Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মঙ্গলে হেলিকপ্টার ড্রোন

আজকের যুগ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আবিষ্কারের যুগ। মহাকাশ-প্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীতে আজ আর কোনও জায়গা নেই, যা আমাদের দেখা বা জানার বাইরে। ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে শুরু করে। তার পর পাঠানো হয় আরও অনেক উপগ্রহ। এই উপগ্রহগুলির সাহায্যে আমরা দেখতে সক্ষম হই সমস্ত পৃথিবী।

অমিতাভ ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

আজকের যুগ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি আবিষ্কারের যুগ। মহাকাশ-প্রযুক্তির সাহায্যে পৃথিবীতে আজ আর কোনও জায়গা নেই, যা আমাদের দেখা বা জানার বাইরে।

১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর মহাকাশে পাঠানো কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুটনিক পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরতে শুরু করে। তার পর পাঠানো হয় আরও অনেক উপগ্রহ। এই উপগ্রহগুলির সাহায্যে আমরা দেখতে সক্ষম হই সমস্ত পৃথিবী।

অনেক দিন আগে রাজার রাজত্বের পরিধি ছিল ঘোড়ার চলার ক্ষমতা অবধি। ঘোড়াই ছিল দ্রুততম বাহক। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আজ শব্দের গতিতে চলতে পারি, আলোর গতিতে সংবাদ আদানপ্রদান করতে পারি।

মহাকাশ-প্রযুক্তির বরে আজ মানুষের তৈরি মহাকাশযান আমাদের সৌরজগতের সব কটি গ্রহকে ফ্লাই বাই/অরবিট করেছে।

পৃথিবীর বাইরে মানুষের প্রথম অভিযান হয় চাঁদে। তার পরে মঙ্গলগ্রহ। ১৯৬৪ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র দৌলতে শুরু হয় উল্লেখযোগ্য মঙ্গল অভিযান। নাসার ম্যারিনার ৯ থেকে শুরু করে যমজ ভাইকিং, মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার, মার্স রিকনইশানস্ অরবিটার, ফিনিক্স, স্পিরিট, অপারচুনিটি ও কিউরিঅসিটি অভিযান মঙ্গলগ্রহ সম্বন্ধে আমাদের অনেক তথ্য দিয়েছে। বাকি আছে আরও অনেক তথ্য পাওয়ার।

সাধারণত মঙ্গল অভিযান হয়, যখন জ্বালানি কম লাগে। ২০২০-র জুলাই/অগস্ট হবে মঙ্গল অভিযানের এই রকম একটা সুবিধাজনক সময়। সেই সময় নাসার পরিকল্পনায় আছে ‘২০২০ রোভার’ পাঠানোর।

এই অভিযানের লক্ষ্য কী? মূলত তিনটি— ১) প্রাণের সন্ধান, ২) অদূর ভবিষ্যতে মানব অভিযান সম্ভব করার জন্য মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়ার কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকে অক্সিজেন তৈরির চেষ্টা, ৩) ভবিষ্যতের রক স্যাম্পল রিটার্ন মিশন-এর জন্য উপযোগী পাথরের নির্বাচন করা।

আজ অবধি মঙ্গল অভিযান তিন রকমের হয়েছে— ১) ফ্লাই বাই (মঙ্গলযান মঙ্গলের পাশ দিয়ে চলে যায়), ২) অরবিটার (মঙ্গলযান মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করে), ৩) ল্যান্ডার/রোভার (মঙ্গলযান মঙ্গলে অবতরণ করে এক জায়গায় দাঁড়ায় বা চলাচল করে)

এর মধ্যে ফ্লাই বাই প্রাথমিক পর্যায়ে হয়েছে। এখন মঙ্গলে পাঠানো হয় অরবিটার, ল্যান্ডার ও রোভার। এর মধ্যে রোভার-এর উপযোগিতা সবচেয়ে বেশি, কারণ সে ঘুরে ঘুরে দেখে তথ্যসংগ্রহ করে। অপারচুনিটি রোভার ১০ বছরে ২৫ মাইলের বেশি পথ চলে অনেক তথ্যসংগ্রহ করেছে। কিন্তু এই রোভারগুলি নিজেদের চোখ দিয়ে কিছু দূর অবধি দেখতে পায়। পথে কোনও উঁচু পাহাড় পড়লে তার দৃষ্টি বাধা পায়। এ ছাড়া মার্স গ্লোবাল সার্ভেয়ার, মার্স রিকনইশানস্ অরবিটার অনেক দূরে ঘুরতে ঘুরতে যা দেখতে পায়, তা-ই রোভারগুলিকে জানায়। সেই তথ্য থেকে পৃথিবী থেকে রিমোট কন্ট্রোলে আমরা রোভারদের পথনির্দেশ করি।

এ দিকে রোভারদের কাজ ক্রমশই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, মঙ্গলগ্রহে মানুষের অভিযানের ভাবনা ভাবা হচ্ছে বলে। আজ কতটা পথ যাওয়ার উপযুক্ত হবে, এই প্রাথমিক ভাবনা ভাবতে না হলে রোভার বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার কাজ অনেক বেশি করতে পারে। এই ভাবনা থেকেই মঙ্গলগ্রহে চালকবিহীন ড্রোন চালানোর ভাবনা আসে।

ড্রোন কী ভাবে মঙ্গল অভিযানে উপকারে আসবে? উড়ে যাওয়া বস্তু/প্রাণী নীচের স্থান অনেক দূর, অনেক ভাল ভাবে দেখতে পায়। কোথায় গর্ত, কোথায় নদীখাত, কোথায় পাহাড় আছে— উপর দিয়ে উড়ে গেলে সহজেই দেখা যায়, ভূমি থেকে যা অনেক কম দেখা যায়। ড্রোনের কাজ হবে— যত দূর সম্ভব দেখা ও সেই তথ্য রোভারকে জানানো।

মঙ্গলগ্রহের জন্য এই রকম একটি হেলিকপ্টার তৈরিতে খরচ হবে আনুমাণিক ৩ কোটি ডলার। মার্স ২০২০ রোভার পাঠাতে যেখানে খরচ হবে ১৫০ কোটি ডলার, সেখানে ৩ কোটি ডলার বাড়তি খরচে সুবিধা পাওয়া যাবে অনেক।

এটির ব্লেড স্প্যান-এ ১.১৫ মিটার, ওজনে ১ কিলোগ্রামের কিছু বেশি। এতে থাকবে ১টি ব্যাটারি, একাধিক কম্পিউটার, ১টি ক্যামেরা ও সোলার প্যানেল। এটি মঙ্গলপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪৫ মিটার উঁচু অবধি উড়তে পারবে। প্রতিদিনের ৩ মিনিটের উড়ানে এটি ১৯৭০ ফুট পথ পাড়ি দিতে পারবে।

এখন রোভার তার সীমাবদ্ধ দেখার ক্ষমতার জন্য যদি প্রতি মঙ্গল দিনে একটি ফুটবল মাঠের দৈর্ঘ্য হাঁটতে পারে, ড্রোন বেশি পথ দেখালে সে তিনগুণ বেশি পথ পাড়ি দিতে পারবে।

অনেক সুবিধা হলেও হেলিকপ্টার পাঠানোর অসুবিধেও কম নয়। যে কোনও মঙ্গলযানের মঙ্গলে পৌঁছনোর সবচেয়ে কঠিন কাজ মঙ্গলগ্রহে অবতরণ। যাওয়া যদি কঠিন হয়, নামাটা কঠিনতম। ড্রোনকে সেই নামাটা প্রতিদিন করতে হবে। তার ওপর মঙ্গলের অভিকর্ষ পৃথিবীর ৩৮ শতাংশ মাত্র। তাই ড্রোনের ব্যাস খুব ছোট না হলে তার পক্ষে ওড়া সম্ভব হবে না। আবার উড়তে হবে স্টেডি ভাবে, নামতে হবে পাথুরে এবড়ো-খেবড়ো জমিতে। পারিপার্শ্বিক হবে রুক্ষ্ম, কর্কশ। এতগুলো বাধা একসঙ্গে পেরোনো সহজ নয়।

ছোট্ট ড্রোন গড়ে নকল মঙ্গলগ্রহে চালানোর উদ্যোগ চলছে। ‘২০২০ রোভার’ অভিযান জানাবে, আমরা অন্য গ্রহে ডানা মেলতে পারি কি না। যদি পারি, এটাই হবে পৃথিবীর বাইরে কোনও গ্রহে মানুষের তৈরি যন্ত্রের ডানা মেলে প্রথম ওড়া। যদি পারি, বিজ্ঞানের হবে অভাবনীয় জয়যাত্রা। পারব ভেবে আজ খুশি হতে ক্ষতি কী?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE