Advertisement
E-Paper

মানুষের মুখের আদলে পাথর, মধ্যিখানে কার আঙুলের ছাপ! ৪৩ হাজার বছরের পুরনো শিলা ঘেঁটে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা

স্পেনের এরেসমা নদীর ধারে পাললিক শিলাস্তর থেকে ২০ সেন্টিমিটারের একটি লম্বাটে পাথরের টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে পাওয়া গিয়েছে ৪৩ হাজার বছরের পুরনো আঙুলের ছাপ!

স্পেনের নদীর ধারের শিলাস্তর খুঁড়ে পাওয়া সেই পাথরের টুকরো।

স্পেনের নদীর ধারের শিলাস্তর খুঁড়ে পাওয়া সেই পাথরের টুকরো। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২৫ ০৮:৫৭
Share
Save

লম্বায় খুব বেশি হলে ২০ সেন্টিমিটার হবে। খানিকটা লম্বাটে ডিম্বাকৃতি পাথরের টুকরো। উপরের দিকে দু’টি এবং নীচের দিকে ঠিক মাঝ বরাবর একটি হালকা ভাঁজ। যেন মাটি দিয়ে কাঠামো তৈরির সময়ে যত্ন করে সমান মাপে দু’টি চোখ আর একটি ঠোঁট এঁকে দিয়েছেন শিল্পী। সেই চোখ আর ঠোঁটের মাঝের অংশে রয়েছে ছোট্ট একটা লাল রঙের ফোঁটা। যেন কেউ নাকের অংশে লাল টিপ পরিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি এই পাথরের টুকরো সাড়া ফেলে দিয়েছে ইতিহাসের মহলে। প্রত্নতাত্ত্বিকেরা জানাচ্ছেন, এ যে সে পাথর নয়। এর বয়স ৪৩ হাজার বছর! পাথরের ‘নাকে’ সেই লাল ফোঁটাটিও সাধারণ কোনও রঙের দাগ নয়। তা প্রাচীন মানব নিয়ান্ডারথালের আঙুলের ছাপ!

স্পেনের এরেসমা নদীর ধারে স্যান লাজ়ারো রক শেল্টার থেকে ২০২২ সালে এই বিশেষ ধরনের পাথরটি উদ্ধার করা হয়েছিল। তার পর তা নিয়ে বিস্তর পরীক্ষানিরীক্ষা এবং গবেষণা হয়েছে। এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে ‘আর্কিওলজিক্যাল অ্যান্ড অ্যানথ্রোপোলজিক্যাল সায়েন্সেস’ নামক জার্নালে। বিজ্ঞানীরা রেডিয়োকার্বন বিশ্লেষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন, এই পাথর ৪২ থেকে ৪৩ হাজার বছরের পুরনো। প্রায় ওই সময়েই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল নিয়ান্ডারথালেরা। মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ডেভিড আলভারেজ় আলোনসো এই পাথর উদ্ধার এবং এই সংক্রান্ত গবেষকদলের অন্যতম সদস্য। তিনি জানান, নদীর ধারে পাললিক শিলার যে স্তরে পাথরটি পাওয়া গিয়েছে, সেখানে আরও কিছু পাথর ছিল। প্রত্যেকটিই হাতুড়ি জাতীয় যন্ত্র হিসাবে ব্যবহৃত হত, সেই প্রমাণ মিলেছে। পাথর ঠুকে ঠুকে কাজ করা হত। অন্যান্য পাথরের চেয়ে এই পাথরটি আকারে একটু বড় ছিল। তাই সহজেই তা খননকারীদের চোখে পড়ে।

গবেষকদের মতে, প্রাকৃতিক কোনও রঞ্জকের সঙ্গে জলের মিশ্রণে আঙুলের মাথা ডুবিয়ে পাথরটিতে লাল ছাপটি দেওয়া হয়েছে। সেটি নিয়ান্ডারথালের আঙুল, এ বিষয়ে বিজ্ঞানীরা প্রায় নিশ্চিত। তবে হাতের বা পায়ের ঠিক কোন আঙুলের ছাপ, কেনই বা তা দেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। আঙুলের ছাপ বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা আরও একটি বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন। প্রাথমিক ভাবে গবেষণা বলছে, এই ছাপ কোনও প্রাপ্তবয়স্ক নিয়ান্ডারথাল পুরুষের আঙুল থেকে এসেছে। মহিলা বা শিশুর আঙুলের ছাপ এমন হওয়া সম্ভব নয়। যদিও এর আগে নিয়ান্ডারথালের কোনও আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। ফলে তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার উপায় নেই।

আলভারেজ় জানান, পাথরের উপরে আঙুলের ছাপ এঁকে দিয়েছেন যিনি, তাঁর উদ্দেশ্য এখন বলা প্রায় অসম্ভব। তবে যে সময়ে পাথরকে মানুষ হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করত, সেই সময়ের পাথরে এমন একটা দাগ সাধারণ ভাবে থাকার কথা নয়। এর থেকে বোঝা যায়, পাথরটিকে ভিন্ন কোনও মাত্রা দিতে চেয়েছিলেন কেউ। একে এখনও পর্যন্ত প্রাপ্ত মানুষের আঙুলের ছাপের মধ্যে প্রাচীনতম বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

মানুষের মুখের আদল-যুক্ত ওই পাথরে আঙুলের লাল ছাপটি প্রত্নতাত্ত্বিকদের ভাবাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, নিয়ান্ডারথালদের বিমূর্ত চেতনার প্রতিফলন ওই আঙুলের ছাপ। কোনও বস্তু বা বিষয়কে যে তারা বাস্তবের মাটিতে বসেই অন্য ভাবে ভাবতে পারতেন, তাতে কল্পনার ছোঁয়া থাকত, এই পাথর থেকে তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকের মত। তাঁদের মতে, নিয়ান্ডারথালদের উন্নত চেতনার প্রতিফলন এই পাথরে ঘটেছে। এমনকি, কেউ কেউ দাবি করছেন, নিয়ান্ডারথালদের শিল্পকর্ম তৈরির ক্ষমতা ছিল। তাঁরা ছবি আঁকতে পারতেন। আলভারেজ়ের মতে, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, কোনও নিয়ান্ডারথাল এই পাথরটিকে খুঁজে পেয়েছিলেন। অদ্ভুত আদলের জন্য পাথরটি আলাদা করে তাঁর চোখে পড়েছিল। ইচ্ছা করেই এতে তিনি লাল বিন্দু এঁকে দেন। অসাবধানতাবশত ওই দাগ পড়েছে বলে গবেষকেরা মনে করছেন না। কারণ যে শিলাস্তরে ওই পাথর পাওয়া গিয়েছে, সেখানে তেমন কোনও রঞ্জক আগে থেকে ছিল না। বাইরে থেকে ইচ্ছাকৃত তা আনা হয়েছে, এ বিষয়ে গবেষকেরা নিশ্চিত।

মাদ্রিদের কমপ্লুটেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আন্দ্রেস হেরেরো বিবিসি-কে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, বছর পাঁচেক আগে নদীর ধারের শিলাস্তরে খননকার্য শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালে প্রায় পাঁচ ফুট গভীর শিলাস্তর থেকে ওই পাথরটি উদ্ধার করা হয়। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথমে তো আমরা বিশ্বাসই করতে পারিনি কী দেখছি! অন্য পাথরের চেয়ে অনেক বড় একটা পাথরের টুকরো, মাঝে একটি লাল দাগ! দেখে মনে হচ্ছিল, একটা মানুষের মুখ।’’ স্পেনের প্রত্নতাত্ত্বিক গনজ়ালো স্যানটোনজা জানিয়েছেন, এই পাথরের টুকরোটি নিয়ান্ডারথালের আঁকা একমাত্র বহনযোগ্য শিল্পকর্ম। ইউরোপীয় মহাদেশে আঁকা প্রাচীনতম বহনযোগ্য শিল্পকর্মও এটিই।

Fingerprint Neanderthal Neanderthal Period Spain

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।