E-Paper

অন্ধকারের প্রতিস্পর্ধী

এক মায়াবী নরম আলোর নাম বন্ধুত্ব। বন্ধুত্ব শব্দটা ছোট্ট, কিন্তু এর ব্যাপ্তি ও গভীরতা অপরিমেয়। বন্ধু মানে অস্থির সময়ের অবলম্বন, যে কোনও কথা অনায়াসে বলতে পারার ভরসা, সব সময় পাশে থাকার আশ্বাস। তেমনই সব বন্ধুদের কথা, আশ্চর্য সব বন্ধুত্বের স্মৃতিচারণ

স্মরণজিৎ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ০৭:৪২
ছবি: অমিতাভ চন্দ্র।

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র।

এই নাও, এটা খাও!”

শ্যামলা ছেলেটা বাড়িয়ে ধরেছে দুটো কমলালেবুর কোয়া। শেষ বিকেলের স্কুলবাড়ি প্রায় ফাঁকা। মফস্সলের হাওয়ায় শীতের গন্ধ। পাতা ঝরে যাওয়া গাছেরা তাদের ডালপালা বাড়িয়ে দিয়েছে আকাশের দিকে। আর তার ফাঁক দিয়ে দেখা যাচ্ছে চ্যাটার্জিপাড়ার হলুদ জল-ট্যাঙ্কি। সারি দিয়ে পাখিদের ফিরে আসা। সিনেমাহলের মাঠ থেকে রমণীজেঠুর ওড়ানো বোঁ-ঘুড়ি!

ক্লাস ফাইভের প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম আমি। আমার ছোট পিসেমশাই ছিলেন সেই স্কুলেরই শিক্ষক। আমি বলতাম ‘পিশাই’! পরীক্ষার পরে আমি পিশাইয়ের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম টিচার্স রুমের বাইরের টানা বারান্দায়। তখন সেই অচেনা, শ্যামলা ছেলেটি এসে বাড়িয়ে দিয়েছিল দুটো কমলালেবুর কোয়া! বলেছিল, “এই নাও,এটা খাও!”

সেই বিশাল লম্বা, ছায়া-ছায়া, আলো-আঁধারি বারান্দার শীতল একাকিত্বে সেই ছিল এক উষ্ণতার স্পর্শ! বন্ধুত্বের স্পর্শ!

সেই ছেলেটি এখন লোক। জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত। ছেলেবেলার প্রেমিকাকে বিয়ে করে সন্তান নিয়ে ব্যস্ত ও সফল জীবনের নায়ক। ছেলেটির নাম দীপঙ্কর দে। আমাদের সবার দীপু। এখন ভাবলে অবাক লাগে, সেই কবেকার এই বন্ধুত্ব!

বন্ধুত্ব একটা ছোট্ট শব্দ, কিন্তু এর ব্যাপ্তি ও গভীরতা অনন্ত! বন্ধুত্ব আসলে নাবিকের কম্পাস। বাদলা দিনের ছাতা। শীতের ওম-মাখা রজাই। বন্ধুত্ব আসলে অকপটে বলতে পারার মতো এক আশ্রয়। বুকের মধ্যে ধরে রাখা হারানো সুগন্ধ।

আমার ছোটবেলা কেটেছে মফস্সলে। সেখানে সবাই খুব বেশি করে সবার মধ্যে ঢুকে থাকত। কার বাড়িতে কী রান্না হয়েছে। কে কাকে কী বলেছে। কার ছেলে কার মেয়ের সঙ্গে নিবে যাওয়া কোন ল্যাম্পপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে গল্প করেছে— সে-সব জনজীবনে ছড়িয়ে পড়ত দ্রুত। তবু এত পরিচিতির মধ্যেও সবারই বন্ধু ছিল কম।

*****

তবে ছোট্টবেলায় বন্ধুত্বের কথা উঠলেই সবাই বলত বিধানকাকা আর বাবুকাকার নাম। এক জন যেমন ফর্সা, আর এক জন তেমনই কালো। বিধানকাকা ছিল অমিতাভের ভক্ত, আর বাবুকাকা রাজেশ খন্নার। দু’জনেই ফুটবল খেলত। ক্যারমের পার্টনার ছিল। আর দু’জনে সারা ক্ষণ এক সঙ্গে থাকত। বাটা কোম্পানিতে কাজ করত বিধানকাকা। বাবুকাকা ছিল বেকার। ছুটির সময় বাবুকাকা বিধানকাকার সাইকেল নিয়ে কোম্পানির গেটে দাঁড়িয়ে থাকত। দুই বন্ধু ফিরত একই সাইকেলে। পরে বিধানকাকা বাবুকাকাকেও একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিল। বাবুকাকার যখের ধন ছিল সেই সাইকেলটা।

বাবুকাকাকে টিউশনিও জোগাড় করে দিত বিধানকাকা। বাড়ির দরকারে টাকাও দিত। বাবুকাকাও বিধানকাকাদের বাড়ির কত কাজ যে করে দিত! কেউ যদি বলত, “কেন বিধানের ফাইফরমাশ খাটিস?”

বাবুকাকা বলত, “আমার বাড়ির কাজ আমি করি। তোমার কী?”

তার পর বিধানকাকা প্রেমে পড়ল। শিলু নাম ছিল মেয়েটার। তার এক বান্ধবীকে ভাল লাগত বাবুকাকারও! সবাই ভেবেছিল, এ বার দুই বন্ধুর সঙ্গে দুই বান্ধবীর প্রেম হবে। কিন্তু হল না। কী থেকে যে কী একটা গোলমাল হল! বাবুকাকার আর বিধানকাকার মধ্যে নন্দীর দোকানের সামনে ঝগড়া হল এক দিন। পাড়ার লোকজন দেখল। হাসল। গল্প ছড়াল। তার পর দু’জনের মধ্যে কথা বন্ধ হয়ে গেল।

সেটা ছিল বর্ষাকাল। তার পর রথ গেল, স্বাধীনতা দিবসের ওয়ান ডে ফুটবল টুর্নামেন্ট গেল, পুজোর বাঁশ পড়ল নিউল্যান্ড চাতালে, কিন্তু দু’জনে আলাদাই রইল।

দেখতে দেখতে পুজো শেষ হল। দীপাবলি পার হয়ে শীত এসে পড়ল মফস্সলে। তার পর দোল ছুঁয়ে বাংলা বছর ঘুরে গেল। জানলাম, বিধানকাকার বিয়ে হবে জুলাই মাসে। আর সবাই নিমন্ত্রিত, শুধু বাবুকাকা বাদ!

তার পর বৃষ্টি শুরু হল সে বার। আকাশ-পাতাল এক করা বৃষ্টি! নদী-নালা-ড্রেন উপচে আমাদের ছোট্ট শহর ভরে গেল জলে। কেউ যেন পারদ ঢেলে দিল চার দিকে!

তার মধ্যেও বিয়ের কেনাকাটা করতে কলকাতায় গিয়েছিল বিধানকাকা। কিন্তু ফেরার পথে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা হল। ট্রেন থেকে পড়ে গেল হাত পিছলে। একটা পা চলে গেল বিধানকাকার! মাথাতেও লাগল বেশ।

মনে আছে, সন্ধের দিকে খবরটা এসেছিল পাড়ায়। বাবুকাকা আমাদের বাড়িতেই বসে টিভি দেখছিল। খবরটা পাওয়ামাত্র বাবুকাকা কেমন যেন স্থির হয়ে গিয়েছিল। তার পর সেই বৃষ্টি মাথায় বেরিয়ে গিয়েছিল সোজা!

যমে-মানুষে টানাটানি করে বিধানকাকা ফিরে এসেছিল বাড়িতে। সারা দিন-রাত বাবুকাকা পড়ে থাকত কলকাতার হাসপাতালে। বিধানকাকাকে বাড়ি নিয়ে আসতে বেশ কয়েক মাস সময় লেগেছিল। বাবুকাকা কিন্তু এক মুহূর্তের জন্যেও সরে যায়নি বিধানকাকার পাশ থেকে।

শিলু বিয়ে করতে চেয়েছিল, কিন্তু বিধানকাকা রাজি হয়নি। কাজ করার মতো অবস্থা ছিল না বলে চাকরিটাও ছেড়ে দিয়েছিল। মাথার চোট ও তার থেকে শারীরিক সমস্যা সারতে সময় লেগেছিল অনেক দিন। জীবনের নিয়মে পরিচিতদের ভিড়, আত্মীয়স্বজনদের জটলা ক্রমে সরে গিয়েছিল। কিন্তু বাবুকাকা সরে যায়নি। আশ্চর্য এক ভালবাসায় জড়িয়ে রেখেছিল বন্ধুকে!

বিধানকাকার এখন সত্তরের উপর বয়স। বাবুকাকারও তাই। বিধানকাকার আর কেউ নেই। বাড়িটাও ভাইয়েরা বিক্রি করে দিয়েছে। সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে নানা দিকে। বিধানকাকা এখন বাবুকাকাদের বাড়িতেই থাকে। বাবুকাকার স্ত্রী ও ছেলেরাও আপত্তি করেনি।

কখনও-সখনও সেই মফস্সল শহরে গেলে, বাবুকাকাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে গিয়ে এখনও দুই বন্ধুকে দেখি। দেখি, প্লাস্টার-ছাড়া বাড়ির ছোট্ট বারান্দায় বসে দু’জনে গল্প করছে। হাসছে!

বাবুকাকা আর সাইকেল চালায় না। এক বার জিজ্ঞেস করায় বলেছিল, “বিধানটা চালাতে পারে না তো! আমি কী করব চালিয়ে!”

“বিধানকাকা তো তোমাকে পেল। কিন্তু তুমি কী পেলে বাবুকাকা?” পাড়ার এক জন জিজ্ঞেস করেছিল সেদিন।

বাবুকাকা বলেছিল, “কী পাব মানে? বন্ধু পেলাম! আমার বাবা-মা ছাড়া এমন করে কেউ ভালবাসেনি রে আমাকে!”

আসলে ভালবাসার কথাই তো হচ্ছে। বন্ধুত্বই যে সর্বশ্রেষ্ঠ প্রেম!

*****

সেই যে দীপুর কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, কিন্তু তারও আগে সেই একদম ধু-ধু ছোটবেলায় নার্সারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে আমার প্রথম বন্ধু হয়েছিল যে ছেলেটা, তার কথা তো ভোলা যায় না। তার নাম শোভন বন্দ্যোপাধ্যায়।

আমাদের স্কুলে সবার জন্য ছোট ছোট চেয়ার টেবিল দেওয়া হত। সাহেবি কেতার স্কুলটা ছিল আশ্চর্য সুন্দর। আমার যে লাল সুটকেসটা ছিল, তার লক ছিল বেশ শক্ত। এখনই আমার গায়ে জোর নেই, আর তখন তো আরওই ছিল না। তাই সেই লক আমি খুলতে পারতাম না। আমার পিসতুতো দিদি, বুইদি, সেই স্কুলেই ক্লাস ওয়ানে পড়ত। রোজ এসে খুলে দিত সেই লক।

তার পর টেবিলের পাশে মাটিতে সেই খোলা ব্যাগটা কাত করে দাঁড় করিয়ে রাখতাম আমি। আর প্রতি বার বই-খাতা বার করার সময় দুর্বল আমাকে সাহায্য করত শোভন। আমার সঙ্গে ব্যাগটা ধরে টেবিলে তুলে দিত। আবার নামিয়েও দিত। পঁয়তাল্লিশ বছর আগের ঘটনা। কিন্তু সেই ছিল বন্ধুত্বের প্রথম স্পর্শ! তখন বুঝতাম না। এখন বুঝি!

আর ছিল অমর্ত্য! অমর্ত্য চক্রবর্তী। আমাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রাজপুত্র! সবাইকে সাহায্য করত ও। কোনও দিন কাউকে হিংসে করতে দেখিনি। কাউকে খারাপ কথা বলতে শুনিনি। অন্যকে দুঃখ দিতে দেখিনি। বাংলা কবিতা পড়তে অমর্ত্যই মূলত শিখিয়েছিল আমাকে। এখন বিদেশে থাকে অমর্ত্য। রাজপুত্র এখন রাজা। কিন্তু বন্ধুত্বে সমান উজ্জ্বল।

আর অয়নাংশুর কথা না-বললে বন্ধুত্ব নিয়ে কিছুই বলা হবে না। অয়নাংশু সরকারকে সবাই ‘গোল্ডি’ বলে ডাকলেও, আমি ওকে ওর পুরো নাম ধরেই ডাকতাম। কিন্তু আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল ও-ই। এক সঙ্গে স্কুল থেকে সাসপেন্ড হওয়া। ফুটবল খেলে বাটা স্টেডিয়াম থেকে ফেরা। ফিজ়িক্সের প্র্যাকটিকালে পেন্ডুলামের এক্সপেরিমেন্ট গুলিয়ে ফেলে সন্দীপবাবুর কাছে বকুনি খাওয়া। এক সঙ্গে টিফিন ভাগ করে নেওয়া। গঙ্গার জেটিতে বসে শুশুক আর জাহাজ দেখা। বিহারিদুধওয়ালাকে সাইকেল দিয়ে ধাক্কা মেরে রাস্তায় চিৎপাত হয়ে পড়ার মধ্যে ছিল আমাদের এক সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা।

আমি থাকতাম কলকাতায়। ট্রেনে করে মফস্সলে পড়তে যেতাম। পুজোতেও ওখানে থাকতাম আত্মীয়দের বাড়িতে। আর সব সময় আমার জন্য লাল সাইকেল নিয়ে হাজির থাকত অয়নাংশু। দারুণ ইয়ার্কি করত। আর শাসন করত তারও বেশি। আবার আগলেও রাখত সন্তানের মতো। এখনও আমাদের বন্ধুদের রিইউনিয়নে, ও অনেকটা পিছিয়ে এসে আমাকে গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যায়। লাল সাইকেলটা বদলে এখন লাল গাড়ি হয়েছে ওর। কিন্তু বন্ধুটি বদলায়নি।

স্যর বলতেন, গোঁফ গজানোর পর বন্ধুত্ব গজায় না। আমিও তা-ই বিশ্বাস করতাম। কিন্তু তার পর আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ধীমান ভট্টাচার্যের। আমার মা মারা যাওয়ার পরের সেই অন্ধকার দিনগুলোয় ধীমান ছিল আমার মধুসূদনদাদা!

আসলে বন্ধুত্ব বলতে আমার এদের কথাই মনে পড়ে। মনে পড়ে সুদীপ্ত, নির্মাল্য, শিলাদিত্য, রিতেশ, প্রবীর, তমাল, চিমা, সুমিত, সূর্য, মধুসূদন, মৌসম, সোমনাথদের কথা। বন্ধুত্ব বলতে কী বোঝায়, এরাই তো শিখিয়েছিল আমাকে। আমার সকল অন্ধকার মুছিয়ে দিত এরাই।

*****

আর মেয়েরা? মেয়েরাও কি বন্ধু হয় ছেলেদের? এখন এই প্রশ্ন অবান্তর। কিন্তু মফস্সল শহরে আমাদের বেড়ে ওঠার সেই আশির দশকে, লোকজন এই ছেলে ও মেয়েদের মধ্যেকার বন্ধুত্ব ব্যাপারটা ঠিক যেন মানতে পারত না। বিশ্বাসও করত না। কিন্তু আমার সেই ধারণা বদলে দিয়েছিল যে ক’জন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল আমার ক্লাসমেট, লিরিল রয়!

লিরিলদের কোয়ার্টারটা ছিল বটতলার কাছে। ওর বোনের নাম ছিল তোশিবা। সেই নার্সারি স্কুল ছিল কো-এডুকেশন। সেখানেই আমরা পড়তাম। আর আমার পাশেই বসত লিরিল। শান্ত মেয়েটি ছিল অপূর্ব সুন্দরী। আর লেখাপড়ায়? আমাদের ফার্স্ট গার্ল ছিল লিরিল। কত বার যে লিরিল আমাকে অঙ্ক দেখিয়ে দিয়েছে, বাংলা বানানের ভুল ধরিয়ে দিয়েছে, তার ঠিক নেই!

কিন্তু আমি লিরিলের জন্য কী-ই বা করতে পারতাম? কিছুই না সে রকম। স্কুলবাসে সিট রাখতাম একটু, আর গরমকালে আমাদের সুন্দর মফস্সল যখন গুলমোহরে গুলমোহরে লাল হতে শুরু করত, তখন ওর জন্য বাসস্টপ থেকে আমি কুড়িয়ে নিয়ে যেতাম গুলমোহরের কুঁড়ি। তার মধ্যেকার পুংকেশর বার করে আমরা কাটাকুটি খেলতাম। সেই ছিল আমাদের আনন্দ!

আর ছিল বর্ণালী। মানে বর্ণালী লাহিড়ী। লিরিলের খুব বন্ধু ছিল ও। ফর্সা, বড়-বড় চোখের মেয়েটার দুই গালে ছিল দূরন্ত ঘূর্ণির মতো টোল। মনে আছে, টিফিন আওয়ার্সে মাঝে মাঝে বর্ণালী এসে আমার মুখে ফলের টুকরো ঢুকিয়ে দিয়ে যেত। বকুনি দিয়ে বলত, “সারা ক্ষণ খেলা-খেলা, না! এত ঘেমেছিস! আন্টি বকবেন কিন্তু!” সেই ছোট্ট বয়সে বাড়ির বাইরে এরাই ছিল আমার অভিভাবকের মতো। ভুল-ঠিক ধরিয়ে দিত এরাই।

খারাপ রেজ়াল্ট করলে বর্ণালী বলত, “মন দিয়ে পড়ছিস না কেন রে?”

আমি জানি না, বর্ণালী বা লিরিল আজ কোথায়! শুধু জানি, ওদের সঙ্গে আর কোনও দিন দেখা হবে না। কিন্তু আজও লিরিলের গোলাপি টিফিনবক্স আর বর্ণালীর নীল সুটকেসের কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। মনে আছে ওদের বন্ধুত্বের উষ্ণতা।

এগুলো শুনলে মনে হতেই পারে যে, এ সব তো খুবই সামান্য ব্যাপার। কিন্তু আসলে সামান্য নয়। সেই ন’-দশ বছর বয়সে, মানুষ বড় অসহায় থাকে। তার মনের কাদামাটি সবে আকার পেতে শুরু করে। তাই তখন এক জন ঠিকমতো সাহায্যকারী বন্ধু পাওয়াটা জীবনে সবচেয়ে প্রয়োজনীয়। ছোট-ছোট ঘটনাই আমাদের তৈরি করে। আশপাশের পৃথিবীর সম্বন্ধে আমাদের ধারণা দেয়। তাই জীবনের সেই শুরুর বছরগুলোয় এমন সহৃদয় বন্ধু পেলে জীবনের প্রতি আমাদের ভরসা আসে, বিশ্বাস আসে। লিরিল আর বর্ণালী আমাকে বুঝিয়েছিল, বন্ধুর জেন্ডার হয় না। বন্ধু নিজেই এক ‘ইউনিক জেন্ডার’!

*****

তবে আর এক রকম ছেলে-মেয়ের বন্ধুত্বও আমি দেখেছি। মানে জয়াদি-প্রদ্যুৎদার বন্ধুত্বের কথাবলছি আর কী।

জয়াদির বাড়িটা ছিল আমাদের বাড়ির কাছেই। বাংলা অনার্স নিয়ে পড়ত জয়াদি। শ্যামলা, ছোটখাটো চেহারার জয়াদি থাকত মায়ের সঙ্গে। ওদের বাড়িটা ছিল দু’কামরার। ইটের দেওয়াল, মাথায় টালির চাল। বাড়ির সামনে আর একটা ঘর ছিল। সেখানে জয়াদির মা, মানে জেঠিমার ছিল কাপড় ছাপাবার দোকান। জয়াদিও মাঝে মাঝে সেখানে বসত। কাঠের নানা রকম ব্লক দিয়ে জেঠিমা কাপড় ছাপাত।

জয়াদি টিউশনিও করত। ভাল কবিতা লিখত। আমি মাঝে মাঝে বাংলাটা দেখে নিতাম জয়াদির থেকে। তখন স্কুলের উঁচু ক্লাসে পড়ি। সবই বুঝতে শিখেছি। আমরা দেখতাম, জয়াদির কাছে প্রদ্যুৎদা আসত খুব।

প্রদ্যুৎ হুদাতি ছিল দুরন্ত ছেলে। বিনোদ খন্নার মতো দেখতে। সারা ক্ষণ বুকের দুটো বোতাম খোলা থাকত। আর তাতে ঝুলত রুপোয় বাঁধানো একটা বাঘের নখ। জয়াদিদের বাড়িতেই অর্ধেক দিন খাওয়াদাওয়া করত প্রদ্যুৎদা। বড়লোক বাড়ির ছেলে, তবু অহঙ্কার ছিল না একটুও। জয়াদির সঙ্গে সারা ক্ষণ ঝগড়া আর খুনসুটি করত। আর আমাদের অঞ্চলের কত মেয়ের পেছনে যে ঘুরত প্রদ্যুৎদা তার ঠিক নেই।

জয়াদি মাঝে মাঝে বলত, “আচ্ছা প্রদ্যুৎ, তোর ক্লান্ত লাগে না!”

প্রদ্যুৎদা বলত, “না। আমি রবার্ট ব্রুস!”

জয়াদি শুনে হাসত। প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটা করে প্রেমে পড়ত প্রদ্যুৎদা! তার পর এসে জয়াদিকে বলত, কেন প্রেমটা টিকল না। জয়াদি সব শুনত মন দিয়ে। সাধ্যমতো সান্ত্বনাও দিত। আর জয়াদির সেই আড়াই ঘণ্টার সান্ত্বনা পেয়েই প্রদ্যুৎদা আর একটি মেয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ত।

আমি কোনও দিন দেখিনি প্রদ্যুৎদা জিজ্ঞেস করছে, ‘জয়া, তুই কেমন আছিস?’ শুধু এক বার বলেছিল, “এত কবিতা লিখিস, একটা বই ছাপাতে পারিস না?”

তার পর সে বার পুজোর পরে এক দিন প্রদ্যুৎদা এসে চার মাইল লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিল, “জয়া, আজ ব্যাপক কেস খেয়েছি।”

“কী হল?”

“এ বার ফুল অ্যান্ড ফাইনাল প্রেমে পড়েছি!” বলে প্রদ্যুৎদা জয়াদিদের চৌকিতে হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়েছিল।

জেঠিমা সবই জানত। আমরাও জানতাম। সবাই খুব হেসেছিলাম প্রদ্যুৎদাকে দেখে।

প্রদ্যুৎদা চোখ গোল করে বলেছিল, “মাইরি বলছি। দেখিস! রবের্তো বাজ্জিয়োর দিব্যি!”

প্রদ্যুৎদা ছিল ইটালির ফুটবল টিমের ফ্যান। তখনও বাজ্জিয়োর পেনাল্টি মিসে ইটালি ওয়ার্ল্ড কাপ হারায়নি।

আমরা হাসলেও প্রদ্যুৎদা যে সিরিয়াস, সেটা বুঝেছিলাম কিছু দিন পরেই। মেয়েটি নাকি প্রদ্যুৎদার ‘অফার’-এ ‘না’ করে দিয়েছে। যারা আমাদের সেই সময়ের মানুষ, তারা জানবে যে তখন প্রোপোজ় করাকে ‘অফার’ করা বলা হত।

জয়াদি, হাপুস নয়নে কাঁদতে থাকা প্রদ্যুৎদাকে বলেছিল, “তুই ওকে অফার করেছিস! তোকে না বারণ করলাম!”

প্রদ্যুৎদা কষ্টে, যন্ত্রণায় গুটিয়ে গিয়েছিল একদম। রাতে নিজের বাড়িতে ফিরত শুধু। বাকিটা সময় জয়াদিদের বাড়িতেই কাটাত। আমি দেখেছিলাম, জয়াদি একদম বাচ্চাদের মতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে প্রদ্যুৎদাকে। এমনকি ভাত মেখে খাইয়েও দিচ্ছে।

পাড়ায় কানাকানি হত না যে, তা নয়। কিন্তু জেঠিমা পাত্তা দিত না। আর আমরাও তো জয়াদির দলেই ছিলাম। আমাদেরও তত দিনে ভয়েস হয়েছে একটু। আমরাও গলা ফুলিয়ে বলতাম, “ছেলে-মেয়েও বন্ধু হয়! বুঝেছ? কিছুই তো জানো না?সব নিয়ানডারথাল!”

আট-ন’মাস এ রকম চলার পরে আচমকা প্রদ্যুৎদা আসা বন্ধ করে দিয়েছিল জয়াদির বাড়িতে। তার পর হঠাৎ এক দিন জেনেছিলাম, অন্য কোনও একটা মেয়েকে প্রদ্যুৎদা বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে এসে তুলেছে।

শুনে আমরা এত অবাক হয়ে গিয়েছিলাম যে কী বলব!

জেঠিমা জয়াদিকে বলেছিল, “তোকেও কিছু বলেনি? আশ্চর্য!”

জয়াদি বলেছিল, “বেশ করেছে বিয়ে করেছে! ও তাতে শান্তি পেলে, ঠিক করেছে!”

প্রদ্যুৎদার বাড়িতে ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট হয়েছিল। তার পর কালের নিয়মে সব মিটেও গিয়েছিল। ওদের নানা ব্যবসা ছিল। কোনও এক ব্যবসারই কাজে প্রদ্যুৎদাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল অসমের কোনও একটা শহরে।

আমিও দূর শহরে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে সরে গিয়েছিলাম সব কিছু থেকে।

তার অনেক বছর পরে, মফস্সল শহরে ঘুরতে গিয়ে দেখেছিলাম জয়াদিকে। চুলে পাক ধরেছে মানুষটার। চোখে চশমা। স্কুলের বাংলার দিদিমণি। কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ক্লান্ত ভাবে যাতায়াত করে। জেঠিমা নেই। সেই দুই কামরার বাড়িটাও নেই। ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট কিনেছে জয়াদি। সঙ্গী একটি কাজের মেয়ে।

“বিয়ে করোনি জয়াদি?” আমি কেমন যেন মুখ ফস্কে জিজ্ঞেস করে ফেলেছিলাম। মানে সত্যি বলছি, মুখ ফস্কেই! কারও ব্যক্তিগত ব্যাপার থেকে আমি দূরেই থাকতে চাই বরাবর।

জয়াদি বলেছিল, “না রে… ইচ্ছে করেনি।”

আমি আবারও জিজ্ঞেস করেছিলাম, “কবিতা লেখো এখনও?”

জয়াদি একটা পাতলা বই বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, “এই একটা বেরিয়েছে।”

আমি বইটা হাতে নিয়েছিলাম। নাম— ‘একাকী মুগ্ধতায়’। দেখেছিলাম তার উৎসর্গপত্রে লেখা— ‘আমার প্রিয় প্রদ্যুৎকে’!

“প্রদ্যুৎদা আর আসে?”

“না রে, আসে না,” জয়াদি ম্লান হেসেছিল।

আমি সামান্য রাগের গলায় বলে ফেলেছিলাম, “এ কিন্তু প্রদ্যুৎদার ভারী অন্যায়। কষ্টের সময় এসে ঘ্যানঘ্যান করবে, আর সুখের সময় আসল মানুষকে ভুলে যাবে!”

আমাদের ছোট্ট জয়াদি ওই একটা সময়ই কেমন যেন জ্বলে উঠেছিল! বলেছিল, “একদম বাজে কথা বলবি না রাজা! জানিস ওর কত চাপ? বাবা নেই। দাদারা অপদার্থ। সব কাজের দায়িত্ব ওর। ওর কি সময় আছে? প্রদ্যুৎকে নিয়ে এ সব বলবি না কিন্তু!”

আমি আর বলিনি যে, সময় সবার থাকে। শুধু প্রায়োরিটি বদলে যায়! কী হবে বলে? জয়াদিকে কষ্ট দেওয়া তো আমার কাজ নয়। বরং আমি অবাক হয়ে দেখেছিলাম— জয়াদি এখনও কী ভাবে প্রদ্যুৎদাকে আগলে রেখেছে! তার অনুপস্থিতিতেও তাকে রক্ষা করে চলেছে অপবাদ থেকে!

আমার এক বন্ধু সৈকত চক্রবর্তী আমাদের ছোট্ট ‘সন্দর্ভ’ পত্রিকায় একটা কবিতা লিখেছিল বহু দিন আগে। তাতে লিখেছিল—

“ফেরত নাওনি ‘ঘুমিয়েছো ঝাউপাতা’/ কলেজবেলার রাঙা উননব্বই/ তুমি জোর করে পড়ো কবিতার খাতা/ কারণ আমি তো কাছের বন্ধু হই!/ বন্ধুর বেশি ভাবলে না কোনওদিনই/ কবিতার পায়ে মন রাখলাম তাই/ শেষ সাক্ষাতে কলেজের সঙ্গিনী/ বলে গিয়েছিলে ছাপা অক্ষরে চাই!”

কবিতার ‘সঙ্গিনী’টি কি জয়াদির জীবনে ‘সঙ্গী’ হয়ে গিয়েছে? কী জানি!

আচ্ছা, আমিও কি নিয়ানডারথাল?

*****

বন্ধুত্ব কি শুধু সমবয়সিদের মধ্যেই হয়? মোটেও না। আমি দেখেছি, আমার গম্ভীর ও ভীষণ রাশভারী বাবা কী অবলীলায় দু’-তিন বছরের বাচ্চাদের বন্ধু হয়ে যেত। তাদের সব আবদার মেনে নিত। তাদের সঙ্গে ছোট্ট হয়েই খেলায় মাতত।

দেখেছি আমার মাকেও। ছোট্ট রাইবুড়ি নামে যে মেয়েটি আসত আমাদের বাড়ি, মা তার সঙ্গে কত কী যে গল্প করত! মানে সে খুব মন দিয়ে করা সিরিয়াস গল্প। রাই আমার মাকে ‘বন্ধু’ বলেই ডাকত!

আর আমার ঠাকুরদার কথাও এ ক্ষেত্রে বলতে হবে। বিকেলে আমাদের ‘চক্রবর্তী ব্রাদার্স’ দোকানটির সামনের বারান্দায় ওই অঞ্চলের অনেক বাচ্চাদের জুটিয়ে গল্প বলত ঠাকুরদা! কখনও আবার গল্পের বই পড়েও শোনাত। এ ছাড়া খেলা নিয়ে, খাবার নিয়ে কত গল্প যে করত তারা! ঠাকুরদা এক দিন দোকানে না গেলে সব বাচ্চারাই কেমন যেন অস্থির হয়ে খুঁজত তাদের চেয়ে পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন বছরের বড় বন্ধুটিকে! কখনও তারা দল বেঁধে আমাদের বাড়িতেও চলে আসত। আমি এখন বুঝি, এ সবই আসলে বন্ধুত্বের টান!

এই জীবনে কত যে আশ্চর্য বন্ধুত্ব দেখেছি! স্কুলে যাওয়ার পথে টালিগঞ্জ স্টেশনে দেখেছি সারা মুখে বসন্তের দাগওলা অন্ধ গায়কের সঙ্গে রোজ গল্প করতে আসছে ন’-দশ বছরের বাচ্চা একটি মেয়ে! দেখেছি পাড়ায় শিশি-বোতল কিনতে আসা মানুষের সঙ্গে গানের মাস্টারের বন্ধুত্ব। দেখেছি বৃদ্ধা দিদিমার সঙ্গে, সবাই যাকে দেখে বিরক্ত হত, ভয় পেত— সেই জেল-খাটা শ্যামা ডাকাতের বন্ধুত্ব!

আর ক্রমশ বুঝেছি, বন্ধুত্বের বয়স হয় না। জাত-ধর্ম কিচ্ছু হয় না। এ এমন এক সম্পর্ক, যা মানুষের তৈরি করা সব সীমারেখার ঊর্ধ্বে! মানুষের কোনও ষড়যন্ত্রই তাকে বাঁধতে পারেনি। তাই এই বন্ধুত্বের কাছে আমি বার বার নতজানু হয়েছি। বার বার এর থেকে জীবনের রসদ সংগ্রহ করেছি।

এত বন্ধুত্বের কথা বললাম। তাও কত কিছুই যে বলা হল না! সব বিপদে আমার পাশে দাঁড়ানো মৃণালদার কথা বলা হল না। সুরজিৎদার কথা বলা হল না। অর্ণবদার কথা, সুব্রতদার কথা জানানো হল না। অনিন্দ্য, সৌগত, মৌমিত, অভিনন্দন, দীপাঞ্জন, শুভ, দীপন, রণিত, চয়ন, শ্রাবন্তী, শান্তনু, প্রতিকা, অরিন্দমদের কথা বলা হল না একটুও। ওদেরপ্রতি আমার বন্ধুত্বের কথা জানানোই হল না। জানানো হল না যে, এখন আমার সকল অন্ধকার মুছিয়ে দেয় ওরাই।

এই যে এত জন বন্ধুর নাম লিখলাম, তাদের তো আপনারা চেনেন না। জানেন না। আর জানবেনই বা কী ভাবে? আমরা তো কেউ সে ভাবে জীবনে বড় কিছু করতে পারিনি। কোনও যুদ্ধ জয় করিনি। দেশের, দশের নাম উজ্জ্বল করিনি। মানে কিছুই করতে পারিনি। তাও সবার কথা বললাম, কারণ আমাদের রোজকার সাধারণ জীবনে আমরা বন্ধুরাই একে অপরের পাশে ছিলাম। কখনও পেন বা পেনসিল এগিয়ে দিয়ে, কখনও ইনভিজিলেটরের চোখ এড়িয়ে পরীক্ষার উত্তর বলে দিয়ে, কখনও টিফিন ভাগ করে, কখনও মনখারাপের দিনে পাশে বসে, পিঠে হাত রেখে আমরা সবাই একে অপরের জন্য ছিলাম। না, তার পরিবর্তে কিচ্ছু চাইনি আমরা। সবাই শুধু দিতেই আগ্রহী ছিলাম। ভালবাসা জানাতেই আগ্রহী ছিলাম।আমি ওদের কথা বললাম, কারণ আমি জানি এ আমার একার অভিজ্ঞতা নয়। আমাদের সকলের অভিজ্ঞতা। আমি জানি, এই লেখা পড়তে পড়তে আপনাদেরও সেই সব হারিয়ে যাওয়া, যোগাযোগ ক্ষীণ হয়ে আসা বন্ধুদের কথাই মনে পড়ছেহয়তো। আসলে আমরা সবাই আলাদা হয়েও, কোথাও তো এক! আমাদের সবারই তো হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের জন্য, ফেলে আসা বন্ধুত্বের জন্য মনখারাপ করে! আমাদের সবারই তো একালাগে খুব।

বন্ধুত্বের ঋণ শোধ করা যায় না। কিন্তু স্বীকার করা যায়। আমি তাই এই সামান্য লেখায় আমার সারা জীবনের ঋণটুকু স্বীকার করে রাখলাম মাত্র। আর এই অন্ধ-প্রতিযোগিতার সময়েও বিশ্বাস রাখলাম— আজও নির্জন, শীতল কোনও একাকী বারান্দায় অন্য কোনও এক স্মরণজিতের দিকে অন্য কোনও এক দীপু বাড়িয়ে রেখেছে তার করতল। যা স্পর্শ করে আবারও জন্ম নেবে নতুন বন্ধু! আবারও বেঁচে থাকবে চিরকালীন বন্ধুত্ব! সেই বন্ধুত্ব, যা সমস্ত অন্ধকারের প্রতিস্পর্ধী!

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

friendship

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy