আলুভাজা বা কাঁচা লঙ্কা সরষের তেল দিয়ে আলুসেদ্ধ মাখা, বাঙালির একটি প্রিয় মেনু। বাঙালি দূর অস্ত, আলু ভারতীয়দেরই নিজস্ব খাবার নয়। ডাচেরাই এ দেশে প্রথম আলু নিয়ে আসে।
এরপর যে শব্দটি প্রায় বাঙালির সত্তার সঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িয়ে তা হল রসগোল্লা। পর্তুগিজরা না এলে ছানার ব্যবহার জানতে পারা যেত কিনা সন্দেহ। তারা তৈরি করল কটেজ চিজ ওরফে ছানা আর সেই ছানা দিয়ে নবীনচন্দ্র দাস তৈরি করলেন রসগোল্লা। ভীমচন্দ্র নাগের তৈরি ছানা সুজি দিয়ে রসালো ভাজা মিষ্টিটি লেডি ক্যানিং খেয়ে আপ্লুত হয়ে যান। লেডির নামানুসারে মিষ্টির নাম হয় লেডি কেনি। ছানার ব্যবহারের আগে শুধুমাত্র ক্ষীর বা চিনি দিয়ে মিষ্টি তৈরি হত। পর্তুগিজদের হাত ফেরতা ছানা আসার পর বাঙালি মিষ্টিতে যে বিপ্লব এসেছে তা বলা বাহুল্য।
যে কোনও উৎসবে ভাত, শুক্তো ডাল-মাছের পর বাঙালি হাঁক পাড়বে ‘কষা মাংস’ বলে। কিন্তু এই কষা মাংসও বাঙালির নিজের নয়। এক তুর্কি বাবুর্চির হাতের জাদুতে তৈরি এই পদ। ঘুরে ফিরে সেটি বাংলার প্রথম নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর আমলে আসে এই বঙ্গে। কষা মাংসের রেসিপি মুর্শিদাবাদ ও ঢাকায় মুসলমান পরিবারগুলি প্রথমে ক্যাচ করলেও পরে এই ডিশটি জামাই আদর পায় হিন্দু বাঙালির রান্নাঘরে।
বাঙালির রসনা অসম্পূর্ণ ইলিশ ছাড়া। ইলিশ মাছ সরষে দিয়ে রান্নার পদ্ধতিটা ইউরোপীয় বা মুঘলরা শেখায়নি বটে, কিন্তু সরষে বেটে রান্নায় ব্যবহারের পদ্ধতিটা সাহেবদের থেকেই আমাদের শেখা।
ঠাকুরের ভোগ হোক বা পুজোর দিনে নিরামিষ আহারের মেনুতে সাদা ভাতের চেয়ে পোলাও বাঙালির প্রথম পছন্দ। মজার কথা হল, পোলাও খাবারটিই আমিষ। পোলাও অর্থাৎ পল যুক্ত অন্ন। পল অর্থাৎ মাংস। মধ্য প্রাচ্যের ভাত ও মাংস সহযোগে পোলাও বাঙালির রান্নাঘরে হয়ে গেল ঘি কাজু কিসমিস সহযোগে নিপাট নিরামিষ খাবার।
এই রূপান্তরের ইতিহাসটা বেশ লম্বা। রান্নায় মিষ্টি আলু বা মিষ্টিতে ছোট এলাচের ব্যবহার কিন্তু বাঙালির নিজের নয়। বিভিন্ন মশলা যা বাঙালির রান্নায় ব্যবহার হয় বাঙালির নিজস্ব বলে, তার সিংহভাগ এসেছে ইউরোপীয়দের হাত ধরে, এসেছে মুঘলদের সৌজন্যে। রসনার ব্যাপারে যা কিছু এসেছে, বাঙালির জিহ্বা অক্লেশে তাকে বরণ করে নিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy