Advertisement
E-Paper

লালআরনীল

ওরা লাল ভূত আর নীল ভূত। ওদের স্কুল নেই, লেখাপড়া নেই, বকুনি খাওয়া নেই। সারা দিন শুধু আনন্দ আর আনন্দ। ওরা ইচ্ছেমত এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। গাছে দোল খায়। দিব্যি বাসে ঝোলে। টুক করে ট্রেনের জানলা দিয়ে গলে যায়। মাঝে মাঝে দুষ্টুমিও করে। হাসে। মজা করে। ওদের কেউ দেখতে পায় না। ওদের কথা কেউ শুনতেও পায় না।

অচিন্ত্যকুমার চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০০:০০
ছবি: মণীশ মৈত্র

ছবি: মণীশ মৈত্র

ওরা লাল ভূত আর নীল ভূত। ওদের স্কুল নেই, লেখাপড়া নেই, বকুনি খাওয়া নেই। সারা দিন শুধু আনন্দ আর আনন্দ। ওরা ইচ্ছেমত এখানে সেখানে ঘুরে বেড়ায়। গাছে দোল খায়। দিব্যি বাসে ঝোলে। টুক করে ট্রেনের জানলা দিয়ে গলে যায়। মাঝে মাঝে দুষ্টুমিও করে। হাসে। মজা করে। ওদের কেউ দেখতে পায় না। ওদের কথা কেউ শুনতেও পায় না।

কাটছিল ভালই। কিন্তু কুটুসের অবস্থা দেখে সে দিন ওদের খুব খারাপ লাগল। কুটুস লেখাপড়ার সঙ্গে খেলতেও ভালবাসে। বিকেলে রোজ মাঠে ব্যাট-বল বা ব্যাডমিন্টনের র‌্যাকেট নিয়ে খেলতে আসে। কিন্তু এলে কী হবে? ওর বন্ধুরা এখন আর কেউ আসে না। ওরা নাকি সব ব্যস্ত! আগে সবাই কেমন মাঠে আসত। খেলত। মাঠ জমে উঠত। লাল-নীলদেরও খুব ভাল লাগত। আর এখন? মাঠে সেই জমজমাটিই নেই! বেচারা কুটুস! একাই আসে আর রোজ মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে যায়।

লাল বলল, ‘তাই তো। কিন্তু একটা কিছু তো করতেই হবে।’

নীল বলল, ‘তাই তো। কিন্তু একটা কিছু তো করতেই হবে।’

লাল বলল, ‘বন্ধুর নামগুলো মনে আছে?’

‘হ্যাঁ। পাপান, বিট্টু...।’ নীল গড়গড় করে বলে চলল।

‘চল, জল ট্যাঙ্কের ওপরে বসে একটু নিরিবিলিতে আলোচনা করি।’

ঘুম থেকে উঠেই পাপান সে দিন অবাক! অবাক ওর মা-বাবাও। এ কী চেহারা পাপানের! ইয়া বড় ভুড়ি! ফুলো ফুলো গাল। পেটের চাপে বোতাম ছিঁড়ে জামা ওপরের দিকে উঠে গেছে! প্যান্ট ফেটে যাবে মনে হচ্ছে! কার্টুনের মতো দেখতে লাগছে পাপানকে।

পাপানের মা-বাবা ভয় পেয়ে ছুটলেন ডাক্তারবাবুর কাছে। পাপানের ওজন দেখে ডাক্তারবাবুও ঘাবড়ে গেলেন! সর্বনাশ! এইটুকুনি ছেলের এতটা ওজন! নাঃ, ব্যাপারটা ভাল ঠেকছে না। ভাল করে দেখেটেখে গম্ভীর মুখে বললেন, ‘কিছু ওষুধ আমি লিখে দিচ্ছি। কিন্তু একটা কথা বলুন তো, ও কি সারাক্ষণ শুয়ে বসেই থাকে?’

‘একদম ঠিক।’ পাপানের মা সঙ্গে সঙ্গে বললেন। ‘ওই স্কুলটুকু যায়। ব্যস, তার পর সারা দিন উঠতে বসতে, খেতে শুতে, টিভি না হলে কম্পিউটার বা মোবাইলে গেম খেলে।’

‘শুনুন ওর যা অবস্থা ওষুধে পুরো কাজ হবে না। সকাল-বিকেল ওকে মাঠে নিয়ে যান। ওকে নিয়মিত ছুটতে হবে, ঘাম ঝরাতে হবে।’

পাপান বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘আমার খেলতে ভাল লাগে না!’

‘খেলতে ভাল লাগে না?’ ডাক্তারবাবু গলা আরও ভারী করে চোখ পাকিয়ে বললেন, ‘তা হলে তো দেখছি এ বার পেটে সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে...।’

‘ও না না, কাল থেকেই মাঠে যাব।’ পাপান ডাক্তারবাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই বলল।

লাল-নীল ওখানেই ছিল। লাল বলল, ‘সিরিঞ্জে খুব ভয় নাকি পাপানবাবু?’

নীল বলল, ‘এ বার একটু কসরত কর ফুটবলবাবু, ওহ সরি পাপানবাবু!’

লাল-নীল দুজনেই হেসে হেসে শূন্যে ডিগবাজি খেল।

এ দিকে বিট্টুর অবস্থা আরও খারাপ। সে দিন বিকেলবেলা পিঠে ব্যাগ নিয়ে খুব জোরে সাইকেল চালিয়ে সে সুমনস্যারের বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। দেরি হয়ে গেছে। লাল-নীল মুচকি হেসে বিট্টুর দু’পাশ দিয়ে হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে বলল, ‘তালগোল-তালগোল!’

বিট্টু সব সময় পড়ে। বাড়িতে তিন জন মাস্টারমশাই পড়াতে আসেন। চার জন মাস্টারমশাইয়ের কাছে বিট্টুকে আবার পড়তে যেতে হয়। সারা দিন শুধু পড়া আর পড়া। স্নান, খাওয়া, ঘুম তার যেন কিচ্ছুটি নেই। এর মধ্যেই চোখে চশমা উঠেছে। পড়ে পড়ে চোখ খারাপ করে ফেলেছে। শরীরটাও ভাল যাচ্ছে না। ও দিকে ওর নজর নেই। ও পড়া নিয়েই ব্যস্ত। ক্লাসের সে সেরা ছাত্র। কিন্তু হঠাৎ কী হল, সাইকেল চালাতে চালাতে বিট্টুর মনে হল সে সব পড়া ভুল যাচ্ছে! কী আশ্চর্য! বিট্টুর সে দিন পরীক্ষা তো খারাপ হলই, ওর আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে গেল! সব বিষয়গুলো যেন তালগোল পাকিয়ে গেল। বিট্টু বুঝতে পারল না কেন সে সব ভুল যাচ্ছে? ওর শরীর ভয়ে অবশ হয়ে আসতে থাকল। কথাটা বাড়িতে বলতেই বিট্টুর বাবা ওকে নিয়ে ডাক্তারবাবুর কাছে এলেন। ডাক্তারবাবু বললেন, ‘মনে হচ্ছে টেনশন থেকে এ সব হচ্ছে। ও কি খুব পড়ে?’

‘হ্যাঁ, বাড়িতে থাকলে প্রায় সারাক্ষণই লেখাপড়া নিয়েই থাকে।’ বিট্টুর বাবা বললেন।

‘খেলাধুলো করে?’

‘একেবারেই না। কত বার বলি কিন্তু শুনতেই চায় না।’

ডাক্তারবাবু বললেন, ‘শুনুন, ওর এই কেসটা খুব একটা ভয়ের কিছু নেই। একটু খোলা হাওয়ায় মাঠে খেলাধুলো করুক দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তোমাকে বলছি। ডাক্তারবাবু বিট্টুর দিকে তাকালেন। শরীরচর্চা না করলে শরীরে রক্তচলাচল না হলে লেখাপড়া মাথায় ঢুকবে না। কিছু মনে রাখতেও পারবে না। শেষে নার্ভের পেশেন্ট হয়ে হাত-পা সব অসাড় হয়ে...।’

বিট্টু খুব ভয় পেয়ে বলল, ‘ওরে বাবারে! আমি কালই মাঠে যাব।’

লাল বিট্টুর অবস্থা দেখে বলল, ‘কী বিট্টুবাবু এ বার জব্দ তো?’

নীল হেসে গড়িয়ে যেতে যেতে বলল, ‘জব্দ না হয়ে উপায় আছে? কাদের পাল্লায় পড়েছে দেখতে হবে না!’

সে দিন কুটুস মাঠে গিয়ে অবাক! ওর পৌঁছনোর আগেই পাপান, বিট্টুরা সব হাজির। কুটুস দারুণ খুশি।

খুশি লালভূত নীলভূতও। লাল নীলকে বলল, ‘এ বার?’

নীল বলল, ‘চল, অন্য পাড়ায় দেখি সব ঠিক আছে কি না।’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy