Advertisement
E-Paper

প্রঃ / উঃ

আজ সাক্ষাৎকার দিলেন: গণেশ

চন্দ্রিল ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০৫
গণেশ। ‘ব্যাক টু ব্যাক থিয়েটার’-এর ‘গণেশ ভার্সাস থার্ড রাইখ’ নাটকে। উদ্ভট, আবার ফ্যাশনদুরস্ত!

গণেশ। ‘ব্যাক টু ব্যাক থিয়েটার’-এর ‘গণেশ ভার্সাস থার্ড রাইখ’ নাটকে। উদ্ভট, আবার ফ্যাশনদুরস্ত!

প্রতিবেদক: মাথাটা এরম কী করে হল? মানে, অনেক গল্প শুনেছি, কিন্তু একেবারে হাতির মুখ থেকে...

গণেশ: গল্পগুলো সব গুলতাপ্পি। কোনও শনিমামার শাপে আমার মাথা উড়ে যায়নি। অ্যাকচুয়ালি আমি হিন্দি সিনেমার হিউজ ফ্যান ছিলাম।

প্রতি: তো?

গণেশ: তো, তোরা কী করিস? বচ্চনের চুল দেখে বচ্চন ছাঁট দিস। মাথাটা বচ্চনের মতো বানিয়ে নিলি। আবার ডিস্কো ড্যান্সার দেখে মাথাটা মিঠুনের মতো বানিয়ে নিলি। আমার তখন কম বয়স, হাতি মেরা সাথী দেখে এত আহ্লাদ হল, মাথাটা হাতির মতো বানিয়ে বাড়ি এলাম।

প্রতি: বাড়িতে অশান্তি হল না?

গণেশ: সাংঘাতিক! মা সিংহ লেলিয়ে দিলেন। বাবা ত্রিশূল ছুড়ে মারলেন। গেঁজেল বলে টার্গেট মিস হল। আমি তখন ডেঁটে বললাম, এক জন ক্যান্ডিডেটের দশখানা হাত আর ব্লাউজ বানাতে দরজির নাকের জলে চোখের জলে, অন্য ক্যান্ডিডেটের ফেভারিট হবি নাংগা হয়ে ঘোরা, মাঝেমাঝে বাড়িতে গেস্ট এলে বাঘছালের জাঙিয়া গলিয়ে নেওয়া। তারা কোন মুখে আমাকে পিকুলিয়ার বলে টোন কাটছে?

প্রতি: তখন?

গণেশ: তখন আবার কী? হিপির বাবা তাকে ধমকে অ-হিপি করতে পারে? পাংকের মা ডুকরে কাঁদলে সে নাইকুন্ডুলির পিয়ার্সিং ফিরিয়ে দেয়? তবে হ্যাঁ, খেতে বসে বুঝলাম, টোটাল সুকুমার-এরর! পেট চাইছে মাটন কোর্মা, মুখ বলছে ওনলি ঘাসপাতা। অসহ্য কষ্ট!

প্রতি: তা হলে ফিরতি চেঞ্জ করে নিলেন না কেন?

গণেশ: স্টুডিয়াস ছেলে ছিলাম, সকলে একটু এড়িয়ে, দূর থেকে সম্ভ্রম করত। কিন্তু এই মাথা নিয়ে পরের দিন স্কুল যেতেই, হুলুস্থুল। টিচার্স রুম থেকে অবধি সবাই ছুট্টে এলেন, টিফিনটাইমে সিনিয়ররা সেধে আলুকাবলি দিয়ে আলাপ করে গেল, রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় অটোগ্রাফের চোটে চার হাত ব্যথা, একের পর এক দেবতা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে গিয়ে সাইকেল থেকে পড়ে যাচ্ছে! অ্যাদ্দিনে বুঝলাম, কাকে বলে স্টার।

প্রতি: কিন্তু দেবতারা তো অলৌকিক ব্যাপারে অভ্যস্ত।

গণেশ: এই অলৌকিকটা সে সবের দেড় গুণ বোমফট্কা। ব্রহ্মার চারটে মাথা তো আলাদা আলাদা প্রাণীর করার সাহস হয়নি? নৃসিংহ অবশ্য পার্ট জানোয়ার পার্ট মানুষ, কিন্তু সিংহ বীরত্বের এমন বাঁধা সিম্বল— ওটা সেফ সিলেকশন। হাতি কিন্তু যতটা না বিচক্ষণ, তার চেয়ে বেশি মজার, ফানি। তাই এটা ক্যারি করতে বুকের পাটা লাগে। আসলে আটটা হাত, পাঁচটা মাথা, তিনটে চোখ, যা-ই করো, একটা হারমনি রাখার চেষ্টা হয়েছে। এ ভাবে মিসফিটকে লড়িয়ে দেওয়ার, ইকুইলিব্রিয়ামকে ঝাঁকিয়ে দেওয়ার সাহস কারও হয়নি।

প্রতি: এই কথাগুলো কি পরের দিকে মাথায় এল?

গণেশ: হ্যাঁ, যখন বহুত ভেবে ঠিক করলাম, এই হুজুগে-পাওয়া হাতির মাথা ইউজ করে, আমি ‘মানুষিক’কে ছুড়ে, হয়ে উঠব ‘অল্টারনেট’, ‘গাণুশিক’!

প্রতি: লোকে তো হেসে মরছে!

গণেশ: ওই মিডিয়োকারের হাসিই তো আমার ভূষণ। এদের কেয়ার না করে রবীন্দ্রনাথ মেয়েদের মতো চুল রেখেছিলেন, ম্যাক্সি পরে ঘুরতেন। কোনও মতে তাঁকে প্রফেট বানিয়ে হাসাহাসিটা চাপা দিয়েছে। আমি তেড়ে আভাঁ-গার্দ, গায়ের রংটাও পিংক করে নিয়েছি, যুদ্ধটুদ্ধও করিনি, ফলে কাউকে হাসি চাপার ছুতো সাপ্লাই করি না। আমি ইন-ইয়োর-ফেস। এই দ্যাখ, আমি কিম্ভূত। ইউনিভার্সে একপিস।

প্রতি: কিন্তু এই করতে গিয়ে তো বিদ্যার দেবতার পোস্টটা আপনি দিদির কাছে হারিয়ে বসে থাকলেন।

গণেশ: ওটা নর্মাল পুরুষমানুষের মাথা থাকলেও পেতাম না। কারণ সুন্দরী আর সেক্সিদের জয় অবশ্যম্ভাবী। সেমিনারে সর্বাধিক খরখরে ভাষণে যে পণ্ডিত রুপসেন্ট্রিজ্মের নিন্দে মচান, তিনি বেরিয়ে এসে চিকেন পকোড়া খেতে খেতে সবচেয়ে রূপসি ফ্যানটির কথাতেই হেসে গলে পড়েন। কুৎসিত ও দুর্দান্ত সমঝদার খয়াখর্বুটে লোককে হাত নেড়ে ডিসমিস করেন। তোদের এক কবি লিখেছিলেন, ‘বলতে পারো সরস্বতীর মস্ত কেন সম্মান?/ বিদ্যে যদি বলো তবে গণেশ কিছু কম যান?’ ক’লাইন পর কনক্লুড করেছিলেন, ‘সমস্ত রাত ভেবে ভেবে এই পেয়েছি উত্তর/ বিদ্যা যাকে বলি, তারই আরেকটি নাম সুন্দর।’ ওটা হচ্ছে ফ্লাওয়ারি বাংলার শাক দিয়ে আঁশটে ফ্যাক্টটাকে ঢেকে দেওয়া। লেখা উচিত ছিল, ‘সমস্ত রাত ভেবে ভেবে চক্ষু মেলে দেখ্সি/ বিদ্যে হোক আর অবিদ্যে হোক, সবখানে চাই সেক্সি!’

প্রতি: প্রেম-ট্রেমও তো...

গণেশ: ওরে, আমার শখ হচ্ছে শক দেওয়া! তাতে প্রেম জমে? তবু দু’একটা অ্যাফেয়ার হয়েছে, কিন্তু প্রাথমিক ন্যাকা প্লেটোনিক ফেজটা অবধি দিব্যি চলে, তার পর কতগুলো জেনুইন অসুবিধে। যেমন, চুমু খাওয়ার সময়, শুঁড়টা কোথায় রাখব কিছুতেই বুঝতে পারি না।

প্রতি: মানে ছিলেন ফার্স্ট বয়, শেষে হয়ে গেলেন বঞ্চিত আর হাস্যকর?

গণেশ: উঁহু উঁহু, কথাটা এত ক্যালাসের মতো ছটকে দিলে হবে না। খেয়াল রাখতে হবে, সেটা হলাম স্বেচ্ছায়, একটা স্টেটমেন্ট হিসেবে। অক্ষমতার জন্য নয়। সেকেন্ডলি, সেটা হলাম ফার্স্ট বয়ত্ব-টা ইনট্যাক্ট রেখে! মহাভারতের ডিক্টেশনটা তাই আমাকে ছাড়া হয় না। একটু ভাবলেই বুঝবি, যে লোকটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য শুনে-লিখল, সে কি বহুত জায়গায় তার নিজস্ব কল্পনার পিঁপড়েদের ব্যাস-শ্লোকের মাঝখানে পিলপিল করে ছেড়ে দেয়নি? আমি কপিয়ার নই রে, কো-অথর। কিন্তু আমার দুর্দান্ত অ্যাজেন্ডা, পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান হয়েও নিজের নামে একখান বই অবধি লিখব না। বুকার শর্টলিস্ট নিয়ে কাছা খুলে নাচার কালচারে যাব না।

প্রতি: তা এই ‘সেঞ্চুরি করব না, নাইন্টিনাইনে হিট উইকেট হব’ স্ট্র্যাটেজিতে কোনও লাভ হল?

গণেশ: হচ্ছে তো! এখন তো আমিই সর্বাধিক ‘ইন’! আমার পুজো কলকাতায় কী রেটে বেড়ে গেছে দেখেছিস? রামগোপাল ভার্মা আমাকে নিয়ে হাবিজাবি টুইট করে কীরম টাইট খেয়েছে! আমাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দল নাটক করছে: ‘গণেশ ভার্সাস থার্ড রাইখ’! সেখানে নাৎসি জার্মানি ঢুঁড়ে স্বস্তিকা উদ্ধার করছি! এ ছাড়া, তোদের কোন আর্টিস্ট আছে বল তো, যে আমার উনিশটা উদ্ভট ছবি এঁকে ডিসপ্লে দেয়নি!

প্রতি: তা হলে, সক্কলের মতো না হতে চেয়ে, সেই তো শেষে মেনস্ট্রিমেই ঢুকছেন?

গণেশ: উলটো! অ্যাদ্দিনে স্ট্রিমখানি মেন-লাইন থেকে বেঁকে চড়চড়িয়ে আমার দিকে চলে আসছে। সারা পৃথিবীর ইয়ুথ শিখছে, এক্সট্রিম হট্কে অ্যাটিটুডকে আন্তরিক কুর্নিশ করতে। বুঝছে, গোটা মহাবিশ্বে গ্রেটেস্ট অরিজিনাল কে! ট্যাটু, বডি পেন্ট, ফেশিয়াল আর্ট জমানার কত আগে, প্লাস্টিক সার্জারি করে মুখবুক চেঞ্জের কত্ত যুগ আগে থেকে, আমি নিজ-চেহারার ক্যানভাসে মৌলিক আইডিয়া ফলাচ্ছি! লেডি গাগা, পুসি রায়ট, সব তো আমারই সন্তান। পৃথিবীর যে কোনও পুজোয়, আগে আমার পুজো করতে হয়। এ বার থেকে, আত্মপরিচয়ের হর দড়াম বোম-বার্স্টের আগে, আমার বেঢপ পা ছুঁয়ে নেওয়া মাস্ট।

chandril bhattacharyya chandril chandril bhattacharya interview lord ganesha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy