Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কুমিরের সঙ্গে লড়েও স্ত্রীকে হারালেন শ্যামাপদ

পাঁকাল খালে বড়জোর এক হাঁটু জল। হাতে পাঁচ সেলের টর্চ আর টিমটিমে এক লণ্ঠন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থাকতে সেই খালেই নেমেছিলেন হেন্তালবাড়ি গ্রামের মণ্ডল দম্পতি। শ্যামাপদর সঙ্গে স্ত্রী রমা। ছোট জালে চিংড়ির মিন ধরে ভোরেই তা গোসাবার বাজারে বেচে আসতে পারলে কিঞ্চিৎ লাভ। তাই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে রাতেই তাঁরা নেমে পড়েছিলেন হাত বিশেক চওড়া, হাঁটু ডোবা কাদা দীর্ণ ম্যালমেলিয়া খালে। তাঁরা কি জানতেন, খালের পাঁকে মাছের খোঁজে আড়ি পেতে রয়েছে তাঁদের মরণ, এক মেছো কুমির!

নিজস্ব সংবাদদাতা
গোসাবা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৪ ০১:৪৮
Share: Save:

পাঁকাল খালে বড়জোর এক হাঁটু জল। হাতে পাঁচ সেলের টর্চ আর টিমটিমে এক লণ্ঠন নিয়ে বৃহস্পতিবার রাত থাকতে সেই খালেই নেমেছিলেন হেন্তালবাড়ি গ্রামের মণ্ডল দম্পতি। শ্যামাপদর সঙ্গে স্ত্রী রমা।

ছোট জালে চিংড়ির মিন ধরে ভোরেই তা গোসাবার বাজারে বেচে আসতে পারলে কিঞ্চিৎ লাভ। তাই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে রাতেই তাঁরা নেমে পড়েছিলেন হাত বিশেক চওড়া, হাঁটু ডোবা কাদা দীর্ণ ম্যালমেলিয়া খালে।

তাঁরা কি জানতেন, খালের পাঁকে মাছের খোঁজে আড়ি পেতে রয়েছে তাঁদের মরণ, এক মেছো কুমির!

ভোরের আলো ফোটার আগেই সেই কুমিরের কামড় ম্যালমেলিয়া খালের গভীরে টেনে নিয়ে যায় রমাদেবীকে (৪০)। জোয়ারের জল ঢুকতে শুরু করায় শীর্ণ ম্যালমেলিয়া তখন ক্রমেই ভরা নদীর চেহারা নিয়েছে। ঘণ্টা দুয়েক চেষ্টা করেও স্ত্রীকে কুমিরের মরণ কামড়ের হাত থেকে তাই ছিনিয়ে আনতে পারেননি শ্যামাপদ। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রমার ছিন্ন দেহ উদ্ধার হয় কচুখালির ঘাটে। বাড়ির উঠোনে বসে কপাল ঠুকতে ঠুকতে তিনি বলতে থাকেন, “এমনটাও দেখতে হল, দু ঘণ্টা ধরে লড়াই করেও হেরে গেলাম রে!”

সুন্দরবনে এ ঘটনা অবশ্য নতুন নয়। আঁধার রাত, বাঘ-কুমিরের বিপদ উপেক্ষা করে এ ভাবেই রুজির টানে জল-জঙ্গলে ভেসে পড়তে হয় স্থানীয় দ্বীপবাসীদের। তাঁদের বিশ্বাস, এটাই তাঁদের ভবিতব্য।

বন দফতর সূত্রে খবর, মিন ধরা নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু দিন। তবু সামান্য রোজগারের উপায় খুঁজতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এখনও বিপদ মাথায় নিয়েও নদীতে হাতড়ে বেড়ান চিংড়ির চারা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ডিএফডি কিশোর মানকার জানান, সাধারণ ভাবে ওই মহিলার মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা নয়। তবে অন্য কোনও ভাবে তাঁকে ‘ক্ষতিপূরণ’ দেওয়া যায় কিনা তা খতিয়ে দেখছে বন বিভাগ।

শ্যামাপদ জানান, রাত আড়াইটা নাগাদ তাঁরা ম্যালমেলিয়া খালে নেমেছিলেন। খালে তখন নামমাত্র জল। তবে ভোর থেকেই জোয়ারের জল খালে ঢুকতে শুরু করে। লাগোয়া গাড়াল নদী থেকে মাছের খোঁজে খালের পাঁকাল জলে আশ্রয় নেওয়া কুমিরটিকে দেখতেই পাননি তাঁরা। আচমকাই সে চেপে ধরে রমার পা। কাদার মধ্যে শুরু হয় ধস্তাধস্তি। স্ত্রীর চিৎকারে ছুটে আসতে গিয়ে শ্যমাপদর টর্চটিও কাদায় পড়ে হারিয়ে যায়। হাতড়ে হাতড়ে জল তোলপাড় করে তিনি খুঁজতে থাকেন স্ত্রীকে। কুমিরের কামড় থেকে টেনে হিঁচড়ে উদ্ধারের চেষ্টা করেন স্ত্রীকে। তিনি বলেন, “কখনও এক ঝলক ওকে দেখতে পাচ্ছি পরক্ষণেই তলিয়ে যাচ্ছে।”

এ ভাবেই এক সময়ে থামে শ্যামাপদর লড়াই। খবর যায় স্থানীয় বন দফতরে। আসেন আশপাশের কচুবেড়িয়া, সাতজেলিয়ার বাসিন্দারা। তাঁরাও নৌকা নিয়ে রমার খোঁজ করতে থাকেন। বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রমার ছিন্ন ভিন্ন দেহ এসে ঠেকে কচুখালির ঘাটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kochukhali crocodile
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE