Advertisement
E-Paper

সঙ্গিনীকে আঁকড়ে রাখে কপালের বিশেষ দাঁত! গভীর সমুদ্রে বিচিত্র সঙ্গমের হদিস পেলেন বিজ্ঞানীরা

গভীর সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় ‘ঘোস্ট শার্ক’। দু’চোখের উপরে কপালের ঠিক মাঝ বরাবর রয়েছে তাদের বিশেষ সেই অঙ্গ, যার সঙ্গে জড়িয়ে বিচিত্র সঙ্গমের সূত্র। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি তার হদিস পেয়েছেন।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
গভীর সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় ‘ঘোস্ট শার্ক’।

গভীর সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায় ‘ঘোস্ট শার্ক’। —ফাইল চিত্র।

সমুদ্রের গহীনে লোকচক্ষুর অন্তরালে রোজ কত কী-ই না ঘটে! এখনও কত বিচিত্র জীবন মানুষের অচেনা, অজানা, অধরা রয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি তেমনই এক মৎস্যজীবনের হদিস পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। মাছের নাম কাইমেরা। তাদের কপালে থাকে বিশেষ ধরনের দাঁত। যে দাঁত ব্যবহার করা হয় সঙ্গমকালে! বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই দাঁত ব্যবহার করে সঙ্গমের সময়ে সঙ্গিনীকে আঁকড়ে ধরে রাখে পুরুষ কাইমেরা। এই দাঁতগুলির সঙ্গে হাঙরের দাঁতের মিল পাওয়া গিয়েছে।

ছবি: সংগৃহীত।

গভীর সমুদ্রের এই কাইমেরাকে ‘র‌্যাটফিশ’ বা ‘ঘোস্ট শার্ক’ও বলা হয়ে থাকে। এদের মাথায়, দু’চোখের উপরে ঠিক মাঝ বরাবর একটি লম্বাটে মাংসল খণ্ড থাকে। তাকে বলে টেনাকুলাম। সঙ্গমের সময়ে এই বিশেষ অঙ্গ দিয়ে তারা স্ত্রী কাইমেরার বক্ষপাখনা ধরে রাখে। দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন। কপালের এই টেনাকুলামের চারপাশে থাকে একাধিক দাঁত। পাখনা ধরে রাখার কাজ তার মাধ্যমে আরও সহজ হয়ে ওঠে। কাইমেরা বা র‌্যাটফিশের শারীরিক গড়ন যে খানিক অদ্ভুত, বিজ্ঞানীরাও তা মেনে নেন। তাদের নিয়ে গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ফ্লরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী গ্যারেথ ফ্রেজ়ার বলেন, ‘‘প্রাণীজগতের আর কোথাও আমরা এই ধরনের কিছু দেখিনি। এটাই আমাদের শেষ কথা।’’

র‌্যাটফিশ বিজ্ঞানীদের কাছে নতুন নয়। তবে সম্প্রতি তার জীবনযাপন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে নতুন সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ‘প্রসিডিংস্‌ অফ দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস’ শীর্ষক জার্নালে এই সংক্রান্ত গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে। কী ভাবে র‌্যাটফিশের মাথায় এত ভয়ানক দাঁত তৈরি হল, সে বিষয়ে আলোকপাত করেছে গবেষণাপত্র। ফ্রেজ়ার জানিয়েছেন, হাঙরের চোয়ালে যে ধরনের দাঁত থাকে, র‌্যাটফিশের কপালের দাঁতও তার সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। হাঙর গোষ্ঠীরই অন্তর্ভুক্ত র‌্যাটফিশ। এমনকি, তাদের মধ্যে দূর সম্পর্কের আত্মীয়তা থাকাও অসম্ভব নয়। প্রায় ৪০ কোটি বছর আগে সামুদ্রিক মাছের এই দুই গোষ্ঠী পরস্পরের থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল বলে বিজ্ঞানীদের অনুমান। বর্তমানে দাঁত ছাড়া র‌্যাটফিশের সঙ্গে আর তেমন কোনও মিল নেই হাঙরের। র‌্যাটফিশের আঁশ নেই, হাঙরের মতো তাদের দাঁত ধারালো নয়। পরিবর্তে তারা ওই দাঁত দিয়ে শিকারের খোলস ফাটিয়ে তা পিষে ফেলতে পারে।

ছবি: সংগৃহীত।

হাঙরের সঙ্গে র‌্যাটফিশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য অবশ্যই কপালের দাঁতযুক্ত ওই টেনাকুলাম। এখনও পর্যন্ত সঙ্গমেই তার ব্যবহার হয় বলে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন। অন্য কোনও কাজে তা ব্যবহৃত হয় কি না, স্পষ্ট নয়। র‌্যাটফিশের এই অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যগুলিই বিজ্ঞানীদের বেশি করে আকর্ষণ করে।

ওয়াশিংটনের সান জুয়ান চ্যানেল থেকে সম্প্রতি বেশ কিছু র‌্যাটফিশ ধরেছিলেন মার্কিন বিজ্ঞানীরা। তাদের মধ্যে কোনও কোনওটির দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চির বেশি নয়। কোনও কোনওটি আবার অর্ধেক ফুট লম্বা। মাইক্রো সিটি স্ক্যান প্রযুক্তি ব্যবহার করে র‌্যাটফিশদের যৌনজীবন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। আণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন, এই মাছগুলির কপালে দাঁত তৈরির জিন থাকে। অন্য মাছের ক্ষেত্রে তা সাধারণত থাকে মুখের ভিতর। র‌্যাটফিশদের কিছু জীবাশ্মও বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, যা প্রায় ৩১ কোটি বছরের পুরনো।

Ratfish Underwater World science study
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy