দেশ জুড়ে ‘শব্দপ্রাবল্য দিবস’ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। চার বছর আগে শব্দবাজিকে মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট পূর্ণ বৈধতা দেওয়ার পর থেকে, এবং গত বছর সংবিধানে শব্দপ্রাবল্যকে ‘ভারতের বর্তমান আভিজাত্য’ বলে ঘোষণা করার পর, এই দিবস পালনের জন্য আন্দোলন চলছিল। এ দিন পশ্চিমবঙ্গের বাস-ট্রেনে সরকারি প্রতিনিধি উপস্থিত থেকে ‘শব্দ-যুদ্ধ’ পরিচালনা করেছেন। সব থেকে জনপ্রিয় হয়েছে ‘মোবাইলে জোরে গান চালানো’ প্রতিযোগিতা। যাঁর গান পাশের পাশের কামরা থেকেও সব চেয়ে জোরে শোনা গেছে, তিনিই জিতেছেন। ক’বছর আগে ট্রেনে-বাসে মোবাইলে গান চালানো নিয়ে যে বিরোধিতা শুরু হয়েছিল এবং ‘হেডফোন আগে, কম্বল পরে’ নামে হেডফোন বিতরণের যে প্রকল্প চালু হয়, তার ব্যর্থতাকে বিদ্রুপ জানাতে, এ দিন স্টেশনে স্টেশনে বিখ্যাত গায়ক ফানি সিং-এর কিছু হাই-পিচ গান বাজানো হয়। শহরে বাস-অটো-ট্যাক্সিচালকদের মধ্যে হর্ন বাজানোর প্রতিযোগিতা হয়; তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে ‘বাইকের হর্ন প্রতিযোগিতা।’ সবচেয়ে অসহনীয় শব্দ সৃষ্টিকারী বাইকচালক সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে লাউডস্পিকার, সাউন্ড সিস্টেম, মাইক, ইত্যাদির পাশাপাশি বাংলা রক গানের সিডি এবং বিভিন্ন নেতা-মন্ত্রীদের রাজনৈতিক বক্তৃতার সিডি দেওয়া হয়। এ দিকে ‘চিলচিৎকার প্রতিযোগিতা’য় প্রথম স্থানাধিকারী কোচবিহারের প্রত্যন্ত গ্রামের কীর্তনদলের গায়কের দাবি: ভগবান তাঁদের গানের সময় জোড়হাতে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে দেখাও দিয়েছেন! ‘গালাগালি দেওয়া’ প্রতিযোগিতাটিও শহরের থেকে গ্রামে বেশি মনোরঞ্জন করেছে। ডাক্তাররাও বলেছেন, পুরনো দিনের চিকিৎসকরা শব্দপ্রাবল্যকে নিরসন করার পক্ষে যে প্রচার করতেন, তা ভুল। কারণ, একটি প্রকৃত প্রগতিশীল সমাজে, স্বাস্থ্য ভাল রাখার চেয়ে, অসভ্যতা, দেখনদারি ও অন্যকে বিরক্ত করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
পদ্মনাভ মজুমদার, শ্রীরামপুর, হুগলি
লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা: টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১। অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in