Advertisement
E-Paper

কেচ্ছা

দুই ছেলের মা; সব সম্পর্ক ছিঁড়ে গোপনে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন প্রবল প্রেমের টানে— পরপুরুষের হাত ধরে! সময়টা পঞ্চাশের দশক। সাত সাগর পেরিয়ে ঝড় উঠেছে টিনসেল টাউনে। প্রেমিকটি খ্যাতনামা ইতালীয় ফিল্মমেকার রবার্তো রোসেলিনি। মহিলাও তখন গ্ল্যামারতলার আলোকিত নাম— তথ্যচিত্র পরিচালক হরিসাধন দাশগুপ্তের স্ত্রী সোনালি দাশগুপ্ত। বিস্মৃতপ্রায় এই বাঙালি বিদুষীর মৃত্যুসংবাদেও সম্প্রতি বার বার উঠে এল পুরানো সেই দিনের কথা। শোকগাথায় মিশে রইল গসিপের ঘ্রাণ।

সুস্নাত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৪ ০০:০৫

দুই ছেলের মা; সব সম্পর্ক ছিঁড়ে গোপনে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন প্রবল প্রেমের টানে— পরপুরুষের হাত ধরে! সময়টা পঞ্চাশের দশক। সাত সাগর পেরিয়ে ঝড় উঠেছে টিনসেল টাউনে। প্রেমিকটি খ্যাতনামা ইতালীয় ফিল্মমেকার রবার্তো রোসেলিনি। মহিলাও তখন গ্ল্যামারতলার আলোকিত নাম— তথ্যচিত্র পরিচালক হরিসাধন দাশগুপ্তের স্ত্রী সোনালি দাশগুপ্ত। বিস্মৃতপ্রায় এই বাঙালি বিদুষীর মৃত্যুসংবাদেও সম্প্রতি বার বার উঠে এল পুরানো সেই দিনের কথা। শোকগাথায় মিশে রইল গসিপের ঘ্রাণ।

১৯৫৬ সালে নেহরুর আমন্ত্রণে ভারতে আসেন রোসেলিনি। উদ্দেশ্য, ভারতের উপর একটি তথ্যচিত্র বানানো। তত দিনে তাঁর ‘রোম, ওপেন সিটি’ বিশ্বে সমাদৃত। তখন রোসেলিনির স্ত্রী পৃথিবী-কাঁপানো ডাকসাইটে সুন্দরী ও দক্ষ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যান। তাঁদের বিয়ের তখন বছর ছয়েক কেটেছে সবে। সে সময়ই রোসেলিনির সঙ্গে আলাপ হরিসাধন দাশগুপ্তের স্ত্রী সোনালির। চট করেই সোনালির কৃষ্ণকলি রূপ আর মনীষায় মুগ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। সোনালি তখন রোসেলিনিকে চিত্রনাট্যের কাজে অ্যাসিস্ট করছেন। কিন্তু ভেতরে-ভেতরে লেখা হয়ে চলেছে অন্য চিত্রনাট্য।

মহীশূরে থাকাকালীন নাকি পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে এসে বুথ থেকে কলকাতায় ফোন করতেন রোসেলিনি, স্রেফ সোনালির সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলার জন্য! সাতাশ বছরের সোনালির সঙ্গে পঞ্চাশোর্ধ্ব রোসেলিনির প্রেম কয়েক মাসের মধ্যেই আপন বেগে পাগলপারা। অতঃপর পলায়ন! দুজনে ইতালি পাড়ি দেন।

এই বিবাহ-বহির্ভূত রোম্যান্সের পাশে দাঁড়ান রোসেলিনির ‘ক্লোজ ফ্রেন্ড’, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু আর তাঁর কন্যা ইন্দিরা! সোনালির পাসপোর্টের ব্যবস্থাও করে দেন নেহরু। তবে, এ কথাও শোনা যায়, নেহরুই নাকি কেচ্ছার ঝাঁঝ আঁচ করে রোসেলিনিকে অবিলম্বে দেশ ছাড়তে বলেন।

সোনালিকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন আর এক বিখ্যাত ভারতীয়ও। শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন। রোসেলিনির বিশেষ বন্ধু ছিলেন তিনি। এই ভারত সফরে বহু বার তাঁরা আড্ডা মেরেছেন। হুসেন জানিয়েছেন, সে সব অন্তরঙ্গ আড্ডার বেশিটাই নাকি জুড়ে থাকত রোসেলিনির বর্ণময় যৌন জীবনের প্রসঙ্গ। এ হেন বন্ধুকে সাহায্য না-করে পারেননি তিনি। লোকের চোখে ধুলো দিয়ে নিজের স্ত্রীর ছদ্মবেশে সোনালিকে মুম্বই থেকে দিল্লি পৌঁছে দেন হুসেন। সেখান থেকে সোনালি পাড়ি দেন প্যারিস। ‘আমেরিকার একটা কাগজ ওদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য আমায় দশ হাজার ডলার দেবে বলেছিল। কিন্তু আমি বন্ধুর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারিনি’, পরে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন হুসেন।

সময়টা ছিল আজ থেকে প্রায় ষাট বছর আগের, বোঝা যায়, সে দিন বাংলার মেয়ে সোনালির সাহসী প্রেম আবিশ্ব কী আলোড়ন ফেলেছিল! এর পরই রোসেলিনির সঙ্গে ইনগ্রিডের বিচ্ছেদ, সোনালির বিয়ে। মাস কয়েকের মধ্যে ইতালির নাগরিকত্ব নেন সোনালি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন ছোট ছেলে অর্জুনকে, তার নতুন নাম রাখেন গিল রোসেলিনি।

সোনালি-রোসেলিনি উপাখ্যান হয়ে উঠেছিল টলি-বলি-হলির রগরগে ফিল্মি গসিপ। এই ইতিহাস নিয়ে সবিস্তার কাজ করেছেন দিলীপ পড়গাঁওকর, লিখেছেন ‘আন্ডার হার স্পেল: রবার্তো রোসেলিনি ইন ইন্ডিয়া’। ছবি করার কথাও নাকি হয়েছে একাধিক বার। সে দিন হরিসাধন এই আঘাত কেমন ভাবে সয়েছিলেন, তাঁর জীবন ও কেরিয়ার এর ফলে কোনও বদলের বাঁকে উপস্থিত হয়েছিল কি না, তাই নিয়েও ছবি হতে পারে বই কী! তিনি বড় চলচ্চিত্রকার হতে চেয়েছিলেন, ঘরে ও বাইরে এ ভাবে যে মুখ পুড়বে, এতটা আঘাত ছুটে আসবে নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে, নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারেননি।

আচ্ছা, সমাপতন কি একেই বলে! এক সময় রবি ঠাকুরের ‘ঘরে বাইরে’ চিত্রায়িত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন তিনি। চিত্রনাট্য সত্যজিৎ রায়ের। বিমলার ভূমিকায় অভিনয়ের কথা ছিল সোনালিরই। সে ছবি হয়নি। কিন্তু হরিসাধন কি জানতেন, নিখিলেশকে ফেলে সন্দীপের সঙ্গেই এক দিন ঘর ছাড়বে তাঁর বিমলা?

susnatoc@gmail.com

susnato chowdhury anandabazar rabibasariya sonali dasgupta
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy