Advertisement
E-Paper

রাজপুত্তুরের রংঢং

স ম্প্রতি তাঁকে এ রাজ্যে খবরে এনে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিলেত সফর। কিন্তু বছর শুরুর দিকে তাঁর প্রসঙ্গেই ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ ও মার্কিন মিডিয়া। ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু, ডিউক অব ইয়র্ক। কোনও দিনই তাঁর শিরস্ত্রাণে বিতর্কের মণিমুক্তো কিছু কম ছিল না— কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে মাখো-মাখো সম্পর্ক, কখনও অস্ত্রবিপণনে শামিল হওয়া, কখনও সরাসরি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩

স ম্প্রতি তাঁকে এ রাজ্যে খবরে এনে দিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বিলেত সফর। কিন্তু বছর শুরুর দিকে তাঁর প্রসঙ্গেই ছয়লাপ হয়ে গিয়েছিল ব্রিটিশ ও মার্কিন মিডিয়া। ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু, ডিউক অব ইয়র্ক। কোনও দিনই তাঁর শিরস্ত্রাণে বিতর্কের মণিমুক্তো কিছু কম ছিল না— কখনও দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজনের সঙ্গে মাখো-মাখো সম্পর্ক, কখনও অস্ত্রবিপণনে শামিল হওয়া, কখনও সরাসরি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। কিন্তু সবচেয়ে বেশি হইহই হল, তাঁর যৌনতার কেচ্ছা নিয়ে। ঘোষিত বিবৃতিতে সম্পূর্ণ অস্বীকার করলেও, যা এক পোঁচ কালি লাগিয়ে দিয়েছে ব্রিটিশ রাজপরিবারের আপাত-শুভ্র পবিত্রতায়।
মার্কিন পুঁজিপতি জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর দহরম-মহরম ছিল অনেক দিনের। কে এই এপস্টেইন? এক কথায়, অপকম্মের মাস্টার! হাতে অগাধ পয়সা, যা কাজে লাগিয়ে চলত তাঁর যথেচ্ছ ফস্টিনষ্টি। পঞ্চাশোর্ধ্ব এপস্টেইনের ধাতই ছিল বেছে বেছে নাবালিকাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরি করা— পরিভাষায় যাকে বলে পেডোফিলিয়া। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এফেবোফিলিয়া। মোটামুটি ভাবে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সিদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার প্রবণতা। গোপন ক্যামেরায় সেই সব ভিডিয়ো-ও নাকি তুলে রাখতেন তিনি। এক নাবালিকাকে প্রকাশ্যে বেশ্যাবৃত্তির প্রস্তাব দেওয়ার অপরাধে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেল খেটেছেন এই এপস্টেইন। আর এমন গুণধর জিগরি দোস্তের জন্য বার বার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্রিটেনের রাজকুমার অ্যান্ড্রু এবং শেষমেশ তাঁকেও ফাঁসতে হয়েছে।
এ বছর জানুয়ারিতেই ফ্লোরিডার আদালতে এপস্টেইনের বিরুদ্ধে চলা একটি মামলার সূত্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন ভার্জিনিয়া রবার্টস নামে এক মহিলা। তাঁর অভিযোগ, তেরো-চোদ্দো বছর আগে, যখন তিনি টিন-এজার ছিলেন, সেই সময় অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁকে শুতে বাধ্য করা হয়। তখন তিনি ছিলেন এপস্টেইনের যৌনদাসী। বহু কেউকেটাকে খুশি করতেই নাকি এপস্টেইন তাঁকে ব্যবহার করতেন। প্রিন্স অ্যান্ড্রু ছিলেন নাকি সেই কামাতুর রাঘববোয়ালদের মধ্যে অন্যতম। তিন-তিন বার ভার্জিনিয়া অ্যান্ড্রুর সঙ্গে মিলিত হন। লন্ডনে, নিউইয়র্কে, আর আমেরিকার ভার্জিন আইল্যান্ডে। অভিযোগের খবর পাওয়ামাত্র কিছুটা হতচকিত হয়ে পড়ে বাকিংহাম প্যালেস। যদিও পর ক্ষণেই রাজপরিবারের তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, এ অভিযোগ আগাগোড়া ভিত্তিহীন। অ্যান্ড্রু ও এপস্টেইনও গোটা ব্যাপারটাই অস্বীকার করেন। এমনকী, গত জানুয়ারিতে ডাভোস-এ অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চেও এ নিয়ে মুখ খুলতে হয় রাজকুমারকে।

তা হলে? ভার্জিনিয়া অবশ্য তাঁর সেই সময়ে লেখা ডায়েরিটি প্রকাশ্যে এনেছেন। তাতে যাবতীয় ঘটনার অনুপুঙ্খ বিবরণের সঙ্গে রয়েছে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁর যৌনক্রীড়ার খোলাখুলি বর্ণনা। মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে সেই ২০০১ সালেই তোলা একটি ফোটোগ্রাফ, যেখানে হাসিমুখে ভার্জিনিয়ার কোমর জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে স্বয়ং ডিউক অব ইয়র্ক প্রিন্স অ্যান্ড্রু! মিলছে বিমানের নথিও। যে তিনটি শহরে অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তাঁর যৌনমিলন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভার্জিনিয়া, সেই সেই সময়ে ঠিক সেখানেই গিয়েছিলেন অ্যান্ড্রু ও রবার্টস, তা বিমানযাত্রার হিসেব থেকে স্পষ্ট। বাকিংহাম প্যালেসও তা অস্বীকার করতে পারেনি। তবে, আদালতের সাম্প্রতিক অবস্থানে আপাতত কিছুটা স্বস্তি মিলেছে রাজপরিবারের। এপস্টেইন বিষয়ক মামলায় অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ ‘অপ্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বহীন’ মনে করায় রেকর্ড থেকে ছেঁটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। কিন্তু অভিযোগটি মিথ্যে, এমন কথা এক বারও বলেনি আদালত। কাজেই, বাকিংহাম প্যালেসের আকাশ ফের ঢাকতে পারে কেচ্ছার কালো মেঘ। সৌজন্যে, রাজকুমার অ্যান্ড্রু ও তাঁর রাজকীয় অ্যান্ড্রোজেন।

susnata chowdhury prince andrew chief minister mamata bandopadhyay london
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy