E-Paper

হেমন্তের ঘ্রাণ

হেমন্ত, যাকে সংস্কৃতে ‘শিশির সময়’ বলা হয়, সাহেবরা যার হুবহু অনুবাদ করেছে ‘ডিউয়ি সিজ়ন’, তাকেই কালিদাস কাব্যি করে বলেছেন চিত্তসন্তাপের ঋতু! ভেসে যাওয়া দেবীমুখে যে উদাসীন বিষাদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, শরতের গর্জনতেল মাখা রোদেও অবিকল সেই উদাসীন বিষণ্ণতা। সে বড় আশ্চর্য এক সময়!

তৃষ্ণা বসাক

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১০:২৫
ছবি: কুনাল বর্মণ।

ছবি: কুনাল বর্মণ।

কোমল নীল ঘাসফড়িং

যখন সবুজ দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘোমটা টানা দিদার মুখ আবছা হতে হতে সিলুয়েট হয়ে যায়, সেই মুহূর্তেই আমাদের ট্রেন ধীরে ধীরে হেমন্তের মধ্যে প্রবেশ করে। পঞ্চমীর সকালে এই পথে যখন গেছি, তখন নতুন রেশমি ফ্রকের মতো খসখসে শরৎ, আকাশ যেন তীব্র নীল বিষ, দেবীর গয়নার মতো সোনালি রোদ ছড়িয়ে আছে চার দিকে… গলার নতুন পুঁতির মালা আনন্দের চোটে ছিঁড়ে ছড়িয়ে গেল, সেই পুঁতিগুলো হইহই করে কুড়োচ্ছে গ্রামের বালক-বালিকার দল, যাদের নাম আগের বছর জানতাম, এ বছর ফের ভুলে গেছি, আবার নতুন করে শিখতে হবে। শিখতে শিখতে কখন যে হেমন্তের বেলা ঘনিয়ে এল!

বিজয়াদশমীর দিন অনেক কান্নাকাটি করে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় হাঁটার অনুমতি জোগাড় করা গেল।

“সে কি পাশের কাছারি পুকুরে, না পাত্র পুকুরে? সে তো অনেক দূরে, বাস স্ট্যান্ড পেরিয়ে। পারবি না, পা ব্যথা করবে...”

যারা বলেছিল, তারাই নবলব্ধ বন্ধুদের সামনে আমার মাথা গলা ঢেকে একটা মাফলার জড়িয়ে ইজ্জতে গ্যামাক্সিন ঢেলে দেয়, হিম পড়ছে যে! বাহারি স্কার্ফ কোথায়? দাদুর নস্যি রঙের মাফলার। বড়দের হাত শক্ত করে ধরে যেতে হয়। কিন্তু তার পরেও আকর্ষণ কি কম? যত অদ্ভুত অশ্রুত গান শোনা তো বিদায়ী প্রতিমার পিছনে হাঁটতে হাঁটতে।

‘ক্যায়সে বনি, ক্যায়সে বনি, সিলোরি বিনা চাটনি ক্যায়সে বনি’—গায়িকার নামটাও অচেনা— কাঞ্চন। আর এক জন আছেন অল্‌কা ইয়াগ্নিক। তাঁর গান দু’বছর আগে খুব বেজেছিল। ‘অলোকা যাজ্ঞিক’ বললে সবাই হাসবে। লতা-আশার পরে নাকি ইনিই উঠে এসেছেন। বাসস্ট্যান্ডের পুকুরটা ছায়া-ছায়া। পেট্রোম্যাক্সের আলোতেও আঁধার যেতে চায় না। সেখানেই প্রতিমা ভাসানো হয়, সেখানে ঊর্ধ্বমুখে তাকানো প্রতিমার চোখে জল, ছোটরা ফিসফিস করে বলে। গলার কাছে একটা কষ্ট দলা বাঁধে, সে কি শুধুই অপস্রিয়মাণ প্রতিমার জন্য, এই বন্ধুদের ছেড়ে যাওয়ার জন্যও নয় কি? আর ‘আই অ্যাম আ ডিস্কো ডান্সার’ নেচে পুজো প্যান্ডেল কাঁপানো, উচক্কা যুবাটি, সে কাল ভোরেই কলকাতা ফিরে যাবে শুনে কেনই বা গলার কাছে পুঁটলি পাকায়?

তখন তো আর কালিদাস পড়িনি। কী করে জানব হেমন্ত, যাকে সংস্কৃতে ‘শিশির সময়’ বলা হয়, সাহেবরা যার হুবহু অনুবাদ করেছে ‘ডিউয়ি সিজ়ন’, তাকেই কালিদাস কাব্যি করে বলেছেন চিত্তসন্তাপের ঋতু! ‘ঋতুসংহার’ কাব্যের চতুর্থ সর্গে তিনি বলেছেন, “প্রভূত উৎপন্ন স্বাদু শালিধানে পরিব্যাপ্ত, মনোহর ক্রৌঞ্চডাকে মুখরিত, কামদেব এই ঋতুতে প্রবল ও দর্পশালী হওয়ায় প্রিয়তম যাদের দূরে আছে তাদের চিত্তসন্তাপের হেতু এই সেই হেমন্ত ঋতুর আবির্ভাব হয়েছে।”

পরের দিন সকালে বেশ দেরিতে ঘুম ভাঙবে। অবাক হয়ে দেখব, সকালের রোদের র‌ং গতকালের থেকে একদম আলাদা। ভেসে যাওয়া দেবীমুখে যে উদাসীন বিষাদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল, শরতের গর্জনতেল মাখা রোদেও অবিকল সেই উদাসীন বিষণ্ণতা। কাঠের শিক লাগানো জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখব, উঠোনে মোটামুটি সারা গ্রাম জড়ো হয়েছে, দিদার সৌজন্যে ঢালাও চা আর বিস্কুট সহযোগে উত্তেজিত আলোচনা চলছে ‘যুগের যাত্রী’ ক্লাবের এ বছরের পুজোর সাফল্য নিয়ে। জোর করে গান গাইতে উঠে হিমাংশু মাস্টার যে তুমুল বিনোদন দিয়েছিল, সেই রগড়ের কথা মনে করে সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ছে। এর ফাঁকে ফাঁকে গ্রামের কুচোকাঁচারা নাড়ু-নিমকির লোভে সবুজ কেম্বিসের পর্দা সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে। একটা পাঁচ বছরের বালিকার কোলে তার সদ্য ঘাড় শক্ত হওয়া ভাই, বালিকাটি হাত বাড়িয়ে বলছে, ‘দিদিমা, নাড়ু!’ বালক-বালিকার দল আসতেই থাকছে, এক জনই দু’-তিন বার আলাদা আলাদা দলের সঙ্গে এসে নাড়ু-নিমকি নিয়ে চলে যাচ্ছে।

এই সময় আমার ইংরেজির দুঁদে শিক্ষিকা সেজমাসির তৎপরতা লক্ষ করার মতো। সে প্রতি বছর নাড়ুর সাইজ় ছোট করেও সামাল দিতে পারে না, তাই নিজেই একটা মোড়া নিয়ে বসে গেছে পর্দার ধারে। নাড়ুর লাইনের রিগিং ঠেকিয়ে ‘যোগ্য-অযোগ্য’ বেছে নিতে। আমি বিষণ্ণ ভাবে দেখব ওদের পাশে একটা মোড়া টেনে চায়ের কাপ হাতে উদাস ভাবে বসে আছে একটা নতুন মানুষ, কাল বিসর্জন শেষে প্যান্ডেলে ফিরে শান্তিজল আর মিষ্টি নিয়ে আমরা যখন ফিরছিলাম, সেই আধো অন্ধকার রাতে ও আমাদের পিছন-পিছন আসছিল। আমি ছাড়া ওকে কেউ চিনতে পারে না। ওর নাম হেমন্ত। বিষাদ আর মায়া যার দুটো ডাকনাম। যে কালকের রোদের রংটাই আজ বদলে দিয়েছে, কার্তিক পড়ার আগেই আমার হেমন্ত এসে গিয়েছে তাই। বিমল কর, যাঁকে আমার ঋতুবদলের অমোঘ কথাকার মনে হয়, তাঁর ‘পূর্ণ অপূর্ণ’-তে যে আলোর মলিন স্রোত, ধূসরতা আর বৃক্ষলতায় মন উদাস করা হেমন্তের গন্ধ, অবিকল তা অনুভব করি নিজের চার পাশে, এমনকি শরীরেও। ত্বকে খড়ি ফোটা টান। সন্ধের দিকে বাসরাস্তা থেকে হেঁটে ফেরার সময় গা শিরিশির করে। গ্রামের খোয়া-ওঠা রাস্তার দু’পাশে অন্য দিন গাছের মাথায় লালচে রোদ লেগে থাকে, এখন সেখানে চাক-চাক অন্ধকার। বটগাছতলার ঝুপসি জায়গাটা পেরনোর সময় কেমন ভয় ভয় লাগে। সকালে আবার সে সব উধাও।

দেড়শো বছরের পুরনো বয়েজ় স্কুল ছাড়িয়ে খালের ও পারে মেয়েদের স্কুলের বাড়ি উঠছে। এ দিকে এক সময় মিলিটারির ব্যারাক ছিল। সেই প্রত্নযুদ্ধের কোনও চিহ্ন নেই আর। হেমন্তের মায়ারোদে ঝলমল করছে চার দিক। খালের উপর নড়বড়ে কাঠের ব্রিজ। দিদা টাটকা রুটি আনতে দিলে, আমি রুটি কেনার আগে সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ব্রিজ যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে, এমন সাবধানবাণীতে কান না দিয়ে ঝুঁকে পড়ে দেখি, নীচে জলের বুকে এক আশ্চর্য নির্জন জগৎ। সেখানে এক দিন দেখে ফেলি লতাগুল্মের নীচে দেবীর পায়ের একপাটি নূপুর!

শান্তিময় শূন্য পরিণাম

ফিরে আসার কথা লক্ষ্মীপুজো শেষ হলেই, কিন্তু ফিরতে ফিরতে প্রায় কালীপুজো চলে আসে। এক দিকে পরীক্ষার চিন্তা, অন্য দিকে বাবার জন্য মনখারাপ আমাকে পেড়ে ফেলে। বাবা যেন হেমন্ত ঋতু, তিনতলা খাঁ-খাঁ বাড়িতে অপেক্ষা করছে বিষণ্ণ রাজার মতো, কালীপুজো বাবাকে ছাড়া কাটাতে পারব না যে। সে দিন যদি জানতাম, মাত্র আঠারোটি হেমন্তই তার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত, তা হলে তো আমার সমস্ত শরৎ তাকে দিয়ে দিতাম। ঝুলিভর্তি না-ছোঁয়া টেক্সট বই আর মনখারাপ নিয়ে ট্রেন ফিরতে থাকে আমাদের ছোট মফস্সল শহরের দিকে। ট্রেনের কামরার হলুদ আলোয় শিশিরের ঘ্রাণ আর অবসাদ। জানলা দিয়ে চোখ বাড়ালে কেবলই দৃশ্যমান আকাশরেখায় সেঁটে থাকা সবুজ রঙের পিছনে দিদার হাত নাড়া…

স্টেশনে নামতেই একটা শিরশিরে হাওয়া, সে-হাওয়া কিন্তু যাওয়ার দিন ছিল না। রিকশায় বসে মা আমাকে কাছে টেনে নেয়, বাবা নীচে এসে দরজা খুলে দিতেই প্রথমে লক্ষ করি, বাড়িটার বিষণ্ণ ছায়া উঠোনে, দরজা জানলা, ঘর, ছাদ সব কেমন বদলে গেছে। বাবার কাছে ফিরে এসেও হেমন্তের সন্ধে আর পরীক্ষার ভয় আমার বুকে চেপে বসে। ‘সিলোরি বিনা চাটনি ক্যায়সি বনি’-র কাঞ্চন ফেড আউট হয়ে যান, এন্ট্রি নেন পান্নালাল, ধনঞ্জয়। কানে বাজে ‘দোষ কারো নয় গো মা, আমি স্বখাতসলিলে ডুবে মরি শ্যামা’। পামীর মালভূমি, রাধার পূর্বরাগ, আর মোগল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আমার আসন্ন পতনের আতঙ্ক হয়ে বিষাক্ত ইয়র্কারের মতো নাচতে থাকে চোখের সামনে। আমি যে ‘সকল কাজের পাই হে সময় তোমাকে ডাকিতে পাইনে’! হেমন্তকাল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পক্ষে আদর্শ মনে করা হয়েছিল। “এই মাস অতি শুভকাল। এখন পশুখাদ্য ও ইন্ধন সুলভ, শস্য পরিপুষ্ট, বৃক্ষ সকল ফলবান, মক্ষিকা অল্প, জল স্বাদু হইয়াছে, পথে কর্দম নেই, শীত বা গ্রীষ্ম অধিক নয়।” (কৃষ্ণ-কর্ণ সংবাদ, উদ্যোগ পর্ব, মহাভারত সারানুবাদ: রাজশেখর বসু)

আমাদেরও হেমন্তে বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি, অ্যানুয়াল পরীক্ষা, যার দিন কুড়ি আঁচলে বেঁধে নিয়ে গেছে কৈলাসবাসিনী। সে যুদ্ধের প্রস্তুতিতে পান্নালাল, ধনঞ্জয় ভরসা।

এ সব গান অবশ্য ব্যাকগ্রাউন্ডেই বেজেছে। কালীপুজো এসে গেছে তো। আর আমাদের ঈশ্বরহীন বাড়িতে এই উৎসবটিই একমাত্র মান্যতা পেয়েছে। ফিরে আসার পরের দিন সকালে উঠেই প্রথম কাজ, গত বছরের বাজি রোদে দেওয়া। প্রতি বছরই কিছু বাজি বেঁচে যায়। এক বার আমি মোমবাতির বাক্স রোদে দিয়ে বেজায় আওয়াজ খেয়েছিলাম। রঙিন ছবিওলা ঢাকা খুলে ফুলঝুরি, রংমশাল, সাপবাজি, চরকিগুলোকে রোদ খাওয়ানো হয়। মাটির প্রদীপপন্থী বিশুদ্ধবাদী যারা, তাদের উঠোনে মস্ত গামলার জলে প্রদীপ ডোবানো আছে দেখতে পাই। কোনও কোনও উঠোনে মাটির প্রদীপ বানিয়ে শুকোচ্ছে অত্যুৎসাহীরা। শুধু অত্যুৎসাহ নয়, এর পিছনে অর্থনৈতিক প্রণোদনাও কাজ করত। সে সময়ের থিম সং ছিল ‘গৃহস্থের সাশ্রয় হয়’, ঘরে অনেক কিছু বানিয়ে নিলে না কিনেও বেশ চালানো যায়— এ ব্রত অনেকেরই ছিল। পোস্টকার্ড পুড়িয়ে তার ছাইতে সিঁদুর মিশিয়ে মেরুন রঙের একটা গুঁড়ো টিপ বানিয়ে পরত অনেক মেয়ে, সেটাকে বলা হত ‘রেখা কালার’। নিজের হাতে বানানো টিপ পরাও হল, আর বাজার থেকে খারাপ আঠার টিপ কিনে পয়সা নষ্ট হল না— এ এক অন্য পৃথিবীর গল্প। হাতের একটা ক্লিকে পাঁচ মিনিটে দুয়ারে যাবৎ পণ্য হাজির হওয়ার সময় থেকে যা অনেক অনেক দূরে।

লীলা মজুমদারের ‘জেঠাইমার অর্থনীতি’র মতো, আমার মা আবার সাশ্রয় করতে গিয়ে অনেক কৌতুককর ঘটনা ঘটাত। তার মধ্যে একটা হল মোমবাতির পায়ের নীচের অ-গলন্ত অংশগুলো ছাদের রেলিং থেকে চেঁছে তুলে একটা ছোট কৌটোয় জমানোর কাজে আমাকে নিয়োজিত করা। ওগুলো নাকি গলিয়ে ছাঁচে ঢেলে আবার মোমবাতি তৈরি করা যাবে। অর্থাৎ ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্টের বিখ্যাত তিনটে ‘আর’— রিডিউস, রিইউজ়, রিসাইকল। তবে কিনা, সেই কৌটোটা ক’দিন পরেই আর খুঁজে পাওয়া যেত না! মহতী বিনষ্টি!

সে সময় আমাদের ওয়ার্ক এডুকেশন বলে একটা ভয়াবহ জিনিস ছিল। তার কথা মনে পড়লেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই এক কোণে সেলাই করা আকাশি টেবিলক্লথটার কথা, যেটা খুব কায়দা করে মুড়ে, কুমিরছানার মতো একটা দিকই দেখিয়ে আমি সেলাই-দিদিমণির চোখে ধুলো দিয়ে পাশ করে গেছি, ‘হেয়ার ব্রেডথ এস্কেপ’ যাকে বলে। এই পর্বের একেবারে গোড়ার দিকে ছিল মোমের পুতুল তৈরি। মোম গলিয়ে তাতে আলতা জাতীয় কিছু মিশিয়ে একটা প্লাস্টিকের ফাঁপা পুতুলের মাথায় ফুটো করে গলন্ত মোম ঢেলে যে ছিরিছাঁদহীন পুতুলটি তৈরি করেছিলাম, তা এখনকার বার্বি-প্রজন্মের সামনে কোথায় মুখ লুকোত জানি না। কিন্তু ওই মোমের পুতুলটিই কাল হয়েছিল। ওটা দেখে মা ভেবে ফেলেছিল, তার মেয়ে বিরল প্রতিভা নিয়ে জন্মেছে। সে হয়তো কুড়োনো মোমের টুকরো দিয়ে একটা আস্ত মোমবাতির কারখানা খুলে ফেলতে পারে! আমি বাজি রোদে দিতে দিতে সে কথা ভেবে আঁতকে উঠি। চার দিক যদিও বড় সুন্দর, রোদে কেমন মন্থর আলস্য। ক’টাই বা বাড়ি কাছেপিঠে। সে দিন অবধি শিয়াল ডাকত এ পাড়ায়। তিনতলা বাড়ি তো আর একটাও নেই। ছাদে দাঁড়ালে নহবতখানা পেরিয়ে দোলতলা পেরিয়ে যেন অতীতের ডিহি মদন মল্ল পর্যন্ত দেখে ফেলা যায়।

হেমন্তের চাঁদহীন রাতে বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে ছাদে মোমবাতি লাগাই। একটা ফুটবল মাঠের মতো ছাদে, হিমেল হাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে মোমবাতি জ্বালানোর অসম লড়াইয়ের মধ্যে ‘জয়হীন চেষ্টার সঙ্গীত, আশাহীন কর্মের উদ্যম’ টের পাই। এই রকম এক হেমন্তেই তো স্তব্ধ স্কন্ধাবারে বসে কর্ণ এই সব ভেবেছিলেন। হেমন্তের সব যুদ্ধই কি এ রকম শান্তিময় শূন্য পরিণাম দেয়? বিষাদ সামান্য কমে ভাইফোঁটার দিন। সে দিন প্লেটে খাজা মাস্ট, আর ফোঁটায় ভোরের শিশির। এই ‘শিশির সময়ে’ যা সুলভ। জীবনে সূর্যোদয় না দেখা আমি বছরে ওই এক দিনই ভোরে উঠি, রোদ উঠে গেলে শিশির শুকিয়ে যায়। আঙুলে আজও সেই শিশিরের স্পর্শ লেগে আছে। ভাই/দাদা-কে অন্ন দেওয়ার মন্ত্র, মা শিখিয়ে গেছিল— ‘ভ্রাতস্তবানুজাতাহং ভুক্ষ ভক্তমিদং শুভং। প্রীতায় যমরাজস্য যমুনায়া বিশেষতঃ।’ বোন হলে দাদাকে বলবে ‘ভ্রাতস্তবানুজাতাহং’, আর দিদি হলে ভাইকে এর পরিবর্তে ‘ভ্রাতস্তবাগ্রজাতাহং’ শব্দটি বলবে। কিংবা ফোঁটার সময় কানে কানে বলা, ‘যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা/ তুমি আমার ভাই হোয়ো, বছর বছর ফোঁটা নিয়ো,/ ১৮০ বছরে আমার বাড়ি তোমার নেমন্তন্ন।’

সে সবই পূর্বজন্মের। শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে। বাস্তবের রোদে শিশির শুকিয়ে গেছে কখন। অঘ্রানের অনুভূতিমালা ধুলায় ধূলি, তবু যম আর যমুনা উঁকি মারে আজও।

চৈতন্যপথ

ভাইফোঁটায় অফিশিয়ালি বিজয়া শেষ। তবু কিছু মায়া রহিয়া যায়। এক দুপুরে মা আমায় ট্যাঁকে গুঁজে রিকশা চেপে রানা বেলেঘাটার দিকে যায়। ক্রমশ শহর ফুরিয়ে আসে। ডান হাতে মহাপ্রভুতলা, সদাব্রত ঘাট, যেখানকার বারুণীর মেলা বিখ্যাত, তার পর কীর্তনখোলা শ্মশান। এই রাস্তার আর এক নাম চৈতন্যপথ, এর প্রতিটি ধূলিকণায় চৈতন্যদেবের পদস্পর্শ আছে। এই পথেই তিনি ছত্রভোগ দিয়ে পুরী চলে গিয়েছিলেন নাকি। সে পথে আমাদের যাওয়ার প্রধান কারণ ঠাকুমাকে বিজয়া করতে যাওয়া। নিজের ঠাকুমা নয়, আত্মীয় বা সমশ্রেণিরও কেউ নন তাঁরা, সমাজের একেবারে নীচের থাকে অবস্থান, এখনকার ভাষায় প্রান্তিক মানুষ। এক উঠোন ঘিরে ছ’টি মাটির ঘর। পাঁচ ভাই আর তাদের মায়ের আলাদা আলাদা সংসার। দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু শ্রীহীন নয়। সে বাড়িতে ঢোকার আগে বাবা পঞ্চাননের থান পড়ে। এই লৌকিক দেবতার থানে মা আমাকে চটি খুলে প্রণাম করতে বলে, হেমন্তের দুপুরে সে বড় শান্ত আর নিস্তব্ধ থান। চার দিকে বাঁশবন। দিনেমানেও গা ছমছম করে। কেউ না কেউ জেনে যায় আমরা এসেছি, ছুটে এসে হাত ধরে নিয়ে যায়, মাটির দাওয়ায় মাদুর পাতা হয়, কাঁসার গ্লাসে টিউকল থেকে সদ্য ভরে জল আনা হয়। সেজকাকিমা আমরা এসেছি শুনে উনুনে আঁচ দিয়ে গোলারুটি করতে বসে, গরম গরম গোলারুটি, গুড় দিয়ে, মা তৃপ্ত মুখে খায়, আমি একটু-একটু ছিঁড়ি।

আসার সময় রিকশা পাওয়া যায় না, ভ্যানে তুলে দেয় ওরা আমাদের। শ্মশানের পাশ দিয়ে ফিরতে ফিরতে মাকে জড়িয়ে ধরি। পর পর চিতা জ্বলছে। হেমন্তের সন্ধ্যা কী অপার্থিব দেখাচ্ছে চিতার আগুনে। রিকশা তবু ঘেরা ছিল, খোলা ভ্যানে শ্মশানের সব ভূতেরা আমাকে ঘিরে নাচছে মনে হয়। মা কী একটা গান গুনগুন করছে আপনমনে, আমার ভয়কে পাত্তা না দিয়ে বলে, ‘শ্মশানের চেয়ে পবিত্র জায়গা আর কোথাও নেই জানবি।’ সেই পবিত্র জায়গাতেই ছাই হয়ে বাতাসে মিশে গেছে বাবা, মা। হেমন্তের সন্ধে বলতে এখনও আমি গোলারুটির গন্ধ আর মায়ের বুকের ওম বুঝি।

আলোর গাছ

কালীপুজোর দৌড় ফুলঝুরি, রংমশাল, ইলেকট্রিক তার আর সাপবাজি অবধি। সামনে একটা ফাঁকা জমি পড়ে ছিল, যাকে বলা হত চণ্ডীর বাগান। সেখানে ছিল এক প্রাচীন বেলগাছ। বাহাদুরির কাজ ছিল ফুলঝুরি জ্বেলে বেলগাছে ছুড়ে মারা। মনে হয় বেলগাছের ব্রহ্মদত্যিকে ভয় দেখাতেই এমন খেলার উদ্ভাবন। আগের দিন ভূতচতুর্দশী, যার ডাকনাম ‘চোদ্দো প্রদীপ’, সে দিন বাড়ির সব কোনাকাঞ্চিতে ঘুরে ঘুরে প্রদীপ দেখাতে দেখাতে বলা দস্তুর— ‘আনাচে কানাচে ভূত। ভূত করে পুত পুত।’ ভূতে বিশ্বাস না করেও ভূতের ভয়ে বিশ্বাস ছিল অটল! তবে পরিবেশবাদীরা যদি বেলগাছে ফুলঝুরি ছোড়ার ব্যাপারটা জানতে পারতেন…

কালীপুজোয় যতই ‘লাইটিং’ দিয়ে ক্যান্টার করার চেষ্টা করুক পাড়ার ক্লাবেরা, আর যতই বাজি পুড়ুক, আমাদের শহরের সত্যি আলোর উৎসব হত রাসের সময়। হেমন্তের সেরা বৈভব দেখা যেত রাসমেলার মাঠে। বাজি, সার্কাস, পুতুলনাচ, তরজা, কবির লড়াই, জোড়া মেয়ে গঙ্গা-যমুনা, আরও ছত্রিশ মজা।

তিনতলায় ঠাকুরঘরের দেওয়াল জুড়ে পর পর কাচের জানলা। এখানে বসেই এক বার লিখেছিলাম ‘জানলাসমগ্র গান গায়!’ ঠাকুরের সিংহাসনের পাশের জানলা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা ঠায়, কারণ ছাদে দাঁড়ানোর অনুমতি ছিল না হিম লাগবে বলে। এক-এক বার এত দেরিতে শুরু হত, যে ঘুমিয়েই পড়তাম। কিন্তু জেগে থাকতে পারলে চোখের সামনে আলোর গাছ, আলোর আলপনা, কত অদৃষ্টপূর্ব বাজি জমিদারবাড়ির সৌজন্যে। সে সময় অনেক আত্মীয়-বন্ধু তো বটেই, অনাত্মীয় ও অ-বন্ধুরাও এই রাসমেলার সময় দূরদূরান্ত থেকে আমাদের বাড়ি চলে আসত রাস দেখার জন্যে। এক-এক জন রাস দেখতে এসে অনায়াসে পরের রথের মেলা অবধি থেকে যেত! তারা অনেকেই মাঠে চলে যেত সামনে থেকে দেখতে, দু’-এক জন বয়স্ক মানুষ ছাদে দাঁড়িয়ে দেখতেন। সে এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা। আলোর গাছ, লতা, পাতা, ফুলে কিছুক্ষণের জন্যে আমাদের মফস্সল হয়ে উঠত এক অলীক আলোর দেশ। আলোর পাখি উড়ে যেতে যেতে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চার দিকে, তাকে তারা-খসা ভেবে সেই ভঙ্গুর আলোর কাছে গোপন প্রার্থনা গচ্ছিত রেখেছি কত!

কার্তিকের নবান্নের দেশ

‘অগ্রাণে নোতুন ধান্য বিলাসে।

সর্বসুখ ঘরে প্রভু কি কাজ সন্ন্যাসে॥”

(কবি লোচনদাস)

শরতে যে গ্রাম ফেলে এসেছি, কার্তিক সংক্রান্তি থেকে অঘ্রানের সংক্রান্তি অবধি টানা প্রতি রবিবার সেখানে উঠোনে ইতুলক্ষ্মীর ঘট পাতা হবে। ইতুর ব্রতকথাটি ভারী মজার। উমনো আর ঝুমনো দুই বোন। তাদের বাবা, দুটো পিঠে খাওয়ার অপরাধে তাদের জঙ্গলে ছেড়ে এল, তারা বৃক্ষকে বলল ‘বৃক্ষদেবতা, দু’ফাঁক হও, আমাদের আশ্রয় দাও’। অশ্বত্থবৃক্ষ অমনি দু’ফাঁক হয়ে তাদের ঢুকিয়ে নিল, দুই বোন বাঘের হাত থেকে বাঁচল। ছোটবেলায় শোনা এই ব্রতকথা পুনঃপাঠে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স আর ইকো-ফেমিনিজ়মের ছায়া ভেসে ওঠে।

অঘ্রান মাসে সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে অবস্থান করে। এই অবস্থানে সূর্যের নাম মিত্র। মিত্র থেকে ইতু, কেউ বলেন আদিত্য থেকে ইতু। সূর্যদেবতা থেকে ইতু ক্রমে পরিণত শস্যদেবী লক্ষ্মী বা হেমন্তলক্ষ্মীতে। ইতুর ঘটে থাকে কলমি, সর্ষে, শুষনি শাক, মানকচু, এ ছাড়াও ধানের বীজ, ছোলা, মটর, মুগ, তিল, যব ইত্যাদি রবিশস্যের বীজ। উঠোনে শঙ্খলতা, আরও কত আলপনা!

হেমন্তের এই লক্ষ্মীশ্রী ফুটে ওঠে নজরুলের কবিতায়—

‘ঋতুর খাঞ্চা ভরিয়া এল কি ধরণীর সওগাত।

নবীন ধানের আঘ্রাণে আজি অঘ্রাণ হল মাৎ।’

নতুন ধানের গন্ধ নিয়ে আসে নবান্ন। সত্যিই নবান্নের মতো অমন অবিমিশ্র সুখের উৎসব আর হয় না। হেমন্তের শেষে, কার্তিক পুজোর দিন আমরা বালক-বালিকারা কাকভোরে উঠে কাঁপতে কাঁপতে চাদর-সোয়েটার যা হোক কিছু চাপিয়ে দৌড়ে যেতাম মণ্ডপে। মণ্ডপ এখন আমাদের। সেখানে পাতার আগুন জ্বেলে আমরা গোল হয়ে বসে আগুন পোহাতাম আর সুর করে চেঁচাতাম—

কাউয়া কো কো কো/ আমাগো বাড়ি তোমাগো নেমন্তন্ন/ কাউয়া কো কো কো/ আমাগো বাড়ি আইজকে শুভ নবান্ন...

(‘অক্ষয় মালবেরি’,মণীন্দ্র গুপ্ত )

সারা রাত চাকা-চাকা ভেজানো মিছরির জলে, নতুন সুগন্ধ ধবধবে সাদা চাল বাটা, নারকেল বাটা, ডাবের জল, গন্ধরাজ লেবু মিশিয়ে যে অমৃত তৈরি হয়, তার নামই নবান্ন। পেতলের কলসি থেকে ঢালে বৌ-ঝিরা। ছোট-বড় সবাই গেলাস-বাটি নিয়ে বসে থাকে অপেক্ষায়। জীবনানন্দের মতো মণীন্দ্র গুপ্তেরও তো নীল-সবুজ মাতৃভূমি, বরিশাল। এই কাককে নেমন্তন্ন করার কথায় বুঝতে পারি, কেন জীবনানন্দ লিখেছেন, ‘হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে…’

গেলাস গেলাস অক্ষরের নবান্ন পান করতে করতে আমারও আবার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে এই বাংলায়। ভূমিহীন চাকুরিজীবীর নবান্ন নেই, কিন্তু ছাদ জুড়ে বড়ি দেওয়া আছে, আছে দুপুরের নরম রোদে বসে টেস্ট পেপার করা, তৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে উঠতে উঠতে বাঁদরটি দেখত খুকি চটপট অঙ্ক শেষ করে পামগাছের সারির দিকে তাকিয়ে আছে আর ছটফট করছে, কখন মায়ের সঙ্গে ‘সবুজ দ্বীপের রাজা’ দেখতে যাবে। মাঠ পেরিয়েই শো হাউস, মেয়েদের টিকিটের দাম ৭৫ পয়সা। কান্নার দৃশ্য দেখে খুকি এমন তারস্বরে কাঁদে যে, লাইটম্যান তারক কাকু এসে বলে, ‘বৌদি, বাচ্চা নিয়ে বাইরে যান।’ আজ এই প্রজন্মের সব খোকাখুকিই সিঙ্গল স্ক্রিনের বাইরে বেরিয়ে এসেছে!

হেমন্তের পাখি

‘আবার আসিব ফিরে’ কবিতায় জীবনানন্দ কত পাখির কথা লিখেছেন— শঙ্খচিল, শালিক, লক্ষ্মীপেঁচা বক, এদের সঙ্গে উড়ছে সুদর্শন পোকাও।

কিশোরীর যে হাঁসটির কথা তিনি বলছেন, সে কি কাদম্ব বা কলহংস? যার কথা লিখে গেছেন কালিদাস? এই হেমন্তে হাঁসের আওয়াজ শোনা যায় না, কিন্তু কাদম্বের উন্মত্ত ডাক শোনে যায়। কিংবা ক্রৌঞ্চ (কোঁচবক), পাকা শালিধানের ক্ষেতে লুকিয়ে সে ডাকছে। আমাদের রাসমাঠের কোষাঘাটে যে হাঁসগুলো সাঁতার কেটে বেড়ায়, তাদের হাবেভাবে কেমন ধীর আলস্য ফুটে ওঠে। জল ছেড়ে উঠে তারা গা ঝেড়ে এক বার নির্জন শিবমন্দিরের দিকে তাকায়, এক বার শূন্য বকুলতলায়। তার পর তারা ধীরেসুস্থে জাদুকরের তাঁবু আর সারি সারি কাঠের দোকানের মাঝখান দিয়ে আনন্দময়ী তলার দিকে চলে যায়, সেখানে হেমন্তের দুপুরের অন্য রকম স্বাদ। নিঃসঙ্গ হাঁড়িকাঠটিকে কেমন অলীক দেখায়, এ-মহল থেকে ও-মহলে পায়রা ওড়ে, আর বন্ধ গুমঘরের মরচে-ধরা তালায় শুকনো পাতাগোঁত্তা খায়। দেবীর ভোগের সামান্য একটু পেয়ে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে খুশি মনে বাড়ি যায় বাসন-মাজা রোগা মেয়েটি।

কবির লড়াইয়ে যারা আসর মাতিয়েছে, সকালে তারা কোনও রকমে তাদের ঢোল আঁকড়ে, একটা পাতলা চাদর গায়ে দিয়ে কুকুরকুণ্ডলী শুয়ে থাকে, যে সব মনিহারি দোকানের ঝলমলে পসরার দিকে লুব্ধ চোখে তাকিয়ে থেকেছি, সেখানে সকালে কেমন অলস মায়া, তোলা উনুনে ভাত ফোটার গন্ধ, বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ায় দোকানি বৌটি একটু আড়ালে বসে, কোষাঘাটে একটা ডুব মেরে এসে জমিদারবাড়ির দেউড়ির সিংহের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে দোকানির কিশোরী মেয়ে।এর পর আবার কোন মেলায় যাবে কে জানে! সার্কাসে যারা চুমকি-বসানো পোশাক পরে শরীরের আশ্চর্য কসরত দেখিয়ে সবার বুক তোলপাড় করে, বেলার দিকে তাঁবুর ফুটো দিয়ে উঁকি মারলে দেখা যায়, তারা দাঁত মাজতে মাজতে কুৎসিত ভাষায় ঝগড়া করছে।

তবে স্টার প্লেয়াররা তাঁবুতে থাকে না, তারা থাকে কাছের কোনও গৃহস্থের বাড়ি। এই ভাবেই প্রতি শীতে পরিযায়ী পাখির মতো আমাদের একতলায় থাকতে আসেন বুকে হাতি তোলা রুবি মল্লিক কিংবা অপরূপা সুন্দরী মালয়ালি, ট্রাপিজ় খেলোয়াড় মনোরমারা চার বোন, যাদের মধ্যে দিয়ে আমার প্রথম ভারতবর্ষকে চেনা।

ক্রমে শীতের গন্ধ নাকে আসে। বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিন লাফাতে লাফাতে ফিরছি, আজ সার্কাস দেখবই, রিকশা রাসমাঠে আসতেই বুক ধক করে ওঠে। সার্কাসের তাঁবু খোলা হচ্ছে। ট্রাঙ্ক-ভর্তি হয়ে লরিতে উঠছে এক মাসের উপর শহরের মাথায় টাঙানো ট্রাপিজ়ের মায়াজাল... হেমন্তের সমস্ত ঘ্রাণ ডানায় নিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে মনোরমারা।


(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Diwali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy