Advertisement
E-Paper

তুমি কি কেবলই কবি

বাংলার কবিদের কথা ভাবলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। আজ ভারত যা ভাবছে, তাঁরা দুই শতক আগেই ভেবে বসেছিলেন। গণেশের মুন্ডু যে আসলে প্লাস্টিক সার্জারির অবদান, সেটা সদ্য ফাঁস হওয়ার পরে কী নাচানাচি, কিন্তু অনামা বাঙালি কবি সেই কবেই একে অন্ধের হস্তিদর্শন বলে গেছেন। কর্ণের জন্ম যে আসলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফল, সেটা আজ জেনে আমাদের চোখ কপালে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কবেই ‘গোপন কথা নেবে জিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে’ লিখে গেছেন।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৫ ০০:০৮

বাংলার কবিদের কথা ভাবলে মাথা খারাপ হয়ে যায়। আজ ভারত যা ভাবছে, তাঁরা দুই শতক আগেই ভেবে বসেছিলেন। গণেশের মুন্ডু যে আসলে প্লাস্টিক সার্জারির অবদান, সেটা সদ্য ফাঁস হওয়ার পরে কী নাচানাচি, কিন্তু অনামা বাঙালি কবি সেই কবেই একে অন্ধের হস্তিদর্শন বলে গেছেন। কর্ণের জন্ম যে আসলে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফল, সেটা আজ জেনে আমাদের চোখ কপালে, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কবেই ‘গোপন কথা নেবে জিনে/ এই নব ফাল্গুনের দিনে’ লিখে গেছেন। তাঁকে সত্যদ্রষ্টা তো এমনি বলা হয় না। কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের শল্যচিকিৎসাও সে কালে টোটাল ছেলেখেলা ছিল, জানা যায় জীবনানন্দের লেখা পড়ে। পুরাকালের প্রবাদপ্রতিম নৃত্যশিল্পী বেহুলার পা ছিল না, বাকি সবাই ভুললেও জীবনানন্দ ভোলেননি। সেই অপার্থিব আইটেম-নৃত্য সম্পর্কে তিনি লিখেছেন ‘ছিন্ন খঞ্জনার মত যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়’। এর থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, পা ছিন্ন হলেও বেহুলা খঞ্জ-না, পুরোটাই কৃত্রিম প্রত্যঙ্গের কামাল। বলা বাহুল্য, বেহুলার নৃত্যশৈলীকেই হুলা-নৃত্য বলা হয়, পৃথিবী যে কথা ভুলেছে। বস্তুত শুধু গানবাজনা নয়, পুরো এন্টারটেনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিই ভারতের আবিষ্কার। আজ যারা বিলিতি মদ নিয়ে আদিখ্যেতা করে, তারা জানে না, এ সবই ভারতীয় পুরাকীর্তি। স্কচ ও দেবযানী আখ্যানে এর সাক্ষ্য পাওয়া যায়। ভায়াগ্রার জন্মের বহু আগেই লিঙ্গপুজোর টেকনোলজি ভারতের ঘরে-ঘরে ছিল, পরবর্তীতে তিব্বত হয়ে দূরপ্রাচ্যেও প্রচলিত হয়। আজ জাপানি তেল এই টেকনোলজির উত্তরাধিকার বহন করে, যদিও শিবরাত্রির সে মাহাত্ম্য আমরা ভুলে গেছি। এই নিয়ে নজরুল দুঃখ করে ‘কেউ ভোলেনা কেউ ভোলে’ লিখেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য তাতে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ভুলে যাওয়া কথাটা ঠিক নয়, রাতের সব তারাই থাকে দিনের আলোর গভীরে। এ নিয়ে দুই কবি কখনওই একমত হননি। পরবর্তীতে সেলুলয়েডের কবি ঋত্বিক ঘটক দেখান, যথারীতি কবিগুরুই এ ব্যাপারে ঠিক। গণস্মৃতিতে সবই থেকে যায়, বৈদিক মতে একে শ্রুতি বলা হত, ঋত্বিক যাকে কালেকটিভ আনকনশাস আখ্যা দেন। জীবনানন্দ তাঁকে সমর্থন করে বলেন, ইতিহাস খুঁড়লেই মেলে শতজল ঝর্নার ধ্বনি। বলা বাহুল্য, এই বেদ-পুরাণ খোঁড়াখুঁড়ির ব্যাপারেও চারশো বছর আগে থেকে আজ পর্যন্ত বাঙালি কবিরাই পথিকৃৎ। ‘সীতা অউর গীতা’ জাতীয়-সিনেমা হওয়ার অনেক আগেই ঋত্বিক চড়া মেলোড্রামা বানিয়েছেন, চরিত্রদের নাম দিয়েছেন সীতা, ভৃগু, অনসূয়া। বৈদিক যুগে স্পেসশিপ বুধে-মঙ্গলে উড়ে বেড়ানো নিয়ে কবিরা গাদা-গাদা পদ্য লিখেছেন, যার নাম মঙ্গল-কাব্য। আজও গিটারধারী কবি বেহুলার স্মৃতিতে রঞ্জনার (খঞ্জনার অপভ্রংশ) গানে ‘পাড়ায় ঢুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দেব’ লেখেন। প্রকৃত প্রস্তাবে বাংলা কবিতার ইতিহাসে পৃথিবীর তাবৎ মহান বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার লুকিয়ে আছে। তবে সবাই এ সব গূঢ় সত্য টের পায় না। একমাত্র ‘ব্যাদে সব আছে’ জাতীয় হাম্বা অন্তর্দৃষ্টি থাকলেই সেটা বোঝা সম্ভব।

bsaikat@gmail.com

saikat bandyopadhyay rabindranath birth anniversary humorous robibasoriyo story bengali poets
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy