Advertisement
০১ মে ২০২৪
সহায়ক প্রজনন পদ্ধতি আজ মূলধারার চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্থান করে নিয়েছে। বৈপ্লবিক নতুন কিছু সব সময়েই তরঙ্গের জন্ম দেয়।
test tube baby

test tube baby: নলজাতক সৃষ্টির যুগান্তকারী উপাখ্যান

হাজারখানেক প্রশ্ন ছিল। নীতিবাগীশদের বেআব্রু চোখরাঙানিও ছিল। ছিল নানা বিরোধিতাও। তবু নিন্দুকদের শেষমেশ হার মানতে হয়েছে।

উদ্ভাবক: স্যর রবার্ট এডওয়ার্ড। ডান দিকে, প্রথম নলজাতিকা লুইস ব্রাউনকে কোলে নিয়ে তিনি।

উদ্ভাবক: স্যর রবার্ট এডওয়ার্ড। ডান দিকে, প্রথম নলজাতিকা লুইস ব্রাউনকে কোলে নিয়ে তিনি। ছবি: গেটি ইমেজেস।

গৌতম খাস্তগীর
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:২৬
Share: Save:

মার্গারেট থ্যাচারকে ব্রিটিশ জনগণ বলত লৌহমানবী। তাঁর বিখ্যাত ভ্যানিটি ব্যাগ ২০১২ সালে কেম্ব্রিজে চার্চিল কলেজের প্রদর্শশালায় স্থান পায়। সেই স্মারকের পাশেই শোভা পায় একগুচ্ছ গবেষণাপত্রও। এক কলেজ প্রাক্তনীর। ফিজ়িয়োলজি ও মেডিসিনে নোবেল পুরস্কারজয়ী তিনি। মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তাঁর জন্ম আর মৃত্যুর বছর একই, জন্ম ও মৃত্যুর তারিখও খুব কাছাকাছি। দু’জনেই জীবনে যা যা করতে চেয়েছেন, শেষমেশ প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর তাতে সাফল্য এসেছে। এক ইঞ্চি জমিও ছাড়েননি তাঁরা। এই গবেষকের পুরো নাম স্যর রবার্ট জেফ্রি এডওয়ার্ড। বলা যায়, তিনি প্রাণ সৃষ্টির বিরল কৃতিত্বের অধিকারী।

রবার্ট এডওয়ার্ড বন্ধ্যাত্ব নির্মূল করার প্রাথমিক উদ্ভাবনে দূর করেছেন নিঃসন্তান নারীর অপূর্ণতা। এডওয়ার্ডের আবিষ্কারে বাষট্টি বছরেও এক মহিলার পক্ষে মা হওয়া সম্ভব হচ্ছে, বীর্যহীন পুরুষও বাবা হওয়ার আনন্দ উপভোগ করছেন।

২৫ জুলাই ‘বিশ্ব আইভিএফ দিবস’ পৃথিবীর প্রথম সফল নলজাতকের জন্মদিন। আজ থেকে তেতাল্লিশ বছর আগে গ্রেটার ম্যাঞ্চেস্টারের ওল্ডহ্যামে ভূমিষ্ঠ হন লুইস ব্রাউন। রবার্ট নিজে অবশ্য ‘নলজাতক’ শব্দটা পছন্দ করতেন না।

আবিষ্কারের এক যুগ পর ১৯৯০ সালে মার্গারেট থ্যাচারের সরকারই আইন জারি করে আইভিএফ বা ইনভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশনকে বৈধতা দেয়। গবেষণার প্রথম দিন থেকেই নীতিবাগীশদের তুমুল বিরোধিতা ছিল। কিন্তু থ্যাচারিজ়ম অনেক প্রতিরোধই তো বুলডোজারের তলায় গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আসলে ১৯৬৭ সালে কেপটাউনে মানবদেহে প্রথম সফল হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করে ক্রিস্টিয়ান বার্নার্ড বিশ্বময় শোরগোল তৈরি করেন। তখনই এই কীর্তিকে বলা হচ্ছিল ‘‌মানবসভ্যতার সেরা মেডিক্যাল বিস্ময়’‌। আধুনিক মেডিসিনের আঁতুড়ঘর ইংল্যান্ড উঠেপড়ে লাগে দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেক্কা দিতে। তারা একটা আশ্চর্য উদ্ভাবনের অপেক্ষায় উদ্গ্রীব প্রহর গুনছিল। লুইস ব্রাউন সে সুযোগ এনে দেয়। প্রথমে প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে তুমুল বিরোধিতা থাকলেও ফুটফুটে স্বর্ণকেশী নীলনয়না লুইসকে দিব্যি বড় হতে দেখে সাংবাদিকদেরও ভাবান্তর ঘটে। আশির শুরু থেকেই তুমুল প্রচার চালু হয় যে, বিশ্বের প্রথম সফল নলজাতক আসলে ‘‌অল ইংল্যান্ড মিরাকল’‌। ব্রাউনদের মতো সাধারণ ছাপোষা শ্রমজীবী পরিবারে এমন সাফল্য ভবিষ্যতে পরিবারতন্ত্রের ধারা নতুন খাতে প্রবাহিত করবে, এটা বোঝার দূরদর্শিতা ছিল মার্গারেট থ্যাচারের। নৈতিক দার্শনিক মেরি ওয়ার্নকের সভাপতিত্বে ১৯৮২ সালে বিশেষ কমিটি গর্ভাধান ও ভ্রূণতত্ত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত পর্যালোচনা শুরু করে। যে রিপোর্ট সরকারে জমা পড়ে তাতে নেতিবাচক কিছু ছিল না। আইন পাশ করতে দেরি করেননি থ্যাচার।

ব্রিটিশ সবুজ সঙ্কেত বিশ্বের অনেক দেশে ইতিবাচক তরঙ্গ বিস্তার করে। ব্রিটিশ অনুমতির সুদীর্ঘ দু’দশক পর এল নোবেল স্বীকৃতি। এডওয়ার্ডের সঙ্গী প্যাট্রিক স্টেপটো বহু আগে ১৯৮৮-তেই প্রয়াত। ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে রবার্টও পুরস্কার মঞ্চে হাজির হতে পারেননি।‌ ‘নাইটহুড’ও এসেছে নোবেলপ্রাপ্তির বেশ পরে। অর্থাৎ আগে বিশ্বের স্বীকৃতি, তার পর জুটছে নিজের দেশের সম্মান!

এই কৃতী গবেষক, রবার্ট জেফ্রি এডওয়ার্ডের উঠে আসা গল্পের চেয়ে কম বিস্ময়কর নয়। ১৯২৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ইয়র্কশায়ারের ছোট্ট উপনগরী ব্যাটলি-তে দুনিয়ার আলো দেখেন রবার্ট। সে বছর ব্যাটলে মুখোমুখি ভয়াবহ প্রলয়ের। ‘‌গ্রেট ফ্লাড’‌ অধিকাংশ মানুষের ঘরসংসার ভাসিয়ে দিয়েছে। শ্রমিক পরিবারে জন্ম। আঠেরো অবধি তিন ভাইয়ের মধ্যবর্তী রবার্ট পরিচিত ‘জেফ’ নামে। তার পর ‘বব’ নামে পরিচিতি। বড় ভাই স্যামি, ছোট হ্যারি। বাবা স্যামুয়েল অধিকাংশ দিনই বাড়ির বাইরে কাটাতেন। তাঁর ডিউটি রেলপথে। কার্লাইল থেকে সেট্‌ল পর্যন্ত যে লাইন পাতা ছিল, তার রক্ষণাবেক্ষণ করতেন তিনি। টানেলের মধ্যে কাটত দিনের অধিকাংশ সময়। ২৬০০ মিটার লম্বা ব্লিয়া মুর টানেল সব সময়ই ভর্তি থাকত কালো ধোঁয়ায়, ট্রেন চালানোর কয়লাযুগ সেটা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে স্যামুয়েল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রবল ব্রঙ্কাইটিসে শয্যা নেন। সামান্য মাইনের সঙ্গে উপরি পাওনা ছিল বছরে একটা রেল পাস। তাতে সপরিবার ট্রেন সফর করা যেত। কোথায় যেত এডওয়ার্ড পরিবার?‌ নিম্নমধ্যবিত্তের অবশ্যম্ভাবী ডেস্টিনেশন সাউথএন্ড ‌অন সি। টেমসের একেবারে মুখে, ছড়ানো-ছেটানো কয়েকটা থাকার জায়গায়।

রবার্টের মা মার্গারেট স্থানীয় একটা কারখানায় যন্ত্র চালাতেন। তিনি ছিলেন ম্যাঞ্চেস্টারের মানুষ। রবার্টের যখন পাঁচ বছর বয়স, গোটা পরিবার ঠাঁইনাড়া হয়ে ওখানেই উঠে যায়। শহরতলি গর্টনে একটা কাউন্সিল হোম জোটে। ম্যাঞ্চেস্টারে পড়াশোনা শুরু হয় রবার্টের। ১৯৩৭ সালে তিনি ভর্তি হন ম্যাঞ্চেস্টার সেন্ট্রাল বয়েজ় হাইস্কুলে। গ্রীষ্মাবকাশে মা প্রতি বার ববকে আনতেন ইয়র্কশায়ার উপত্যকায়। সবার সঙ্গে অবাধে মিশতে শেখার হাতেখড়ি ওখানেই। গ্রামের খামারে কাজ করতে শেখেন বব। প্রাণী ও উদ্ভিদের সঙ্গে তৈরি হয় নিবিড় সখ্য। সেটাই পরে প্রাণসৃষ্টির গূঢ় রহস্যভেদে তাঁকে আগ্রহী করে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝাপটায় ১৯৪৩ সালে স্কুল যাওয়া বন্ধ হয়। বাধ্য হয়েই অংশ নিতে হয় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে। মধ্যবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারের সন্তান, ভেবেছিলেন বড়জোর কামানে গোলা জোগান বা বন্দুকে টোটা ভরার কাজ জুটবে। কিন্তু সেনা কর্তৃপক্ষ তাঁর মধ্যে এক জন সফল অফিসার হওয়ার সব উপাদান খুঁজে পায়। ১৯৪৮ সালে সামরিক জীবনে যবনিকা, ফিরলেন ইয়র্কশায়ারেই। চাষবাসে এতটাই আগ্রহী হয়ে পড়েন যে, শিক্ষার বিষয় হিসেবে বেছে নেন কৃষিবিজ্ঞান। ভর্তি হওয়ার পর কিন্তু বিষয়টি ভাল লাগল না। বিষয় বদলে নিলেন প্রাণিবিদ্যা। মন দিয়ে পড়া শুরু করলেন। কিন্তু ফলাফলে সাফল্য এল না। অনার্স নয়, পাশ ডিগ্রি জুটল।

অবশ্য এই গ্রহণ কাটতে সময় লাগেনি। খবর পেলেন, বন্ধু জন স্লি এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যানিমাল জেনেটিক্সে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সে সুযোগ পেয়েছেন। তাও আবার প্রখ্যাত কনরাড ওয়াডিংটনের তত্ত্বাবধানে!‌ রবার্টও কপাল ঠুকে আবেদন করে বসেন। আগের পরীক্ষায় ফলাফল খুব ভাল না হলেও তাঁর নির্বাচন আটকাল না।

এডিনবরায় গবেষণা চলাকালীন তাঁর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ এক যোগাযোগ ঘটে। বন্ধুত্ব হয় পরবর্তী কালে যিনি জীবনসঙ্গিনী হবেন, সেই রুথ ফাউলারের সঙ্গে। সম্পর্ক হওয়া সহজ ছিল না। রবার্ট কোথাকার এক কুলগৌরবহীন পুরুষ। রুথ ফাউলারের বাবা নাইটহুড পেয়েছেন আর ঠাকুরদা নোবেলজয়ী!‌ তবু ভবিতব্য কি আর আটকানো যায়!

২০১০ সালে স্টকহলম-এ নোবেল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে রবার্টের কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করা হয় পুরস্কারফলকে এই উদ্ধৃতির মাধ্যমে— ‘‌অধিকাংশ মানুষের জীবনেই তাঁদের সন্তান বড় অংশ হিসেবে বিবেচিত। তারা থাকে হৃদয় জুড়ে। কিন্তু সবাই স্বাভাবিক উপায়ে সন্তানলাভ করতে পারেন না। কোনও নারীর ফ্যালোপিয়ন টিউব অবরুদ্ধ থাকতে পারে। এমনও হতে পারে, নারীর ডিম্বাণু বা পুরুষের শুক্রাণুর স্বল্পতা। রবার্ট এডওয়ার্ডস এর একটা উপযুক্ত সমাধান আবিষ্কার করেন। তিনি নারীর দেহ থেকে ডিম্বাণু তুলে এনে বাইরে টেস্টটিউবে গর্ভাধান ঘটিয়ে তাকেই আবার নারীদেহে যথাস্থানে প্রোথিত করেন। ...১৯৭৮ সালে এই পদ্ধতিতে প্রথম শিশু জন্মলাভ করে।’‌

নোবেল কমিটি যত সহজে ও সাবলীল ভাষায় এডওয়ার্ডের কীর্তি ব্যাখ্যা করে, তাঁর সাফল্যের রাস্তা অত সোজা ছিল না। ষাটের দশকের শুরুতে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর মেডিক্যাল রিসার্চ অধিকর্তা মানবদেহে আইভিএফ নিযিদ্ধ করে দেন। এই পথরোধ এডওয়ার্ডকে টেনে আনে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আজীবন রয়েও গেলেন কেম্ব্রিজে।

এডওয়ার্ড সেখানে একটি একনিষ্ঠ গবেষক টিম তৈরি করেন। সত্তরের দশকে গবেষণা চলছিল স্তন্যপায়ীদের প্রজনন এবং শরীরী বিকাশ ঘিরেই। ১৯৬৫ সালেই ‘ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত গবেষণা জানিয়েছিল, নিষিক্তকরণ, গর্ভাধান ঘটানো এবং ডিম্বাণুর বিকাশের প্রতি পর্যায় রবার্ট পর্যবেক্ষণ করে তার রহস্য উদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। ডিম্বাণু সংগ্রহ করতে এডওয়ার্ড কী না করেছেন!‌ বন্ধু চিকিৎসকদের অনুনয়-বিনয় করে গেছেন ক্রমাগত, রোগীদের কাছে করজোড়ে মিনতি করেছেন, প্রতিষ্ঠানের দ্বাররক্ষীদের নিয়মিত মোটা বকশিস দিয়েছেন।

লন্ডনের ‘রয়্যাল সোসাইটি অব মেডিসিন’-এ প্যাট্রিক স্টেপটোর সঙ্গে দেখা হওয়ার পর শুরু হয় দুই কিংবদন্তির যুগলবন্দি। স্টেপটো ছিলেন ওল্ডহ্যামের সিনিয়র স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ ও শল্যচিকিৎসক। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন জিন পার্ডি। তিনি ভ্রূণবিদ্যায় রীতিমতো পারদর্শী। রসায়নাগার তাঁর জিম্মায় থাকায় নিশ্চিন্ত হন এডওয়ার্ড এবং স্টেপটো।

১৯৬৯ থেকে বাতাসে খবর ছড়ায় যে মানবদেহে ইনভিট্রো ফার্টিলাইজ়েশন ফসল ফলাতে পারে। সাফল্যের ব্রেকিং নিউজ় খুঁজতে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুনিয়ার সংবাদমাধ্যম। বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবী, সর্বোপরি রাজনীতিকরা বিরোধী সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠলেন। বিতর্ক, বিরোধ এবং পাহাড়প্রমাণ তিক্ততার সৃষ্টি হল।

মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল এডওয়ার্ড এবং স্টেপটোর বৃত্তি, অনুদানের আবেদনপত্র নাকচ করে ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করে। ‘রয়্যাল কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ান্স অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টস’ নখদাঁত বের করে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রক্ষণশীল সমাজের তীব্র আক্রমণের সঙ্গে যোগ হয় চার্চের তুমুল প্রতিরোধ। বক্তব্য, এ অনাসৃষ্টি ঈশ্বরকে ব্যথিত করবে!

ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ।

ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায় ।

ইতিহাস সাক্ষী, ক্ষমতাবানরা যুগে যুগে এমন প্রতিকূলতাতেই ঝলসে ওঠেন। দিনরাত এক করে অক্লান্ত গবেষণা চলল। বহু প্রশ্নের উত্তর অজানা ছিল। গর্ভধারণ সহায়তার ওষুধ কী হবে?‌ সুস্থ ভ্রূণ তৈরি হবে তো? এক দশক যেন একটা আস্ত যুগ। একটাও প্রেগন্যান্সি টিকছে না। বব আর প্যাট দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে গেছেন। তাঁদের বিশ্বাস ছিল, এ ভাবেই সম্ভব। হলও তাই। ১৯৭৮-এ এল প্রথম নলজাতক।

তবে সব শেষে সামান্য হলেও একটু আফসোস আমাদের পিছু ছাড়ে না। কারণ আমাদের দেশেও একই লড়াই, নিরন্তর বঞ্চনা, ক্রমাগত লাঞ্ছনা, সরকারি লাল ফিতের ফাঁস, অক্ষম অপদার্থদের তুমুল বিরুদ্ধাচরণ পেরিয়ে সাফল্য এসেছে। প্রবাদপ্রতিম গবেষক সুভাষ মুখোপাধ্যায় ঢাল তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার হয়েও সে যুদ্ধ জিতেছেন, হাজার সমস্যাতেও পিছিয়ে আসেননি। ক্যালেন্ডার বলছে, লুইস ব্রাউনের চেয়ে মাত্র তেষট্টি দিন পরই ভারতে দুর্গা কানুপ্রিয়া আগরওয়াল জন্মান। কোণঠাসা করে না রাখলে, অকারণ বিরোধিতা না করলে, আরও আগে সুভাষবাবুকে স্বাধীনতা ও সহায়তা দিলে হিমায়িত ভ্রূণ থেকে বিশ্বের প্রথম নলজাতক সৃষ্টির গর্ব ভারতেরই, এক জন বাঙালির প্রাপ্য হত। কে বলতে পারে, ভারতীয় নোবেলজয়ীদের তালিকায় হয়তো সংযুক্ত হতে পারত আর একটি নাম!

তথ্যসূত্র:‌ নেচার পত্রিকা, ল্যানসেট পত্রিকা, নোবেল কমিটি ২০১০ সরকারি প্রতিবেদন, মার্টিন এইচ জনসন-‌এর একাধিক নিবন্ধ, রবার্ট জে এডওয়ার্ড-এর নিবন্ধ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

test tube baby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE