Advertisement
E-Paper

ফুঁ দিয়ে কণা ওড়াচ্ছে, মেঘ দিয়ে মুখ ঢাকছে বেন্নু! দেখল নাসার যান

তার মাটি তুলে আনবে বলে, নাসা ওই ‘ঘাতক’ গ্রহাণুর মুলুকে পাঠিয়েছিল একটি মহাকাশযান। ‘ওসিরিস-রেক্স’। সেই মহাকাশযানই জানাতে পেরেছে বেন্নুর এই মুখরক্ষার কৌশল।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৯ ১৬:৪৭
গ্রহাণু ‘বেন্নু’। ছবি- নাসা

গ্রহাণু ‘বেন্নু’। ছবি- নাসা

কাউকেই তার মুখ দেখাতে চায় না বেন্নু। পাছে চট করে কেউ দেখে না ফেলে তাকে, তাই মেঘ দিয়ে তার মুখ ঢেকে রাখে বেন্নু। পৃথিবীর খুব কাছাকাছি থাকা একটি গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড। আগামী ২০০ বছরের মধ্যে এই বেন্নুরই আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে পৃথিবীর বুকে।

তার মাটি তুলে আনবে বলে, নাসা ওই ‘ঘাতক’ গ্রহাণুর মুলুকে পাঠিয়েছিল একটি মহাকাশযান। ‘ওসিরিস-রেক্স’। সেই মহাকাশযানই জানাতে পেরেছে বেন্নুর এই ‘মুখরক্ষা’র কৌশল।

নাসার মহাকাশযান জানিয়েছে, ফুঁ দিয়ে তার পিঠ থেকে ছোট ছোট কণাদের মহাকাশে উড়িয়ে দিচ্ছে বিশাল ওই গ্রহাণু বা অ্যাস্টারয়েড। আর সেই উড়ে যাওয়া কণারা তৈরি করছে ঘন মেঘ। সেই মেঘেই নিজের মুখ ঢাকছে গ্রহাণু ‘বেন্নু’।

কেন গ্রহাণু বেন্নুতে অভিযান, দেখুন ভিডিয়ো

অতীতে যে অনেক বড় বড় ধাক্কা সামলাতে হয়েছে তাকে, বিশাল বিশাল উল্কা যে তার পিঠে আছড়ে পড়ছে বহু বার, ওসিরিস-রেক্স জানিয়েছে, বেন্নু আজও তার ‘স্মৃতিচিহ্ন’ বয়ে চলেছে। অসম্ভব রুখুসুখু বেন্নুর গোটা পিঠ। এতটাই উঁচু-নিচু, এতটাই আঁকাবাঁকা, এতটাই উথালপাতাল তার বুকে যে তার মাটি তুলে আনার জন্য বেন্নুর পিঠে নামব নামব করেও নামতে পারছে না নাসার মহাকাশযান। ভাবছে, বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে করতে দেখে চলেছে, গ্রহাণুটির পিঠে ঠিক কোন জায়গায় নামা যায় নিরাপদে। কিছু ক্ষণ অন্তত টিঁকে থাকা যায়। নিজেকে সচল, সক্রিয় রাখা যায়। তার পর টুক করে তুলে নেওয়া যায় বেন্নুর পিঠের কিছু কিছু অংশ। যা নিয়ে ওসিরিস-রেক্সের পৃথিবীতে ফিরে আসার কথা আর ৪ বছর পর। ২০২৩-এ।

আরও পড়ুন- ইতালীয় মহিলাকে নিয়ে ভিন গ্রহে প্রাণ খুঁজবেন পুরুলিয়ার সুজন​

আরও পড়ুন- এ বার মঙ্গলে ওড়ানো হবে হেলিকপ্টার!​

হিউস্টনে লুনার অ্যান্ড প্ল্যানেটারি কনফারেন্সের ৫০তম সম্মেলনে এই আবিষ্কারের ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ৩১ ডিসেম্বর থেকে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে ওসিরিস-রেক্স। অত কাছে পৌঁছনোর পর দেখে, আমেরিকার ১০২ তলার এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংটা উচ্চতায় যতটা (৩৮১ মিটার বা ১ হাজার ২৫০ ফুট), চওড়ায় তার চেয়ে মোটেই বেশি নয় আমাদের কাছে-পিঠে থাকা বেন্নু।

ওসিরিস-রেক্স মিশনের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর, টাকসনে আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানের ফরাসি অধ্যাপক দাঁতে লরেত্তা ই-মেলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, অবিশ্বাস্য ঘটনার কথা জানা গিয়েছে। ওসিরিক্স-রেক্সের পাঠানো ছবি ও তথ্যাদি থেকে। দেখা গিয়েছে, বেন্নু যেন ফুঁ দিয়ে তার পিঠ থেকে উড়িয়ে দিচ্ছে ছোট ছোট কণাদের। সেই সব কণা, যারা আমাদের সৌরমণ্ডল সৃষ্টির পর (৫০০ কোটি বছর আগে) থেকে এখনও পর্যন্ত বদলায়নি তাদের স্বভাব, চরিত্র, আচার, আচরণ। সেই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণারাই বেন্নুর উপর তৈরি করছে ঘন মেঘ। যা কক্ষপথ থেকে বেন্নুকে মহাকাশযানের ‘চোখ’ থেকে আড়াল করে রাখছে।

লরেত্তার কথায়, ‘‘বেন্নুর পিঠ যে এতটাই রুখুসুখু, তাকে যে অনেক ঝড়ঝাপ্‌টা সইতে হয়েছে সুদূর অতীতে, এত দিন তা আমাদের জানা ছিল না।’’

গবেষকদলের অন্যতম সদস্য, অনাবাসী ভারতীয় বিজ্ঞানী আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বেন্নুর ফুঁয়ে তার পিঠ থেকে মহাকাশে উড়ে আসা ছোট ছোট কণাদের কথা জানা গিয়েছে একেবারে হালে। এ বছরের ৬ জানুয়ারি। ওই সময় বেন্নুর পিঠ থেকে ওসিরিস-রেক্স মহাকাশযানটি ছিল মাত্র ১ মাইল বা ১.৬১ কিলোমিটার দূরে। খুব কাছের কক্ষপথ থেকে বেন্নুকে প্রদক্ষিণ করার সময়েই ওসিরিস-রেক্সের চোখে ধরা পড়েছে ওই ঘন মেঘ।

ধ্রুবজ্যোতির কথায়, ‘‘দেখেছি, ওই ছোট ছোট কণারা বেন্নুকে তার উপগ্রহের মতো প্রদক্ষিণ করে চলেছে।’’

বেন্নুকে পর্যবেক্ষণ করতে আর তার মাটি পৃথিবীতে নিয়ে আসতে ২০১৬-য় মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছিল নাসার ওসিরিস-রেক্স। লক্ষ্য ছিল, বেন্নুর বুকে জল ও খনিজ পদার্থের সন্ধান করা। সেগুলি কতটা পরিমাণে রয়েছে, তার হালহদিশ জানা। পাশাপাশি আগামী দিনে কী ভাবে পৃথিবীর বুকে বেন্নুর আছড়ে পড়ার আশঙ্কা রুখে দেওয়া যায়, তার উপায় খোঁজা।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy