E-Paper

অপরাজিতা তিনি

‘চার অধ্যায়’-এর এলা, ‘রক্তকরবী’-র নন্দিনী, ‘বিসর্জন’-এর গুণবতী, ‘পুতুল খেলা’-র বুলু, ‘রাজা অয়দিপাউস’-এর ইয়োকাস্তে, ‘রাজা’-র সুদর্শনা বা ‘সরীসৃপ’-এর ম্যাডাম তাঁর অভিনয়জীবনের বিবিধ কীর্তিস্তম্ভ। কিন্তু যে চরিত্রায়ণ তাঁর জীবন ও শিল্পকে একাঙ্গী করে তুলেছিল, সেটি ‘অপরাজিতা’-র অপরাজিতা রায়। আগামী ২৫ অক্টোবর শতবর্ষ পূর্ণ করবেন তৃপ্তি মিত্র।

অংশুমান ভৌমিক

শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১০:৪০
নাট্যশিল্পী: ‘অপরাজিতা’ নাটকে অভিনয়ের মুহূর্তে তৃপ্তি মিত্র।

নাট্যশিল্পী: ‘অপরাজিতা’ নাটকে অভিনয়ের মুহূর্তে তৃপ্তি মিত্র। (ছবি সৌজন্য: বহুরূপী)

দু’ঘণ্টা ধরে স্থাণুবৎ বসেছিলাম। মঞ্চ জুড়ে তাঁর মহীয়ান উপস্থিতি, তাঁর সেই মেদুর মোলায়েম কণ্ঠস্বর, তাঁর সেই একান্তকাব্যময় অঙ্গসঞ্চালন, ক্রমাগত অথচ সূক্ষ্মভাবে বদলে বদলে চলা তাঁর মুখের অভিব্যক্তি। ইন্দ্রজাল ছাড়া আর কী-ই বা বলব একে। আকাশের বুকে যেন বিদ্যুৎচমকের নাচ দেখেছিলাম, দু’ঘণ্টা ধরে!” লিখেছিলেন শ্রীরাম লাগু। একটি বাংলা নাটক দেখে। বাংলা রঙ্গালয়ের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অভিনয়কীর্তির একটি সারণি যদি তৈরি করা যায়, তার বুঝি একেবারে উপরের ধাপে থাকবেসেটি। নাটকটি তৃপ্তি মিত্র অভিনীত ‘অপরাজিতা’। বাংলা প্রসেনিয়াম থিয়েটারে একক অভিনয়ের যুগান্তকারী রচনাবিন্দু।

২৫ অক্টোবর একশো পূর্ণ করবেন তৃপ্তি মিত্র। অভিনেত্রী-খ্যাতি তাঁর অন্য সব পরিচয় ঢেকে দিলেও, নাট্য-সংগঠক কিংবা কথাসাহিত্যিক তৃপ্তি মিত্রকেও মনে করছেন কেউ কেউ। শতবর্ষী তৃপ্তির মধ্যে আধুনিক নারীর মর্যাদাপ্রতিষ্ঠার একটি স্বতন্ত্র অভিজ্ঞান ধরা আছে। বিশেষত, বিংশ শতকের মধ্যভাগ থেকেই যে সাংস্কৃতিক চেতনা একে একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, মন্বন্তর, দেশভাগের দুর্বিপাকের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ করে শিল্প ও শিল্পীকে বাঁধতে চেয়েছিল, নতুন দেশের নতুন সমাজের মুখচ্ছবি হয়ে উঠতে চেয়েছিল, তার প্রতিভূ এই মানুষটি। ‘চার অধ্যায়’-এর এলা, ‘রক্তকরবী’-র নন্দিনী, ‘বিসর্জন’-এর গুণবতী, ‘পুতুল খেলা’-র বুলু, ‘রাজা অয়দিপাউস’-এর ইয়োকাস্তে, ‘রাজা’-র সুদর্শনা, ‘বাকি ইতিহাস’-এর বাসন্তী বা ‘চোপ্‌, আদালত চলছে’-র বেনারে বাঈ অথবা ‘সরীসৃপ’-এর ম্যাডাম তাঁর অভিনয়জীবনের বিবিধ কীর্তিস্তম্ভ। কিন্তু যে চরিত্রায়ণ তাঁর জীবন ও শিল্পকেএকাঙ্গী করে তুলেছিল, সেটি ‘অপরাজিতা’-র অপরাজিতা রায়।

১৯৭১ থেকে ১৯৮০, তার পর ক’বছরের বিরতি, এবং তার পর আবার ১৯৮৭-র ২৫ অক্টোবর, জীবদ্দশায় তাঁর শেষ মঞ্চাবতরণের অবলম্বন হিসেবে এই নাটকটিকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেটিকে তাঁর যাপিত জীবনের নান্দনিক বিবৃতি করে তুলেছিলেন। দেহপটে সনে নট সকলই হারায়, কিন্তু তৃপ্তি বেঁচে আছেন তাঁর নানা নাট্যাভিনয়ের শ্রুতিরূপের মাধ্যমে, তাদের মধ্যে ‘অপরাজিতা’-ও আছে। সেই সুবাদে প্রায় আড়াই ঘণ্টার এই একক অভিনয়ে কী ভাবে সতেরো-আঠেরোটি চরিত্রকে জলজ্যান্ত করে তুলতেন তৃপ্তি, কী ভাবে দর্শক-শ্রোতার মধ্যে বুনে দিতেন আপাত ভাবে পরাজিতা এক সাধারণ মেয়ের অসাধারণ ছবি, তার আবছা ধারণা আজও করতে পারেন নাট্যপিপাসু মানুষ।

‘অপরাজিতা’ যখন মঞ্চে আসে, তখন গ্রুপ থিয়েটারের পালে হাওয়া লেগেছে। কলকাতার পাবলিক থিয়েটারও চলছে রমরমিয়ে। কোনও এক উত্তর-ঔপনিবেশিক সুতোর টানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী নাট্য-আঙ্গিক যাত্রাও হইহই করে ঠাঁই করে নিচ্ছে নাগরিক পরিমণ্ডলে। ১৯৭১-এ গ্রুপ থিয়েটারের প্রধান দলগুলির মধ্যে ‘নান্দীকার’ তখন পাবলিক থিয়েটারের পাড়ায় ঢুকে সাড়া ফেলে দিয়েছে। আবির্ভাবেই তুমুল আলোড়ন তুলেছে ‘পিপল’স লিটল থিয়েটার’-এর ‘টিনের তলোয়ার’। আর গ্রুপ থিয়েটারের অবিসংবাদিত নেতা ‘বহুরূপী’ তিন-তিনটি স্মরণীয় প্রযোজনা উপহার দিচ্ছে সে বছর। ‘পাগলা ঘোড়া’ ও ‘চোপ্‌, আদালত চলছে’-র মধ্য দিয়ে নবীন ভারতীয় নাটকের দুই পুরোধা বাদল সরকার ও বিজয় তেন্ডুলকরকে চেনাচ্ছেন শম্ভু মিত্র। আর প্রায় একক উদ্যোগে একক অভিনয়ের একটি পরাকাষ্ঠা রচনা করছেন তৃপ্তি মিত্র, যারনাম ‘অপরাজিতা’।

এরও এক সলতে পাকানোর পর্ব আছে, আর সেটি বেশ চিত্তাকর্ষকও বটে।

১৯৬৭-তে ‘বহুরূপী’ করেছিল বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’। তাতে তিনটি ভূমিকায় অভিনয় করতেন তৃপ্তি। বিদ্যালয়ের শিক্ষয়িত্রী এক লেখক এবং তাঁর কল্পিত দু’টি চরিত্র। চোখের নিমেষে ভোল পাল্টাতে হত। ভঙ্গিও। নাটক দেখার পাকা চোখ না থাকলে ধরাই যেত না, একই অভিনেত্রী একাদিক্রমে তিনটি চরিত্রে অবতীর্ণ হচ্ছেন। মনে হয়, বহুমুখী চরিত্রায়ণের এই সাফল্যই তৃপ্তিকে বহুস্তরীয় একক অভিনয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। নানা জনকে বলেছিলেন ওরকম লিখে দিতে। নিজেও লেখার চেষ্টা করেছিলেন। কাজ হচ্ছিল না। ১৯৬৯-র শেষাশেষি কলামন্দির প্রেক্ষাগৃহে ‘বহুরূপী’র ‘রাজা’ হচ্ছে। কার্টেন কলের পর গ্রিনরুমে এসে দেখা করলেন নীতীশ সেন। অভিনন্দন জানাতে। বাকিটা তৃপ্তির লেখায় ধরা আছে।

“বললাম, ‘ওসব ভাল ভাল কথা শুনে আমার কি হবে? আমাকে একটা নাটক লিখে দিতে পারেন। যাতে কেবল একটাই চরিত্র থাকবে। আর ধরুন থাকবে একটা টেলিফোন?’ নীতীশ বললেন, ‘চেষ্টা করব।’ কিন্তু ফর্মটা বার করা খুব সহজ হয়নি। আমি চেয়েছিলাম এটা একটা নাটকই হবে, মনোলগ নয়। ওই টেলিফোন মাধ্যমেই ঘটনার আমদানী একটু একটু করে গল্পের ভাঁজ খোলা। শেষে একটা পরিণতি। কেবল বিবরণ দেওয়া নয়। অনেক আলোচনা হত। প্রায় এক বছর লেগেছিল ‘অপরাজিতা’ লিখতে।” (শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকা ১৩৮৪)

নাটককার-নাট্যকারের এমন যুগলবন্দি বাংলা থিয়েটার আগে দেখেনি। একক অভিনয়। কথাটি শুনতে ভাল, কিন্তু দেখানো হবে কী করে? কোন ফর্মে লেখা হবে নাটক? ‘সলিলকি’ বা স্বগতোক্তি দিয়ে তো পূর্ণাঙ্গ নাটক হয় না। মনোলগ নয়, চাই ডায়ালগের প্যাটার্ন। আলাপ স্বভাবতই দ্বিরালাপ। কথার পিঠে কথা না জুড়তে পারলে নাটক এগোয় না। সংলাপ জুড়তে গেলে বক্তা-শ্রোতা-বক্তার আন্তঃসম্পর্ক বুনতে হয়। সে ভাবেই এত কাল নাটক হয়েছে বাংলায়। একটি মেয়ে আর একটি টেলিফোন— তৃপ্তির কাছ থেকে এইটুকু ধরতাই মিলেছিল। সেই সূত্র ধরে ভাবতে ভাবতে এক সময় নীতীশের মাথায় খেলে গিয়েছিল ‘পরশপাথর’ ছায়াছবির সেই দৃশ্য, যেখানে তুলসী চক্রবর্তীর প্রাইভেট সেক্রেটারির ভূমিকায় কালী বন্দ্যোপাধ্যায় রিভলভিং চেয়ারে গা এলিয়ে সেক্রেটারিয়েট টেবিলের ওপর পা তুলে বিশ্রম্ভালাপ জুড়েছিলেন। প্রেমিকা হেমলতাকে দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু অনুভবে পাওয়া যাচ্ছিল, বিশেষত ঝানু প্রেমিকটির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সাপেক্ষে।

এই আইডিয়া চটজলদি তৃপ্তির কানে পৌঁছে দিতে সিধে ১১এ নাসিরউদ্দিন রোডে মিত্র পরিবারের টেলিফোন নম্বরে ফোন করেছিলেন নীতীশ। তখন সন্ধে। তৃপ্তি ছিলেন না। শম্ভু রিসিভার তুলেছিলেন। বাকিটা নীতীশের লেখায়— “শম্ভুদা ধরেছিলেন এবং বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে। কিন্তু ওর তো ফিরতে রাত হবে।’ আমি বললাম, ‘বৌদি যখনই ফিরুন, আপনি তো জানেন আমি দেরী করে শুই, আমাকে ফোন করতে বলবেন।’ তা সেই ফোনটা যে রাত বারোটায় হবে বুঝতে পারিনি। তখন একটা জিনিষ মনে হল, ‘আরে এ ভদ্রমহিলার তো দারুণ উৎসাহ, দারুণ আগ্রহ এ ব্যাপারে।’” (‘আরব্ধ’ নাট্য বিষয়ক বাৎসরিক পত্রিকা ১৯৮৫)

স্মারক: ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ‘অপরাজিতা’ নাটকের প্রথম ফোল্ডার। (সৌজন্য: বহুরূপী)

স্মারক: ১৯৭১ সালে প্রকাশিত ‘অপরাজিতা’ নাটকের প্রথম ফোল্ডার। (সৌজন্য: বহুরূপী)

রাত বারোটার সেই ফোনকল গড়ে দিয়েছিল ‘অপরাজিতা’-র ভিত।

নীতীশ চেয়েছিলেন, মেয়েটির নাম হবে কৃষ্ণা। বেঁকে বসেছিলেন তৃপ্তি। ‘না, মেয়েটির নাম হতে হবে অপরাজিতা।’ এখান থেকেই গড়াতে শুরু করেছিল নাটক। নীতীশ লিখেছিলেন, “অপরাজিতা চরিত্র বাদে— যেটা ভিন্ন ভিন্ন বহু মেয়ে চরিত্রের সমষ্টি— অধিকাংশই একেবারে বাস্তব।” যথা, জীবন থেকে নেওয়া একটি চরিত্র ‘চিনিদাদু’-র আদল ছিলেন নাটককারের অধ্যাপক পিতা। বাদবাকি উচ্চবিত্ত মধ্যবিত্ত সাধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ থেকে তুলে আনা।

নাটকের কেন্দ্রে তরুণী অপু ওরফে অপরাজিতা রায়। বাবা-মা নেই। বিয়ে একটা হয়েছিল, ভেঙে গেছে। দাদা-বৌদি আর ছোট ভাইপোর সঙ্গে থাকতে থাকতে ক্রমে হাঁপিয়ে উঠছিল অপু। একটু লেখাপড়া জানে, তাই চাইছিল একটা চাকরি করতে। সংসারের জন্য নয়, নিজের মতো করে সম্মানজনক একটি জীবন কাটানোর জন্যে। যত দিন না চাকরি জোটে, তত দিন সে শিল্পের আশ্রয় চেয়েছিল। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, পাবলিক থিয়েটারে অভিনয় করে দিন গুজরানের রাস্তা কাটতে চাইছিল সে। এই মর্মে পাকা কথা শুনবে বলে খুব আশা করে টেলিফোনের সামনে অপেক্ষা করছিল। সে দিন বাড়িতে কেউ না থাকায় একের পর এক টেলিফোন কলের মুখে বেশ অনর্গল হতে পারছিল। সেই অনর্গল কথোপকথনের ফাঁকতালে কথকতার মেজাজে জুড়ে নিচ্ছিল দর্শক-শ্রোতাদেরও।

সামান্য মঞ্চসামগ্রী আর যৎসামান্য মূকাভিনয়ে ভর করে, একটি দশ মিনিটের বিরতি নিয়ে দু’ঘণ্টা কুড়ি মিনিটের ‘অপরাজিতা’ হয়ে উঠেছিল তৎকালীন বাঙালি সমাজের এক মর্মস্পর্শী প্রস্থচ্ছেদ। উদীয়মান অভীপ্সা ও নিমজ্জমান হতাশার এক আনকোরা রসায়ন।

১৯৭১-এর ৭ সেপ্টেম্বর, কলামন্দিরের বেসমেন্টের ছোট প্রেক্ষাগৃহ, যাকে আমরা এখন ‘কলাকুঞ্জ’ নামে চিনি, সেখানে আবির্ভাব ঘটে ‘অপরাজিতা’-র। কলাকুঞ্জ বেছে নেওয়ার পিছনে অ্যাকাডেমিতে জাঁকিয়ে বসা ‘বহুরূপী’র সঙ্গে দূরত্ব তৈরির বাসনাও কাজ করে থাকবে। নিজের জন্য নতুন একটি পথ নিজেই কাটতে চাইছিলেন তৃপ্তি। যদিও সে বছরই পদ্মশ্রী খেতাব এসেছে তাঁর কাছে। বসেছেন শৈলেন মান্না, বালমুরলী কৃষ্ণ, মান্না দে, লেসলি ক্লডিয়াস, শঙ্খ চৌধুরীর সমাসনে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ এই যে, সে বছরই ‘বহুরূপী’র সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছেন তৃপ্তি। তবু।

পরে লিখেছিলেন, “এবার সব দায়িত্ব একার। পরিচালনা এবং অভিনয় এবং অতগুলো চরিত্রের একসঙ্গে মুহূর্তে মুহূর্তে ব্যক্তিত্ব তথা চলা-বলা সব বদলান। দুঃসাধ্য পরিশ্রম করে করা গেল শেষ পর্যন্ত। এ অভিনয় করবার সময় আমার খুব ভাল লাগে। ক্ষুদ্র মাপের চরিত্র সব, কিন্তু এত বিভিন্ন রকমের। প্রত্যেককে তাদের দোষগুণ নিয়ে নিয়তই আবিষ্কার করা।”

তৃপ্তির মৃত্যুর মাসখানেক বাদে ‘দেশ’-এর পাতায় (২৪ জুন, ১৯৮৯) স্মৃতিচারণ করতে বসে তাপস সেন লিখেছিলেন— “একেবারে চূড়ান্ত সময়ে বোধহয় স্টেজ রিহার্সালেরও পর একদিন রাতে আমাকে ফোন করে বললেন, ‘বহুরূপীর সবাই বলছে, এটা ওদের অর্থাৎ বহুরূপীর প্রযোজনা হোক।’ আমি তো অবাক। ওঁর ‘বহুরূপী’র প্রতি মমত্ব ও আনুগত্য এবং সবকিছু মিলিয়ে মতটাও পরিবর্তন করে ‘অপরাজিতা’ ‘বহুরূপী’র প্রচেষ্টা হিসেবেই বিজ্ঞাপিত হল। মূল ভাবনাটা ছিল স্বতন্ত্র, একক, ‘বহুরূপী’র বাইরে। কিন্তু এক কথায় রাজী হয়ে গেলেন এটিকে ‘বহুরূপী’র প্রযোজনা হিসেবে প্রচার করতে। ওঁর ভাষায় ‘আমি কেমন না করতে পারলাম না।’”

ভাগ্যিস করেননি! নতুবা তা যেমন ‘বহুরূপী’র মতো তুঙ্গে বিরাজমান সংগঠনের গলার কাঁটা হয়ে থাকত, তেমনই নিয়মিত মঞ্চায়নের জন্য যে ন্যূনতম নেপথ্য সহযোগ লাগে, সেটি এমন নিরবচ্ছিন্ন ভাবে তিনি পেতেন না।

কলাকুঞ্জে প্রিমিয়ার শো-র কয়েক দিন পর অচিরেই ‘তৃপ্তি মিত্রের একক অভিনয়ের একটি সম্পূর্ণ নতুন অনুষ্ঠান’ বলে ‘বহুরূপীর নতুন নাটক’ হয়ে অ্যাকাডেমিতে উঠে এসেছিল ‘অপরাজিতা’। আর নাটককে অনেক পিছনে ফেলে দিয়ে অতুলনীয় পুনরাবির্ভাব ঘটেছিল অভিনেত্রী তৃপ্তি মিত্রের।

‘আনন্দবাজার পত্রিকা’-র সমালোচক যথার্থই লিখেছিলেন, “আসলে গল্পের ব্যাপারটা এখানে গৌণ— তাঁকে ছুঁয়ে শ্রীমতী মিত্র যে রসের সঞ্চার আর লীলা ঘটালেন, লক্ষণীয় তাইই।” সেই অবিশ্বাস্য অভিনয়-বিস্ফোরণের নাড়ি ধরে ‘দেশ’ লিখেছিল— “তাঁর অভিনয়ের গুণে আমাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করে এত অতি বিশ্বাস্য চরিত্র, যার প্রতিটি দুঃখ ও সুখের শরিক দর্শক। এমন অসাধারণ তাঁর অভিনয়, মঞ্চে দাঁড়িয়ে যেন তিনি রীতিমত ‘কম্যানড’ করে গেছেন দর্শকদের। যেন অঙ্গুলি সংকেতে দর্শকদের হাসিয়েছেন, কখনও বা স্তব্ধ করে রেখেছেন। একক অভিনয় কী বস্তু, তার পরিধি কতটুকু, মঞ্চে শিল্পীর মুভমেনট কী পরিমাণ সংযত বা পরিমিত হবে, কখন কোন্‌ অ্যাঙ্গেল-এ তাঁকে দাঁড়াতে হবে ইত্যাদি বিষয় আমাদের এতদিন অজানা ছিল। তৃপ্তি মিত্র দেখিয়ে দিলেন একক অভিনয় কী জিনিস, কত ব্যাপক তার রেঞ্জ বা পরিধি।” ১৯৮৮-তে ‘বহুরূপী’র ইতিহাস লিখতে বসে ‘অপরাজিতা’ নিয়ে স্বপন মজুমদার লিখেছিলেন, “তাঁর প্রতিভা-তূণীরের সবকটি তীরই যেন তিনি প্রয়োগ করলেন এই নাটকে।”

‘অপরাজিতা’ একান্ত ভাবেই তৃপ্তির মস্তিষ্কপ্রসূত হলেও তাতে আরও কারও কারও প্রত্যক্ষ সহযোগ ছিল। যেমন, মঞ্চ পরিকল্পনা করেছিলেন দীপেন সেন। ‘বহুরূপী’ থেকে বেরোনো প্রথম নিউজ়পেপার ইনসারশান-এ লেখা হয়েছিল ‘আলো তাপস সেন’। পরের দিকে ‘আলোকসম্পাত তাপস সেন’ এমনও ছাপা হয়েছে। অথচ দলীয় সূত্রে জানতে পারা যায়, এই প্রযোজনার আলোক-পরিকল্পক ছিলেন দিলীপ ঘোষ ও শঙ্করপ্রসাদ ঘোষ। এই অপনয়ন পদ্ধতির মূলে অন্যান্য সমীকরণ কাজ করেছিল। তবে তাপস যে ‘অপরাজিতা’-র প্রকল্পনা পর্ব থেকেই তৃপ্তির সহযোগী ছিলেন, এর অনেক সাক্ষ্য পাওয়া যায়। ছিলেন তৃপ্তির দিদি কমলাসিংহ, যিনি আরও অনেক পরে আরব্ধ নাট্য বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন। ছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ছিলেন না এক জন। ওই ১৯৭১-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাডেমিতে ‘পাগলা ঘোড়া’-র আবির্ভাবের তিন মাসের মধ্যে যিনি ১১এ নাসিরউদ্দিন রোডের ঠিকানা ছেড়ে উঠে গিয়েছিলেন ৪৬ পার্ক স্ট্রিটের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে, যাঁর নির্দেশনায় ওই ১৯৭১-এরই ৯ ডিসেম্বরে প্রথম মঞ্চায়িত ‘চোপ্‌, আদালত চলছে’ প্রযোজনায় আরও একটি অবিস্মরণীয় চরিত্রায়ণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তৃপ্তি, যাঁর কাছে তাঁর অভিনেত্রীজীবন সর্বতোভাবে ঋণী— সেই শম্ভু মিত্র।

দাম্পত্যজীবনের দীর্ঘ টানাপড়েনের ছাপ পড়েছিল ‘অপরাজিতা’-তেও। সে কথা এখন থাক। কিন্তু কী ভাবে এমন কিংবদন্তিপ্রতিম হল ‘অপরাজিতা’? কী ঘটত সেই মঞ্চায়নে?

তৃপ্তির অনুরাগী কবি অমিতাভ দাশগুপ্ত এ নিয়ে লিখেছিলেন, “আঠেরোটি চরিত্র মুহুর্মুহু পালটে যাচ্ছে। একক অথচ সাবলীল অভিনয়ে, যেন এ-ঘর ও-ঘর করার মতই স্বাভাবিক। কোথাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখান নেই, অথচ দর্শকদের মনে সঞ্চারিত হত সেই অনুভূতির চাপ যা একটি শরীরে বহুরূপিণী নারীর বর্ণাঢ্য বিস্তার বহনকরে আনে।”

মৃণাল সেনের যেমন ‘অপরাজিতা’ দেখে মনে হয়েছিল যে, তৃপ্তির অভিনয় ‘একটু হাই স্ট্রাঙ্গ’। সাদা বাংলায় যাকে বলে ‘অতি নাটুকে’।

৭ লোয়ার রেঞ্জে ‘বহুরূপী’র দফতরে রাখা শো-রেজিস্টারগুলি সমকালীন বঙ্গনাট্যের অসামান্য দলিল। তাদের হলদে হয়ে যাওয়া পাতায় নানা সময়ে তত্ত্বতালাশ চালিয়ে জানতে পারছি যে, ১৯৭০-এর দশক অবধি ‘বহুরূপী’র সর্বাপেক্ষা মঞ্চায়িত প্রযোজনার নাম ‘অপরাজিতা’। হিসাব কষে দেখছি যে, ৯০টি নিজস্ব মঞ্চায়ন ও ৪২টি আমন্ত্রিত মঞ্চায়ন নিয়ে সর্বসাকুল্যে ১৩২ বার দর্শকদের সামনে এসেছিল ‘অপরাজিতা’।

যে-হেতু একক অভিনয়, তাই মঞ্চের দায়িত্বে থাকা বারীন ভাণ্ডারী, আলোর দায়িত্বে থাকা মহম্মদ রেজা, রমাপ্রসাদ বণিক ও সৌমিত্র বসুর মতো দলের কয়েক জন তরুণ সহচর আর ছায়াসঙ্গী মেরিকে নিয়ে কাছেপিঠে তো বটেই, দূরে-দূরান্তরেও পাড়ি জমাতে পারতেন তৃপ্তি। বম্বের তেজপাল হলের মতো খানদানি প্রেক্ষাগৃহে যেমন, তেমনই স্বচ্ছন্দ থেকেছেন গ্রামে-মফস্‌সলে ধর-তক্তা-মার-পেরেক রঙ্গমঞ্চে, ডাকনামে যা ‘মাচা’। কোথায় না গেছেন! ১৯৭৯-এ স্বরলিপি-র ডাকে যাচ্ছেন আগরতলায়, সেখানে হইহট্টগোল ধাঁইধপাধপ কাণ্ডকারখানা হচ্ছে। মজলিস-এর ডাকে যাচ্ছেন রাঁচি। ভিলাই যাচ্ছেন, ভিলাই স্টিল প্ল্যান্টের ডাকে। ১৯৭৭-এ কোরাস-এর ডাকে শিলচরে, চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংস্থা-র ডাকে জলপাইগুড়িতে, সেন-র‌্যালে অ্যাথলেটিক ক্লাবের ডাকে আসানসোলে, উদয়ন পরিষদের ডাকে মুঙ্গেরে। বাম সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পালে তুমুল হাওয়া, একাঙ্ক নাটকের বাড়বাড়ন্ত— এ সবের মধ্যেই একক অভিনয়ের মতো আপাত-নবীন প্রসেনিয়াম ফর্মকে নিয়ে উজান-ভাটির খেলায় মেতে আছেন।

শো-রেজিস্টার দেখতে গিয়ে নজরে এল, ১৯৭৫-এর ৮ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে ন’টা থেকে সন্ধে সাতটা অবধি রাধা ফিল্ম স্টুডিয়োর পুরনো টেলিভিশন সেন্টারে থাকতে হচ্ছে ‘বহুরূপী’তে, ‘অপরাজিতা’-র চলচ্চিত্রায়ণের জন্য। সেটির সম্প্রসারণও হয়েছিল, সার্থক ভাবে। এখন সেই রেকর্ডিং কোথায়? জিজ্ঞেস করেছিলাম দূরদর্শনের নাটক বিভাগের তৎকালীন প্রযোজক বিভাস চক্রবর্তীকে, যাঁর তোড়জোড়েই ‘অপরাজিতা’-র ওরিজিন্যাল স্টেজ প্রোডাকশনের অনেকটাই ‘রিটেনড’ হয়েছিল। তিনি সখেদে জানিয়েছেন, “আমার প্রযোজনা করা অনেক কিছুর মতো সেটাও বোধহয় আর সংরক্ষিত হয়নি।”

এই সাংস্কৃতিক ক্ষতি আমরা রাখি কোথায়!

এ দিকে, মনে রাখতে হবে, ১৯৭০-এর দশকে বাংলার গ্রুপ থিয়েটারের পাকা ঠিকানা হয়ে উঠেছে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস। ১৯৭১-এর ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘পাগলা ঘোড়া’-র উদ্বোধনী মঞ্চায়নের দিনটি থেকেই রবিবারের সন্ধ্যার পরমাকাঙ্ক্ষিত শো স্লট নিরঙ্কুশ ভাবে বরাদ্দ থাকছে ‘বহুরূপী’র নামে, প্রবেশপথের বাঁ দিকের বুকিং কাউন্টারটিতেও একচ্ছত্র থাকছেন তাঁরা। এই দশক জুড়ে ‘বহুরূপী’র এই প্রবল কর্মক্ষমতার চালিকাশক্তি হয়ে থাকছেন শম্ভু মিত্র নন, তৃপ্তি মিত্র। দলের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করছেন তো বটেই, অক্লান্ত পরিশ্রম করে তরুণতর একটি প্রজন্মকে সজাগ ও সক্রিয় রাখছেন। নতুন নাটকের জোগান ঢালাও রাখতে নির্দেশনাও দিচ্ছেন একের পর এক। ১৯৫৭-তে ‘বহুরূপী’র ‘ডাকঘর’ নির্দেশনা দেওয়ার পরের প্রায় দেড় দশক আর নির্দেশকের ভূমিকায় পাওয়া যায়নি তৃপ্তিকে। অথচ ১৯৭০ থেকে ১৯৭৭, এই আট বছরের মধ্যে ‘বহুরূপী’র ১১টি নাটকের নির্দেশনা দিলেন তৃপ্তি।

প্রশ্ন উঠতে পারে, সে সময় কেন এত নাটক করতে হচ্ছিল ‘বহুরূপী’কে? উত্তর সহজ— ইচ্ছে না থাকলেও উপায় ছিল না বলে। সে আমলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে আর্থিক অনুদান পেত ‘বহুরূপী’। পেত থিয়েটার সেন্টার, অনামিকা, নান্দীকার, পিপল’স লিটল থিয়েটার-এর মতো কলকাতার আরও কয়েকটি দল। অনুদানের শর্তমাফিক প্রায় ঘড়ি ধরে তারিখ মিলিয়ে নাটকের জোগান দিয়ে যেতে হত দলগুলিকে। বছরে দু’টি করে। কতক আজকের মতোই। অনুদান আটকে গেলে দলীয় সম্পাদক কালীপ্রসাদ ঘোষ প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে তদবির করতে দিল্লি ছুটেছেন, দরবার করেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী প্রতাপচন্দ্র চন্দ্র-র দফতরে। মঞ্জুরি আদায় করে ফিরেছেন।

এই কালপর্বে প্রায় আপ্তসহায়ক হয়ে তৃপ্তির পাশে ছিলেন অরিজিৎ গুহ। ‘গন্ধর্ব’ নাট্যপত্রে (অক্টোবর ১৯৯৫) তৃপ্তির স্মৃতিচারণ করতে বসে অরিজিৎ এক বার লিখেছিলেন, “প্রতি বছরে বহুরূপীর দু’টি প্রযোজনা করার যে বাধ্যবাধকতা ছিল— তা বোধহয় কিছুটা তাঁর পক্ষে জীবনদায়ীও ছিল।” ‘বহুরূপী’ আর তৃপ্তি মিত্র যেন অভিন্ন হয়ে উঠেছিলেন সত্তর দশকে। অক্লান্ত পরিশ্রম করতেন। ভাঙনের ছাপ দেখা দিত চেহারায়। গুণগ্রাহীরা উৎকণ্ঠিত হতেন। তৃপ্তি অদম্য। অরিজিতের বয়ানে পাচ্ছি— শরীরের দিকে নজর দেওয়ার কথা বললে এক দিন বলেছিলেন, “বহুরূপীকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে, জমিটা তৈরি রাখতেই হবে তো, না হলে ওর (শম্ভুদা) নাটক করতে ইচ্ছে হলে কোথায় করবে?”

নিয়তির কী পরিহাস!

শম্ভু মিত্র আর নাটক করলেন না ‘বহুরূপী’তে। ‘চাঁদ বণিকের পালা’ নিয়ে খানিক এগিয়েও কী মনে করে ছেড়ে দিলেন। অথচ এহেন শম্ভু মিত্রের সঙ্গে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক বিচ্ছিন্নতার খেই ধরে তৈরি হওয়া সমস্যার জেরে ঘুলিয়ে ওঠা জটিলতার দরুন দিনে দিনে একা, আরও একা হয়ে গেলেন তৃপ্তি। কতক বাধ্য হয়েই দলের সভাপতির পদ থেকে সরে গেলেন, ১৯৭৯-এর শেষাশেষি। তত দিনে ৭ নং লোয়ার রেঞ্জের অভ্যন্তরে ঘনিয়ে ওঠা গুমোট আবহাওয়ার মধ্যেই কুমার রায়ের নির্দেশনায় ‘মৃচ্ছকটিক’ করে ফেলেছে ‘বহুরূপী’। হইহই করে মঞ্চস্থ হচ্ছে শূদ্রকের সংস্কৃত নাটকের এই চমকপ্রদ বঙ্গায়ন। বসন্তসেনার ভূমিকায় আবির্ভাবেই মাত করে দিয়েছেন অনসূয়া ঘোষ। ১১এ নাসিরউদ্দিন রোড তখনও ‘বহুরূপী’র সরকারি ঠিকানা থাকলেও, বেকবাগানের সেই ঐতিহাসিক বাড়ির একলা বাসিন্দা তৃপ্তি ক্রমশ নিজভূমে পরবাসী।

‘অপরাজিতা’-র শেষ মঞ্চায়ন ১৯৮০-র ১২ ফেব্রুয়ারি। বোলপুরে, লায়নস ক্লাবের আমন্ত্রণে। খোলা মাঠে, ম্যারাপ বেঁধে। সেটিই ‘বহুরূপী’র ব্যানারে ওঁর শেষ রজনী। বিদায়বেলাটি মধুর হয়ে পারত। হয়নি। বলতে গেলে পরিত্যক্ত হয়েছিল সেই মঞ্চায়ন। ওঁর সফরসঙ্গী সৌমিত্র বসুর কলমে উঠে আসা সে দিনের অভিজ্ঞতার এই মর্মান্তিক বয়ান আজও আমাদের মুহ্যমান করে দেয়। মঞ্চায়ন ভেস্তে যাওয়ার পর, “সব গুছিয়ে আমি তাঁকে ডাকতে গেলাম মেক আপের চট আর টিন দিয়ে ঘেরা মেক আপের ঘরে। একা বসে আছেন তৃপ্তি মিত্র, দু হাতে মুখ ঢাকা, আঙুলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে নামছে জল। এ ছবি দেখার গ্লানি কি সারাজীবন মুছে ফেলা যাবে? মনে আছে, পর দিন সকালবেলা বোলপুর স্টেশনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের জন্যে অপেক্ষা করছি, হঠাৎ আপন মনে বলে উঠলেন, এ আর কিছু হবে না, সব নষ্ট হয়ে গেছে। স্বগতোক্তির মত করে বলা সেই তিরস্কার আজও কানে বাজে। ‘বহুরূপী’তে সেই তাঁরশেষ অপরাজিতা।” (বহুরূপী যাপন, চুঁচুড়া: এবং অধ্যায়, ২০২৩)

তার পরও মঞ্চে ছিলেন তৃপ্তি। ‘অপরাজিতা’ নিয়েই ছিলেন। গোড়ার দিকে অরিজিৎ গুহর সহযোগিতায় নিজস্ব উদ্যোগে, পরের দিকে আরব্ধ নাট্য বিদ্যালয়ের ব্যানারে। এই পর্যায়ে দর্শক-সমালোচকদের অকুণ্ঠ আনুকূল্য থেকে আর বঞ্চিত হননি তৃপ্তি। আজ ওঁর অস্তিত্বের সঙ্গে একেবারে লেপ্টে আছে যে পরিচয়টি, সেটি ওই অপরাজিতারই। যেমন জীবনে, তেমনই যাপনে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Indian Theatre

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy