Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
IISC Bangalore

ঘরের তাপমাত্রায় রাখা যায় এমন কোভিড টিকা তৈরি করছে বেঙ্গালুরুর আইআইএসসি

এর ফলে তাপমাত্রা বাড়লেও এই টিকা নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

-ফাইল ছবি।

-ফাইল ছবি।

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ২৩:০০
Share: Save:

ঘরের তাপমাত্রাতেও দিব্যি রেখে দেওয়া যায়, এমন কোভিড টিকা বানাচ্ছে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স (আইআইএসসি)’।

দু’-একটি নয়, যখন আরও নানা রকমের কোভিড টিকা বাজারে আসার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, বিদেশের কয়েকটি টিকার যখন ভারতে আসা ও ব্যবহারের বিষয়টি সরকারি অনুমোদনের অপেক্ষায়, তখন দেশের বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইএসসি-র উদ্যোগ যথেষ্টই আশাব্যঞ্জক, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

গবেষকরা ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে জানিয়েছেন, এই অভিনব কোভিড টিকার প্রধান বিশেষত্ব, এই টিকা ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সমান সক্রিয় রাখা যায়। তাপমাত্রার বিষয়টি এখনও পর্যন্ত বাজারে চালু কোভিড টিকাগুলির এক ও একমাত্র সমস্যা। এর ফলে তাপমাত্রা বাড়লেও এই টিকা নিয়ে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে না। এই টিকা সংরক্ষণের জন্য রেফ্রিজারেশন ব্যবস্থারও সাহায্য নিতে হবে না। ফলে টিকা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। ভারতে ঘরের সেই স্বাভাবিক তাপমাত্রা গড়ে ২১ থেকে ২৫ ডিগ্লি সেলসিয়াস।

এই টিকা তৈরির প্রকল্পের প্রধান আইআইএসসি-র অধ্যাপক রাঘবন বরদারাজন ‘আনন্দবাজার ডিজিটাল’-কে বলেছেন, ‘‘ইঁদুর ও গিনিপিগের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, আমাদের বানানো টিকা দেহের স্বাভাবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থায় (‘ইমিউন সিস্টেম’) প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে। খুব অল্প সময়ে। সেই অ্যান্টিবডিগুলি ইঁদুর ও গিনিপিগের দেহে ঢুকে পড়া সার্স-কভ-২ ভাইরাসকে অনায়াসেই অকেজো, নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারছে। ভাইরাস কোষে ঢুকে আর বংশবৃদ্ধি ঘটাতে পারছে না। ফলে, সংক্রমণও হচ্ছে না।’’

ভাইরাসকে দেহকোষে নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে বলেই এই অ্যান্টিবডিগুলিকে বলা হয় ‘নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি’।

বরদারাজনের কথায়, ‘‘আমরা গবেষণাগারে টেস্ট টিউবে রাখা সংক্রমিত মানব দেহকোষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, এই টিকা যে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিগুলি তৈরি করছে, সেগুলি এমনকি সার্স-কভ-২ ভাইরাসের নতুন কয়েকটি রূপকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারছে।’’

সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সেই নতুন রূপগুলির মধ্যে মহারাষ্ট্রে প্রথম হদিশ মেলা ভারতীয় ‘ডাব্‌ল মিউট্যান্ট’ রূপটিও রয়েছে বলে গবেষকদের দাবি।

বিশেষজ্ঞদের কাছে গবেষণাটি আরও আশাব্যঞ্জক মনে হয়েছে এই কারণে যে, কনভ্যালেসেন্ট প্লাজমা মানব দেহকোষে সার্স-কর্ভ-২ ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে যে পরিমাণে অ্যান্টিবডি তৈরি করে, আইআইএসসি-র গবেষকরা দেখেছেন, তাঁদের বানানো টিকা ইঁদুরের দেহকোষে তার ২০০ গুণ অ্যান্টিবডি তৈরি করতে পারছে।

রাঘবন বলছেন, ‘‘আমাদের কোভিড টিকার প্রধান বিশেষত্ব, এটাকে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই রাখা যাবে। ফলে বেশি তাপমাত্রায় টিকা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।’’

ভারতের বাজারে এখন যে দু’টি দেশীয় কোভিড টিকা চালু রয়েছে সেই ‘কোভ্যাক্সিন’ ও ‘কোভিশিল্ড’, দু’টিকেই সক্রিয় রাখতে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হয়। আমেরিকার সংস্থা ‘ফাইজার’-এর বানানো টিকা রাখতে হয় শূন্যের ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচের তাপমাত্রায়। আমেরিকার আর একটি সংস্থা ‘মডার্না’-র টিকাও রাখতে হয় শূন্যের ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নীচের তাপমাত্রায়। রাশিয়ার বানানো ‘স্পুটনিক ভি’ টিকা যাতে নষ্ট হয়ে না যায় সে জন্য তাকেও রাখতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। এর অর্থ, কোভ্যক্সিন, কোভিশিল্ড বা স্পুটনিক ভি-কে সমান সক্রিয় রাখতে গেলে যে তাপমাত্রায় রাখা প্রয়োজন, আইআইএসসি-র বানানো টিকা রাখা যাবে তার প্রায় ৩ গুণ তাপমাত্রাতেও।

মানব দেহকোষে এই টিকার কার্যকারীতা (‘এফিকেসি’) কেমন হবে?

রাঘবন বলছেন, ‘‘সেটা বোঝার জন্য মানুষের উপর অন্তত দু’টি পর্যায়ে পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন। সেই ট্রায়ালের জন্য অর্থ অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

IISC Bangalore COVID 19 covid vaccines in india
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE