Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ওনোর কীর্তি

আমেরিকার ঘৃণা। বাবা-মা’র প্রত্যাশা। প্রায় অত্যাচার। ভেসে যেতে যেতে এক সময় জেগে উঠলেন এই গণিত-প্রতিভা। অলক্ষে প্রেরণা দিলেন এক ভারতীয়, যিনি ৯৭ বছর আগে প্রয়াত। পথিক গুহআমেরিকার ঘৃণা। বাবা-মা’র প্রত্যাশা। প্রায় অত্যাচার। ভেসে যেতে যেতে এক সময় জেগে উঠলেন এই গণিত-প্রতিভা। অলক্ষে প্রেরণা দিলেন এক ভারতীয়, যিনি ৯৭ বছর আগে প্রয়াত। পথিক গুহ

ছবি: সুব্রত চৌধুরী

ছবি: সুব্রত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

এভাবেও ফিরে আসা যায়? যায়, যদি... যদি মেন্টর পাওয়া যায় তেমন। হ্যাঁ, তেমন মেন্টর ঘুরিয়ে দিতে পারে কেরিয়ার। আর সেই সূত্রে জীবনও।

সাফল্যের সূত্রে জীবন ঘুরে গেল যার, তাঁর নাম কেন ওনো। পেশায় আমেরিকার আটলান্টায় এমোরি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় অন্য। তিনি নাম্বার থিয়োরির এক জন বিশ্ববিখ্যাত গবেষক। নাম্বার থিয়োরিস্টরা কাজ করেন ১,২,৩,৪... এ সব সংখ্যা নিয়ে। ওদের ধর্ম, কিংবা ওদের মধ্যেকার সম্পর্ক, নাম্বার থিয়োরিস্টদের চর্চার বিষয়। সেই চর্চায় নজর কেড়েছেন ওনো। কিন্তু সে সাফল্যের আগে? ব্যর্থতা, হতাশা, অভিমান, ক্রোধ। এমনকী আত্মহত্যার চেষ্টা পর্যন্ত। এ হেন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ! ওনো-র জীবন-আখ্যান কল্পকাহিনির মতন।

জন্ম জাপানি-আমেরিকান পরিবারে। বাবা তাকাশি ওনো। জন্‌স হপকিন্‌স ইউনিভার্সিটিতে গণিতের অধ্যাপক। মা সাচিকো ওনো। একশো শতাংশ গৃহবধূ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান যখন বিধ্বস্ত, বিজ্ঞান গবেষণায় পশ্চিমে কী কী হচ্ছে, সে সব যখন মেধাবী জাপানি ছাত্রদের অজানা, তখন সেই দেশ থেকেই যে গুটিকয় জাপানি গবেষক বৃত্তি পেয়ে আমেরিকায় পাড়ি দেন, তাকাশি তাদের অন্যতম। সদ্য-বিবাহিতা স্ত্রী সাচিকোকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৫০-এর দশকের শেষে তিনি চলে এসেছিলেন আমেরিকায়। ওখানে জন্মায় ওঁদের তিন ছেলে। সান্তা, মোমোরো আর সবচেয়ে ছোট— কেন।

১৯৫০-এর দশকের আমেরিকায় জাপানিরা নরকের কীট। ওদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে হাজারও মার্কিন যুবক। দেশের বেশির ভাগ মানুষ বিশ্বাস করে, হিরোশিমা নাগাসাকিতে অ্যাটম বোমা ফেলে ঠিক কাজ করেছে আমেরিকা। ঘৃণার মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ সর্বত্র। রাস্তাঘাটে জাপানি দেখলে মার্কিন নাগরিকরা ছুড়ে দেয় টিটকিরি, গালাগাল। জাপানি দম্পতি তাকাশি-সাচিকো অপমান সহ্য করলেন মুখ বুজে। পাছে প্রতিবাদ করলে তার মাত্রা বাড়ে! সন্তানদের ওপর শারীরিক অত্যাচার দেখেও পড়শি গুন্ডা ছেলেদের কিছু বলার সাহস হল না ওঁদের। তিন ছেলেকে জাপানি ভাষাও শেখালেন না ওঁরা, আমেরিকান শিশুদের থেকে আলাদা সত্তায় বড় হয়ে যদি বিপদ বাড়ে! মার্কিন বৈরি মনোভাবের কাছে নতিস্বীকারের চূড়ান্ত।

বাইরে ও-রকম হলে কী হবে, বাড়িতে সাচিকো ভীষণ কড়া। যাকে বলে ‘টাইগার মম’। রায়বাঘিনী মা। এশিয়া থেকে ভাগ্যান্বেষণে আমেরিকায় ভিড় জমানো পরিবারগুলোয় অধিকাংশ মা ও-রকম টাইগার মম। বাইরে অবজ্ঞা আর অপমানের বদলা নিতে তৈরি। কী ভাবে? সন্তানদের কেরিয়ারে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। এমন সন্তান তৈরি করে, যাকে দেখে আমেরিকানরা হাঁ হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন:হাতির ভাষা বুঝতেন প্রকৃতীশ

টাইগার মম সাচিকো-র সন্তানদের জন্যও বরাদ্দ হল কড়া, দুঃসহ শাসন। কেন খেলাধুলো করতে পারবে না সহপাঠী শিশুদের সঙ্গে। ওরা দল বেঁধে সিনেমা গেলেও, কেন যেতে পারবে না। ওতে সময় নষ্ট। শুধু হোমওয়ার্ক আর পড়া। রেজাল্ট ভাল করতে হবে। সব সাবজেক্টে এ-প্লাস পেতে হবে। অন্য কোনও গ্রেড মানেই খুব খারাপ রেজাল্ট। কেন মেধাবী ছাত্র। ক্লাসের সেরা ছাত্রদের এক জন। কিন্তু সিলি মিসটেক তারও হয়। আর তা হলেই টাইগার মম-এর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তখন বাড়িতে মা-র কান্নাকাটি। বকাঝকা। চড়-থাপ্পড়।

অথচ, সব শিশুর মতো, কেনও চায় মা-বাবার মুখে হাসি ফোটাতে। ওঁদের প্রশংসা পেতে। কিন্তু চাইলে কী হবে, পান থেকে কখনও-সখনও খসে যায় চুন। যেমন এক বার। এক সাবজেক্টে গ্রেড কম। রিপোর্ট কার্ড বাড়িতে দেখিয়ে সই করাতে হবে অভিভাবকের। এক প্রস্থ বকাঝকা থেকে বাঁচতে রিপোর্ট কার্ডে মায়ের স্বাক্ষর জাল করল কেন। এ রকম শ্বাসরোধকারী পরিস্থিতি। আসলে, সন্তানকে বড় করে তুলতে ওনো দম্পতি একটা ফরমুলা ঠিক করে ফেলেছেন। এ যেন এক্স-সংবলিত একটা ইকুয়েশন। যার মধ্যে ইনপুট (এক্স-এর মান) ফেললেই বেরিয়ে আসবে আউটপুট (রাশিমালার মান)। কেন দেখল, ফরমুলার জাঁতাকলে পড়ে জীবন দুর্বিষহ। যেন এক প্রেশার কুকার। মনে মনে কেন হয়ে উঠল বিদ্রোহী। পালাতে হবে ফরমুলার বাইরে। কেন ঘোষণা করে বসল, স্কুলের পড়া ছেড়ে দেবে সে, থাকবে পরিবার থেকে দূরে কোনও শহরে। বুদ্ধির পরীক্ষায় তাঁর স্কোর যথেষ্ট ভাল। স্কুলের শেষ পরীক্ষায় না বসেও শুধু তার সুবাদে ভর্তি হওয়া যাবে কলেজে। কেন মনে করে,
স্কুলের ক্লাস বোরিং। মাস্টারমশাইদের জ্ঞান ওঁর চেয়ে কম। স্কুলে যাওয়া অতএব সময় নষ্ট করা। প্রস্তাব শুনে বাবা-মা ক্ষিপ্ত। ওদের হাত
থেকে মুক্তির উপায়? খুঁজতে যখন কেন মরিয়া, তখনই তাঁর জীবনে দেবদূতের মতো এলেন অদৃশ্য এক মেন্টর।

৭ এপ্রিল, ১৯৮৪। ষোলো বছর বয়েসি বাবা-মা-র অবাধ্য ছেলে বাড়ির লেটারবক্সে পেল একখানি চিঠি। বাবার নামে। এসেছে সুদূর ভারতের মাদ্রাজ শহর থেকে। খামটা বাবার হাতে দিল কেন। চিঠি পড়ে স্বভাব-গম্ভীর তাকাশি ওনো খুশিতে উদ্বেল। চোখে আনন্দাশ্রু। ব্যাপার কী? চিঠি পড়ে শোনালেন তাকাশি। বয়ান এ রকম: ‘আমেরিকায় উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড অ্যাসকি-র কাছে জানলাম, আমার প্রয়াত স্বামী শ্রীনিবাস রামানুজন-এর এক মর্মর মূর্তি বানাতে আপনি অর্থসাহায্য দিয়েছেন। এ ঘটনায় আমি খুশি। আপনার সহৃদয় উদ্যোগের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার সকল প্রচেষ্টার সাফল্য কামনা করি। আপনার বিশ্বস্ত, এস জানকীআম্মাল।’

চিঠি পেয়ে আপ্লুত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন তাকাশি। লেখিকার স্বামী ৬৪ বছর আগে প্রয়াত। তিনি অকালে মারা যাওয়ার সময় স্ত্রী কারও কাছে শুনেছিলেন, তাঁর স্বামীর এক মর্মর মূর্তি বানানো হবে। ৬৪ বছরেও পূর্ণ হয়নি সেই আশ্বাস। মহিলা নিজেই আজ জীবনের প্রান্তবেলায়। তাঁর খেদ তিনি ব্যক্ত করেছিলেন কারও কাছে। জানতে পেরে ওই গণিতজ্ঞ অ্যাসকি উদ্যোগী হন। মূর্তি বানাতে অর্থসাহায্যের আবেদন জানান গণিতজ্ঞের কাছে। মিলেছে সাড়া। সংগৃহীত অর্থে ভাস্কর পল গ্র্যানল্যান্ড বানিয়েছেন রামানুজনের ব্রোঞ্জ মূর্তি। যারা অ্যাসকি-র ডাকে সাড়া দিয়ে অর্থসাহায্য দিয়েছেন, তাদের এক জন তাকাশি। তাই তাঁকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন রামানুজনের স্ত্রী।

ভাল কথা। কিন্তু কে সেই মানুষটা? যাঁর স্মৃতিরক্ষায় এগিয়ে এসেছে বিশ্বের গণিতজ্ঞেরা? যিনি ৬৪ বছর আগে প্রয়াত হলেও, তাঁর স্ত্রীর মাত্র ক’লাইনের চিঠি পেয়ে অধ্যাপক তাকাশি ওনো এতখানি উদ্বেলিত? কেন তো আগে শোনেনি রামানুজন নামটা। অবাধ্য ছেলেকে তাঁর বাবা শোনালেন অজ্ঞাতকুলশীল দশা থেকে এক ভারতীয় জিনিয়াসের জগৎসভায় আসনলাভের আখ্যান, যা কল্পকাহিনিকে হার মানায়। এক কলেজত্যাগী ছাত্র। যে নিজেই শিখিয়েছিল উচ্চতর গণিত। নিজের চিন্তাপ্রসূত ফলাফল যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছিল বহু গণিতজ্ঞকে। এমনকী কেমব্রিজেও। সেখানে গডফ্রে হ্যারল্ড হার্ডি বুঝেছিলেন সেই অজ্ঞাতপরিচয় ভারতীয় গণিতজ্ঞের গবেষণার মূল্য। তাঁর বদান্যতায় গবেষকের বিলাতযাত্রা। সেখানে বর্ণবিদ্বেষের পাহাড় ডিঙিয়ে অভাবনীয় সাফল্য এবং স্বীকৃতি আদায়। তার পর? মাত্র ৩২ বছর বয়েসে জীবনাবসান। গণিতের অধ্যাপক তাকাশি ওনো-র চোখে রামানুজন যেন ডেমিগড।

বাবার ওই ‘ঈশ্বর’-ভক্তির সুযোগ নিল কেন। নিজের স্কুলত্যাগের সমর্থনে যুক্তি সাজাল— কলেজত্যাগী রামানুজন যদি পারেন সাফল্যের শিখরে উঠতে, তবে সে-ও তো পারে জীবনে কিছু করে দেখাতে। ভারতীয় গণিত-প্রতিভাকে উদাহরণ টেনে কেন হাতে পেল স্কুল এবং গৃহত্যাগের ছাড়পত্র। নিজের ইচ্ছেয় জীবন গড়ার পাসপোর্ট।

কিন্তু জীবন গড়া সহজ নয়। বাড়ির বাইরে অবাধ স্বাধীনতায় যুবক কেন ওনো নিজেকে ভাসিয়ে দিলেন নাচগান, হইহুল্লোড় আর রেসিং-এর নেশায়। কলেজের পড়াশুনো এগিয়ে চলল ও সবের মধ্যেই। রেজাল্ট কোনও রকম। এক প্রফেসর বললেন, গবেষণায় ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সত্যি, গবেষণায় নামলেও ফলাফল নজর কাড়ল না তেমন কারও। শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে থাকাকালীন হতাশা এতদূর গড়াল যে, নিজের গাড়ি চালানোর সময় ভারী ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে আত্মহত্যাও করতে গেলেন ওনো। চেষ্টা সফল হল না।

তার পর, তাঁর জীবনে আবার হাজির রামানুজন। এ বারে বেশ বড় আকারে। রামানুজনের জন্মশতবর্ষে বিবিসি-র বানানো তথ্যচিত্র ‘লেটার্স ফ্রম অ্যান ইন্ডিয়ান ক্লার্ক’। এক ঘণ্টার ফিল্মে অনেকের ইন্টারভিউ। এমনকী রামানুজনের স্ত্রী স্বয়ং বর্ণনা করছেন স্বামীর জীবনে শেষের দিনগুলি। আর আধুনিক বিখ্যাত গণিতজ্ঞদের চোখে সেই জিনিয়াসের কাজ। ওহ্‌, এত স্বল্প আয়ুষ্কালে এত কিছু! এর পর ওনো-র হাতে এল একখানা বই। ‘দি ম্যান হু নিউ ইনফিনিটি’। রবার্ট ক্যানিগেল রচিত জিনিয়াসের জীবনী। পড়লে যেন রক্তমাংসের মানুষটাকে ছুঁয়ে দেখা যায়। কতখানি দুঃসাহস থাকলে এক জন এতখানি এগোতে পারে? এই সময় ওনো-র পিএইচডি গাইড বেসিল গর্ডন ওঁর কানে দিলেন মন্ত্র। মিকি মাউস কাহিনির সেই আপ্তবাক্য: ‘ইফ ইউ ড্রিম ইট, দেন ইউ ক্যান ডু ইট।’ স্বপ্ন দেখা শুরু রামানুজনের কথা ভেবে। তা সফল করাও তাঁর পথ ধরেই।

কী কাজ ওনো করলেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয় ‘পারটিশন নাম্বার’-এর কথা। ২ সংখ্যাটা কত রকম যোগফলে লেখা যায়? ২ রকম। ২=২+০=১+১। তাই, ২-এর পারটিশন নাম্বার বা P(২)=২। এ বার, ৩=৩+০

=২+১

=১+১+১

তাই, P(৩)=৩।

কিন্তু, ৪=৪+০

=৩+১

=২+২

=২+১+১

=১+১+১+১

তাই, P(৪)=৫।

সংখ্যা যত বড় হয়, তার পারটিশন নাম্বারও তত লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। যেমন, P(১০)=৪২। P(২০)=৬২৭। P(৩০)=৫৬০৪। P(১০০)=১৯০,৫৬৯,২৯২। ও রকম পারটিশন নাম্বারগুলোর বিশেষ এক ধর্ম যে আছে, তা রামানুজন অনুমান করেছিলেন ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে। কিন্তু অনুমানটি কি ঠিক? তা বলতে পারেননি তিনি। তা যে ঠিক— অর্থাৎ, রামানুজনের অনুমানে যে কোনও ভুল ছিল না, তা প্রমাণের পথ প্রশস্ত করে নজর কাড়লেন কেন। সে সাফল্যের পর ডাক পেলেন প্রিন্সটনের বিখ্যাত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি থেকে, যেখানে একদা গবেষণা করেছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন। ওখানে আধুনিক ভারতীয় গণিত-প্রতিভা কান্নন সুন্দররাজন-এর সঙ্গে যৌথ গবেষণায় ওনো প্রমাণ করলেন, ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে কেমব্রিজে থাকাকালীন রামানুজনের সংখ্যাকে যোগফলে প্রকাশের আর এক অনুমানও নির্ভুল ছিল।

রামানুজনের কাহিনি শুধু বাধার পাহাড় ডিঙিয়ে সাফল্যের চূড়ায় ওঠাই নয়, তিনি যে জিনিয়াস, তার প্রমাণ তাঁর কাজে। এমন অনেক দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন তিনি, চর্চা করেছিলেন এমন অনেক বিষয়ে, যে সব তাঁর যুগে অকল্পনীয় ছিল। দূরদর্শী সে সব চিন্তার পরিচয় পেয়ে বিস্মিত হন আজকের গণিত গবেষকেরা। তাঁরা নতুন উদ্যমে এগিয়ে যান তাঁর দেখানো পথে। যাঁরা যান, তাঁদের সামনের সারিতে আছেন ওনো। তিনি এখন এক জন লিডিং রামানুজন এক্সপার্ট। ওই ভূমিকায় পেয়েছেন একাধিক প্রাইজ। এমনকী হোয়াইট হাউসে প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দেওয়া পুরস্কারও। নাম্বার থিয়োরি-সংক্রান্ত বহু জার্নালের এডিটোরিয়াল বোর্ডে রয়েছেন কেন ওনো।

বিজ্ঞান-লেখক আমির একজেল-এর সাহায্য নিয়ে সম্প্রতি লিখেছেন একখানি বই। ‘মাই সার্চ ফর রামানুজন: হাউ আই লার্নড টু কাউন্ট’। বইটিতে উপস্থিত রামানুজন। তাঁকে ঘিরে ওনো-র পথচলা। চড়াই-উতরাই। কেরিয়ার হিসেবে গণিতকে বেছে নেওয়ার দুঃখ ও সুখ। এক দীর্ঘ, অকপট স্বীকারোক্তি। বইখানি অভিজ্ঞতার পাহাড়। রয়েছে রবার্ট ক্যানিগেল-রচিত বই নির্ভর করে ম্যাথিউ ব্রাউন-পরিচালিত রামানুজনের বায়োপিকে পরামর্শদাতা হিসেবে কাজের স্মৃতি। কিংবা তীর্থযাত্রা। রামানুজনের ছোটবেলার শহর তামিলনাড়ুর কুম্বাকোনাম ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা।

জীবনে মেন্টরের গুরুত্ব বুঝে ওনো নিজেই এখন মেন্টর। ‘স্পিরিট অব রামানুজন ম্যাথ ট্যালেন্ট ইনিশিয়েটিভ’ নামে এক প্রকল্পে খোঁজেন গণিত প্রতিভা। ব্যাখ্যা করে বলেছেন, ‘যে চিন্তা এই উদ্যোগের মূলে, তা হল, প্রতিভা প্রায়শই লুকিয়ে থাকে নিষ্ঠুর এবং প্রতিকূল পরিবেশে। মেন্টর, শিক্ষক, বাবা-মা’র দায়িত্ব হল তা চেনা। সহজ নয়। প্রতিভা খুঁজতে আমি বয়ঃসীমায় বিশ্বাস করি না। আমি চাই না, বাছাইয়ের কাজ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে সমাধা করা যায়। দারুণ স্কোরওয়ালা ছেলেমেয়ে নিজেরা নিজের বিজ্ঞাপন। আমি খুঁজি সৃষ্টিশীলতা। স্পষ্ট বলছি, প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয় আর এক রামানুজন আবিষ্কার। দারুণ ভাগ্যবান না হলে তেমন কাউকে খুঁজে পাব না। কিন্তু যদি পৃথিবীর নানা প্রান্তে ৩০ জন ছাত্রছাত্রীও খুঁজে পাই, যারা রয়েছে বিদ্যাচর্চার মরুভূমিতে, অথবা এমন কঠোর শিক্ষাক্রমে যে তাদের মেধার বিকাশ হচ্ছে না— যদি যৌথ কাজের জন্য তাদের দিতে পারি এক এক জন জি এইচ হার্ডি— তা হলেই আমার উদ্যোগ সার্থক।’

পুনশ্চ: ওনো-র কেরিয়ার দেখে ওঁর বাবা-মা কিন্তু এখন খুশি। গর্বিতও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ken Ono Mathematician
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE