Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Novel

novel: ডানায় ডানায়

বল্লালের গল্প শুনে মগ্ন হয়ে যায় তমা। মোমবাতির স্নিগ্ধ আলো ভেসে থাকে। কাছে কোথাও থেকে অচেনা ফুলের গন্ধ ভেসে আসে।

ছবি: কুনাল বর্মণ।

ছবি: কুনাল বর্মণ।

রূপক ঘটক
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০৮:৫৫
Share: Save:

দরজা খুলতে খুলতে বল্লাল বলল, “ছোট একটা সমস্যা আছে তমা।”

“বাজার করা নেই, তাই তো?”

“না, আলু পেঁয়াজ কেনা আছে। তার থেকে বড় সমস্যা।”

“ইলেকট্রিক নেই? মিস্ত্রি ডাকতে ভুলে গেছ?”

“না গো, তার থেকে ছোট সমস্যা।”

“তা হলে কী? ঘরে তোমার বৌ রয়েছে? অন্য পুঁটির মা?”

“না রে বাবা না! সমস্যাটা হল এখানে একটাই শোবার ঘর। সেখানে একটাই বিছানা।”

“এটা সমস্যা নয়, সঙ্কট। চিন্তার কিছু নেই। সারারাত গল্প করব। কাল তুমি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে আমি পড়ে পড়ে ঘুমোব।”

“আচ্ছা, বেশ।”

“বেশ?”

“বেশ।”

“এই, তুমি রাজি?”

“হ্যাঁ, আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঘুমোব।”

“এই, সত্যি? না পড়িয়ে ঘুমোনোও যায় তোমাদের ওখানে?”

“পড়ানোর কী আছে বলো তো? আমি যা পড়াই তা যে-কেউ পড়াতে পারে। গ্রামের চাষিরা আরও ভাল পারে।” কথা বলতে বলতেই ঘরে ঢুকে আলো জ্বালে বল্লাল এবং তখনই একটা আদ্যোপান্ত অগোছালো ঘর দেখতে পায় তমা। বিশৃঙ্খল, অগোছালো, নোংরা এবং জিনিসপত্র ছড়ানো-ছেটানো। সোফায় বই, বিছানায় একটা একতারা। খাবার টেবিলে বাসনগুচ্ছ। প্রতিটি চেয়ারের মাথায় ছাড়া জামাকাপড় রাখা। ঘরের অবস্থা দেখে একটা চেয়ার টেনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে তমা। বল্লাল একটু অপ্রস্তুত হাসি হেসে রান্নাঘরে গিয়ে খুটখাট শব্দে কাজ শুরু করে। তমা ভেবে পায় না এই আসমুদ্রহিমাচল অবিন্যস্ত ঘরকে কী করে ভদ্রজনের বাসোপযোগী করা যায়! ভাবতে ভাবতে তার ফোন গোঁ-গোঁ শব্দ করে ওঠে। তমা দেখে ‘মা’ নাম জ্বলজ্বল করছে সেখানে। তমার মনে পড়ে যায়, সে পৌঁছনোর খবর দিতে ভুলে গিয়েছিল। তবে মার কণ্ঠে অভিযোগ ধরা পড়ে না। তমা বলে, “তোমায় ফোন করতে ভুলে গেছিলাম।”

“সে ঠিক আছে। হোটেলে পৌঁছেছিস?”

“পৌঁছেছি, কিন্তু ঘরটা কী নোংরা!”

“হোটেলের ঘর নোংরা? সে কী? তা হলে কী করবি?”

বল্লালকে শোনানোর জন্য গলাটা সামান্য তুলে সে বলল, “বুঝতে পারছি না, ভাবছি অন্য হোটেলে যাব।”

“খাওয়াদাওয়া হয়েছে?”

“ব্যবস্থা চলছে রান্নার। যদি খাবারদাবার পছন্দ হয়, তা হলে এখানেই থেকে যাব, না হলে তো অন্য হোটেলে যাবই!”

তমার উদ্দেশ্য সফল হয়। রান্নাঘর থেকে পাঞ্জাবি গায়ে খুন্তি হাতে অপরাধী-অপরাধী চোখে উঁকি মারে বল্লাল। মা’র সঙ্গে দু’-চারটে কথা বলে ফোন রেখে দেয় তমা। তার পর কোমরে হাত দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে চার পাশ। রান্নাঘরে যায়। রন্ধনরত বল্লালের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। বলে, “আজ আর কিছু করব না, কাল তুমি পড়াতে গেলে ঘরটা ধরব, এর খোলনলচে বদলে দেব।”

বল্লাল বলল, “কাল যদি আমিও থেকে যাই?”

তমা গম্ভীর মুখে বলল, “তা হলে আমার সঙ্গে ঝাঁট দেবে!” বলে চানঘরে যায় তমা। গা ধুয়ে শাড়ি পরে। কপালে দেয় একটা লাল টিপ। আঁচলটা কোমরে জড়ায়। এ সব সেরে বাইরে বেরিয়েই সে দেখল, বল্লাল মাথা নিচু করে বলছে, “নৈশ খাবার প্রস্তুত, বেগমসাহেবা।”

খাবার টেবিলে গিয়ে তার বিশ্বাস হল, এই পুরুষ তাকে পদে পদে চমকিত, বিস্মিত করে যাবে। আর যা-ই হোক, বিপ্লবের মতো এর সিলেবাস দু’বছরে ছোট প্রশ্ন, রচনাধর্মী, আবেগধর্মী প্রশ্ন, ব্যবহারিক পরীক্ষা-সহ শেষ করা যাবে না। এ এক অনন্ত বৈচিত্রময়, অন্তহীন সূচির বই। শুধু দিবাকরদার মতো লোক সে বইয়ের খোঁজ জানে। কারণ শাকসব্জি-সহ এক থালা গরম ম্যাগি আর আলুভাজা সযত্নে দু’টি থালায় বেড়ে রেখেছে সে। বেড়ে লাজুক মুখে দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে প্রায় অশ্রুত কণ্ঠে বলছে, “তুমি খেতে পারবে না, না?”

তমার হঠাৎ আবেগ আসে। সে জড়িয়ে ধরে বল্লালকে। গালে একটা ছোট হামি খায়। বল্লালের নাকে নাক ঠেকায়। তার পর বলে, “খুব পারব।”

তার আলিঙ্গনাবদ্ধ অবস্থায় থেকে বল্লাল কেবল চোখের ইশারায় খোলা জানলার দিকে ইঙ্গিত করে।

তমা বলে, “বিরক্ত করছ কেন? কী হয়েছে?”

বল্লাল ফিসফিস করে বলে, “জানলা খোলা।”

তমা বলে, “তাতে আমি কী করব? তোমার বইমুখো ছাত্রছাত্রীরা কি এখানে এসে উঁকি দেবে?”

বল্লাল বলল, “যদি দেয়!”

তমা বলল, “আমি জানি না, সেটা তোমার সমস্যা। আমি এ রকমই করব। তুমি যদি সমস্যাকে সঙ্কটে পরিণত করতে না চাও তো জানলাগুলো বন্ধ করে দিতে পারো। যাও, একটুখানির জন্য ছাড়লাম।”

তমার বাহুবন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে জানলা বন্ধ করার বদলে রান্নাঘরের দিকে চলে যায় বল্লাল। তার পর গোটা বাড়ির আলো নিভে যায় আর হাতে মাঝারি আকারের জ্বলন্ত মোমবাতি নিয়ে প্রবেশ করে সে। খাবার টেবিলের মাঝখানে রাখে সেই বাতি। তার পর তমার দিকে তাকিয়ে যুদ্ধজয় করার মতো হাসে। হেসে চেয়ার টেনে বসে তার থালার সামনে। তমাও তার চেয়ার টানে। কিন্তু বসার আগে দু’পা সরে বল্লালের হাতলহীন চেয়ারের কাছে গিয়ে তার কোলে বসে পড়ে। বসে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বল্লালকে। তার পর ঠোঁট দিয়ে তার ঠোঁট ছোঁয়। বল্লাল তার আঙুল দিয়ে সরিয়ে দেয় তমার কপালের চুল। এক বার পিছন ফেরে তমা। এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দেয় মোমবাতি। তার পর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে চেয়ারে বসা বল্লালকে। তার পর আরও গভীর, দীর্ঘতর হয় তাদের চুম্বন। খানিক পর উঠে দাঁড়ায় তমা। অবিন্যস্ত শাড়ি ঠিক করে। রান্নাঘর থেকে দেশলাই এনে মোমবাতি জ্বালায়। তার পর এক চামচ ম্যাগি মুখে দিয়ে বলে, “দারুণ হয়েছে।”

খাওয়া শুরু হয় দু’জনের। তমা বলে, “আমার জীবনের সেরা নৈশভোজ।”

বল্লাল বলে, “তোমার জীবনের জঘন্যতম মেনু।”

তমা বলে, “তাতে কী আসে যায়! ভাল মেনু কতই তো খেয়েছি। কিন্তু মনে করতে পারব! এই মেনুর কথা কিন্তু জীবনে ভুলব না।”

বল্লাল বলে, “তাও তো ঢ্যাঁড়শটা ভেজে দিতে পারলাম না। ওটা কাল করব। সিমুইয়ের পায়েসও রাঁধতে জানি, সেটা পরশু খাওয়াতে পারি।”

তমা বলল, “আর কী কী রাঁধতে পারো ইতিহাসবাবু?”

বল্লাল বলল, “আমের লস্যিটা তো দারুণ পারি। ওটা পরশুর পরের দিন তরশু খাওয়াতে পারি।”

“ব্যস?” তমা জানতে চায়।

বল্লাল চোখ বন্ধ করে মুখস্থ বলার ভঙ্গিতে বলে, “তার পরের দিন খিচুড়ি, তার পরের দিন গোবিন্দভোগ চালের পায়েস, তার পরের দিন...”

তাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে তমা, “এই, কী ভাবছ তুমি! আমি কত দিন থাকব এখানে? আমার ফেরার টিকিট কাটা আছে।”

বল্লাল তাকে পাত্তা না দিয়ে বলে চলে, “তার পরের দিন পনির চাউমিন, তার পরের দিন আম পান্নার শরবত।” তমা এ বার কথা না বলে জবর এক ফুঁয়ে ফের মোমবাতি নিভিয়ে দেয়। বলে, “এটা তোমার শাস্তি। অন্ধকারে খাও।”

বল্লাল তাও থামে না। বলে, “প্রেম দিলে না প্রাণে, শুধু শাস্তি গিলোটিনে?”

তমা অন্ধকারেও যেন কেঁপে ওঠে। সে অন্ধকারেও বুঝতে পারে, বল্লাল তার দিকে তাকিয়ে আছে। সে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়। এ বার বল্লাল এক ফুঁয়ে মোমবাতি নিভিয়ে বলে, “সেই যখন এলেই, এত দেরি করলে কেন তমা?”

তমা এ বারও কোনও উত্তর দেয় না। আবার মোমবাতি জ্বালায়। তার পর বল্লালের মুখের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলে, “তুমি কে বল্লাল? বল্লাল চুপ করে থাকে। কোথাও কোনও শব্দ নেই। মোমবাতির মৃদু আলো এসে পড়েছে বল্লালের মুখে। সে সুদর্শন নয়। তার গালে কয়েক দিনের দাড়ি। আলোয় ছায়ায় সুস্থির কারুকাজ তার মুখে। মনে হচ্ছে যেন কত দিনের জমে থাকা জল আটকে আছে তার চোখের পাতায়, যেন এখনই উপচে চোখের পাতার বাইরে এসে পড়বে। বল্লালের নাকের কাছে নাক নিয়ে গিয়ে প্রায় শোনা না যাওয়া কণ্ঠে তমা বলবে, “তুমি আমার নিয়তি। তোমার কাছে আমায় যেতে হবেই। মৃত্যুর আগের ঘণ্টার জন্য হলেও।”

এ বার আর কেউ মোমবাতি নেভায় না। দু’জনে যে যার জায়গায় বসে খেয়ে যায়। মোমবাতির ছায়া দেয়ালে পড়ে অভিনব ছবি আঁকে। বল্লাল চোখ তুলে দেখতে থাকে তমাকে। গায়ের রং মাজা। লম্বা রোগাটে চেহারা। চুল ছোট করে কাটা। ঘাড় পর্যন্ত সঘন চুল। কপালে টিপ। খুব সুন্দর মানিয়েছে। আর ঝকঝকে দুটো চোখ। ভাষা যেন সেখানে ভেসে বেড়ায়। অব্যক্ত কথা, অননুমেয় বেদনা সেখানে চুপ করে হাঁটু গেড়ে বসে থাকে। তাকে চিনতে, বুঝতে, জানতে কোনও আড়াল থাকে না।

অলৌকিক ভোর

মোমবাতিটা জ্বলে খাবার টেবিলে। তারা অন্য আলো জ্বালায় না। বল্লাল তার ছোট্ট বাড়িটার সঙ্গে পরিচিত করে তোলে তমাকে, “এই যে জানলা দেখছ, এখানে দাঁড়িয়ে আমি কলকাতার লোকের সঙ্গে কথা বলি।”

“কেন, এখানে কেন?”

“আহা, কলকাতা এখান থেকে দক্ষিণ-পূর্বে না, জানলাটাও তো তাই। এই যে ঝুলবারান্দা দেখছ...”

“বুঝতে পেরেছি, এই ঝুলবারান্দা থেকে সামনের বাড়ির মহিলার সঙ্গে কথা বলো।”

“একদম ঠিক বলেছ।”

“আচ্ছা! কে সেই মহিলা শুনি!”

“শ্রীমতী আগরওয়াল। একদম মা-মা ব্যবহার! সত্তর বছর মতো বয়স হবে। আর এই যে আমার পড়ার সোফাঘর। এই দিকে আমার শোবার ঘর। এখানকার জানলায় আমি এমনি এমনি দাঁড়িয়ে থাকি। দূরে এক চিলতে রাস্তা দেখা যায়। সে দিকে তাকিয়ে কত ক্ষণ যে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকি!”

তার কথা শুনে উচ্ছ্বসিত হয়ে তমা বলে, “এ মা বল্লাল! এ তো আমারও অভ্যেস! পুবের জানলায় দাঁড়িয়ে একটুখানি রাস্তা দেখা যায়। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে কত রকম মানুষ যায় হাঁ করে দেখি। আচ্ছা বল্লাল, তোমার বিনোদন কী?”

“এই ধরো একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমোনো।”

“আর?”

“রাস্তায় অকারণ হাঁটা! হাঁটতে হাঁটতে কোনও ফলক দেখলে দাঁড়িয়ে পড়ে ফেলা।”

কথা বলতে বলতে তারা বিছানায় বসে। বল্লাল বই, খাতা, ডায়েরি খাট থেকে সরিয়ে সোফায় রেখে আসে। মাঝখানে রাখা পাশবালিশ কনুইয়ের নীচে আয়েশ করে রেখে আধাআধি শোয় তমা। বল্লাল মাথার বালিশটা নিয়ে কোনাকুনি অপর কোণে অর্ধশায়িত হয়। তত ক্ষণে নিভু-নিভু হয়ে ওঠে মোমবাতির আলো। বল্লাল খাবার টেবিলের বাতি নিভিয়ে নতুন একটি বাতি এ ঘরের টেবিলের ওপর জ্বেলে দেয়। এখানে তুমুল বৃষ্টি হয়ে গেছে দু’-এক দিন আগে। পাখা লাগছে না।

তমা বলে, “এখানে আগে কারা থাকত বল্লাল? এই জানলা, এই দেওয়াল, এই ঝুলবারান্দায় আমি যেন কারও বলে রাখা কথা, থেমে থাকা ঘটনা শুনতে পাচ্ছি। বলো না বল্লাল, তুমি তো অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ দেখতে পাও! বলো না তাদের কথা।”

শুধু তার মুখ থেকে কথা খসার অপেক্ষা, বল্লাল আয়েশ করে শুয়ে তার দিকে ফিরে কনুইয়ের ত্রিভুজে মাথাটা তুলে রেখে বলতে শুরু করল, “ভদ্রলোক রাজস্থানের, বুঝলে। মারওয়াড়ের সাবেক বাসিন্দা। পেটানো চেহারা, ইয়া গোঁফ। বায়ুসেনায় কাজ করতেন। সেখান থেকে অবসর নিয়ে বছর চল্লিশ বয়সে শুরু করলেন ব্যবসা। দোকান করলেন দেরাদুনে। এখানে এসে ঘর ভাড়া নিলেন। দেশ থেকে নিয়ে এলেন স্ত্রীকে। এমনিতেই বেশি বয়সে বিয়ে করেছিলেন, এত দিন শুধুই ছুটির সময় দেশে ফিরে তার সঙ্গে মোলাকাত হত। সব হত, প্রাণের যোগটাই তৈরি হয়নি। এখানে তাকে আনার পর ভদ্রলোকের মনে হল, এ বার বন্ধুত্ব পাতাতে হবে তার সঙ্গে। চিনতে হবে তাকে।”

বল্লালের গল্প শুনে আকর্ষণ বোধ করে তমা। সে কাছে এগিয়ে আসে। মোমবাতির দূরাগত আলোয় কারও অবয়ব স্পষ্ট হয় না, দেওয়ালে বিচিত্র হয়ে ওঠে তাদের ছায়া। বল্লাল তখন বলে চলেছে, “কিন্তু সেটা যে এত কঠিন, তা জানত না ফৌজি। সে হেসে কথা বলে, ফুলুয়াও উত্তর দেয়। কিন্তু তাতে প্রাণ কোথায়! লোকটা দোকান থেকে পান্তুয়া, জলেবি কিনে আনে। কখনও শাড়ি কিনতে বৌকে নিয়ে যায়। কিন্তু প্রাণ পায় না। দোকান থেকে ফিরে লোকটা নানা গল্প করে। বৌ টুকটাক উত্তর দেয়। কিন্তু ভেতরের সেই মানুষটাকে খুঁজে পায় কোথায়? নিজেদের ঘনিষ্ঠ সময়ে লোকটা মাঝপথে এক-এক সময় থেমে যায়, থেমে বলে, ‘সব ঠিক অছে বৌ?’ সে মাথা নাড়ে। সব তো ঠিকই আছে। কিন্তু লোকটার মন বলে, সব ঠিক সুরে বাজছে না। সে ব্যবসার অবসর সময়ে ভাবে কী করা যায়।”

বল্লালের গল্প শুনে মগ্ন হয়ে যায় তমা। মোমবাতির স্নিগ্ধ আলো ভেসে থাকে। কাছে কোথাও থেকে অচেনা ফুলের গন্ধ ভেসে আসে। একটা হালকা হাওয়া দিচ্ছে থেকে থেকে। তখন গা-টা শিরশির করে ওঠে। তমার মনে হয় সে যেন এ বল্লালকে কত যুগ ধরে চেনে। ওর মধ্যে হ্যাংলামো নেই, নেই জবরদখলি মনোভাব। মনে হয় ওর সঙ্গে পথ চললে ও হ্যাঁচকা টান দেবে না, একসঙ্গে চলার মতো হাতটা ধরে থাকবে মাত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Novel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE