E-Paper

রক্তপরীক্ষায় বাইপোলার ডিজ়অর্ডার ধরা সম্ভব, রিপোর্ট

বছর খানেক ‘মর্ডার্ন লাভ’ নামে হলিউডের একটি ওয়েব সিরিজ় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তার একটি গল্পের মুখ্য চরিত্রে ছিলেন অ্যান হ্যাথওয়ে। তরুণী বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের আক্রান্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:০৩
An image of Blood

—প্রতীকী চিত্র।

মন খারাপ, না হতাশা, নাকি মনের আরও গভীরে বাসা বেঁধেছে কঠিন অসুখ! শরীর খারাপ হলে রক্তপরীক্ষা করে রোগ ধরে ফেলেন চিকিৎসকেরা (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে)। কিন্তু মনের অসুখে তেমন পথ কই! সেই অন্ধকার পথে আলো ফেললেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। তাঁরা একটি গবেষণাপত্রে দাবি করেছেন, রক্তপরীক্ষাতেও বাইপোলার ডিজ়অর্ডার ধরা সম্ভব।

বছর খানেক ‘মর্ডার্ন লাভ’ নামে হলিউডের একটি ওয়েব সিরিজ় দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। তার একটি গল্পের মুখ্য চরিত্রে ছিলেন অ্যান হ্যাথওয়ে। তরুণী বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের আক্রান্ত। দারুণ উজ্জ্বল ঝলমলে সুন্দরী এক মেয়ে চার দিক আলো করে রাখেন। আর হঠাৎই লোকচক্ষুর আড়ালে অন্ধকারে ডুবে যান। সপ্তাহ কেটে যায়, বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না তরুণী। বাইপোলার ডিজ়অর্ডার হল এমনই এক মনের অসুখ। হঠাৎই রোগীর প্রবল মন খারাপ, হতাশা দেখা দেয়। একটা লম্বা সময় ধরে সেটা চলতে থাকে। তার পর হঠাৎই সে ‘ভাল’ হয়ে যায়। মন অস্বাভাবিক ভাবে রকম উদ্দীপনাময়, কর্মশক্তিসম্পন্ন হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে চিকিৎসকেরা একে মানসিক হতাশা বা ডিপ্রেশন ধরে নেন।

কেমব্রিজের বিজ্ঞানীরা বলছেন, নতুন গবেষণায় তাঁরা দেখিয়েছেন রক্তপরীক্ষায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগীর বাইপোলার ডিজ়অর্ডার রয়েছে কি না, তা ধরা সম্ভব। বাকি ক্ষেত্রে রোগ ধরতে রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি ‘ডিজিটাল মেন্টাল হেল্‌থ অ্যাসেসমেন্ট’-ও জরুরি।

পুরো বিষয়টাই অবশ্য এখনও গবেষণার স্তরে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে রোগনির্ণয় করা হয়, তার সঙ্গে রক্তপরীক্ষার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। রোগীর মানসিক স্থিতির সঙ্গে শরীরের সম্পর্ক কী বা এর উৎস ঠিক কোথায়, তা-ও জানা সম্ভব হবে। ‘জামা সাইকায়াট্রি’ জার্নালে রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে।

বিশ্বের জনসংখ্যার ১ শতাংশ বাইপোলার ডিজ়অর্ডারে আক্রান্ত। অর্থাৎ কমপক্ষে ৮ কোটি। কিন্তু এর মধ্যে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুল রোগনির্ণয় হয়। ধরে নেওয়া হয় ডিপ্রেশন বা হতাশা। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত কেমব্রিজের ‘কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি’ বিভাগের অধ্যাপক জেকুব টোমাসিক বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা যখন হতাশায় ভোগেন, তখন ডাক্তারের কাছে যান। তাঁদের মনের হাইপারঅ্যাকটিভ বা অতি-উদ্যমী অংশটা ডাক্তারকে জানান না। চিকিৎসকও রোগ ধরতে
পারেন না। তাঁরা ভাবে রোগী ডিপ্রেশনে আক্রান্ত।’’

কেমব্রিজের গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন অধ্যাপক সেবিন বান। তিনি বলেন, ‘‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডারের সঙ্গে ডিপ্রেশন বা হতাশার মিল রয়েছে। কিন্তু দু’টোর চিকিৎসা আলাদা।’’ সেবিনের কথায়, ‘‘বাইপোলার ডিজ়অর্ডারে আক্রান্ত কোনও রোগীকে যদি শুধু অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট দেওয়া হয়, মুড স্টেবিলাইজ়ার (মনকে স্থিতিশীল করার ওষুধ) না দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে রোগীর মানসিক অবস্থার অবনতি ঘটার (উন্মাদও হয়ে যেতে পারেন) আশঙ্কা বাড়ে।’’ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই কারণে দ্রুত ও সঠিক রোগনির্ণয় জরুরি। রক্তপরীক্ষায় যদি রোগ ধরা সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে রোগী শুরু থেকে সঠিক চিকিৎসা পাবেন। চিকিৎসকদের উপর থেকেও চাপ কিছুটা কমবে।

কেমব্রিজের গবেষণায় ৩ হাজার রোগী অংশ নিয়েছিলেন। প্রত্যেকের মানসিক অবস্থার বিশ্লেষণ করতে ৬০০ প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁদের অতীত, বর্তমান, পরিবারের ইতিহাস, তাঁরা কখনও অত্যাচারিত হয়েছেন কি না, যাবতীয় সব জানা হয়। মানসিক বিশ্লেষণের পরে ৩ হাজার জনের মধ্যে ১ হাজার অংশগ্রহণকারীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তার পরে রক্তে উপস্থিত ৬০০ মেটাবোলাইটস (বিপাকজাত পদার্থ) বিশ্লেষণ করা হয় ‘মাস স্পেকট্রোমেট্রি’ পদ্ধতির সাহায্যে। পরীক্ষা শেষে বিজ্ঞানীরা বাইপোলার রোগীদের শরীরে নির্দিষ্ট একটি বায়োমার্কার খুঁজে পান।

সেবিন বলেন, ‘‘বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে রোগীর মনের বিশ্লেষণ জরুরি। কিন্তু বায়োমার্কার
পরীক্ষা রোগনির্ণয়কে সহজ করবে। দ্রুত রোগ ধরা পড়বে।’’ বিজ্ঞানী টোমাসিকের কথায়, ‘‘মনের রোগের সঙ্গে কিন্তু শরীরের যোগ রয়েছে। রোগীদেরও এটা জানা দরকার, সবটা তাঁদের মনে নেই। এটা (বাইপোলার ডিজ়অর্ডার) একটা অসুখ, যা অন্য সব রোগের মতো শরীরেরও ক্ষতি করে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Blood Test Report Blood Tests Bipolar Disorder Medical Report Research

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy