Advertisement
E-Paper

শাক রিসোতো থেকে অমলেটের ঝোল, চেনা রান্নায় অচেনা মোড়ক দিতে শেখালেন সিয়েনার রন্ধনশিল্পীরা

ইতিমধ্যেই বাঙালি খাবারে বিশ্বায়নের ছোঁয়া এনেছে সিয়েনা ক্যাফে। গ্রাহকদের কাছে এত দিন তা শুধুই পরিবেশন করেছে, এ বার দায়িত্ব নিয়েছে সে রান্না শেখানোর।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৫:০৩
বাংলার চোদ্দো শাক আর ইতালির রিসোতো মিলেমিশে একাকার

বাংলার চোদ্দো শাক আর ইতালির রিসোতো মিলেমিশে একাকার ছবি: সিয়েনা

ঝকঝকে একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতির শোরুমে অমলেট বানানোর প্রশিক্ষণ চলছে। শুনে মনে হতেই পারে, এ আর এমন কী ব্যাপার! রোজই তো বাড়িতে হয় অমলেট। ঘটা করে আবার শেখানোর কী আছে? কিন্তু এ যে সে ঘরোয়া মামলেট নয়, শেখানো হচ্ছে ফ্রেঞ্চ অমলেট বানানোর কায়দা-কৌশল। শহরের সিয়েনা ক্যাফেতে রন্ধনশিল্পী নিয়োগের আগে দেখে নেওয়া হয় আদৌ তিনি অমলেট বানানোর সঠিক কৌশল জানেন কি না। সেই কৌশল এ বার শহরবাসীকেও শেখানো হল! কেউ নিখুঁত হাতে রপ্ত করলেন, কেউ আবার ডাহা ফেল।

সিয়েনা, হিন্দুস্তান পার্কের এই ক্যাফেটি বাঙালি খাবারকে নিয়ে গিয়েছে শিল্পের পর্যায়। সেখানকার সাধারণ খাবারেও চোখে পড়বে বিশ্বায়নের ছোঁয়া। ক্যাফের অন্দরে খাবার নিয়ে পড়াশোনা, চর্চা, গবেষণা চলছে সর্ব ক্ষণ। বিদেশি খাবারকে কী ভাবে বাঙালিয়ানার মোড়কে মুড়িয়ে ফেলা যায়, সিয়েনার দক্ষ রন্ধনশিল্পীরা সেই কাজে সিদ্ধহস্ত।

রান্না শেখাচ্ছেন সিয়েনার রন্ধনশিল্পী কোয়েল রায়নন্দী।

রান্না শেখাচ্ছেন সিয়েনার রন্ধনশিল্পী কোয়েল রায়নন্দী।

স্থানীয় শাকসব্জি, চাল, মশলাপাতি দিয়ে নানা রকম বিদেশি পদ তৈরি করার জন্য পরিচিতি অর্জন করেছে সিয়েনা। সেই খ্যাতি এখন ছড়িয়ে পড়েছে দেশেবিদেশেও।এই ক্যাফের রন্ধনশিল্পীরা ‘বাজার টু টেবিল’ ভাবনায় বিশ্বাসী। মানে পাড়ার বাজারে যা পাওয়া যাবে, সেই অনুযায়ী তৈরি হবেক্যাফের মেনু। ঠিক যেমন বাঙালি ঘরে রোজ সকালে বাজারে গিয়ে ‘কী ভাল উঠল’-র খোঁজ পড়ে। এবং বাজারের থলে দেখে তবেই হেঁশেলে ঠিক হয়, কবে কী রান্না হবে। এখানেও বিষয়টা খানিকটা তেমন। সাহেবি খাবার মানেই চাই ভূরি ভুরি বিদেশি মালমশলা, সেই ছক ভেঙেছে সিয়েনা। বাজারে হাতের নাগালে পাওয়া যায় এমন শাকসব্জি, মাছ, মশলাপাতি দিয়েও কী ভাবে সুস্বাদু সব ফিউশন রেসিপি বানিয়ে ফেলা যায়, সিয়েনা ক্যাফে তার সঙ্গে কলকাতার পরিচয় ঘটিয়েছে।

ইতিমধ্যেই বাঙালি খাবারে বিশ্বায়নের ছোঁয়া এনেছে সিয়েনা ক্যাফে। গ্রাহকদের কাছে এত দিন তা শুধুই পরিবেশন করেছে, এ বার দায়িত্ব নিয়েছে সে রান্না শেখানোর। সম্প্রতি সিমেন্‌স আর সিয়েনার যৌথ উদ্যোগে রান্নার কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল সিমেন্‌সের শোরুমে। শোরুমটি মুহূর্তে বদলে গেল রান্নার ক্লাসঘরে। সিয়েনার অন্যতম প্রধান রন্ধনশিল্পী কোয়েল রায়নন্দীকে দেখা গেল সেই ক্লাসের শিক্ষিকার ভূমিকায়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কারও বয়স ২৫ তো কারও ৬৫। তাঁদের হাতে ধরে রান্না শেখালেন কোয়েল। যে সে রান্না নয়, সিয়েনার হেঁশেলের অন্যতম সেরা তিনটি পদ হাতেকলমে গল্পের ছলে শিখিয়ে দিলেন কোয়েল।

সিয়েনা স্পেশ্যাল গলদা চিংড়ি আর ঘিলু হলানডেইজ় সসের মেলবন্ধনের গোপন রেসিপি আর রইল না গোপনে। নুন মাখানো চিংড়ি মাছগুলিকে মাঝ বরাবর কেটে নিয়ে মিনিট ছয়েক গ্রিল করে তার পর মাখন, ডিমের হলুদ অংশ আর চিংড়ি মাছের ঘিলুর মিশ্রণে তৈরি সস্‌টি আবার ভরে দেওয়া হল মাথার মধ্যে! তার পর আবার মিনিট খানেক চলল গ্রিলিং। শেষে প্লেটে রকমারি হার্বস, চিলি অয়েল আর ভিনিগারের মিশ্রণে তৈরি চিমিচুরি সসের উপর সুন্দর করে সাজিয়ে দেওয়া হল চিংড়িমাছগুলি। তার পর সেই চিংড়ির স্বাদ চেখে দেখলেন ছাত্রছাত্রীরাও। সেই চিংড়ির এক কামড়েই যেন স্বর্গ।

গল্প করতে করতে কোয়েল বলে উঠলেন নিরামিষের দিনে সেদ্ধ ভাত খেয়েছেন তো? তবে সেদ্ধভাতে যদি টুইস্ট আনা যায়, তা হলে কেমন হয়? রেসোতো তো খেয়েছেন, তবে শাক রেসোতো খেয়েছেন কি? দীপাবলির আগের দিন বাড়িতে বাড়িতে চোদ্দো শাক বানানোর চল রয়েছে। শাকের মিশ্রণ আর সঙ্গে সুগন্ধি আতপ চালের মিশ্রণেই বানানো যাবে এই রেসিপি। থানকুনি, ধনেপাতা, পালং, নটে, কলমি, লাল শাকের মতো বাহারি শাকের মিশ্রণ সামান্য ভাপিয়ে আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কা, গোটা ধনে দিয়ে বেটে নিন। তার পর যে কোনও সুগন্ধি আতপ চাল সেদ্ধ সামান্য জলে আবার ফুটিয়ে একে একে শাকের মিশ্রণ, মাখন, ঘি আর নুন দিয়ে মিনিট পাঁচেক ফুটিয়ে নিলেই তৈরি শাক রিসোতো। উপরে বালসামিক ভিনিগার আর ব্যান্ডেল চিজ় ছড়িয়ে পরিবেশন করলেই বাংলার সেদ্ধভাত আর ইতালির রিসোতো মিলেমিশে একেবারে একাকার!

ডেকার্স লেনের মাংসের স্টু আর পাউরুটি খাননি, এমন বাঙালি কমই আছেন। সেই ভাবনা থেকেই রগরগে মাংসের ঝোলের সঙ্গে সিয়েনা ক্যাফেতে পরিবেশন করা হয় মুরগি অমলেট। ফ্রেঞ্চ অমলেটের ভিতর রকমারি চিজ় আর মুরগির মিশ্রণ, সঙ্গে মুরগির লাল ঝোল আর পাউরুটি— এই খাবাবে যেমন বাঙালি ছোঁয়া রয়েছে, তেমনই আছে সাহেবিয়ানাও।

সিয়েনার রন্ধনশিল্পীরা খাবার নিয়ে জাদু করতে ভালবাসেন। সেই জাদুতে যেন মন্ত্রমুগ্ধ শহরের খাদ্যপ্রেমীরা। কলকাতায় বসে ভাল ফিউশন খাবার চেখে দেখতে হলে সিয়েনা ক্যাফেতে এক বার ঢুঁ মারতেই পারেন। বাঙালি হেঁশেলের খুব চেনা পদগুলিকে যদি নতুন ভাবে চিনতে চান, তা হলে আগামী দিনে সিয়েনার এ রকম আরও রান্না কর্মশালার অপেক্ষায় থাকতেই হবে।

Bengali Cooking Recipes Sienna Cafe
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy