Advertisement
E-Paper

ভূরিভোজ মহাকাশে, তারা গিলছে ব্ল্যাক হোল!

ভূরিভোজ চলছে মহাকাশে! যেন দেবতার গ্রাস! একটা আস্ত সূর্যকে গিলে খাচ্ছে অসম্ভব রকমের ভারী একটা ব্ল্যাক হোল। সূর্যটা জড়িয়ে গিয়েছে যেন মাকড়সার জালে! মৃত্যু অবধারিত জেনেও ‘বাঁচা’র পথ খুঁজে পাচ্ছে না।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৩৬

ভূরিভোজ চলছে মহাকাশে!

যেন দেবতার গ্রাস!

একটা আস্ত সূর্যকে গিলে খাচ্ছে অসম্ভব রকমের ভারী একটা ব্ল্যাক হোল। সূর্যটা জড়িয়ে গিয়েছে যেন মাকড়সার জালে! মৃত্যু অবধারিত জেনেও ‘বাঁচা’র পথ খুঁজে পাচ্ছে না।

গনগনে সূর্যটা এ ভাবেই ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ডুবে যাচ্ছে ব্রহ্মাণ্ডের অতল অন্ধকারে। অনিবার্য মৃত্যুর মুখোমুখি সেই সূর্যটা রয়েছে আমাদের থেকে মাত্র ৩০ কোটি আলোক-বর্ষ দূরে। সুখবর এই টুকুই, সেই সূর্যটা আমাদের সূর্য নয়।

এই প্রথম কোনও সূর্যের ধীরে ধীরে দেবতার গ্রাসে চলে যাওয়ার ছবি পেলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। মৃত্যুপথযাত্রী সেই সূর্যের ছবি তুলেছে ‘হাব্‌ল স্পেস’, ‘চন্দ্র’ এক্স-রে ও ‘লোফার’ রেডিও টেলিস্কোপ। সেই ছবি শুক্রবার নাসার তরফে প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, গত কালই ছিল নাসার ক্যালেন্ডারে ‘ব্ল্যাক হোল ফ্রাইডে’। ব্ল্যাক হোলের কাণ্ডকারখানা সম্পর্কে প্রচুর ছবি ও তথ্য প্রকাশ করেছে নাসা। তাতেই উল্লেখ করা হয়েছে ‘দেবতার গ্রাসে’র ওই সাম্প্রতিক ছবি। ওই অভিনব পর্যবেক্ষণের খবর দিয়েছে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোয়ার্ট ভান ভালজেনের গবেষণাপত্র-‘রেডিও জেট্‌স ফ্রম দ্য অপটিক্যাল, এক্স-রে ব্রাইট অন স্টেলার টাইডাল ডিসরাপশান ফ্লেয়ার’। সেটি বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর ২৬ নভেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।


ব্ল্যাক হোলের অতলে। ছবি- নাসা্।

এই সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের অভিনবত্ব কোথায়?

পুণের জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র ‘আয়ুকা’র অধিকর্তা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী সোমক রায়চৌধুরীর মতে, ‘‘এই পর্যবেক্ষণ, আক্ষরিক অর্থেই, অভিনব। ব্ল্যাক হোলের রাক্ষুসে খিদের কথা আমাদের অজানা নয়। তার চার পাশে যা কিছু থাকে, তা সে কোনও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাই হোক বা কোনও ভারী পদার্থ অথবা গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, নিজের প্রচণ্ড টান বা অভিকর্ষ বলের জোরে সেই সব কিছুকেই টেনে নেয় ব্ল্যাক হোল। গিলে খায়! রেহাই পায় না আলোও। তাকেও ব্লটিং পেপারের মতো পুরোপুরি ‘শুষে নেয়’ বলে ব্ল্যাক হোল থেকে আলো ঠিকরে বেরতে পারে না। তাই ব্ল্যাক হোলকেও দেখা যায় না। মহাজাগতিক গ্যাস, ধুলিকণা চলে যাচ্ছে ‘সর্বভুক’ ব্ল্যাক হোলের ‘পেটে’, এমন ছবি এর আগে বহু বার ধরা পড়েছে টেলিস্কোপে। ‘চন্দ্র’ এক্স-রে টেলিস্কোপ দিয়ে আমি নিজেই গত ১৪/১৫ বছরে এমন ঘটনা বহু বার চাক্ষুষ করেছি। কিন্তু আস্ত একটা তারাকে গিলে খাচ্ছে ব্ল্যাক হোল, এমন ছবি আমরা পাইনি।’’

পড়ুন--তিনটে পৃথিবীর মাপের গ্রহ, পুরোটাই হিরের!

অন্য ছায়াপথ থেকে ঝাঁক ঝাঁক তারা লুঠ করেছিল আমাদের আকাশগঙ্গা!

মঙ্গলে কোনও কালেই প্রাণ ছিল কি?

মঙ্গলের চাঁদে ঘনাচ্ছে ঘোর ‘অমঙ্গল’

কিন্তু সেটা যে সূর্যের মতো খুব বড় আকারের একটা মহাজাগতিক বস্তু, সে ব্যাপারে কী ভাবে নিশ্চিত হলেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা?

সোমকবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘এটা বুঝতে হলে জানতে হবে, আমরা ব্ল্যাক হোলের হদিশ পাই কী ভাবে ? যাদের সে গিলে খাচ্ছে, তাদের শরীরের ছিন্নভিন্ন অংশগুলি ব্ল্যাক হোল ছড়িয়ে রাখে তার চৌহদ্দির (ইভেন্ট হরাইজন) ঠিক বাইরে। যাকে আমরা বলি ‘অ্যাক্রিশন ডিস্ক’। খাবারের থালার চার পাশে যেমন ছড়ানো ছিটোনো থাকে এঁটোকাঁটা, ঠিক সেই রকমই। সেই ‘এঁটোকাঁটা’ থেকে যে এক্স-রে বা রেডিও সিগন্যাল ঠিকরে বেরিয়ে আসে, তা দেখেই আমরা বুঝতে পারি, ধারে-কাছে কোনও ব্ল্যাক হোল রয়েছে। সেই ‘এঁটোকাঁটা’ থেকে একেবারে হালে এত জোরালো এক্স-রে বেরিয়ে আসার ছবি মিলেছে, যা সূর্যের মতো কোনও বড় মহাজাগতিক বস্তু দেবতার গ্রাসে না গেলে সম্ভব নয়। সেটা বড় বলেই তাকে চটজলদি গিলে নিতে পারছে না ব্ল্যাক হোল। কিছুটা বমি করে দিচ্ছে! যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘জেট্‌স’। সেই ‘বমি’টাই এক্স-রে হিসেবে ধরা পড়ছে আমাদের টেলিস্কোপে। আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি, কারণ অপটিক্যাল, এক্স-রে এবং রেডিও-তিন ধরনের টেলিস্কোপেরই নজরে পড়েছে ওই ভূরিভোজের ছবি। যা এর আগে কখনও হয়নি।’’

কত দিন ধরে চলছে ‘সর্বভূক’ ব্ল্যাক হোলের ওই রাজকীয় ‘ভোজসভা’?

সোমকবাবু জানাচ্ছেন, ‘‘ভূরিভোজ বেশি দিন ধরে চলতে পারে না। তাতে ‘হজমে’র গণ্ডগোল হয়! আমার তো মনে হয়, বছর খানেক হল ওই ‘ভোজ’ শুরু হয়েছে। আর বড়জোর দু’-তিন বছর। তার মধ্যেই মরে যাবে ওই সূর্যটি। ওই ভারী ব্ল্যাক হোলের অসম্ভব জোরালো অভিকর্ষ বল মৃত্যুপথযাত্রী সূর্যের শরীর থেকে নিংড়ে বের করে নিচ্ছে তার যাবতীয় জ্বালানি। তার ‘প্রাণ’। ব্ল্যাক হোল তার কিছুটা খাচ্ছে। কিছুটা ‘বমি’ করছে। যেটুকু ‘বমি’ করে দিচ্ছে, সেটাই হয়ে উঠছে এক্স-রে। আর সেটা অত্যন্ত জোরালো।’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy