Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

আড়াই প্যাঁচের পণ্ডিত স্যার

আমাদের স্কুলে সংস্কৃত স্যর ছিলেন কালাপণ্ডিত, যাঁর পোশাকি নাম ছিল জিসি বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রচণ্ড রাশভারী ব্যক্তিত্ব ছিল তাঁর। সংস্কৃত ক্লাস ছিল তাই সবার কাছে আতঙ্কের। পড়া না পারলে পণ্ডিতমশাই কান দুটো ধরে আড়াই প্যাঁচ দিতেন। সেই আড়াই প্যাঁচের কানমলার ভয়ে পড়া না হলে যারা ক্লাসে আসত না, তাদের যে কত কৈফিয়ত দিতে হত, তার ইয়ত্তা নেই। অন্য পড়া হোক বা না হোক, সংস্কৃত’র হোমওয়ার্ক সবাই করত।
আমার এক বিটলে বন্ধু সুদীপ, এক বার পণ্ডিতমশাইকে জব্দ করতে দু’কানে ভাল করে সরষের তেল মেখে এসেছিল। যথারীতি ক্লাসে ঢুকে মাস্টারমশাই গত দিনের হোমটাস্ক ধরলেন। ক্লাসের সবাই হাত তুললেও সুদীপ হাত তোলেনি। মাস্টারমশাই রেগে গজগজ করতে করতে চেয়ার ছেড়ে উঠে সুদীপের কাছে চলে এলেন। বললেন, ‘কী রে, পড়া হয়নি কেন?’ সুদীপ নিরুত্তর। এই বার আড়াই প্যাঁচ দেবার জন্য যেই দুটো কান ধরেছেন অমনি তাঁর হাতে তেল লেগে কান দুটো পিছলে গেল। পণ্ডিতমানুষ, প্রখর বুদ্ধি। তিনি সোজা টেবিলে রাখা চক দুটোকে হাতে নিয়ে ডাস্টার দিয়ে গুঁড়ো করলেন এবং দুই হাতে ভাল করে মেখে সুদীপের কান দুটোকে আড়াই প্যাঁচে ফেলে বললেন, ‘যে কর্ণ হিতবাক্য শ্রবণ করে না, সে কর্ণ থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল।’ (এই বাক্যটি তিনি প্রত্যেকের কান মলতে উচ্চারণ করতেন) কানমলা খেয়ে সুদীপ অনেক ক্ষণ ব্যথায় কেঁদেছিল।

স্কুলের অ্যানুয়াল পরীক্ষায় এক দিন যা ঘটেছিল তা সারা জীবন মনে রাখার মতো। ক্লাসের সবচেয়ে বাজে ছাত্র ছিল ভুতো, আসল নাম ছিল ভূতনাথ। পড়া তো করতই না, উলটে সবাইকে বিরক্ত করত আর পরীক্ষার হলে টুকলি করত।
পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা পর পণ্ডিতমশাই আমাদের হল-এ পাহারা দিতে এলেন। সোজা ঘরে ঢুকেই ভুতোর দিকে এগিয়ে গেলেন, ও তখন একটা কাগজ দেখে মন দিয়ে টুকছিল। পণ্ডিতমশাইয়ের হাঁক শুনে চমকে উঠে, বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে ও কাগজের টুকরোটাকে মুখে পুরে দিল। পণ্ডিতমশাই এক কান ধরে বললেন, ‘ওঠ শয়তান! বদমাশ কোথাকার! তোকে আজ আমি রাস্টিকেট করে দেব।’ ভুতো মুখে ওই কাগজটা নিয়েই হাতে-পায়ে ধরতে লাগল। তখন পণ্ডিতমশাই বললেন, ‘ওটা গিলে খা। তা হলে আর কিছু করব না।’ বেশ বড় একটা খাতার পাতা! কোনও রকম কষ্টেসৃষ্টে কাগজটি গিলে তবে সে যাত্রায় রেহাই পেল ভুতো। পর দিন অবশ্য ও আর পরীক্ষা দিতে পারেনি। কাগজ গিলে ফেলার মাশুল দিতে হয়েছিল হাসপাতালের বেডে শুয়ে।
কিন্তু পণ্ডিতমশাইয়ের মন তাতে একদম টলেনি। পরীক্ষার হলে ঢুকে ভুতোর খবর পেয়ে বলেছিলেন, ‘বেশ হয়েছে, যত্ত সব বাপের কুলাঙ্গার।’

শুভাশিস দাশ, দিনহাটা

স্কুলের শিক্ষক/শিক্ষিকা কি নিষ্ঠুর বা উদ্ভট ছিলেন? বিবরণ লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে
এই ঠিকানায়: গাঁট্টা, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

ভারতীয় বহুদলীয় সাংবিধানিক ব্যবস্থার চরম সংকট উপস্থিত। কারণ, বর্তমানে দেশে ছোট-বড় সব মিলিয়ে মোট রাজনৈতিক দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। কেন্দ্রীয় সরকারের শরিকের সংখ্যাই এগারোশোর ওপর। দিনে দিনে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিটি দলে অন্তর্কলহের কারণে প্রতি দিনই এক-দুজন করে নেতা বেরিয়ে এসে আলাদা দল বানিয়ে ফেলছেন। রোজ নির্বাচন কমিশনের কাছে গড়ে দুটি নতুন দলের অনুমোদনের জন্য আবেদন আসছে। এত রাজনৈতিক দলকে নিয়ে সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন করা কমিশনের কাছে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। কিছু হলেই রাস্তায় শয়ে শয়ে প্রতিবাদ মিছিল বেরচ্ছে, সপ্তাহে তিন দিন হরতাল ডাকছে কেউ না কেউ। তাই নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যে প্রার্থীর নাম ‘ক’ থেকে ‘চ’- এর মধ্যে তিনি সোম ও শুক্র প্রচারে বেরবেন। ‘ছ’ থেকে ‘ক্ষ’-র মধ্যে নাম হলে শনি ও মঙ্গল ইত্যাদি। গত নির্বাচনেই ভোটিং মেশিন লম্বায় ছ’ফুটের কাছাকাছি পৌঁছে গেছিল। বহু বেঁটে মানুষ অভিযোগ জানিয়েছিলেন, ওপর দিকের চিহ্নে তাঁরা ইচ্ছে থাকলেও ভোট দিতে পারছেন না। পোর্টেব্‌ল মইয়ের ব্যবস্থা করতে ঘাম ছুটে যায় কর্তৃপক্ষের। আর প্রতীক না পেয়ে কেউ নিচ্ছে চুল, কেউ নখ, কেউ বিভিন্ন প্রিন্টের শাড়ি বা টি-শার্ট। যে দল টি-শার্ট চিহ্নে ভোট দিতে বলছে, তাদের স্পনসর করতে বিভিন্ন ব্র্যান্ড রেষারেষি করছে। ভোটারকে প্রতীক মুখস্থ করানোর জন্য প্রতিটি দল প্রচুর লোক নিযুক্ত করেছে। মুখ্যমন্ত্রী একে বেকারত্ব হটানোর অভিযান বলে প্রচারে নেমেছেন। সবচেয়ে মুশকিল হয়েছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোগপতিদের। তাঁরা একজোটে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, অবিলম্বে পার্টি ও পার্টির লোকেদের সংখ্যা না কমালে তাঁরা আন্দোলন শুরু করবেন। কারণ, এত লোককে জনে জনে ঘুষ দেওয়া তাঁদের পক্ষে অসম্ভব।

তমোঘ্ন মাজী, বাঁকুড়া

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

নিমগাছটা আজও পেলাম না

নদিয়ার হাটখোলা গ্রামের গৃহস্থ চাষি পরিবারের বড় ছেলে আমি। তখন সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছি। জলঙ্গী নদীর ও-পারে নওপাড়া গ্রামের এক শিক্ষিত পরিবারের চতুর্থ কন্যার সঙ্গে আমার শাদি হয়। শুরু হয় শ্বশুরবাড়িতে আটবদনি অনুষ্ঠান, অর্থাৎ প্রথা অনুযায়ী জামাইয়ের জন্য ভূরিভোজের আয়োজন। অন্যান্য আত্মীয়স্বজনও এই আয়োজন করে। যাকে বলে ‘জামাইভাত।’ শ্বশুরবাড়ির সবাই প্রায় গ্র্যাজুয়েট। ধনী লোক। আর আমি গ্রামের লাজুক ছেলেটি। তাদের ধারেকাছে দাঁড়াতে পারি না। তবু জামাই তো! বেশ ভালবাসে সবাই!

এক দিন ওই গ্রামেরই এক শ্যালিকার বাড়ি নিমন্ত্রণ খেয়ে শ্বশুরবাড়ি ফিরছি। তারা পোলাও-মাংস করেছিল। আমি সেই প্রথম পোলাও খেলাম। তার আগে চোখেও দেখিনি কোনও দিন। লোভের বশে খুব বেশি খেয়ে ফেলি। শালিরা কানাকানি করতে থাকে, ‘দুলাভাই কী পেটুক রে বাবা!’ সেই কথাটা আজও আমার বুকে কাঁটার মতো বেঁধে।

শ্বশুরবাড়িতে এক দিন রাতে সবাই খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়েছে। তাদের কারও মনেই পড়ল না যে, আমাকে খেতে দিতে হবে। আমাকে রাতের খাবার না দিয়েই তারা সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। খিদে নিয়ে আমি সারা রাত কাটিয়ে দিলাম। লজ্জায় কারও কাছে ভাত চাইতেও পারলাম না।

এই ভুলের কথা ভোরবেলায় প্রথম মনে পড়ে আমার শাশুড়ির। ইস্, কী সর্বনাশ! কী লজ্জার কথা! জামাইকে রাতে খেতে দেওয়া হয়নি! তাড়াতাড়ি করে অত ভোরেই ওরা টেবিলে খাবার নিয়ে এল। জামাইকে খেতে দেওয়ার কথা ভুলে যায়, এমন শ্বশুরবাড়ি পৃথিবীতে কেউ দেখেছে নাকি?

বেশ কিছু বছর পর আমার শাশুড়ি ডাক্তারি ওষুধপত্র রাখার জন্য ওদের একটা মস্ত বড়, পুরনো মেহগনি কাঠের আলমারি আমাকে দিতে চেয়েছিলেন। যদিও বিয়েতে আমাদের কোনও দাবি ছিল না। কিন্তু পঁয়ত্রিশ বছর হয়ে গেল, সে কথা তারা বেমালুম ভুলে গিয়েছে। সেই আলমারি এখন সযত্নে শোভা পাচ্ছে একমাত্র শ্যালকের শোওয়ার ঘরে।

আর এক বার আমাকে ওরা একটা সোনার আংটি দেবে বলে আমার হাতের আঙুলের মাপ নেয়। কিন্তু সাংঘাতিক ভুলো মনের শিকার হয়ে ওরা আর সে কথা মনে রাখতে পারেনি।

আমি যখন চাপড়াবাজারে নিজস্ব একটা বাড়ি তৈরি করি, তখন ঘরের চৌকাঠ বানানোর জন্য ওরা আমাকে একটা নিমগাছ দেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু আশ্চর্য, সেই নিমগাছ আজও তাদের বাড়িতে দাঁড়িয়ে আছে মহীরূহ হয়ে। কী সুন্দর ভাবে তারা সে সব প্রতিশ্রুতির কথা ভুলে যেতে পেরেছে। গৃহস্থ, চাষি পরিবারের সাদাসিধে সরল ছেলে বলে আমি যে তাদের কাছে কত নগণ্য আর অবহেলার পাত্র ছিলাম, তা এখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি।

আমজাদ আলি হালসানা, চাপড়া, নদিয়া

আপনার শ্বশুরবাড়ি ভাল? খারাপ? ভাল-খারাপ মিশিয়ে? শ্বশুরবাড়ির টকঝালমিষ্টি ঘটনা লিখে পাঠান ৪০০ শব্দে।
ঠিকানা: শ্বশুরবাড়ি, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।

শহরের মধ্যেই আর একটা শহর

আশির দশকের শুরুতে বাবার চাকরির সুবাদে আমাদের সল্ট লেকে আসা। সে ছিল আমার ছেলেবেলার কাল। ‘সল্ট লেকে থাকি’, ওই বয়সে কথাটা বলতে আমার মোটেই মন্দ লাগত না। বেশ কলার উঁচু করেই বলতাম। ‘সল্ট ওয়াটার লেক’ থেকে লোকমুখে ‘সল্ট লেক’, কান তত দিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছিল। নতুন এই শহরটাকে ‘বহিরাগত’ কেউ ভুল উচ্চারণে ‘শট লেক’ বা ‘শর্ট লেক’ বললে, ঠিক করে দিতাম।

ডিসি ব্লকে, বিশাল এলাকা জুড়ে এখন যেখানে সিটি সেন্টার, তার পাশেই ছিল আমাদের আবাসন। সেই সময় জায়গাটা ছিল জঙ্গলে ভরা, মাঝেমধ্যে লাশ পড়ে থাকার কথা কানে আসত। বাড়িতে কড়া শাসন, তাই নিজের চোখে কোনও দিন দেখিনি। ঘুরতে যাওয়ার জায়গা বলতে ছিল সেন্ট্রাল পার্ক। সেখানে ছিল বিরাট এক মুন্ডুর স্কাল্পচার! সেটা কার্ল মার্ক্স না রবীন্দ্রনাথের, তা বুঝতে অবশ্য বেশ বেগ পেতাম। বড় বড় ঘাসের জঙ্গল পেরিয়ে সেন্ট্রাল পার্কে ঢোকাটা ছিল একটা রোমহর্ষক অভিযান। নিজেকে জিম করবেট ভেবে ঢুকতাম। বাঘ ছিল না, তবে সাপ ছিল। শেয়ালও। গভীর রাতে শুনতাম ওদের ডাক।

আমাদের ছোটদের সব থেকে প্রিয় জায়গা ছিল ‘ঝিলমিল’। সেক্টর ফাইভের শেষ প্রান্ত ছিল ওটাই। আশির দশকের শেষে, ১৯৮৯-এ ‘ঝিলমিল’কে নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা হয়। এখনকার শিশুরা তো আজও ও জায়গাটা নিয়ে মেতে আছে। নামটা বদলেছে যদিও। ‘নিকো পার্ক’।

খেলা-পাগল বন্ধুদের প্রিয় জায়গা ছিল সল্ট লেক স্টেডিয়াম। পোশাকি নাম ‘যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন’। প্রথম বার যখন গেছি, খেলা তো দেখেছি ছাই, স্টেডিয়ামের সবুজ ঘাসে মুগ্ধ হয়ে সে দিকেই তাকিয়ে থেকেছি বেশি সময়। পরে বহু বার গেছি। ছোট দিদি লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ (ফর গার্লস)-এ পড়ত, সাফ গেম্‌স-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রঙবাহারি পোশাক পরে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠান করার সুযোগ পেয়েছিল। দেখতে গেছি। ’৮৪-তে সল্ট লেক স্টেডিয়াম উদ্বোধন হয়ে গেলেও অনেক কাজ তখনও বাকি ছিল। তাই স্টেডিয়ামের উন্নতিকল্পে ’৮৬-তে লটারি করে কিছু সদস্য কার্ড দেওয়া হয়। লাইফ টাইম গোল্ডেন কার্ড— এ, বি, সি ক্যাটেগরির। একটা কার্ডে সল্ট লেক স্টেডিয়াম, একটায় ইডেন গার্ডেন্স আর তৃতীয়টায় দুটো স্টেডিয়ামেই খেলা দেখার সুযোগ ছিল। সল্টলেক স্টেডিয়ামের একটা কার্ড জুটেছিল আমার বরাতে। তবে গোল্ডেন কার্ডের জন্য যে লটারি হয়েছিল, ক্রেতাদের সেই লটারির টিকিট কাটায় উৎসাহিত করতে শিয়ালদায় এস. পাল-এর লটারির দোকানে প্রায়ই হাজির হতেন নামী খেলোয়াড় আর চিত্রতারকারা। অনেকের সংস্পর্শে এসেছি তখন, কেননা দোকানের কর্ণধার ছিলেন বাবার বন্ধু। ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়, তপেন চট্টোপাধ্যায়ের অটোগ্রাফ নিয়েছি। পরে সল্টলেক স্টেডিয়ামেই মিঠুন চক্রবর্তীর তত্ত্বাবধানে ‘হোপ ৮৬’ অনুষ্ঠান হয়, তা অবশ্য আমাদের জন্য ছিল নিষিদ্ধ। ফলে আমাদের সেই অনুষ্ঠান নিয়ে কোনও তাপ-উত্তাপ ছিল না। মা-বাবা দেখতে গেলেন, তবে প্রথম দিন বৃষ্টিতে অনুষ্ঠান ভেস্তে গেছিল।

১৯৮৪-র সল্ট লেক স্টেডিয়াম। তখনও পুরোদস্তুর ‘যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গন’ হয়ে ওঠেনি।

তখনও দুর্গাপুজোয় সল্ট লেকের প্রতিটা ব্লক সরগরম হয়ে উঠত। তবে আজকের মতো তাতে কোনও রাজনীতির আকচাআকচি ছিল না। ’৮৪-তে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী যখন দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন, থমথমে পরিবেশে মনে হয়েছে যেন এই শহরেই ঘটে গেছে সেই হত্যাকাণ্ড। আবার ইন্দিরা গাঁধীর মৃত্যুর পর, ১৯৮৬-’৮৯ সালে প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন ‘রাষ্ট্রীয় সমাজবাদী কংগ্রেস’ প্রতিষ্ঠা করলেন, সল্ট লেকের বুকে তার তেমন ছাপ দেখিনি। শুধু স্টেডিয়ামের দেওয়ালে গায়ে দেখা যেত দলের প্রতীক, দাঁড়িপাল্লা।

স্কুল বলতে এডি স্কুল, বিডি স্কুল; এডি স্কুল থেকে বেরিয়ে আসা ইসি স্কুল। সব ক’টা স্কুলেরই পোশাকি নাম আছে, কিন্তু এক-একটা ব্লকের নামেই বেশি পরিচিত ছিল। ইসি ব্লকে একই ছাদের তলায় চারটে প্রাইমারি স্কুল ছিল। সকালে উপরে ইবি, নীচে একটা হিন্দি প্রাইমারি। দুপুরে উপরে ইসি, নীচে আমাদের এজি ব্লক প্রাইমারি স্কুল। তবে কাছেই কর্পোরেশনের ‘সল্টলেক প্রাইমারি স্কুল’ও ছিল। এজি স্কুলে ভর্তির আগে বেশ ক’দিন গেছি ওই স্কুলে। পরে বাবার বন্ধুরা খবর দেন, ইসি ব্লকে নতুন একটা স্কুল শুরু হচ্ছে, তখন সেখান থেকে ছাড়িয়ে আমাকে এজিতে ভর্তি করিয়ে দেন বাবা। এক দিন কর্পোরেশন স্কুলে বইপত্র, খাতা-পেনসিল ফেরত দিয়ে চলে এলাম।

এজি প্রাইমারিতে পড়তে পড়তেই আমার প্রথম ইংরেজি নাটক দেখা। ইসি ব্লকে লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠ–এর নতুন বিল্ডিংয়ের পেছনের মাঠে মাচা বেঁধে হয়েছিল ‘দ্য বিশপ’স ক্যান্ড্‌লস্টিক্স’। মেজদি সেই সময় অন্য একটা স্কুলে উঁচু ক্লাসে, ওর সিলেবাসে থাকা এই নাটকটার টেক্সট আমার আগেই জানা হয়ে গেছিল। চোরের ভূমিকায় জামাপ্যান্ট, ক্যাপ-পরা, ফাল্গুনীদির ছবি আজও চোখে ভাসে।

প্রাইমারি ছেড়ে এডি স্কুলে, মানে লবণহ্রদ বিদ্যাপীঠে ভর্তি হলাম। স্কুলের শারীরশিক্ষার শিক্ষক, ভৈরব স্যর ও জয়দেব স্যরের দায়িত্ব ছিল সল্টলেকের কোথাও কোনও অনুষ্ঠান হলে হাফপ্যান্ট পরা আমাদের সেখানে নিয়ে হাজির করা। লোক ভরাতে। কত জায়গায় গেছি, কত বিখ্যাত সব মানুষকে যে দেখেছি! সেই ভাবেই ৪ অক্টোবর ১৯৮৬-তে সিনে ল্যাবরেটরি কমপ্লেক্স (রূপায়ণ)-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ছিলেন, উদ্বোধক ছিলেন সত্যজিৎ রায়। বহু চেষ্টায় একটা ব্রোশিয়োর জোগাড় করেছিলাম সেই অনুষ্ঠানের, এখনও আছে!

বিশ্ব রায়, ব্রহ্মপুর, বাঁশদ্রোণী

roybiswa.2007@gmail.com

আশির দশকের কোনও ঘটনার সঙ্গে নাড়ির যোগ আছে?
লিখুন এই ঠিকানায়: হ্যালো 80’s, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। বা, লেখা pdf করে পাঠান
এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rabibasariya Magazine Rabibasariya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE