সর্বজ্ঞানী ভবিষ্যদ্বক্তাদের এক্সপার্ট বলা হয়। বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম এক্সপার্ট প্রাচ্যদেশীয় মহাজ্ঞানীরা, জন্মের আগেই তাঁরা তারা দেখে যিশুজন্মের ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন, সেটা অবশ্য শ’তিনেক বছর পরে জানা যায়। জ্ঞানীরা পূর্বদেশীয় ছিলেন বলে তার পর থেকেই এক্সপার্টদের নামের শেষে ‘ইস্ট’ এবং ‘এশিয়ান’ বসে গেছে, যথা ইকনমি-ইস্ট, সায়েন্ট-ইস্ট, অ্যাকাডেমিশিয়ান কিংবা ডায়েটেশিয়ান। জ্ঞানীদের ভবিষ্যদ্বাণীতে কান না দিয়ে গবা পাবলিক যিশুকে ক্রুশে দিয়েছিল, সেই আদি-পাপের কারণে তার পর থেকেই এই দিগ্গজরা পাবলিককে গাড়ল ও জনরুচিকে বিষবৎ বলে গাল দেন, এ সব কঠিন বিষয়ে নাক গলাতে এলে ফুচকাখেকো আহাম্মকরা ক্ষীর খেতে এসেছে বলে তাচ্ছিল্য করে নাক ও কান কেটে নেন। যাতে বাই চান্স কেউ বুঝে না ফেলে, তাই নিজেদের ঢেকে ফেলেন দুর্বোধ্যতার বর্মে। তাই পেশাদার বিপ্লবী হোন বা অ্যাকাডেমিশিয়ান বা নস্ত্রাদামুসওয়ালা, বিশেষজ্ঞদের প্রথম ও প্রধান মিল, এঁরা কী ছাইভস্ম লেখেন কেউই বোঝে না। নির্বাণ লাভ করিবার অধিকার কার, সিলেক্টেড ফিউ, না কি লাটকে-লাট শ্রমিক-কৃষক-পাতিবুর্জোয়ার, হীনযান না কি মহাযান, বিশ্ববিপ্লবের তারিখ কবে, পৃথিবীর এন্তেকালের ডেট ঠিক কী, এই সব দুরূহ বিষয় নিয়ে প্রাচীন বৌদ্ধ গুম্ফার লামাদের মতো এ সব ফিল্ডের তন্ত্রসাধকরা গ্রিক ভাষায় নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি করেন, যে গ্রিক ঐতিহ্যের কারণে তাঁদের এক্স-স্পার্টান, সংক্ষেপে এক্সপার্ট বলা হয়। এঁদের ভাষা দুরূহ, শৈলী হিব্রু, শুধু ফিল্ডের লোক জানেন। এক্সপার্টদের পেপারের খুদে-খুদে অক্ষরে অতীত তো বটেই, ফর্দ করে ভবিষ্যতের প্রতিটি ঘটনার অব্যর্থ পূর্বাভাস লেখা আছে। নেহাতই ও-দেবভাষা পাতি পাবলিক বোঝে না, তাই ঘটনা ঘটে যাবার পরেই ভবিষ্যদ্বাণীর যাথার্থ্য টের পাওয়া যায়। অর্থনীতির মন্দা হলে জানা যায় ও তো হবারই ছিল, ধর্ষণের হার বাড়লে জানা যায় এ সব জিনের কেরামতি কবেই ফর্দাফাঁই। বিশ্বযুদ্ধ মেটার পর শোনা যায় নস্ত্রাদামুস তাঁর হিংটিংছটে ও-সব আগেই লিখে গেছেন। সোভিয়েত রাশিয়া ভাঙার পর জানা যায় সামাজিক সাম্রাজ্যবাদের এই ভবিতব্য একদম বিধিদত্ত।
সত্যযুগে ইশকুল-ড্রপআউটরাও কবি-কাম-মাস্টার হয়ে শান্তিনিকেতন খুলে বসত। এখন বিশেষজ্ঞদের দাপটে ও-সব সহজপাঠের ছেলেখেলা বন্ধ। ছুঁচের ফুটোয় উটের এবং এক্সপার্ট-সরণিতে মূর্খ আমজনতার কঠোর নো-এন্ট্রি। এখন মুগুরধারী ডিগ্রি-ছাপ এক্সপার্টদের যুগ। তাঁরা দশাবতার হয়ে ডান্ডা ঘোরান, যত্রতত্র মূর্খদের প্যান্টুল খুলে নেন, আর কখনও-সখনও দয়াদাক্ষিণ্য দেখিয়ে সান্ধ্যভাষার মানেবই লিখে পাবলিককে কৃতার্থ করেন। জনতা সে সব পড়ে দু’হাত তুলে জয়ধ্বনি করে, বুঝতে না পারলেও প্যাঁক খাওয়ার ভয় ও তজ্জনিত ভক্তিতে জোড়হাত ও অধোবদন হয়ে থাকে। পাপীর জন্য ডান্ডা আছে, ভক্তের আছে পান্ডা, আর এই সেকুলার জগতে পাপীতাপী মূর্খ ও চণ্ডালদের জন্য টোটাল প্যাকেজ হয়ে আছেন অন্ধজনের আশার আলো এক্সপার্টরা।
bsaikat@gmail.com