Advertisement
E-Paper

রিয়েলিটির মস্তি

বিজ্ঞানের অষ্টমাশ্চর্য রিয়েলিটি শো এখন দিগ্বিদিকে। আগে অ্যাম্ফিথিয়েটারে খুন-জখম দেখে ফুর্তি করাকে বর্বরতা, অন্যের রোম জ্বালানোকে নিরোপনা, জল্লাদের মুন্ডুকাটা দেখে আনন্দ পাওয়াকে সেডিজ্ম বলা হত। এই নতুন আবিষ্কারের পর ও-সব সংজ্ঞা উলটে গেছে, চক্ষুলজ্জা গোল্লায়, পৃথিবীতে বিপ্লব এসেছে। জীবন অনিত্য, সিনেমা আনরিয়েল, নেহাতই বোরিং। রিয়েলিটিই এখন ফুত্তির উপকরণ।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৫ ০০:০২

বিজ্ঞানের অষ্টমাশ্চর্য রিয়েলিটি শো এখন দিগ্বিদিকে। আগে অ্যাম্ফিথিয়েটারে খুন-জখম দেখে ফুর্তি করাকে বর্বরতা, অন্যের রোম জ্বালানোকে নিরোপনা, জল্লাদের মুন্ডুকাটা দেখে আনন্দ পাওয়াকে সেডিজ্ম বলা হত। এই নতুন আবিষ্কারের পর ও-সব সংজ্ঞা উলটে গেছে, চক্ষুলজ্জা গোল্লায়, পৃথিবীতে বিপ্লব এসেছে। জীবন অনিত্য, সিনেমা আনরিয়েল, নেহাতই বোরিং। রিয়েলিটিই এখন ফুত্তির উপকরণ। চাট্টি লোক ক্যামেরার সামনে সত্যি-সত্যি কামড়াকামড়ি করছে, বউ-বাচ্চা-বিড়ালছানা সমেত সেই দৃশ্য তারিয়ে দেখাকে এখন বিনোদন বলে। মোবাইল-ক্যামেরা সর্বত্র, তাই বিনোদনও স্টুডিয়ো ছেড়ে ভুবনময়। পাঁচটি ছেলে জুটে একাকী মেয়েকে ধর্ষণ করে ধর্ষণ আর আর্তচিৎকারের রিয়েল-লাইফ ভিডিয়ো জনস্বার্থে বাজারে ছেড়ে দেওয়াকে বলে হোয়াট্সঅ্যাপ করা। এখন প্যালেস্তাইনে মিসাইল আছড়ে পড়লে ইজরায়েলের বাবু ও বিবিরা বর্ডারের পাশে উঁচু জায়গায় চেয়ার নিয়ে বসে লাইভ দীপাবলি দেখেন, দু-চারটি লোক জখম হয়ে চিল্লালে তা শুনে তেড়ে হাততালিও পড়ে, একে বলে চিয়ারলিডিং। দিল্লির চিড়িয়াখানায় জ্যান্ত লোক বাঘের এলাকায় ঢুকে খাদ্য হচ্ছে, ফেসবুকে সেই ভিডিয়ো বিরাট হিট। হাত জোড় করে লোকটা বাঘের কাছে মাপ চাইছে, বাঘ তাতে কান না দিয়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে জ্যান্ত নরশরীর, তামাম ভারতবর্ষ ডিনারের সঙ্গে চাটনির মতো গিলছে রগরগে তড়পানির দৃশ্য। আগে পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে বললে ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত পড়ত, জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হত দুষ্টদের, সাক্ষী থাকত মোটে দু-চারশো লোক। এখন নাস্তিক লোকদের সস্ত্রীক জনারণ্যে কোপানো হয়। স্রেফ বাংলা ভাষায় নিজের মতামত লেখার জন্য মাথায় ঘা মেরে যখন ঘিলু বার করে দেওয়া হয় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের, লোকজন গোল হয়ে ঘিরে দাঁড়িয়ে হাত-পা গুটিয়ে মোবাইলে ছবি তোলে, তার পর বাড়ি ফিরে জনগণের মনোরঞ্জনের নিমিত্ত ফেসবুকে আপলোড করে। দু-দশ কোটি লোক সে ছবি দেখে আহা-উহু করে, কিংবা ‘বেশ হয়েছে’ বলে। আগে একে নৃশংসতা বলা হত, এখন নাম হয়েছে শেয়ারিং। শেয়ারিং-এর চোটে কোনও খুনখারাপির আনন্দই আর চেপে রাখা যাচ্ছে না। নেহাতই সলিটারি সেল-এ ক্যামেরা ঢোকানো যায়নি বলে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ফাঁসির ক্লিপ পাওয়া যায় না, নইলে বাকি সবই ইন্টারনেটের রিয়েলিটি শোতে মজুত। ইরানে পাথর ছুড়ে ধর্ষিতাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে, সতেরো হাজার লাইক সহ সে ভিডিয়ো অনলাইন। আইসিসের জঙ্গিরা বন্দিদের মাথা কাটছে, নাগাল্যান্ডে ধর্ষণে অভিযুক্তকে ন্যাংটো করে জনসমক্ষে থেঁতলে মারা হচ্ছে আর ফুর্তিতে ডগমগ নাগরিক সমাজ দাঁত বার করে ছবি তুলতে ব্যস্ত, এ-সব অনুপম চিত্রকলাই এখন একটি ক্লিকের দূরত্বে, দেশকালের সীমানা টপকে আপামর মনুষ্যত্বের নাগালে। সবই সুলভ ও আন্তর্জাতিক, যে কারণে এ বার ইন্টারনেটের নাম বদলে সুলভ ইন্টারন্যাশনাল, রিয়েলিটি শোয়ের নাম অ্যাম্ফিথিয়েটার আর বেড়াহীন অবাধ বিনোদনের নাম ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ দেওয়া যেতেই পারে।

bsaikat@gmail.com

anandabazar rabibasariya saikat bandyopadhyay internet reality
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy