সেরে এসো, বলব।”

দীপঙ্কর স্নান সারতে গেলেন। অনেক ক্ষণ ধরে স্নান করলেন। পথের আবর্জনা থেকে কিছুটামুক্ত হলেন।

ফিরে এসে দেখলেন, পল্লবী লুচি ভেজেছে। দীপেরও খুব আনন্দ হল।

লুচি খাওয়ার পর দীপ পড়ার ঘরে গেলেপল্লবী বলল, “আমি তোমার জন্য সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে গেছিলাম।”

দীপঙ্কর একটু অবাক হয়ে বললেন, “কেন! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?”

পল্লবী বলল, “তা নয়, কিন্তু এই যে বলছ তোমার মধ্যে নারীসত্তা জাগছে।”

“সে তো অভিনয়ের জন্য। আমার বাবাও কিন্তু অভিনেতা ছিলেন। আমার রক্তে অভিনয় রয়েছে।”

“আজ বাবার কথা বলছ হঠাৎ!”

“তোমাকে একটা কথা বলা হয়নি... মুখাগ্নি করতে গেছিলাম যখন, বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী, আমার নতুন মা বাবার কিছু কাগজপত্রআমাকে দিয়েছিলেন।”

“কোনও উইল?”

“ধুস! বাবাদের যাত্রা ক্রমশ মুখ থুবড়ে পড়ল। বাবা তো কিছু করতেন না, শুধু অভিনয় ছাড়া। সেই দিয়ে আমাদের সংসার চলত।”

“আজ কিন্তু বাবার সম্পর্কে অন্য রকম বলছ। কী আছে ওই সব কাগজে?”

“আমার ছেলেবেলায় মনে আছে বাবার কোলে বসে গান শুনতাম। বাবা গাইতেন।”

“কী গান?”

“টপ্পা, হাফ খেউড়।”

“টপ্পার নাম জানি কিন্তু হাফ খেউড়?”

“বাবা, মোহন বসুর কথা বলতেন। নিধুবাবুর প্রিয় শিষ্য, সেকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গায়ক।”

পল্লবী বলল, “তোমার বাবার পথ কিন্তু ভয়ঙ্কর। সাধারণ মানুষের পথ নয়।”

দীপঙ্কর বললেন, “আমি জানি। কিন্তু কখনও কখনও কানে বাজে বাবার গাওয়া পদ।”

পল্লবী বলল, “তোমার গলায়ও সুর আছে।”

“জানি না। কোনও দিন গান গাইনি। তবে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী চমৎকার টপ্পা গাইতেন। কিছু রেকর্ডও আছে ওঁর।”

“তুমি শুনেছ?”

“হ্যাঁ, শুনেছি।”

দুপুরে খাওয়ার সময় দীপ বলল, “বাবা, দাদু খুব ভাল গাইতেন?”

দীপঙ্কর বললেন, “সব পুরনো আমলের গান।”

“দাদু কি রাগী ছিলেন?”

“একেবারেই না, বাবা।”

“তবে তোমায় ছেড়ে চলে গেলেন কেন?”

“সে-সব ভাবতে নেই বাবা। পুরনো কথা।”

“তুমিও তো বকো না বাবা।”

“কেন বকব, তুমি তো বাধ্য ছেলে।”

“আমাদের ছেড়ে তুমি চলে যাবে না তো?”

“কেন যাব বাবা! কখনওই যাব না।”

“তুমি যাত্রা করলে আমাদের ছেড়ে চলে যাবে?”

“তেমন হলে আমি যাত্রা করব না।”

“ঠাম্মা কেমন আছেন বাবা?”

“ঠাম্মাও মারা গেছেন অনেক দিন। আমি মুখাগ্নি করেছিলাম না!”

“হ্যাঁ, কিন্তু ঠাম্মাও তোমায় ছেড়ে চলে গেলেন!”

“ও-সব পুরনো কথা। শ্যামবাজারে পিসিঠাম্মা তোমাকে কত ভালবাসেন, তাই না!”

“হ্যাঁ বাবা। আমরা বুকুনদিদির বিয়েতে যাব।”

পল্লবী বলল, “তুমি ছুটি পাবে?”

“না পেলে এমনিই যাব।”

“কত সাহসী আমার! ভিতুর ডিম একটা! এক্ষুনি ফোন এলে ‘স্যর স্যর’ করতে করতে মূর্ছা যাবে।”

বাবার জীর্ণ কাগজপত্র দুপুরে খুললেন দীপঙ্কর।

শুরুতেই রয়েছে সিরাজের কলকাতা আক্রমণ। কলকাতা হয়ে গেল আলিনগর। আর ফলতায় উদ্বাস্তু ক্যাম্পে জায়গা হল ইংরেজ সাহেব-মেমদের। তার পর খুব দ্রুত ইংরেজরা সিরাজকে হারালেন পলাশির যুদ্ধে। সে তো ইতিহাস। স্বাধীনতা হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও, অনেকে বলেন।

তবে কিছু রাজবাড়ির জন্ম হল। এঁরা ইংরেজদের তোষণ করেই রাজা, মহারাজা হলেন। শুরু হল এ সব রাজাদের বদান্যতায়, ঠুংরি, টপ্পা, খেউড়, হাফ খেউড় গানের চল।

বর্ধমানের রাজদরবার থেকে শ্রীমতীকে ভালবেসে গীতরচনার অপরাধে বহিষ্কৃত হলেন নিধুবাবু। রামনিধি গুপ্ত। সঙ্গে নিয়ে এলেন ভালবাসার টপ্পা গান।

বাবার ডায়েরি এই অবধি পড়ে ঘুমিয়ে পড়লেন দীপঙ্কর। দীর্ঘ ঘুম। বিকেল গড়িয়ে সন্ধে হল উঠতে উঠতে। দু’বার ফোন বেজেছিল। ধরতে পারেননি দীপঙ্কর। সন্ধেয় সর্পদম্পতি গর্ত থেকে বেরিয়ে কেয়াবাগানে এল সান্ধ্যভ্রমণে।

ওঠার পর পল্লবী বলল, “তোমার অফিসের কেউ ফোন করেছিলেন।”

সামান্য চমকে উঠলেন দীপঙ্কর। মিসড কল লিস্ট দেখে বুঝতে পারলেন, জনমেজয়বাবু। এখনও দীপঙ্কর রয়ে গেছেন বালকবেলায়... বাবার কোলে বসে টপ্পা শোনা, হারমোনিয়ামে নিজে বাজিয়ে গান গাইছেন বাবা, আর বলছেন, ‘একে টপ্পা বলে সোনা। বড় হলে বুঝতে পারবে।’

মুখাগ্নি ছিল এক সংস্কার। সে দিন তেমন শোক ছিল না। আজ খুব কষ্ট হল সেই বাবার জন্য, যিনি এক বালককে পুজোর দিনে ছেড়ে গেছিলেন। মানুষের মন বড় বিচিত্র। ভালবাসার দাগ সহজে যায় না, অলক্ষে কোথাও না কোথাও থেকে যায়ই।

জনমেজয়বাবুকে রিং ব্যাক করলেন দীপঙ্কর।

জনমেজয়বাবু বললেন, “ভয় পাবেন না স্যর। কেউ আপনার খোঁজ করেননি। গতকাল নিশ্চয়ই আবার ট্রেন ফেল করেছিলেন। কেমন আছেন, খোঁজ নিচ্ছিলাম।”

“ভাল। বাবার স্মৃতির কাগজপত্র দেখছিলাম, টপ্পার ইতিহাস থাকতে পারে, বা খেউড় বা হাফ খেউড়ের চর্চার কথা।”

“পড়ুন। ক্ষমাও করে দিন।”

দীপঙ্কর হেসে বললেন, “ছেলের ক্ষমতা কি বাবাকে ক্ষমা করা! বাবার কথা মনে পড়ল আজ।”

জনমেজয় বললেন, “ভাল থাকুন, সোমবার দেখা হবে।”

১২

রাতে নির্বাচনের কাজে আটকে থাকতে হল। রাতে ঘুমনো গেল গেস্ট হাউসে, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সঙ্গে।

ভোরে উঠে প্রাতঃকর্ম, স্নান সেরে চা খেলেন জনমেজয়। তার পরেই কন্ট্রোল রুমে চলে গেলেন।

গিয়ে দেখলেন প্রায় সবাই আছেন সেখানে। অরবিন্দ কম্পিউটার গুছিয়ে নিচ্ছে। ভোটপর্ব শুরু হবে সকাল সাতটায়। রিপোর্টের জন্য ব্লক ভাগ করে নেওয়া হয়েছে।

জনমেজয়ের সঙ্গে রয়েছে অরবিন্দ। একই মেসে থাকেন এখানে কাজে আটকে গেলে।

অরবিন্দকে বাঁকড়ে ভাষায় ‘এঁরগাছা’ বলা হয়। এর মানে এখনও বিয়ে করেনি। মাতাঠাকুরানি ট্রাস্টের গেস্ট হাউসে একটি ঘর পরম্পরায় সার্ভেয়ারদের জন্য বরাদ্দ হয়ে আছে। ফ্যান আছে, লাইট আছে আর আছে খোলা একটি ছাদ। সামনেই মোনালিসা লজ। ‘এঁরগাছা’ অপবাদটা কিছু দিনের মধ্যে কেটে যাবে, কারণ সামনেই ওর বিয়ে।

ক্রমশ

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bengali Novel Novel

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy