Advertisement
E-Paper

ক্যানসার কোষ নিধনে নয়া রাসায়নিক, দাবি বাঙালি বিজ্ঞানীর

ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক তারা আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করল আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। ওই প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের তৈরি রাসায়নিকটি প্রচলিত কেমোথেরাপির দ্রবণের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কার্যকর ফল মিলতে পারে।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:২৮
শর্মিষ্ঠা দে

শর্মিষ্ঠা দে

ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এক রাসায়নিক তারা আবিষ্কার করেছে বলে দাবি করল আমেরিকার ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক। ওই প্রতিষ্ঠানের দাবি, তাদের তৈরি রাসায়নিকটি প্রচলিত কেমোথেরাপির দ্রবণের সঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করলে কার্যকর ফল মিলতে পারে। ক্যানসার কোষগুলির অতি দ্রুত বৃদ্ধি রোধ করতে পারে ওই রাসায়নিকটি।

এই গবেষণায় জড়িয়ে গিয়েছে এক বাঙালি গবেষিকার নামও। শর্মিষ্ঠা দে নামে ওই গবেষিকার দাবি, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকে দু’বছর গবেষণা করে ফুসফুস ক্যানসারের চিকিৎসার কার্যকর পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যাঁরা ফুসফুসের ‘স্মল সেল’ ক্যানসারে ভুগছেন (যেমন ফুসফুস ক্যানসার), নতুন এই চিকিৎসা পদ্ধতি তাঁদের ক্ষেত্রে কার্যকর। তাঁদের গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্যানসার রিসার্চের জার্নাল’-এ।

ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (হু) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মারণ রোগ হিসেবে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে আছে ক্যানসার। বিভিন্ন ক্যানসারের মধ্যে ফুসফুসের ক্যানসারে মৃত্যুহার সব চেয়ে বেশি। শর্মিষ্ঠা জানাচ্ছেন, ফুসফুস এবং অন্য ছোট ক্যানসার আক্রান্ত কোষ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং এই ধরনের ক্যানসার শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে রোগীকে বাঁচানো ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে। বিগত প্রায় তিন শতক ধরে একমাত্র কেমোথেরাপিই ছিল এই ক্যানসারের প্রধান ওষুধ। যদিও কেমোথেরাপি ক্যানসারকে পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে না। শর্মিষ্ঠার দাবি, কেমোথেরাপির এমন একটি পদ্ধতি তাঁদের গবেষাগারে উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে, যা অতিশয় কার্যকর।

আরও পড়ুন: শিবের তাণ্ডবনৃত্যের ভঙ্গিমায় কি সুপ্ত আছে বিজ্ঞানের কোনও সূত্র?

শর্মিষ্ঠাদের গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, যে-সব কেমোথেরাপি চালু আছে, তারা ‘টিউমার ইনিশিয়েটিং’ কোষগুলিকে মারতে পারে না। ওই টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলি পরে কেমোথেরাপির প্রতিরোধক হয়ে দাঁড়ায়। শর্মিষ্ঠারা এমন একটি রাসায়নিক খুঁজে পেয়েছেন, যা এই স্মল সেল ক্যানসারে টিউমার ইনিশিয়েটিং কোষগুলিকে খুব সহজেই মারতে পারে। তাঁরা দেখেছেন, সাধারণত প্ল্যাটিনাম-নির্ভর যে-কেমোথেরাপি সিসপ্ল্যাটিন ব্যবহার হয়, তার সঙ্গে তাঁদের আবিষ্কৃত সিবিএল০১৩৭ রাসায়নিক প্রয়োগ করলে সেটি অনেক বেশি কার্যকর হয়। গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছে, সিবিএল০১৩৭ এবং সিসপ্ল্যাটিন একসঙ্গে নির্দিষ্ট ইঁদুরের দেহে প্রয়োগ করায় তাদের দেহে টিউমারের বৃদ্ধি কমেছে এবং তারা অনেক দিন বেশি দিন বেঁচেছে।

আরও পড়ুন: অসহিষ্ণুতার হানায় উদ্বেগে বিশিষ্টরা

‘‘আমাদের উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতি সাদা ইঁদুরের উপরে কার্যকর হয়েছে। এই থেরাপি মানবদেহে প্রয়োগ করা যায় কি না, তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। সেটি সফল হলে এই থেরাপি কার্যকর ওষুধ হিসেবে গণ্য হবে এবং বহু রোগীর প্রাণ বাঁচাবে,’’ বলছেন শর্মিষ্ঠা।

ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় জানান, চিকিৎসা করেও এই স্মল সেল ক্যানসারের রোগীকে গড়ে এক বছরের বেশি বাঁচানো যায় না। এই ক্যানসার দ্রুত মস্তিষ্ক এবং অন্যত্র ছড়িয়ে যায়। ‘‘এই স্মল সেল ক্যানসার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে তা আমাদের কাছে উত্তেজক খবর। এই স্মল সেল ক্যানসারকে বাগে আনা গেলে দারুণ হবে। আয়ু বাড়বে আক্রান্তদের,’’ বলেন সুবীরবাবু। টাটা ক্যানসার হাসপাতালের ডিরেক্টর মামন চ্যান্ডি জানাচ্ছেন, আরও পরীক্ষা দরকার। এই চিকিৎসা পদ্ধতি মানবদেহে কতটা সফল হয়, সেটাই এখন দেখার।

আগরতলায় জন্ম ও বেড়ে ওঠা। কলকাতায় এসে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে শারীরতত্ত্ব নিয়ে এমএসসি করেন। তার পরে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল থেকে পিএইচডি করে ২০০১ সালে যান আমেরিকায়। ওহায়োর ক্লিভল্যান্ডে নতুন করে শুরু করেন গবেষণা।

Cancer Treatment USA Cleveland Clinic Chemical
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy