—প্রতীকী ছবি।
আর ঘণ্টাখানেকের অপেক্ষা। এক ঐতিহাসিক মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হবে সারা দেশবাসী। সূর্যের দিকে পাড়ি দেবে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর মহাকাশযান আদিত্য এল-১। শনিবার সকাল ১১টা ৫০ মিনিটে অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা সতীশ ধাওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টারের লঞ্চিং প্যাড থেকে সূর্যের উদ্দেশে রওনা দেবে এই মহাকাশযান। আর তা নিয়ে শনিবার সকাল থেকেই এই ব্যস্ততা তুঙ্গে সতীশ ধাওয়ন স্পেস রিসার্চ সেন্টারে। চিন্তা এবং উদ্বেগ ফুটে উঠেছে এই মহাকাশ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত থাকা বিজ্ঞানীদের মুখে। দিনরাত এক করে, নাওয়া-খাওয়া-ঘুম ত্যাগ করে বিগত কয়েক বছর ধরে এই মহাকাশ অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তাই উৎক্ষেপণের আগে শেষবেলায় প্রতিটি খুঁটিনাটি বার বার দেখে নিচ্ছেন তাঁরা।
বিভিন্ন জায়গা থেকে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যাবে আদিত্য এল-১ এর উৎক্ষেপণ। সেই উৎক্ষেপণ একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন পঞ্জাবের একটি সরকারি স্কুলের ২৩ পড়ুয়া। শুক্রবারই সেই পড়ুয়ারা শ্রীহরিকোটা পৌঁছেছে।
সূর্যের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করতে আদিত্য-এল-১ উপগ্রহটিকে মহাকাশে পাঠানো হবে। প্রায় সাড়ে ১০ লক্ষ কিলোমিটার ভ্রমণ করে গন্তব্যে পৌঁছবে সেটি। সময় লাগবে প্রায় ১২০ দিন। আদিত্য-এল-১ হতে চলেছে ভারত থেকে সূর্যের দিকে পাঠানো প্রথম মহাকাশযান। সূর্যের অপর নাম আদিত্য। তাই মহাকাশযানের এই নাম রাখা হয়েছে। মহাকাশযানটি বহন করে নিয়ে যাবে ভারতীয় রকেট ‘পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল’ (পিএসএলভি)। ইসরো জানিয়েছে, মহাকাশযানটিকে সূর্য-পৃথিবীর মধ্যে একটি ‘হ্যালো’ কক্ষপথের ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট বা এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করা হবে।
ইসরো সূত্রে খবর, উৎক্ষেপণের পর প্রায় ১৬ দিন পৃথিবীর চারিদিকে পাক খাবে আদিত্য-এল১। এই ১৬ দিনে সূর্যের দিকে পাড়ি দেওয়ার জন্য পাঁচটি ধাপে গতিবেগ বাড়াবে আদিত্য। এর পর ১১০ দিন সূর্যের অভিমুখে যাত্রা করে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে নক্ষত্রটিকে পর্যবেক্ষণ করবে সেটি। এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে সূর্য এবং পৃথিবীর আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ বল একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। ফলে এই অঞ্চলে পৌঁছে কৃত্রিম উপগ্রহ স্থির থাকতে পারে। মহাকাশের পরিবেশ, আবহাওয়া, তার উপর সূর্যের কী প্রভাব পড়ে, সে সব জানার চেষ্টা করবে আদিত্য এল১।
আদিত্য-এল-১ অভিযানের জন্য বরাদ্দ প্রায় ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা। এই অভিযান সফল হলে সৌরঝড়ের পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে ইসরো। পাশাপাশি সূর্যের আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবও বুঝতে সাহায্য করবে এই মহাকাশযান। এই অভিযানের মাধ্যমে সূর্য সম্পর্কে অজানা অনেক তথ্য ভারতের হাতে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আদিত্য এল১ যানটিতে মোট সাতটি পেলোড থাকবে। এগুলি সূর্যের বিভিন্ন স্তর খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফaটোস্ফিয়ার থেকে ক্রোমোস্ফিয়ার কিংবা সূর্যের একেবারে বাইরের দিকের স্তর কোরোনা, পর্যবেক্ষণ করবে এই পেলোডগুলি। এ ছাড়া, সূর্যের উত্তাপ, সৌরপদার্থের নিঃসরণ, সৌরঝড়ের মতো সূর্যকেন্দ্রিক বিষয়গুলি বুঝতেও বিজ্ঞানীদের সাহায্য করবে। ভিসিবল এমিশন লাইন করোনাগ্রাফি (ভিইএলসি) এবং সোলার আল্ট্রাভায়োলেট ইমেজিং টেলিস্কোপ (এসএউআইটি) নামে দু’টি মূল পে লোড রয়েছে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট পৌঁছানোর পরে এই ভিইএলসি পেলোড প্রতিদিন ১,৪৪০টি ছবি তুলে পাঠাবে। তাই এই পেলোডটিকেই আদিত্য এল-১-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পেলোড বলে মনে করা হচ্ছে।
অন্য পেলোডগুলি হল— সোলার লো এনার্জি এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এসওএলইএক্সএস), হাই এনার্জি এল১ অরবিটিং এক্স-রে স্পেক্ট্রোমিটার (এইচইএল১ওএস), আদিত্য সোলার উইন্ড পার্টিকল এক্সপেরিমেন্ট (এসপিইএক্স) এবং প্লাজ়মা অ্যানালাইজ়ার প্যাকেজ ফর আদিত্য (পিএপিএ)। উল্লেখ্য, চন্দ্রযান-৩-এর চারটি পেলোড রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy