Advertisement
E-Paper

হিরের তুমুল বৃষ্টি বৃহস্পতিতে! অ্যাঞ্জেলিনা কি এবার যাবেন সেখানে?

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কি এ বার পাড়ি জমাবেন মহাকাশে? কুড়িয়ে আনবেন মুঠো মুঠো হিরে? হিরের তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে মহাকাশে! যেন হিরে ঝরছে, ঝরে পড়ছে, কি মিষ্টি এ সকাল...!

সুজয় চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৬ ০১:০০

অ্যাঞ্জেলিনা জোলি কি এ বার পাড়ি জমাবেন মহাকাশে?

পাড়ি জমাবেন বেছে বেছে এই সৌরমণ্ডলেরই দু’টি গ্রহ- শনি আর বৃহস্পতিতে?

কুড়িয়ে আনবেন মুঠো মুঠো হিরে?

যেতেই পারেন। কারণ, হিরের তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে মহাকাশে!

যেন হিরে ঝরছে, ঝরে পড়ছে, কি মিষ্টি এ সকাল...!


হিরে ঝরছে, ঝরে পড়ছে...দুই ভিন গ্রহে।

মুঠো মুঠো হিরে ঝরে পড়ছে বৃহস্পতি আর শনি গ্রহে। গোটা পৃথিবী ঢুঁড়ে-ফুঁড়ে ফেললেও, অত হিরে মিলবে না আমাদের এই বাসযোগ্য গ্রহে। তাই মুঠো মুঠো হিরে কুড়িয়ে আনার জন্য কেনই বা শনি, বৃহস্পতিতে পাড়ি জমানোর ইচ্ছে হবে না ‘হলিউডের রানি’র?

আমাদের সৌরমণ্ডলের এই দুই গ্রহে যে হিরের বৃষ্টি হয়, হয়ে চলেছে অনন্ত কাল ধরে, বেশ কিছু দিন ধরেই তা নিয়ে চলছিল কানাঘুযো। একেবারে হালে এক দল জ্যোতির্বিজ্ঞানীর জোরালো দাবি, হিরের তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে শনি আর বৃহস্পতিতে। মুঠো মুঠো হিরে ঝরে পড়ছে ওই দুই ভিন গ্রহে। হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম গ্যাসে ভরা ওই দুই গ্রহে। যেমন হয়, সেই হিরেটা তেমনই শক্তপোক্ত। কাচ কাটা হিরে। কিন্তু শনি আর বৃহস্পতির ওপর গ্যাসের চাদর ফুঁড়ে যতই সেই হিরে নামতে থাকে নীচে, আরও নীচে বা ঢুকতে থাকে আরও গভীরে, ততই অসম্ভব তাপে আর চাপে সেই হিরে গলতে শুরু করে। হয়ে যায় প্রায় ‘জলে’রই মতো, তরল হিরে। তখন এই সৌরমণ্ডলের দুই ভিন গ্রহ শনি আর বৃহস্পতিতে যে তুমুল বৃষ্টি হয়, সেটা আদতে তরল হিরের বৃষ্টি।

শনি, বৃহস্পতিতে হিরের বৃষ্টি, দেখুন ভিডিও।


ভিডিও সৌজন্যে: নাসা।

যেন হিরে গলছে, গলে পড়ছে, কি মিষ্টি এ সকাল...!

যা ‘সোনার জলে’র মতো অত জোলো নয়! জমজমাট। নিখাদ।

যাঁদের গবেষণা এই চাঞ্চল্যকর তথ্যটি জানিয়েছে, তাঁদের এক জন ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডেনায় ক্যালিফোর্নিয়া স্পেশ্যালিটি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (সিএসই) জ্যোতির্বিজ্ঞানী মোনা ডেলিটস্কি। অন্য জন উইসকন্সিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেভিন বেইন্স। তাঁদের গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান জার্নাল ‘অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্স’-এ। ডেনভারে আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ডিভিশন ফর প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের বার্ষিক অধিবেশনেও পেশ করা হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

কিন্তু কী ভাবে ওই মুঠো মুঠো হিরের জন্ম হচ্ছে এই সৌরমণ্ডলের দু’টি ভিন গ্রহে? তা কি কোনও ভিনগ্রহীর কারসাজিতে?


হিরের তুমুল বৃষ্টি শনি, বৃহস্পতিতে। ইউরেনাস, নেপচুনেও।

সহযোগী গবেষক সুইডেনের ‘উপসালা সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে’র জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর উজ্জয়িনী মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘কার্বনের অভাব নেই ওই দুই ভিন গ্রহে। সেই কার্বন যেমন অন্য কোনও পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে বিভিন্ন যৌগ বানাচ্ছে, তেমনই তা বিভিন্ন রকম ভাবে থাকছে মৌল হয়েও। কী ভাবে থাকছে সেই মৌল হয়ে? যা দিয়ে পেন্সিলের শিষ বানানো হয়, সেই গ্রাফাইট আসলে কার্বন মৌলেরই একটি রূপ। আবার কয়লা, তেল, কাঠ বা যে কোনও জ্বালানি পুরোপুরি না পুড়লে কোনও পাত্রের গায়ে যে কালি (সুট) পড়ে, সেই মিহি ছোট ছোট দানার মতো পদার্থগুলোও কার্বন মৌলেরই আরেকটি রূপ। শনি আর বৃহস্পতি- এই দুই ভিন গ্রহে ভীষণ বাজ পড়ে। ভয়ঙ্কর শব্দে। বিদ্যুতের ভয়াল চমকে ঝলসে যায় ওই দুই গ্রহের আকাশ। সঙ্গে প্রচণ্ড গতিতে বইতে থাকে ঝড়। ওই বজ্রবিদ্যুৎ আর ঝড়ের তাণ্ডবেই গ্রাফাইট আর কালির জন্ম হয়। সেই গ্রাফাইট আর কালি যতই শনি আর বৃহস্পতির ওপরের গ্যাসের চাদর ফুঁড়ে নীচে নামতে থাকে, সেই চাদরের গভীরে ঢুকতে থাকে, ততই তা একটু একটু করে কঠিন হিরে হয়ে ওঠে। যত নীচে নামে, ততই আশপাশের হিরের কণাগুলো জুড়ে গিয়ে আরও বড় বড় হিরের খণ্ড হতে থাকে। আরও লোভনীয় হয়ে উঠতে থাকে। তার ঝলক বাড়ে। বেড়ে যায় সেই হীরক খণ্ডের দ্যুতি, দীপ্তিও। বহুগুণ বেড়ে যায় তাদের ঔজ্জ্বল্যও। যা পৃথিবীর প্রাকৃতিক হিরের চেয়ে অনেক অনেক গুণ বেশি উজ্জ্বল। অনেক অনেক বেশি ঝকঝকে। যা চার পাশটা আলোয় আলোয় ভরিয়ে রাখে। যেন হাজার তারার আলো!’’

আরও পড়ুন- এডস রোখার হাতিয়ার আসছে? মশাল এক বাঙালির হাতেই!

৫৫ মিনিটে বেঙ্গালুরু থেকে চেন্নাইয়ে উড়ে গেল হৃদয়!

এর পর অ্যাঞ্জেলিনা জোলি রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়তে পারেন, এমন তথ্যও রয়েছে!

কী সেই তথ্য, যা হতাশ করে দিতে পারে ‘হলিউডের রানি’কে?


ইউরেনাস, নেপচুনে কঠিন ও বড় হিরের সম্ভাবনা বেশি।

উজ্জয়িনী বলছেন, ‘‘ওই হিরে প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। আর তাদের ঔজ্জ্বল্য পার্থিব হিরের চেয়ে অনেক বেশি হলেও, তা খুব বেশি ক্ষণ কঠিন হিরে হয়ে থাকতে পারে না। মানে, অলঙ্কার বানানোর জন্য হিরেকে যে অবস্থায় রাখাটার প্রয়োজন হয়। শনি আর বৃহস্পতির ওপরের ঘন, জমাট গ্যাসের স্তরগুলো ফুঁড়ে-ঢুঁড়ে কঠিন হিরে যতই নীচে নামতে থাকে, সেগুলো ততই গলতে শুরু করে দেয়। গলতে গলতে, গলতে গলতে... এতেবারে তরল হিরে হয়ে যায়! যেন হিরের ‘জলে’র স্রোত! যা নদীর মতো বয়ে চলে। আদিগন্ত। অতলান্ত। আমাদের জোরালো অনুমান, এই হিরের বৃষ্টি হয়ে চলেছে এই সৌরমণ্ডলের প্রায় শেষ প্রান্তে থাকা আরও দু’টি গ্রহ- ইউরেনাস আর নেপচুনেও। তবে বৃহস্পতি আর শনি- এই দু’টি গ্রহ তুলনায় সূর্যের অনেক কাছে রয়েছে বলে তাদের তাপমাত্রা অনেক বেশি। বাড়তি তাপমাত্রায় তাই শনি আর বৃহস্পতিতে হিরে বেশ ক্ষণ কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে না। তরল হিরে হয়ে যায়। কিন্তু ইউরেনাস আর নেপচুনের মতো অনেক অনেক দূরের গ্রহগুলিকে সূর্যের তাপের ‘ঝাপ্‌টা’ অনেক কম খেতে হয় বলে ওই দু’টি গ্রহ অনেক অনেক বেশি ঠাণ্ডা শনি আর বৃহস্পতির চেয়ে। ফলে, ওই গ্রহগুলিতে অনেক বেশি সময় ধরে হিরে কঠিন অবস্থায় থাকতে পারে।’’

তবে অ্যাঞ্জেলিনা জোলিকে শেষমেশ খুশি করে দেওয়ার মতো তথ্যও রয়েছে গবেষকদের ঝুলিতে।

ডেলিটস্কি ও বেইন্সের লেখা বই ‘এলিয়েন সি’জ’ (স্প্রিঙ্গার, ২০১৩) জানাচ্ছে, ‘‘এক দিন রোবটিক মাইনিং-এর মাধ্যমে শনির অন্দর ফুঁড়ে-ঢুঁড়ে সেই কঠিন অবস্থায় থাকা হিরে সংগ্রহ করা যাবে। আর তা নিয়ে আসা যাবে ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ’- এই পৃথিবীতে।

হিরের দিন কি তবে আমাদের থেকে আর বেশি দূরে নয়?

Diamond Rain On Jupiter And Saturn-dgtl diamond rain in neptune and uranus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy