Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Novel Series

হাওয়ার আড়ালে

একতলায় আওয়াজ যেন না যায়। চাপা হিসহিসে গলায় কস্তুরী বলল, “বাংলায় বলছি, বেরিয়ে যান। এই মুহূর্তে। কোনও সিন ক্রিয়েট আমি চাইছি না। চুপচাপ নীচে নেমে চলে যান যেখান থেকে এসেছেন।”

ছবি: পিয়ালী বালা

ছবি: পিয়ালী বালা Sourced by the ABP

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৭:২৬
Share: Save:

হাত তুলে ভদ্রমহিলাকে থামিয়ে কস্তুরী বলল, “আপনি এই ভাবে... আমার কাছে এলেন কেন?”

রাধিয়া বোধহয় সহানুভূতির আশায় বসেছিল। আচমকা এই প্রশ্নে সামান্য ভেবে বলল, “বললাম তো আমার কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমি এখানে থাকবার কথা বলছি না বোন। কিন্তু আপনি যদি আকিঞ্চনকে বোঝান। আমার তো বাড়িটুকুই সম্বল। আকিঞ্চন যদি কেসটা জেতে তা হলে বাড়িটা আমার থেকে যাবে। না হলে আদিনাথ আমাকে রাস্তায় বার করে দেবে। আপনি তো এক জন মেয়ে। মেয়ে হয়ে যদি... আপনি আমার বোনের মতো...”

“আমি আপনার বোন নই। আপনি বেরিয়ে যান। জাস্ট গেট আউট।”

“কী বলছেন!”

উত্তরে চিৎকার করে উঠতে গিয়েও কস্তুরী থেমে গেল। একতলায় আওয়াজ যেন না যায়। চাপা হিসহিসে গলায় কস্তুরী বলল, “বাংলায় বলছি, বেরিয়ে যান। এই মুহূর্তে। কোনও সিন ক্রিয়েট আমি চাইছি না। চুপচাপ নীচে নেমে চলে যান যেখান থেকে এসেছেন।”

“আপনি! আপনি আমাকে এ ভাবে... এত কিছু শোনার পরেও...”

“আপনি শুনতে পাচ্ছেন না? জাস্ট গেট ডাউন অ্যান্ড গেট লস্ট। চেঁচামেচি করলে আমি ক্লাবের ছেলে ডাকব।”

রাধিয়া কিছু বলতে গিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল।

রাধিয়া শ্রীবাস্তব বেরিয়ে যেতেই কপাল টিপে বসে পড়েছিল কস্তুরী। কপাল বটে তার। দিনটা কী সুন্দর ভাবেই না শুরু হয়েছিল। বিশেষ করে বিকেলটা তো মনে রাখার মতো। শেষটায় কী হল! কী বলে গেল রাধিয়া না নাদিয়া নামের মহিলা? কস্তুরীর মনে হল, কেতকীবালার কথা শুনে বাড়ি না ফিরলেই হত। তাতে অবশ্য মহিলা অন্য দিন আসত। সেই সময়ে হয়তো আকিঞ্চন থাকত, সে নেই। তা হলে তো আকিঞ্চন হাঁকিয়ে দিত। কস্তুরী জানতেই পারত না কোনও দিন। কী ভাগ্য মেহুলি নেই বাড়িতে! কী ভাগ্য মহিলা হইচই বাধাননি বাড়ির সামনে এসে! এই বনেদি পাড়ায় রায়দের একটা প্রেস্টিজ আছে। এই লজ্জার কথা কি সাতকাহন করে শোনানোর?

কস্তুরীর মনে হল, এক চৌবাচ্চা কাদার মধ্যে এত ক্ষণ ডুবে ছিল সে। সারা গায়ে ক্লেদ মাখামাখি। স্নান দরকার, এখনই। হাতে একটা ড্রেসিং গাউন নিয়ে নিয়ে জলদি কলঘরে ঢুকে জামাকাপড় ছেড়ে শাওয়ারের নীচে দাঁড়াল সে। কত ক্ষণ দাঁড়িয়েছিল মনে নেই, কিছু একটা ঝনঝন করে পড়ে যাওয়ার শব্দে হুঁশ ফিরল তার।

বাইরে বেরিয়ে এসে দেখল, একটা চায়ের কাপ মাটিতে পড়ে খানখান, আর সামনে দাঁড়িয়ে আছে মেহুলি। ‘ইট স্লিপড’ বলে ফের ঘরে ঢুকে গেল মেহুলি। কস্তুরী ভাবল, মেহুলি ফিরে এসেছে তা হলে। যাক। মহিলা থাকাকালীন ফিরলে লজ্জার ব্যাপার হত। কিছু খাবে কি না জিজ্ঞেস করার ফুরসত দিল না মেয়েটা। নিজের জন্য এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এসে আকাশপাতাল ভাবতে লাগল সে। ভাবতে ভাবতে এক সময় মনে হল, আচ্ছা, পুরো ব্যাপারটা সাজানোও তো হতে পারে। পারে না কি? এই তো একটা সিরিয়ালে এ রকম একটা সমস্যাই দেখাচ্ছে। হয়তো মহিলা এসেছিল আকিঞ্চনকে ফাঁসাতে। মামলার ব্যাপার-স্যাপারে এ রকম তো হতেই পারে। হয়তো মহিলা অপোনেন্ট পার্টির লোক। আজকাল মেয়েঘটিত ব্যাপারে পুরুষদের ফাঁসানো কোনও নতুন ব্যাপার নয়। তা না হলে মহিলা কি এই ভাবে সুড়সুড় করে কেটে পড়তেন না কি? হয়তো আকিঞ্চনকে সে মিথ্যেই সন্দেহ করছে। হতেই পারে। পারে না?

কারও সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভাল হত। কার সঙ্গে? অদ্রিজা? নাঃ, ছড়িয়ে লাভ নেই। তিতি? না, সে তো এখন ব্যস্ত। কস্তুরী রাতের রান্নার জোগাড় দেখতে লাগল।

এগরার কলতান একাদশ ক্লাবের আয়োজনে পাশের মাঠে বিশাল জায়গা জুড়ে প্যান্ডেল। সন্ধে থেকে পিলপিল করে নানা বয়সের মহিলা-পুরুষের ঢল। এক দল আসছে, এক দল যাচ্ছে। থামার বিরাম নেই। সব মিলিয়ে সে এক কাণ্ড বটে। তাল বুঝে মাঠের পাশে সারি সারি নানা মুখরোচক খাবারের অস্থায়ী স্টল বসে গেছে। বাদামওয়ালা, চাওয়ালা ঘুরছে ইতিউতি। মাঠের এক পাশ ঘিরে উঁচু মঞ্চ। মঞ্চের উপর বিশাল ফেস্টুন। তাতে লেখা ‘প্রি-পুজো ধামাকা’। ধামাকাই বটে। সেই বিকেল থেকে মাইকে ঘোষণা হয়েছে এই নিয়ে হাজার বার— “আজকে আমাদের মঞ্চে আসছেন ‘প্রাণের ঠাকুর’ সিরিয়ালের ঠাকুর। তার পরেই আসছেন আপনাদের সবার প্রিয় ‘রাঙামাটির মেয়ে’ সিরিয়ালের রিখি আর সারথি। এখানেই শেষ নয়। আসবেন প্রখ্যাত গায়ক চন্দ্রনীল দাশগুপ্ত। আপনারা এখনও যারা আসেননি...”

বলতে বলতে হয়ত ঘোষকের গলা শুকিয়ে কাঠ। অবশ্য মঞ্চ খালি যাচ্ছে না। কেউ গাইছে, কেউ হাস্যকৌতুক করছে। কয়েকটি বাচ্চা মেয়ে নাচ দেখিয়ে গেল। আর ফাঁকে ফাঁকে চলছে ঘোষণা। সব ঘোষণার সারবত্তা একটাই ‘আর কিছু ক্ষণের মধ্যে...’। এর মানে আরও ঘণ্টাদুয়েক, সেটা সবাই বুঝে গেছে। তাই বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে পরিপাটি হয়ে সবাই আসছে। প্রোগ্রাম চলবে মধ্যরাত অবধি।

মিশুকের এই নিয়ে গোটা সতেরো মাচা হয়ে গেল। অর্কর এই প্রথম। সারথি চরিত্রটা অতি অল্প সময়েই সবার নজর টেনেছে। মাচা করতে আসার ইচ্ছে তার ছিল না। সে তো বরাবরই ইন্ট্রোভার্ট। কিন্তু চ্যানেলকে অসন্তুষ্ট করে কোনও লাভ নেই, আখেরে ক্ষতি, বুঝে গেছে সে। তাই আসার আগে মিশুকের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল।

অর্কর কাছে অ্যারেঞ্জারদের গাড়ি এল সাড়ে ছ’টায়। তার পর মিশুক। অর্ক গাড়িতে বসে বসে অধৈর্য হয়ে উঠলে মিশুক এসেছিল। মিশুকই ওকে বুঝিয়েছিল, রাইট টাইমে কোনও ফাংশনে সেলেব্রিটিদের যেতে নেই। কিছুটা রাস্তা অর্কর সঙ্গে এটা-সেটা নিয়ে গল্প করে মিশুক ব্যাকসিটে মাথা হেলিয়ে দিল। তখনও সে জানে না, কী বিশ্রী ব্যাপার ঘটতে যাচ্ছে সেই রাতে।

এখন পাশের ঘরে আকিঞ্চন ঘুমোচ্ছে। আজ আকিঞ্চন যখন বাড়ি এল, তখন ঘড়িতে রাত ঠিক ন’টা। কস্তুরী আড়চোখে দেখল, আকিঞ্চনের মুখটা হাসি-হাসি। তার মানে আজ বেশ বড় দাঁও মেরেছে একটা। রাধিয়া ভদ্রমহিলার কেসটা কি? স্বামীর আকিঞ্চনের মুখের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে কস্তুরীর মনে হয়েছিল, ওই মহিলাটিকে নিয়ে তার দ্বিতীয় ভাবনাটাই ঠিক। আকিঞ্চন টাকার পিছনে ছোটে, ক্ষমতার পিছনে ছোটে, তবে চরিত্রহীন নয়।

কস্তুরী মোবাইল অ্যাপে ‘রাঙামাটির মেয়ে’তে মনোযোগ দিল। রাধিয়ার বিশ্রী ব্যাপারটা থেকে মাইন্ড চেঞ্জ করতে পারে একমাত্র ‘রাঙামাটির মেয়ে’। কী ভাল অভিনয় করছে মেয়েটা! রাত কত হল মোবাইলে দেখতে যাওয়ার উপক্রম করতেই একটা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঢুকল। মিশুক! তার তিতি! লিখেছে, “বাড়ি ফিরছি বিবি। একটা ছোটখাটো অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। চিন্তা কোরো না।”

‘চিন্তা কোরো না’ লেখাটা খুব সোজা! সঙ্গে সঙ্গে ফোন লাগাল কস্তুরী, “কী হয়েছে তিতি? অ্যাক্সিডেন্ট মানে?”

“কী ব্যাপার? তুমি এখনও জেগে কেন?”

“কিছু না তেমন। এমনিতে ঘুম আসছে না। তোর কথা মনে আসছে বার বার।”

“আমাকে অ্যাভয়েড কোরো না বিবি। কী হয়েছে? আঙ্কলের সঙ্গে ঝগড়া?”

“দূর। বাদ দে। তোর কী হল, কী করে হল? বেশি লাগেনি তো?”

“এখনই সব শুনবে? আঙ্কল জেগে যাবে যে।”

আসল ব্যাপার বলতে গিয়েও মুখে আটকে গেল, “আঙ্কল স্টাডিতে। তুই বল।”

“আরে কিছু না, প্রোগ্রাম চলছে। মঞ্চে আমি আর অর্ক। ওই লাস্ট এপিসোডের গানটা চলছে।”

“মেয়ে তোর রূপের ঢলে?”

“হ্যাঁ, ওটাই। লোকাল দু’-তিনটে ছেলেমেয়ে উঠে এল স্টেজে। ওরা নাচবে।”

“সে কী? অ্যালাও করল সবাই?”

“ওটা ব্যাপার না। অনেক হ্যান্ডেল করেছি এ সব। নাচছে ওরা। আমি আর অর্ক পা মেলাচ্ছি। আচমকা একটা ছেলে আমার হাত চেপে ধরে। আমি নিজেকে ছাড়াতে পারছিলাম না। বাব্বা! কী জোরে চেপেছিল! অর্ক এই দেখে ছেলেটিকে সরিয়ে দিতে যায়। ব্যস। গোলমাল। ধাক্কাধাক্কি। এই ঝামেলায় আমার জুতোর হিল খুলে যায়। আর আমি সোজা স্টেজ থেকে নীচে। হিহিহি!”

“বলিস কী? তোর হাসি পাচ্ছে?”

“নীচে ত্রিপল ছিল। তেমন লাগেনি।”

“লাগেনি বললে হবে? তোর গলার আওয়াজে টের পাচ্ছি।”

“ওই সামান্য কোমরে ঝটকা। আর হ্যাঁ, বাঁ পায়ে লেগেছে। তবে ভাঙেনি।”

“ইস! তার পর?”

“অ্যারেঞ্জাররা খুব ভাল। গার্ড করে আমাকে বার করে নিয়েছে।”

“হাঁটতে পারছিস?”

“অর্ক পাঁজাকোলা করে নিয়ে গাড়ি অবধি এসেছিল। ওর জায়গায় আজ মা থাকলে যে কী করে বাড়ি ফিরতাম।”

“অর্ক কোথায়?”

“পাশেই আছে। ঘুমোচ্ছে বেচারা। হিহিহি! চিন্তা কোরো না তুমি। ঘুমোও। আমি মিনিট চল্লিশের মধ্যে বাড়ি ঢুকে যাব। অন্য সময় হলে হোটেলে থাকতাম। কিন্তু পা-টা মনে হচ্ছে ভোগাবে। তাই সকাল হওয়ার আগেই বাড়ি ঢুকতে চাইছি। কাল ডাক্তার দেখাব। আমাদের পাশের ব্লকেই এক জন ডাক্তার আছেন। দেখিয়ে নেব। তুমি ঘুমোও।”

আর ঘুম! আজ মনে হচ্ছে না ঘুম আসবে। বিছানায় এ পাশ-ও পাশ করতে করতেই টের পেল, কেউ এক জন উঠে জল খাচ্ছে। মেহুলি হতে পারে। পরক্ষণেই কাশির শব্দে বুঝল, আকিঞ্চন। আকিঞ্চন তো মোষের মতো ঘুমোয়। আজ কী হল? এ দিকে হাত কামড়াতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটার বাড়ির ঠিকানাটা যদি জানা থাকত! আর এক বার ফোন করবে? নাঃ, থাক।

শেষ রাতের দিকে চোখটা লেগে এসেছিল। ঘন ঘন ডোরবেলের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল কস্তুরীর। দেওয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা কুড়ি। এত ভোরে তো কেউ আসে না। হাই চাপতে চাপতে বারান্দার দরজা খুলে নীচে উঁকি মারতেই হৃৎপিণ্ডের রক্ত চলকে উঠল।

পুলিশ! সব মিলিয়ে তিন জন। সামনের রাস্তায় একটা জিপ দাঁড় করানো। কস্তুরীর মাথা দুলে উঠল। রাতে ভাল ঘুম হয়নি। শরীরটা ম্যাজম্যাজ করছে। ভেবে রেখেছিল, আজ অফিস যাবে না। পড়ে পড়ে ঘুমোবে। পরে বিভাস দত্তকে একটা ভুজুংভাজাং দিয়ে দেবে। কাল রবিবার। একেবারে সোমবার অফিস। কিন্তু এ কী উটকো ঝামেলা! পুলিশ তাদের বাড়ি আসে না এমন নয়। কেসের ব্যাপারে আকিঞ্চনের কাছে বেশ কয়েক বার আসতে দেখেছে সে। কিন্তু এত ভোরে বাড়িতে পুলিশ আসা মানে সিরিয়াস কেস।

নাইটির উপরে একটা গাউন চাপিয়ে নীচে এসে দেখল, শ্যামলেন্দু-কেতকীবালার ঘরের দরজা বন্ধ। স্বাভাবিক। সে মেন ডোরের দরজা খুলতেই সামনে চেনা মুখ। ইনস্পেক্টর ঘোষাল। চোখাচোখি হতেই স্মিত হেসে বললেন, “গুড মর্নিং ম্যাডাম। মিস্টার রায় আছেন?”

“আছেন। কিন্তু...”

“উপরে চলুন। সব বলছি।”

সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই চোখে এল আকিঞ্চন ঘুমচোখে সিঁড়ির মুখে। কস্তুরী খেয়াল করল, আকিঞ্চনের দুটো চোখই লাল। তার মানে সেও ঘুমোয়নি রাতে। কেন? আকিঞ্চন অবাক চোখে বলল, “কী ব্যাপার ঘোষাল? এত সকালে?”

উপরে এসে সোফায় বেশ জমিয়ে বসে ঘোষাল বললেন, “ফ্যানটা চালিয়ে দিন তো। আর এক কাপ চা। কফি হলে বেশ হয়। উফ বাবা! কাল নাইট ডিউটি ছিল। সকালে ভাবলাম বাড়ি গিয়ে এই ধড়াচুড়ো খুলে আরামে ঘুমোব। উপায় আছে? হেড অফিস থেকে ফোন।”

“বাট, হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

“দাঁড়ান আগে গলায় চা পড়ুক। ম্যাডাম।”

শেষ শব্দটা কস্তুরীর উদ্দেশে। এটা যে তাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য, স্পষ্ট বুঝতে পারল কস্তুরী। সে নীরবে কিচেনে ঢুকে গেল। কফি বানাতে বানাতে কান পাতল বাইরে। সামান্য কথাবার্তা কানে এল। রাধিয়া শ্রীবাস্তব নামটাও যেন শুনতে পেল। জোড়াবাগান থানায় কাল রাত এগারোটায় কমপ্লেন জমা পরেছে আকিঞ্চন রায়ের নামে। মেয়েটি তা হলে এখান থেকে বেরিয়ে থানায় গিয়েছিল? বাকি কথাবার্তা এত নিচু স্বরে হল যে সে শুনতে পেল না।

কস্তুরী পাঁচ কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে এল। কস্তুরীর এত সকালে কফি খেতে ইচ্ছে করছে না। সে কফির কাপ নামিয়ে এ বার সরাসরি প্রশ্ন করল আকিঞ্চনকে, “কী হয়েছে? আমাকে বলা যায়?”

আকিঞ্চন শ্রাগ করল, “তেমন কিছু না। একেবারেই পেটি কেস।”

ঘোষাল কাপে একটা সশব্দে চুমুক দিয়ে বললেন, “চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। এ সব বাজে মেয়েছেলের কেস। সারাদিন কাজকম্ম না থাকলে যা হয়।”

কস্তুরী বলল, “এমনি এমনি কেউ কমপ্লেন করে? ব্যাপারটা খুলে বলুন, আমি আফটার অল মিস্টার রায়ের ওয়াইফ।”

ঘোষাল বললেন, “নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই ম্যাডাম। কাল রাতে রাধিয়া শ্রীবাস্তব নামের এক জন মহিলা জোড়াবাগান থানায় লিখিয়ে এসেছেন যে, আকিঞ্চন রায় তাকে মারধর করেছেন। তা ছাড়া...”

মিস্টার ঘোষাল চুপ করলেন। কস্তুরী খেয়াল করল মেহুলি ওর ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে। আকিঞ্চন চঞ্চল হয়ে বলল, “তুই ঘরে যা। এরা একটা কেসের ব্যাপারে এসেছেন।”

মেহুলি যেমন চোখ রগড়াতে রগড়াতে এসেছিল, তেমনই ঘরে ঢুকে গেল। মেহুলির পরনে একটা ঢোলা কাঁধকাটা টিশার্ট আর ছোট প্যান্ট। কস্তুরী লক্ষ করল যত ক্ষণ না মেহুলি ঘরে ঢুকে গেল, তত ক্ষণ ঘোষাল দৃশ্যটা গিললেন। ফের কফির কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, “তা ছাড়া অন্য অ্যালিগেশনও আছে।”

কস্তুরী বলল, “আমি শুনছি।”

“হাস্যকর, তবুও জানতে চাইছেন বলে বলছি। মহিলা লিখিয়েছেন আকিঞ্চন রায় নাকি তার সঙ্গে নিয়মিত ফিজ়িক্যাল রিলেশনশিপ রেখেছিলেন ফর আ লং পিরিয়ড। বাট গুড গড, রেপ কেসের কমপ্লেন করেনি।”

কস্তুরীর চোখ ঘুরে গেল আকিঞ্চনের দিকে। আকিঞ্চন তা হলে জানে না রাধিয়া এই বাড়িতে এসেছিল। কিন্তু কী কারণে আকিঞ্চনের কাল রাতে ঘুম আসেনি?

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series Bengali Novel rabibasariyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE