Advertisement
E-Paper

বিধানেও সং, শোধনেও

সংবিধানে বিশ্বাস না করলেই নাকি পুলিশে ধরছে। সাধু সাবধান, কারণ সংবিধান আর আইন-কানুনে বিশ্বাস রাখা ব্যাপারটা ঠিক কী, বোঝা ভারী শক্ত। এ কি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখার মতো কেস? বিশ্বাস না করলেই জেল হাজত? সেটা অসম্ভব, কারণ, ঈশ্বরে বিশ্বাস মানে হল ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস। আর সংবিধানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, এমন লোক ভূ-ভারতে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৬ ০০:০৩

সংবিধানে বিশ্বাস না করলেই নাকি পুলিশে ধরছে। সাধু সাবধান, কারণ সংবিধান আর আইন-কানুনে বিশ্বাস রাখা ব্যাপারটা ঠিক কী, বোঝা ভারী শক্ত। এ কি ঈশ্বরে বিশ্বাস রাখার মতো কেস? বিশ্বাস না করলেই জেল হাজত? সেটা অসম্ভব, কারণ, ঈশ্বরে বিশ্বাস মানে হল ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস। আর সংবিধানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না, এমন লোক ভূ-ভারতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। নেহাতই পাগল-ছাগল না হলে দুনিয়াসুদ্ধ লোক জানে ভারতের একটি সংবিধান আছে, যেমন আছে আমেরিকার। জনতা এ ব্যাপারেও বিলক্ষণ অবগত: দেশে আইন-কানুন আছে, যা ঠিকঠাক ফাঁকি দিতে না পারলে পুলিশে ধরবে, পিতৃদেবের নাম হয়ে যাবে খগেন। এই জলজ্যান্ত সত্যকে অবিশ্বাস করে কোন আহাম্মক?

তা হলে বিশ্বাস মানে কি পবিত্র পুঁথির প্রতিটি অক্ষরে আস্থা জ্ঞাপন করা? যেমত কড়াক্কড় বাজ পড়িল, কুকুর বিড়াল বৃষ্টি হইল, মহামতি মোজেস সিনাই পর্বত হইতে দশটি অনুশাসন পাথরে টুকিয়া আনিলেন, এ-সব কমপ্লিকেটেড ধারা-উপধারা তেমনই অজর-অমর-অক্ষয়, সেটা বিশ্বাস করা দরকার? কিন্তু সেখানেও গোলমাল। আইন-কানুন বা সংবিধান হরবখত বদলায়। জমি অধিগ্রহণের আইন নিয়ে দেশময় রক্তারক্তি হল, ধর্ষণের আইন বদলাতে চেয়ে দিল্লি জ্যাম করে দেওয়া হল ক’দিন আগে, সেগুলো কি তা হলে অনুচিত কর্ম হয়েছিল? দেশের মহারথীরাও তো মাঝে মাঝেই সংসদে গাদা-গাদা সংবিধান সংশোধনী আনেন। তার মানে নির্ঘাত তাঁরা এখনকার ধারা-উপধারাগুলোতে বিশ্বাস করেন না (নইলে আর সংশোধনী আনেন কেন)। তাহলে কি কেষ্টবিষ্টু ও মন্ত্রীসান্ত্রি সহ আস্ত সরকারই সংবিধান বিরোধী? হতেই পারে না, কারণ ২০১৫ সালে প্রকাশিত সংবিধানের ভূমিকাতেই পরিষ্কার বলা আছে, বস্তুটি ও রকম পাথরে খোদাই করা কিছু নয়, বরং সংবিধান একটি জ্যান্ত নথি, সংশোধনীতেই তার নমনীয়তা।

অতঃপর অপশন এই, যে, সংবিধানের অধিকাংশ জিনিসে বিশ্বাস করাটাই সংবিধানে বিশ্বাস। এখানেও সমস্যা হল, অধিকাংশ মানে কী? একান্ন শতাংশ? নাকি একাত্তর? এ রকম কোনও মাপজোখই অবাস্তব। তা হলে কি সংবিধানের মোদ্দা জিনিসটায় বিশ্বাস করাই সংবিধানে বিশ্বাস? সেখানেও বিস্তর গোলমাল। ভারত রাষ্ট্র বস্তুটা কি, সেটা নিশ্চয়ই সংবিধানের একটা ‘মূল’ ব্যাপার। তা, ইতিহাস পড়লে দেখা যাচ্ছে, ভারত ১৯৭৬ সালের আগে ছিল কেবলমাত্র সার্বভৌম এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, ওই বছরই দুম করে সে ধর্মনিরপেক্ষ এবং সমাজতান্ত্রিকও হয়ে পড়ল। তা হলে কি ধর্মনিরপেক্ষ হতে চাওয়া ’৭৬ সালের আগে সংবিধানবিরোধী ছিল? আর রাষ্ট্রীয় সমাজতন্ত্রের নিন্দে করলে এখন পুলিশে ধরবে? বলা ভারী কঠিন। শুধু এইটুকু নিশ্চিত: লোকসভায় বসে রাষ্ট্রের চরিত্র বদলে দিলে তাকে সংবিধান সংশোধনী বলে, আর যদি কেউ জেএনইউ-তে দাঁড়িয়ে সীমান্ত সংক্রান্ত আড়াইখানা স্লোগান দেয়, তার জেলের ভাত সুনিশ্চিত। সাধু সাবধান।

bsaikat@gmail.com

saikat bandyopadhyay rabibasariya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy