Advertisement
E-Paper

স্টিয়ারিংয়ে শহরের প্রথম কলিং ক্যাবের মহিলা চালক

মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে ফিরে, শুরু হল নতুন জীবন। কলিং ক্যাব-এর স্টিয়ারিংয়ে বসে, মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছেন গন্তব্যে। স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় মারাত্মক দুর্ঘটনা থেকে ফিরে, শুরু হল নতুন জীবন। কলিং ক্যাব-এর স্টিয়ারিংয়ে বসে, মানুষকে পৌঁছে দিচ্ছেন গন্তব্যে। স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৭ ০০:০০

কলকাতা শহরে তিনিই প্রথম ওলা, উবেরের মতো কলিং ক্যাবের মহিলা চালক। কয়েক বোতল সালফিউরিক অ্যাসিড এ ভাবেই বদলে দিয়েছে সুচেতা সিংহের জীবন।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং-এর ছাত্রী সুচেতা আর পাঁচটা মেয়ের মতো চাকরি করে জীবন কাটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এক দুর্ঘটনায় অ্যাসিড পড়ে তাঁর শরীরের সত্তর শতাংশ পুড়ে যায়। ‘দেড় মাস লড়াইয়ের পর, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার সময় ডাক্তার নির্দেশ দিয়েছিলেন সব সময় এসি-তে থাকার।’ মার্কেটিং-এর কর্মী সুচেতার তো মাথায় হাত। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর দেখলেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, সেই পরিমাণ অর্থ এসি ঘরে বসে তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী তিনি অন্তত কলকাতা শহরে পাবেন না।

‘আমার প্রচুর দায়িত্ব ছিল। ওই পরিমাণ অর্থ রোজগারের জন্যই কলিং ক্যাব-এর ব্যবসা শুরু করলাম। আমি বস, আমিই কর্মী,’ গাড়ি চালাতে চালাতে বললেন সুচেতা।

স্টিয়ারিং-এ চোখ পড়তেই দেখা যায় হাত-ভর্তি ট্যাটু। ট্যাটু করতে এত ভালবাসেন? ‘একেবারেই না! হাতের পোড়া দাগগুলো ঢাকতেই এই ট্যাটুগুলো করিয়েছি! আসলে ভাল থাকার ইচ্ছে থাকলে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভাল থাকা যায়!’ দৃপ্ত ভঙ্গিতে বললেন সুচেতা।

বাড়িতে প্রায় সকলেই সরকারি কর্মী। প্রথমে কেউই চাননি ভবানীপুরের মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে সব গণ্ডি পেরিয়ে, সব গঞ্জনা উপেক্ষা করে গাড়ির স্টিয়ারিং ধরবে, তা-ও আবার অন্য লোকের জন্য।

‘দীর্ঘ চিকিৎসার পরে হাসপাতাল যখন একুশ লাখ টাকার বিল ধরিয়েছিল, সেই টাকাটা আমার বাবা আর আমাকেই দিতে হয়েছিল। তখন তো অন্য লোকে টাকা দেয়নি!’ ঝড়ের বেগে বলে চলেন সুচেতা।

মানুষ নয়, পথের সঙ্গে বন্ধুতা করেছেন তিনি। মানুষকে তাঁর গন্তব্যে নিয়ে যাচ্ছেন রোজ। ভোর পাঁচটা থেকে একটা, আবার বিকেল থেকে রাত অবধি গাড়ি চালানো।

আরও পড়ুন:মস্তানির ভাষা

কলকাতার রাত নিয়ে তো আজকাল এত অনিশ্চয়তার কথা শোনা যায়... মাঝপথে থামিয়ে বললেন সুচেতা, ‘দু-একটা ঘটনা ছাড়া সব যাত্রীই আমায় দেখে খুব উত্তেজিত হয়ে যান। আমার সঙ্গে সেলফি তোলেন।’ কলিং ক্যাবের তিনিই প্রথম মহিলা চালক। তবে রাত দেড়টায় এক বার এক সহযাত্রী কলকাতা ঘুরবেন বলে জেদ ধরেছিলেন, গাড়ি থেকে নামতে চাইছিলেন না! ‘পুলিশ খুব সহযোগিতা করেছিল সে দিন।’ কৃতজ্ঞতা সুচেতার গলায়।

উড়ুক্কু মেয়ে যেন হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিতে জানেন। রাতের হাওয়াও বশ মেনেছে তাঁর কাছে।

এক ফরাসি পর্যটক তাঁর গাড়িতেই ফেলে গিয়েছিলেন টাকা-পয়সা সমেত পিঠের ব্যাগটা। সুচেতা হোটেলে গিয়ে সেটা দিয়ে আসেন। গল্পটা বলার মধ্যেই ছিল আত্মতৃপ্তি। এক বার কোনও সহযাত্রী মহিলা চালক দেখে অভব্যতা করলে সোজা তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে হাজির করেছিলেন।

ডাকাবুকো মেয়ে আবার অন্য দিকে ‘পেট ক্যাব সার্ভিস’-ও চালিয়ে যাচ্ছেন। গাড়ি চালাতে চালাতে কুকুরের জ্বরের ওষুধ বলে দিচ্ছেন। নিজেই তো বস! তাই রবিবার রাখেন সলমন খান বা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের জন্য। দুজনেরই ভক্ত!

এ ভাবেই আট মাসে তিনটে গাড়ি নামিয়ে ফেলেছেন। মাথার ওপর ধারের বোঝা। তবুও চাকরিতে ফিরবেন না তিনি। সদ্যই এক কর্পোরেট অফিসের পরীক্ষায় বসতে হয়েছিল বাড়ির চাপে। ইন্টারভিউয়ের ডাকও এসেছিল, কিন্তু যাননি। বললেন, ‘নিজের জন্য, নিজের রোজগারের স্বপ্নটা বুনতে শুরু করেছি। পেছনে তাকাব না।’

ফ্লাইওভার, বাজার, পুলিশ ফাঁড়ি... রাত নামছে শহরে।

সুচেতার গাড়ি ঠিক চলছে। কত কিছুর সাক্ষী— পানশালার মাতাল, দুটি মানুষের ভালবাসা, কখনও বা দম্পতির ঝগড়া।

আস্ত এক কলকাতা তাঁর হাতে।

সুচেতা সিংহ Calling Cab Driver Tatoo ট্যাটু
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy