Advertisement
E-Paper

রক্তে চিনি মিশিয়ে শরীরে বিষ ঢালছে আমাদের মগজ!

কে বলল, শুধুই ‘অমৃত’ দেয় আমাদের মগজ! বিষ দেয় না? আমাদের শরীরে প্রতি মুহূর্তে তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি পরিমাণে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে মগজ! ফ্রুকটোজ।

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ১০:০০

কে বলল, শুধুই ‘অমৃত’ দেয় আমাদের মগজ! বিষ দেয় না?

বিষ কি আমাদের শরীরে পুরে দেয় শুধুই কিছু কিছু জিন? বিষ ঢেলে দেয় শুধুই বিষিয়ে ওঠা প্রকৃতি, পরিবেশ? বিষ ঢুকিয়ে দেয়, যে ভাবে চলি, বাঁচি সেই বেঠিক জীবনচর্যা? যা খাইদাই, সেই বিলকুল ভুলে ভরা খাদ্যাভ্যাস?

হালের গবেষণা জানাচ্ছে, আমাদের শরীরে প্রতি মুহূর্তে তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি পরিমাণে বিষ ছড়িয়ে দিচ্ছে মগজ! ফ্রুকটোজ। চিনি বলতে আমরা যা বুঝি সেই গ্লুকোজের জাতভাই! আক্ষেপ ছাড়া আমাদের হাতে আর পড়ে রইল কী? যে আক্ষেপে বলতে হবে, ‘শুধু বিষ, শুধু বিষ দাও। অমৃত চাই না!’

সর্বনেশে ফ্রুকটোজের কথা জানা ছিল। জানা ছিল, মিষ্টি বিস্কুট, ফলের রস, চকোলেট খেলে সে সবের হাত ধরেই আমাদের শরীরে ঢুকে পড়ে সেই ‘চরম শত্রু’- ফ্রুকটোজ। তার পর রক্তের ‘সরণি’ ধরে সেই ফ্রুকটোজ হুড়মুড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা শরীরে। দ্রুত, অসম্ভব দ্রুত গতিতে। যেন টাইফুন বা টর্নেডো। সেই ফ্রুকটোজের বাড়তি পরিমাণই আমাদের শরীরে ঢেলে দেয় বিষ। যা শরীরে বীজ পুঁতে দেয়ে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের। শারীরিক স্থূলতারও।

হালের গবেষণা জানিয়ে দিল, ভয়টা শুধুই বাইরের নয়। ‘ঘরশত্রু বিভীষণ’কে নিয়েই আমরা বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি। আজন্ম, আজীবন। সেই ‘বিভীষণ’ আমাদের মগজ বা মস্তিষ্ক। যা প্রতি মুহূর্তে তৈরি করছে ফ্রুকটোজ। আর সেই ফ্রুকটোজ রক্তের ‘সরণি’ ধরেই পৌঁছে যাচ্ছে শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে। এ মাথা থেকে ও মাথা। এ পাড়া থেকে ও পাড়ায়। হৃদযন্ত্র বা হার্টে। ফুসফুস, কিডনি, প্যাংক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ে।


যত ফ্রুকটোজ ফল থেকে ঢোকে শরীরে, তার চেয়ে অনেক বেশি বিষ ছড়িয়ে দেয় মগজ!

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষকদলের ওই গবেষণাপত্রটি ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ছাপা হয়েছে চিকিৎসা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘জেসিআই-ইনসাইট’-এ। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জেনিস হোয়াঙের নেতৃত্বে ওই গবেষকদলে রয়েছেন এক অনাবাসী ভারতীয় নিউরোসায়েন্টিস্ট প্রবীণ মাথুর।

কী দেখেছেন গবেষকরা?

আনন্দবাজারের পাঠানো প্রশ্নের জবাবে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের অধ্যাপক প্রবীণ মাথুর ই-মেলে লিখেছেন, ‘‘আমরা দেখেছি, আমাদের ব্রেন বা মস্তিষ্ক যে জ্বালানিতে তার কাজকর্ম চালিয়ে যায় আজীবন, সেই গ্লুকোজকে ‘পুড়িয়ে’ ফেলে বা ভেঙে ফেলে ফ্রুকটোজ তৈরি করে প্রচুর পরিমাণে। আর তা শরীরে ছড়িয়ে দেয় রক্তের মাধ্যমে। আমরা ৮ জন স্বাস্থ্যবান পুরুষ ও নারীর ব্রেন স্ক্যান করেছিলাম। তার পর বিশেষ একটি পদ্ধতিতে বিভিন্ন সময়ে সেই ৮ জনের মগজে কতটা ফ্রুকটোজ তৈরি হয়েছে, তার মাপজোকও করেছিলাম। ১০ মিনিটের মধ্যে দেখেছিলাম, কী অসম্ভব দ্রুত হারে ওই ৮ জনের মগজে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। কিছু ক্ষণ পর দেখলাম, ফ্রুকটোজের পরিমাণও অসম্ভব রকম বেড়ে গিয়েছে, এক লাফে। পরে দেখেছি, মগজে ‘পলিওল পাথওয়ে’ বলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার যে-পথটি রয়েছে, সেই পথ ধরেই তৈরি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ। সেই গ্লুকোজ ভেঙে গিয়ে তৈরি হচ্ছে সরবিটল। আর সেখান থেকেই তৈরি হচ্ছে ফ্রুকটোজ। রক্তে চিনির পরিমাণ মাপতে আলাদা ভাবে বিভিন্ন গ্রুপের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করেছিলাম আমরা।’’

মগজে হঠাৎ করে ফ্রুকটোজের পরিমাণ অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যেতে কতটা সময় লাগে?

মূল গবেষক ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জেনিস হোয়াঙ লিখেছেন, ‘‘প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগে আমাদের মগজে অস্বাভাবিক পরিমাণে ফ্রুকটোজ তৈরি হতে। এই প্রথম আমরা দেখাতে পেরেছি, ফ্রুকটোজ এমনকী, তৈরি হয় আমাদের মগজেও। আর তা শুধুই আমাদের খাদ্যাভ্যাসের জন্য হয় না। মগজ নিজেই তৈরি করে ফ্রুকটোজ, প্রচুর পরিমাণে।’’

আরও পড়ুন- চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছেও সারতে পারে স্তন ক্যানসার!

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

আমেরিকার নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক বুলা ঝা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘এই গবেষণাটি আরও অনেক গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। কারণ, আমাদের মগজই যে আজন্ম, আজীবন প্রচুর পরিমাণে ফ্রুকটোজ তৈরি করছে আর সেই বিষ রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে, তা আমাদের জানা ছিল না। এর ফলে ডায়াবেটিস রোখার আরও শক্তিশালী ওষুধ আবিষ্কারের কাজটাও কিছুটা সহজ হয়ে গেল।’’

Brain Sugar Diabetes Heart Disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy